বাংলাদেশের জনজীবন ও অর্থনীতিতে ফারাক্কা বাঁধের বিরূপ প্রতিক্রিয়া
ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে প্রবাহিত গঙ্গার ওপর নির্মিত ভারতের ফারাক্কা বাঁধের প্রতিক্রিয়া যেমন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক
মহিউদ্দিন খান মোহন : অবশেষে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনকল্পে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে রাষ্ট্রপতির সংলাপ শুরু হয়েছে গত রোববার (১৮ ডিসেম্বর)। দেশের অন্যতম প্রধান দল বিএনপিকে দিয়েই রাষ্ট্রপতি তার সংলাপ প্রক্রিয়া শুরু করলেন। পর্যায়ক্রমে দেশের প্রায় সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গেই তিনি এ সংলাপ করবেন বলে প্রচার আছে। দেশের রাজনীতিতে গুরুত্ব আছে এমন দলগুলোকেই রাষ্ট্রপতি ডাকবেন এটাই স্বাভাবিক। মূলত আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে গঠিতব্য নতুন নির্বাচন কমিশনের সদস্যদের বছাইয়ের উদ্দেশ্যে সার্চ কমিটি গঠনের জন্যই এ পরামর্শ বা প্রস্তাবনা বৈঠক। সে হিসেবে রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ আব্দুল হামিদ একটি সময়োপযোগী এবং অত্যন্ত ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, এটা স্বীকার না করে উপায় নেই। তদুপরি রোববার বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বিএনপি প্রতিনিধি দলের বৈঠকটি যে ধরনের আন্তরিকতা ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে (পত্রিকার খবর অনুযায়ী) তাতে এর মধ্যদিয়ে দেশে একটি ইতিবাচক ও স্বস্তিদায়ক রাজনৈতিক পরিবেশ সৃষ্টি হওয়ার প্রত্যাশা অনেকের মনেই সৃষ্টি হয়েছে। তবে, শেষ পর্যন্ত সে প্রত্যাশা কতটুকু পূরণ হয়, নাকি তা দূরাশাই থেকে যায় সে ভাবনাও সচেতন ব্যক্তিদের অনেকের মনে সংশয়ের সৃষ্টি করেছে।
খবরে বলা হয়েছে, ওইদিন বিকাল সাড়ে ৪টায় বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে দশ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল বঙ্গভবনে যান। সংলাপ শেষে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন- ‘সংলাপে সব রাজনৈতিক দলের মতৈক্যের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন গঠনের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। যেহেতু এ বিষয়ে এখনো কোনো আইন তৈরি হয়নি, সে কারণে সব রাজনৈতিক দলের মতৈক্যের কোনো বিকল্প নেই বলে আমরা মনে করি। আমরা রাষ্ট্রপতিকে বাছাই কমিটি গঠন, নির্বাচন কমিশন গঠন ও আরপিও সংশোধনের বিষয়ে জানিয়েছি। বাছাই কমিটির সদস্যদের মনোনয়ন পদ্ধতিও জানানো হয়েছে। এখন রাষ্ট্রপতি এ পদ্ধতি পরীক্ষা করবেন।’
অপরদিকে রাষ্ট্রপতির বরাত দিয়ে তার প্রেস সচিব জয়নাল আবেদীন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন- ‘আলোচনায় রাষ্ট্রপতি বলেছেন- গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনাদের মতামত পরবর্তী নির্বাচন কমিশন গঠনে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে আমি বিশ্বাস করি। যে কোন বিষয়ে আলোচনা ও মতবিনিময় সমাধানের বহুমুখী পথের সন্ধান দেয়।’ এদিকে পত্রিকার খবরে বলা হয়ছে, বিএনপি চেয়ারপার্সন সার্চ কমিটি এবং নির্বাচন কমিশনের জন্য দশ জনের নামের একটি তালিকা রাষ্ট্রপতির কাছে হস্তান্তর করেছেন।
নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের বিষয়টি এ মুহূর্তে দেশের প্রধান আলোচ্য বিষয় সন্দেহ নেই। এ কমিশন গঠনের ওপরই রাজনীতির পরবর্তী পরিস্থিতি নির্ভর করছে- এটা বলাই বাহুল্য। যদি সব দলের মতামতের ভিত্তিতে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের নিয়ে রাষ্ট্রপতি পরবর্তী নির্বাচন কমিশন গঠন করেন, তাহলে রাজনৈতিক পরিবেশ হবে এক রকম। আর যদি ‘বিস্তর আলোচনা-সংলাপ’ শেষে কোনো দলের মতামতকে প্রাধান্য না দিয়ে শুধু ‘প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে’ই রাষ্ট্রপতি নির্বাচন কমিশন গঠন করেন, তাহলে পরিস্থিতি ভিন্ন রূপ নিতে পারে। তবে, বিএনপির সঙ্গে রাষ্ট্রপতির সংলাপকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন দেশের প্রায় সব মানুষ। এ বিষয়ে বিশিষ্ট নাগরিকদের যেসব মন্তব্য গণমাধ্যমে উঠে এসেছে, তাতে এ আশাবাদের বিষয়টি আরো স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
এ প্রসঙ্গে গত ১৯ ডিসেম্বর দৈনিক যুগান্তর এক বিশেষ প্রতিবেদনে লিখেছে- নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনসহ চলমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে রাষ্ট্রপতিই শেষ ভরসার জায়গা বলে মনে করছেন দেশের বিশিষ্টজনরা। তারা বলেছেন, ‘সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে এমন নিরপেক্ষ ও শক্তিশালী ইসি গঠনের পথ সুগম করতে একমাত্র রাষ্ট্রপতিই পারেন কার্যকর উদ্যোগ নিতে। শীর্ষ রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যকার আস্থাহীনতা কাটিয়ে দেশের স্বার্থে এবং গণতন্ত্র রক্ষায় রাষ্ট্রপতি হতে পারেন শেষ অভিভাবক।’ এ বিষয়ে পত্রিকাটি কয়েকজন বিশিষ্ট নাগরিকের মন্তব্যও তুলে ধরেছে। তাদের মন্তব্য থেকে এটা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, নির্বাচন কমিশন গঠনকল্পে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে রাষ্ট্রপতির সংলাপের উদ্যোগকে তারা সবাই ইতিবাচক বলেই মনে করছেন। রাষ্ট্রপতির এ উদ্যোগের মধ্যদিয়ে রাজনীতিতে জমাটবাঁধা বরফ গলতে শুরু করবে এবং বিরাজমান বৈরী পরিবেশের অবসান ঘটবে বলেও আশা প্রকাশ করেছেন তারা। পাশাপাশি তাদের কেউ কেউ এ সংশয়ও প্রকাশ করেছেন যে, শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির এ উদ্যোগ কতোটা কার্যকর হবে তা এখনি বলা যাচ্ছে না। তারা বলেছেন, মনে রাখতে হবে রাষ্ট্রপতি কোনোভাবেই সংবিধানের বাইরে যেতে পারবেন না। সংবিধান অনুযায়ী তিনি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পরামর্শ করেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিবেন।
এদিকে বিএনপির সঙ্গে রাষ্ট্রপতির সংলাপ প্রসঙ্গে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন- ‘বিএনপি যদি মনে করে সালিশ মানি কিন্তু তালগাছ আমার- তাহলে সংলাপ সফল হবে না। সংলাপ সফলের লক্ষ্যে বিএনপিকে বাস্তবসম্মত মনোভাব নিয়ে অগ্রসর হতে হবে।’ গত ১৮ ডিসেম্বর স্বেচ্ছাসেবক লীগের এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এ কথা বলেছেন।
ওবায়দুল কাদেরের এ মন্তব্য যে দলীয় দৃষ্টিভঙ্গি প্রসূত সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। ‘যারে দেখতে না’রি তার চলন বাঁকা’- প্রবচনটি এ ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। কেননা, গত মাসের ১৮ তারিখ বেগম খালেদা জিয়া যে ১৩ দফা প্রস্তাব উত্থাপন করেছেন, তা আওয়ামী লীগ ব্যতীত অন্য সবার কাছেই ইতিবাচক ও গ্রহণযোগ্য বলে মনে হয়েছে। একটি শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠন এবং সুষ্ঠু ও অবাধ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে তার ওই প্রস্তাবনা অত্যন্ত গুরুত্ববহ এমন অভিমতই ব্যক্ত করেছেন রাজনীতি বোদ্ধামহল। বেগম খালেদা জিয়ার প্রস্তাবনা কিংবা রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপের কোথায় কাদের সাহেব বিএনপির ‘তাল গাছটা আমার’ ধরনের মনোভাব খুঁজে পেলেন- এটা একটা বড় প্রশ্ন। বরং অভিজ্ঞমহল মনে করছেন যে, আওয়ামী লীগই শেষ পর্যন্ত ‘তাল গাছটা আমার’ নীতি অবলম্বন করে একটি অবিতর্কিত নির্বাচন কমিশনের গণপ্রত্যাশাকে হতাশায় পরিণত করে দিতে পারে। কারণ, সংবিধানের ১১৮ নম্বর অনুচ্ছেদে নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য রাষ্ট্রপতিকে একক ক্ষমতা দেয়া হলেও ৪৮ অনুচ্ছেদের ৩ নম্বর দফায় বলা হয়েছে- ‘এই সংবিধানের ৫৬নং অনুচ্ছেদের (৩) দফা অনুসারে কেবল প্রধানমন্ত্রী ও ৯৫ (১) দফা অনুসারে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ ক্ষেত্র ব্যতীত রাষ্ট্রপতি তাহার অন্য সকল দায়িত্ব পালনে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করিবেন। তবে শর্ত থাকে যে, প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতিকে আদৌ কোন পরামর্শদান করিয়াছেন কিনা এবং করিয়া থাকিলে কি পরামর্শ দান করিয়াছেন, কোন আদালত সেই সম্পর্কে কোন প্রশ্নের তদন্ত করিতে পারিবেন না।’
বুঝতে কষ্ট হবার কথা নয়, যার সঙ্গে যত সংলাপ-আলোচনাই হোক, নির্বাচন কমিশন গঠনের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শই শেষ পর্যন্ত প্রধান নিয়ামকের ভূমিকা পালন করবে। সেক্ষেত্রে আলোচনা-সংলাপের ফলাফলকে সযতেœ ‘দেরাজবন্দী’ করে যদি আওয়ামী লীগ তথা সরকার ‘তাল গাছটা’ নিজেদের কবজায় নিয়ে যায় তাহলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। সুতরাং, দেশবাসী যদি মনে করে যে, রাষ্ট্রপতির এ সংলাপ এক ধরনের আইওয়াশ তাহলে কী সেটা দোষের হবে? তাছাড়া নির্বাচন কমিশন গঠনের বিষয়ে রাষ্ট্রপতি সিদ্ধান্ত নেবেন- প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক এ মন্তব্যও সরল উক্তি নয়। কেননা, তিনি যেহেতু জানেন যে, এ বিষয়ে যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতে হলে মহামান্য রাষ্ট্রপতিকে তাঁর (প্রধানমন্ত্রী) পরামর্শ নিতেই হবে, তাহলে খোলা ময়দানে অমন একটা ইতিবাচক বক্তব্য দিতে অসুবিধা কোথায়? নাটাই হাতে থাকলে ঘুড়িকে দূর আকাশে কিছুক্ষণ যেমন খুশি হাওয়ায় ভেসে বেড়াতে দিতে কোনো সমস্যা নেই; যেহেতু তা শেষ পর্যন্ত নিজের হাতে এসেই ধরা দেবে।
বিএনপির সঙ্গে রাষ্ট্রপতির সংলাপে অনেকেই আশাবাদী হয়ে উঠেছেন। খোদ বিএনপিও আশাবাদ ব্যক্ত করেছে- এর ফলে বিরাজমান রাজনৈতিক সংকটের সমাধান হবে। কিন্তু অভিজ্ঞজনরা এ ক্ষত্রে তেমন আশার আলো দেখতে পাচ্ছেন না। কেননা, সাংবিধানিক বিধি-বিধানের কারণেই নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রক্রিয়াটি ক্ষমতাসীন সরকারের ইচ্ছাধীন বিষয়। তারা যে রকম চাইবে রাষ্ট্রপতি সে রকমই করবেন। এ জন্যই দেশের সংবিধান বিশেষজ্ঞ থেকে শুরু করে মোটামুটি রাজনীতি বোঝেন এমন সচেতন ব্যক্তিরা বারবার নির্বাচন কমিশন গঠনের একটি স্থায়ী আইন প্রণয়নের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন। সংবিধানের ১১৮নং অনুচ্ছেদেও এই আইনের কথা বলা হয়েছে। ১১৮ (১) দফায় বলা হয়েছে, ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অনধিক চারজন নির্বাচন কমিশনারকে লইয়া বাংলাদেশের একটি নির্বাচন কমিশন থাকিবে এবং উক্ত বিষয়ে প্রণীত কোন আইনের বিধানাবলী সাপেক্ষে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন প্রধান কমিশনারকে ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারকে নিয়োগ দান করিবেন।’
এখন দেখার বিষয় হলো, কোন আইনের বলে রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্য কমিশনারদের নিয়োগ দিচ্ছেন। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি যে, বিগত পঁয়তাল্লিশ বছরে কোনো সরকারই এ আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেয়নি। কেন নেয়নি সেটা একটি বিরাট প্রশ্ন। উত্তরও খুব সোজা। স্থায়ী আইন প্রণীত হলে রাষ্ট্রপতি সে আইন অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন গঠন করবেন, কারো মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে নয়। তিনি তখন আইনের বিধানাবলীর মধ্যে থেকেই বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করবেন, আর প্রধানমন্ত্রীও তখন আইনের বিধানাবলীর আওতায় তার পক্ষে যতটুকু সম্ভব পরামর্শ রাষ্ট্রপতিকে দিতে পারবেন। সম্ভবত এ অসুবিধার কারণেই পূর্ববর্তী কোনো সরকারই এ সংক্রান্ত আইন প্রণয়নের দিকে অগ্রসর হয়নি। আইনের অনুপস্থিতিজনিত সুযোগের সদ্ব্যবহার করে নিজেদের পছন্দের ব্যক্তিদের দিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠনের সুযোগ তারা নষ্ট করতে চায় না। লক্ষণীয় বিষয় হলো, বিএনপি নির্বাচন কমিশন গঠন বিষয়ে অনেকগুলো প্রস্তাবনা দিলেও এ সংক্রান্ত আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নিতে রাষ্ট্রপতিকে আহ্বান জানায়নি কিংবা সরকারের কাছেও দাবি জানায়নি। বিএনপি স্বীকার না করলেও এটা বুঝতে অসুবিধা হয় না যে, ভবিষ্যতে রাষ্ট্রক্ষমতায় গেলে আইন না থাকার এ সুযোগটি ব্যবহারের রাস্তাটি তারা খোলা রাখতে চান।
নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে এবার আরেকটি জটিলতার আশঙ্কা করছেন কেউ কেউ। সেটি হলো, কোনো নাগরিক যদি নির্বাচন কমিশন গঠনের আইন প্রণয়ন না করে সার্চ কমিটি গঠন প্রক্রিয়াকে চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন দাখিল করেন তাহলে নতুন জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। কেননা, সার্চ কমিটি গঠনের কোনো কথা সংবিধানে বলা হয়নি। ফলে ‘অসাংবিধানিক’ এ প্রক্রিয়াকে চ্যালেঞ্জ করলে আদালত যদি তা আমলে নেন, তাহলে পুরো প্রক্রিয়াটিই অকার্যকর হয়ে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে পূর্বের ধারাবাহিকতায় রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ নিয়ে একক সিদ্ধান্তে নির্বাচন কমিশন গঠন করে ফেললে কারো কিছু বলার বা করার থাকবে না।
নির্বাচন কমিশন গঠন প্রশ্নে বিএনপির সঙ্গে রাষ্ট্রপতির এ সংলাপ প্রক্রিয়াকে কেউ কেউ ‘ত্রি-পক্ষীয় আইওয়াশ’ বলেও অভিহিত করেছেন। তারা বলছেন- প্রথমত, রাষ্ট্রপতি দেশবাসীকে এটা দেখাতে চাচ্ছেন যে, সংবিধান অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে নির্বাচন কমিশন গঠনের একক এখতিয়ার তার থাকলেও সব দলের মতামতকেই তিনি গুরুত্ব দিচ্ছেন। যদিও শেষ পর্যন্ত কী ঘটবে তা সবারই জানা। (সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের দৃষ্টান্ত স্মর্তব্য)। দ্বিতীয়ত, বিএনপি দেশবাসীকে বোঝাতে চায় যে, নির্বাচন কমিশন গঠন প্রশ্নে তারা রাজপথে আন্দোলন না করে (সে-সক্ষমতা তাদের আছে এটা কেউ মনেও করে না) আলোচনা-সমঝোতাই তারা চান। তৃতীয়ত, সরকার তথা আওয়ামী লীগ জানে যে, রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শের বাইরে যেতে পারবেন না, তাই তারা রাষ্ট্রপতির সংলাপকে স্বাগত জানিয়েছে। এটা দ্বারা তারা দেশবাসীর কাছে এ বার্তা পৌঁছে দিতে চান যে, আওয়ামী লীগও সংলাপ-সমঝোতাকে গুরুত্ব দেয়।
যারা এ ধারণা পোষণ করেন তারা যে খুব একটা ভ্রান্ত সে কথা বলার সুযোগ নেই। কারণ, যেখানে এসব সংলাপ-বৈঠকের শেষ ফলাফল কমবেশি সবারই অনুমিত, সেখানে এ ধারণাই সঠিক মনে হওয়া স্বাভাবিক নয় কি?
লেখক : সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক
[email protected]
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।