পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
এমনটা যে হতে পারে আগেই ইঙ্গিত ছিল। কাতার বিশ্বকাপের সময় পেলে অসুস্থ হয়ে পড়লেও হয়তো সেখানে চূড়ান্ত শোকের ছায়া নামেনি। বিধাতা হয়তো বিশ্বকাপেৃর রঙয়ে শোকের ছায়া নামতে দেননি। ডাক্তাররা তো তখন আশা ছেড়েই দিয়েছিলেন। কোনও কিছুই যে তার শরীরে কাজ করছিল না। তবে বিশ্বকাপের মজাটা মাটি করতে চাননি বলে লড়াই চালিয়ে গিয়েছিলেন। লিওনেল মেসির হাতে বিশ্বকাপ দেখে যেতে চেয়েছিলেন। লাতিন আমেরিকায় ট্রফি দেখতে চেয়েছিলেন। সেই দুটো সাধ পূর্ণ হয়েছে। কিন্তু আর থাকলেন না পেলে। ডিয়াগো ম্যারডোনার চলে যাওয়ার ঠিক ২ বছর এক মাসের ব্যবধানে গতপরশু স্থানীয় সময় বিকেল ৩টা ২৭ মিনিটে পৃথিবীকে বিদায় জানান ‘ফুটবলের সম্রাট’ খ্যাত ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি পেলে। ব্রাজিলের সাও পাওলোর আলবার্ট আইনস্টাইন হাসপাতালে মারা গেছেন পেলে। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮২ বছর। বার্ধক্যজনিত সমস্যার পাশাপাশি কয়েক বছর ধরে কোলন ক্যান্সারে ভুগছিলেন পেলে। গত নভেম্বরের শেষদিন থেকে হাসপাতালে চিকিৎসা চলছিল। কিন্তু সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরা হয়নি তার। সবাইকে কাঁদিয়ে তিনি ত্যাগ করেন শেষ নিঃশ্বাস।
হয়তো কোনো দৈব দৃষ্টিতে জানতেন মাত্র দুই বছরের মধ্যে আকাশে পাড়ি জমাবেন তিনিও! জীবন্ত এক কিংবদন্তীর শেষ বিদায় হবে? হয়তো হবে। নইলে ম্যারাডোনার বিদায়ে ওমন আবেগী হবেন কেন পেলে? আর্জেন্টিনার ১৯৮৬ বিশ্বকাপ জয়ের নায়ক ম্যারাডোনার চেয়ে বয়সে ২০ বছরের বড় পেলে। ম্যারাডোনার মৃত্যুর সংবাদে সেদিন শোকস্তব্ধ হয়ে পড়েছিলেন রেকর্ড ৩টি বিশ্বকাপজয়ী পেলে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এক সাক্ষাৎকারে আবেগতাড়িত কণ্ঠে পেলে বলেছিলেন, ম্যারাডোনার সঙ্গে তিনি দেখা করতে যাবেন। অন্যভুবনে একসঙ্গে তারা খেলবেন ফুটবল, ‘এটা (ম্যারাডোনার মৃত্যু) খুবই বেদনাদায়ক। এমন এক বন্ধুকে হারিয়ে ফেললাম! ঈশ্বর তার পরিবারকে শোক সইবার শক্তি দিন। আমি নিশ্চিত, একদিন আমরা একসঙ্গে আকাশে ফুটবল খেলব।’
দুনিয়াজুড়ে যুগ যুগ ধরে চলা সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ফুটবলারের বিতর্কে ব্রাজিলের নিজেরাও সামিল হয়েছিলেন অনেকবার। সব বিতর্কের ঊর্ধ্বে গিয়ে ২০২০ সালের ২৫ নভেম্বর না ফেরার দেশে পাড়ি জমান আর্জেন্টাইন ‘ফুটবল ঈশ্বর’ ম্যারাডোনা। ফুটবলে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো বনাম লিওনেল মেসির শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে সাম্প্রতিক অতীতে। তবে পেলে বনাম ম্যারাডোনার মধ্যে কে সেরা, সে বিষয়ে তর্ক-বিতর্ক চিরকালের। ব্যক্তিগত জীবনে এতে-অপরের প্রতি বৈরি মনোভাব পেলে-ম্যারাডোনা কারও মধ্যেই ছিল না। একে অপরকে পরম বন্ধু বলেই সম্বোধন করতেন তারা।
খেলা ছাড়ার পর থেকে অনেক অনুষ্ঠানেই পেলে ও ম্যারাডোনাকে দেখা গিয়েছে একসঙ্গে। দুই কিংবদন্তির মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ছিল অগাধ। তবে ডিয়াগোর সঙ্গে ফুটবল মাঠে মোকাবিলা হয়নি পেলের। দুজন দুই ভিন্ন সময়ের প্রতিদ্বন্দ্বী। কিন্তু মৃত্যুর পর হয়তো ছোট ভাই ডিয়েগার সঙ্গেই স্বর্গে ফুটবল খেলবেন সম্রাট। এমনটাই যে ইচ্ছে ছিল কালো মানিকের। ম্যারাডোনার মুখে থাকবে হাভানা চুরুট, পেলের হাতে স্প্যানিশ গিটার। স্বর্গে দেখা হবে ফুটবল রাজপুত্র এবং ফুটবল সম্রাটের।
তিন বার বিশ্বকাপ জিতেছিলেন ১৯৫৮, ১৯৬২ এবং ১৯৭০ সালে। বিশ্বের আর কোনও খেলোয়াড়ের এমন বিড়ল রেকর্ড নেই। ১৯৫৮ সাল এবং ১৯৭০ সালের ফাইনালে গোলও করেছিলেন পেলে। ব্রাজিল জাতীয় দল ছাড়াও সান্তোস ও নিউইয়র্ক কসমসসহ সব জার্সিতেই আলো ছাড়িয়েছেন ‘কালো মানিক’। ১২শ’ এর ওপর গোল করে সবাইকে ছাড়িয়ে গেছেন। যেই রেকর্ড এখনও কেউ ভাঙতে পারেনি।
পেলে খেলোয়াড়ী জীবন শেষে ব্রাজিলের ক্রীড়াপ্রতিমন্ত্রীও হয়েছিলেন। ব্রাজিলকে বিশ্ব জগতে চেনানোর পিছনে তার বড় অবদান রয়েছে। পেলেকে ব্রাজিলের ভক্তরা মনের উচুঁ জায়গায় রেখেছেন। ১০টি বিশ্বকাপ কভার করা ৭০ বছর বয়সী ক্রীড়া সাংবাদিক বাতিস্তা তো কাতার বিশ্বকাপ কভার করতে গিয়ে বলেছিলেন, ‘এই শতকের সেরা ক্রীড়াবিদ পেলে। কারণ ও এক হাজার গোল করেছে। এছাড়া জাতীয় দলের হয়ে ৮৪ গোল করেছে। সে অতি সাধারণ একটা মানুষ। সবার সঙ্গে মিশতে পারে। সবাইকে সম্মান করে। কাউকেই এড়িয়ে যায় না।’
পেলের মতো ম্যারাডোনার ঝুলিতেও রয়েছে রঙিন ফুটবলের বড় সাম্রাজ্য। যারা বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলাকে করেছেন আলোকিত। হয়তো তারা এখন ফুটবল নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়বেন অনন্তলোকে! শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে নামবেন ‘স্বর্গ একাদশের’ লড়াইয়েও! সেখানেও সতীর্থ হিসেবে পাচ্ছেন গ্যারিঞ্চা, সক্রেটিসদের!
ফুটবল মহারাজার প্রয়াণ স্পর্শ করেছে গোটা দুনিয়া। স্বাভাবিকভাবেই নিজেদের ইতিহাসের শ্রেষ্ঠতম ক্রীড়াবিদের মৃত্যুতে শোকে কাতর পুরো ব্রাজিল। এই কিংবদন্তির মৃত্যুতে ব্রাজিল সরকার তিনদিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে। এদিকে পেলের ইচ্ছানুযায়ী অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া কোথায় হবে, তা ঠিক করা হয়েছে।
২০২২ সালের একদম শেষ দিকে বিদায় নিলেও পেলেকে সমাহিত করা হবে নতুন বছরের শুরুতে। শারীরিক অবস্থা অবনতির পরই নিজের ইচ্ছা জানিয়ে যান পেলে। সেই অনুযায়ী তার মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে সাও পাওলোর ভিলা বেলমিরো স্টেডিয়ামে। সমাহিতের জন্য প্রস্তুত করা হবে আলবার্ট আইনস্টাইন স্টেডিয়াম। ২ জানুয়ারি পেলের লাশ নেওয়া হবে সান্তোস ক্লাব প্রাঙ্গণে। ৩ জানুয়ারি সান্তোসের রাস্তায় পেলের মরদেহ নিয়ে হবে অন্তিম যাত্রা। পেলের কফিন নিয়ে যাওয়া হবে কেলেস্তে। যেখানে এখনো ১০০ বছর বয়েসী তার মা ডোনা কেলেস্তে জীবিত। শয্যাশায়ী পেলের মাকে দেখানো হবে ছেলের লাশ। সব আনুষ্ঠানিকতা সেরে মেমোরিয়াল নেকরোপোল একিউমেনিকা সমাধিস্থলে সমাহিত করা হবে তর্কসাপেক্ষে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ফুটবলারকে। তবে পেলের সমাহিত করার আয়োজন জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকছে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।