Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ০৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৮ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

আর্থিক খাতে দৈন্যদশা

| প্রকাশের সময় : ৩১ ডিসেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

অর্থনৈতিক সংকট সহসা দূর হওয়ার কোনো আশাবাদ নেই। নানা সূচক ও বাস্তবতার বিচারে এই সংকট আরো তীব্র ও দীর্ঘ হওয়ার আশঙ্কা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। ব্যাংক, বিমা, সঞ্চয়পত্র, বৈদেশিক রেমিটেন্স, রফতানি সর্বত্রই নেতিবাচক ধারা চলছে। এহেন পরিস্থিতি সামনে রেখেই এক ধরনের রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও অস্থিতিশীলতার দিকে ধাবিত হচ্ছে দেশ। যে ধরনের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক সংকট দেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবেলা করার কথা, তেমন একটি সংকটে দেশে রাজনৈতিক বিভাজন আরো তীব্রতর আকার ধারণ করছে। বিরোধীদলের উপর পুলিশের কঠোর ব্যবস্থা, রাজনৈতিক কর্মসূচিতে হামলা-মামলা, গণগ্রেফতার, শীর্ষ নেতাদের জেলবন্দি করে রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরো উত্তপ্ত ও ঘোলাটে করার দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। দেশের অর্থনৈতিক কাঠামোগুলো ভেঙ্গে পড়ার পাশাপাশি অস্বাভাবিক মূল্যস্ফীতি দরিদ্র ও কর্মহীন মানুষকে এক ধরনের মানবিক বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিয়েছে। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের উপর দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির ভবিষ্যৎ এবং সামাজিক-রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নির্ভর করছে।

দুই বছর আগেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকে রির্জাভের রেকর্ড নিয়ে সরকারের সংশ্লিষ্টদের গর্বিত উচ্চারণ শোনা গেছে। এখন রিজার্ভ নিঃশেষ হতে হতে তলানিতে এসে ঠেকেছে। বছর জুড়ে পরিসংখ্যানের হিসাব নিয়েও বিভিন্ন সংস্থার মতভেদ ও গড়মিলের তথ্য উঠে এসেছে। আমাদের পরিসংখ্যানের হিসাব আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর কাছে গ্রহণযোগ্যতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা হারাচ্ছে বলে প্রতিয়মান হচ্ছে। একইভাবে দেশের ব্যাংকিং খাতের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা কমে যাওয়ায় মানুষ ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিচ্ছে। গতকাল পত্রিকান্তরে প্রকাশিত রিপোর্টে গত তিন বছরে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নেয়ার একটি ধারাবাহিক চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, অর্থনৈতিক সংকট দেখা দেয়ার আলামত ও নানাবিধ গুজবের প্রেক্ষাপটে সাধারণ মানুষ যে হারে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিয়েছে তার পরিমাণ আড়াই লাখ কোটি টাকা বা ২৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি। এটি নভেম্বরের হিসাব, ডিসেম্বর নাগাদ এই অংক আরো অনেক বেড়ে যাওয়ার কথা। ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নেয়ার পেছনে দুর্নীতি ও জালিয়াতির মাধ্যমে ব্যাংকিং খাত থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা সরিয়ে নেয়ার খবর, গুজব, মূল্যস্ফীতির কারণে আয়ের সাথে সঙ্গতিহীন ব্যয় মেটাতে ব্যাংকে রক্ষিত সঞ্চয় তুলে নিতে বাধ্য হচ্ছে মানুষ। অধিকাংশ ব্যাংক বৈদেশিক বাণিজ্যের এলসি দায় মেটাতে না পারার খবর কয়েকমাস আগেই প্রকাশিত হয়েছে। গ্রাহকরা আমানত তুলে নিয়ে ব্যাংকের তারল্য সংকট বাড়িয়ে দিলে ব্যাংকিং সেক্টরের বিদ্যমান সংকট আরো আরো তীব্র ও ঘনীভূত হওয়ার সমূহ আশঙ্কা রয়েছে। সরকারের বাজেট ঘাটতিসহ সরকারি ব্যয় নির্বাহের অন্যতম খাত হিসেবে জাতীয় সঞ্চয়পত্র বিক্রি অস্বাভাবিক হারে কমে যাওয়ার খবর গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত একটি রিপোর্টে জানা যায়। যেখানে একসময় লক্ষকোটি টাকা সঞ্চয়পত্র বিক্রির রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছিল, সেখানে চলতি অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র বিক্রির চেয়ে এ খাতে সুদ ও বিনিয়োগ ফেরতের পরিমাণ বেশি।

দেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদদের মতে, সঞ্চয়পত্রে সুদের হার কমানো এবং নানা ধরনের শর্ত ও কড়াকড়ির কারণে মানুষ সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। জিনিসপত্রের দাম বাড়া এবং আয়ের সাথে সঙ্গতিহীন ব্যয়বৃদ্ধির কারণে মানুষের সঞ্চয়ের সুযোগ কমে গেছে এবং সঞ্চিত অর্থ ভেঙ্গে খরচ করতে বাধ্য হচ্ছে। দেশের রফতানি বাণিজ্য ও আমদানি ব্যয়ের ক্ষেত্রেও ঘাটতির ধারা অব্যাহত রয়েছে। বৈদেশিক কর্মসংস্থান স্থিতিশীল ধারায় থাকলেও রেমিটেন্স আয় কমেছে। মানুষ ব্যাংকিং চ্যানেলের বদলে হুন্ডি বা বিকল্প পথে টাকা প্রেরণ করায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভে টান অব্যাহত রয়েছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে উন্নয়ন কর্মকান্ড, জরুরি আমদানি ব্যয়সহ সামগ্রিক অর্থনৈতিক কর্মকান্ড স্থবির হয়ে পড়তে পারে। এ ধরনের বাস্তবতা থেকেই অর্থনৈতিক দেউলিয়াত্ব এবং রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়ার আশঙ্কা থাকে। সাম্প্রতিক সময়ে তার বাস্তব উদাহরণ শ্রীলঙ্কা। এক সময়ের অগ্রসর, তেজি অর্থনীতির দেশ শ্রীলঙ্কা মূল্যস্ফীতি, জ্বালানি সংকটের হাত ধরে গণবিক্ষোভ ও রাজনৈতিক পটপরিবর্তন অনিবার্য হয়ে উঠেছিল। বাংলাদেশের সামগ্রিক অবস্থা এখনো এতটা নাজুক না হলেও অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার ও আস্থার সংকট দূর করা না গেলে দেশে বড় ধরনের সামাজিক-রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা দেখা দিতে পারে। সুশাসন, রাজনীতি ও অর্থনীতি পরস্পর হাত ধরাধরি করে চলে। বিদ্যমান রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা দূর করার পাশাপাশি মানুষের কর্মসংস্থান ও ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধির সাথে সাথে ব্যাংকিং খাতের সক্ষমতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।



 

Show all comments
  • hassan ৩১ ডিসেম্বর, ২০২২, ১১:৫৯ এএম says : 0
    চোর বাটপার রা দেশ চালায় আর এই জন্যই আজকে দেশের এই অবস্থা আমাদেরকে এখন ধুকে ধুকে মারছে এই সরকার সবকিছু লুটপাট করে বিদেশে পাঠিয়ে দিচ্ছে>>>
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন