Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইংরেজি নববর্ষ

| প্রকাশের সময় : ১ জানুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

আজ পয়লা জানুয়ারি, খ্রিস্টীয় ২০২৩ সালের প্রথম দিন। আরো একটি বছর পেছনে ফেলে কালের গর্ভে আশ্রয় নিয়েছে ২০২২ সাল। নতুন বছরের প্রথম দিনে আমরা বিগত বছরের প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি, সাফল্য-ব্যর্থতার হিসাব মেলাতে চেষ্টা করি। অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে সামনে অগ্রগতির পথে ধাবিত হওয়ার জন্য এটা অপরিহার্য। ২০২২ সালের হিসাব-নিকাশ ও মূল্যায়নে আমরা বলতে পারি, এই বছরটি অত্যন্ত কঠিন একটি পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হয়েছে। করোনা মহামারির পরে ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ব এক বড় চ্যালেঞ্জে পড়েছে, যার প্রতিক্রিয়ায় সব দেশে সামাজিক-রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটে গেছে। আমাদের দেশসহ উন্নত বিশ্বের দেশগুলোও জ্বালানি ও খাদ্য নিরাপত্তার হুমকির মুখে পড়েছে। শিল্পোন্নত দেশগুলো যেখানে পরিস্থিতি মোকাবেলায় হিমশিম খাচ্ছে, সেখানে আমাদের মতো উন্নয়নকামী দেশগুলোর পরিস্থিতি কী হতে পারে, তা সহজেই অনুমেয়। সামাজিক সংকট ও সমস্যা যত আকস্মিক ও কঠিন হোক না কেন, ব্যর্থতাকে সাফল্যের আলোয় উদ্ভাসিত করার জন্য নতুন বছরে আমাদের শক্তি ও সামর্থ্যকে পূর্ণমাত্রায় নিয়োজিত করতে হবে। এটাই আমাদের অঙ্গীকার ও শপথ হওয়া উচিত। সন্দেহ নেই, জাতীয় জীবনে আমাদের অনেক স্বপ্ন-প্রত্যাশাই অনর্জিত রয়ে গেছে। নতুন নতুন সংকট-সমস্যার জন্ম হয়েছে। নতুন বছরে সেগুলো প্রলম্বিত হবে, স্বাভাবিক কারণেই। মানুষের কষ্ট-দুর্ভোগ বেড়েছে। অর্থনীতি চাপে পড়েছে। বিনিয়োগ-শিল্পায়ন-কর্মসংস্থান কাক্সিক্ষত হারে বাড়েনি। রফতানি আয়, জনশক্তি রফতানি, রাজস্ব আদায়- সবকিছুই কমেছে। দুর্নীতি-দুষ্কৃতি ও অর্থপাচার বেড়েছে। একই সঙ্গে নাগরিক নিরাপত্তার অনিশ্চয়তা বেড়েছে। দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর উপর মানুষের আস্থা বাড়ার মতো কোনো রাজনৈতিক উদ্যোগ দেখা যায়নি। সুশাসনের অভাব ও বিচারহীনতার সংস্কৃতি বিস্তৃত হয়েছে। হত্যা, ধর্ষণ ও অপমৃত্যুর ঘটনা পুরো সমাজকে বিচলিত-উদ্বিগ্ন করেছে।

বিগত বছরটিতে আমাদের অর্থনীতি যেমন নানাবিধ সংকটে নিমজ্জিত হয়েছে, একইভাবে রাজনীতিতেও কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন সূচিত হয়নি। এ বছর সরকারের মেয়াদের শেষ বছর। এক বছর পর অনুষ্ঠিত হবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন। এ দিক দিয়ে বছরটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অন্যদিকে আর্থিক সংকট সত্ত্বেও উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চলমান রয়েছে, স্বপ্নের পদ্মাসেতুর উদ্বোধন হয়েছে। উদ্বোধন হয়েছে মেট্রোরেলের। শতাধিক সড়ক-মহাসড়ক খুলে দেয়া হয়েছে। কর্ণফুলী টানেল অচিরেই উদ্বোধন হবে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প ও অন্যান্য মেগা প্রকল্পের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে। সময়মতো এগুলো বাস্তবায়ন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অবকাঠামোগত উন্নয়নে শেখ হাসিনার সরকার বিশাল সম্ভাবনা জাগিয়ে তুলেছে। ইতোমধ্যে দেশ জাতিসংঘ কর্তৃক স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হওয়ার স্বীকৃতি পেয়েছে। এটা আশার কথা। তবে অর্থনৈতিক কারণে দরিদ্র আরও দরিদ্র হয়েছে, অনেক নিম্নবিত্ত দরিদ্র হয়ে গেছে, মধ্যবিত্ত নিম্নবিত্তে পরিণত হয়েছে। সবমিলিয়ে দরিদ্রের সংখ্যা দেশের জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেকে দাঁড়িয়েছে। জিনিসপত্রের দাম আকাশছোঁয়া হয়ে পড়েছে। সীমিত আয়ের মানুষের জীবনধারণ কষ্টকর হয়ে পড়েছে।

২০২৪ সালের জানুয়ারিতে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সব দলের অংশগ্রহণে এ নির্বাচন সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ করার চ্যালেঞ্জ সরকারকে মোকাবেলা করতে হবে। বিগত কয়েক বছরে দেশের রাজনীতিতে এক ধরনের স্থবিরতা বিরাজ করছে। দেশে রাজনীতি আছে কিনা, তা সাধারণ মানুষের পক্ষে বোঝা সম্ভব হয়নি। বিরোধী দলগুলোর রাজনীতি বলতে কিছু ছিল না। এ প্রেক্ষিতে, গণতন্ত্র, সুশাসন, আইনের শাসন, মানবাধিকার, বাকস্বাধীনতা সংকোচন তীব্র হয়ে উঠেছে। এ নিয়ে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংস্থা জরিপ প্রকাশ করেছে। জরিপের ফলাফলে সব ক্ষেত্রেই এসব বিষয়ের সূচক নিম্নগামী। সংবাদপত্র ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এমন এক পর্যায়ে গিয়েছে যে, সেটা উল্লেখ করতেও লজ্জা হয়। দেশে সহনশীলতার অভাব তীব্র হয়ে উঠেছে। সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সেটা আরো চরমে উঠতে শুরু করেছে। রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং সুশাসন ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার উন্নয়ন জরুরি হয়ে পড়েছে। দেশের মানুষ শান্তি চায়, নিরাপত্তা চায়, সব রকম গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক অধিকার চায়। একই সঙ্গে চায় অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও অগ্রগতি। কোনো বিশৃংখলা, সংঘাত-সহিংসতা তারা দেখতে চায় না। সরকারের কাছে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রত্যাশিত উন্নয়নের কার্যকর রাজনৈতিক পদক্ষেপ দেখতে চায় দেশের মানুষ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অভিজ্ঞতা, কর্মদক্ষতা ও রাজনৈতিক কমিটমেন্টের প্রতি দেশের মানুষের প্রত্যাশা অনেক। গ্রহণযোগ্য নির্বাচন, ক্ষমতার শান্তিপূর্ণ পালাবদল, সুশাসন, আইনের শাসন, মানবাধিকার ও গণতান্ত্রিক সমাজ বিনির্মাণের বিষয়গুলো প্রধানমন্ত্রীর ওপর অনেকাংশে নির্ভর করে। এসব বিবেচনায় তিনি দেশকে কোথায় নিয়ে যাবেন, তা জনগণ দেখতে চায়। যেভাবে চলছে তা যদি আগামীতেও চলতে থাকে, তবে দেশ আরও সংকটে নিপতিত হবে, যা কোনোভাবেই প্রত্যাশিত নয়। আমরা আশা করব, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার উন্নয়ন ও আইনের শাসন নিশ্চিত করতে কার্যকর উদ্যোগ নিয়ে সরকার সাফল্য দেখাবে। নতুন বছরে দেশের মানুষের অনেক প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির বিষয় রয়েছে। তাদের এ প্রত্যাশা পূরণে সরকারকে আন্তরিক হতে হবে। অর্থনৈতিক ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটিয়ে মানুষকে স্বস্তি দিতে হবে। পরিশেষে, আগামী দিনগুলো সকলের জন্য শুভ, কল্যাণময় ও নিরাপদ হোক, এই কামনা করি। ইংরেজি নববর্ষের এই দিনে আমরা পাঠক ও শুভানুধ্যায়ীসহ দেশের সর্বস্তরের মানুষকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন