Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ৩১ বৈশাখ ১৪৩১, ০৫ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

স্বপ্নের মেট্রোরেলের যাত্রা শুরু

| প্রকাশের সময় : ২৯ ডিসেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

ঢাকার যানজট নিরসনে বেশকিছু ফ্লাইওভার নির্মাণসহ গত তিন দশকে অনেক কিছুই করা হয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রে মেগা প্রকল্প হিসেবে মেট্টোরেল সবচেয়ে উচ্চাভিলাসী ও আশা জাগানিয়া প্রকল্প। প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরুর প্রায় এক দশক পর গতকাল মেট্টোরেল প্রকল্পের আংশিক উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে ঢাকা নগরবাসীর এক স্বপ্নযাত্রা শুরু হয়েছে। একই সাথে আধুনিক বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশের রাজধানী অত্যাধুনিক মেট্টোরেলের যুগে প্রবেশ করেছে। উল্লেখ্য, ২০১২ সালের ১৮ ডিসেম্বর সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার ভিত্তিক মেগা প্রকল্প এমআরটি প্রকল্প একনেকে অনুমোদনের ৪ বছর পর ২০১৬ সালের ২৬ জুন প্রকল্পের ৬ নম্বর লাইন উত্তরার দিয়াবাড়ী থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২১ কিলোমিটার মেট্টোরেল ২০২১ সালের মধ্যে শেষ করার কথা থাকলেও এমআরটি লাইন-৬ এর অর্ধাংশ উত্তরা থেকে আগারগাও পর্যন্ত কাজ শেষ করে গতকাল ২৮ ডিসেম্বর তা উদ্বোধনের জন্য খুলে দেয়া হল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিক উদ্যোগ ও তদারকিতে বাস্তবায়িত মেট্টোরেল ঢাকার পরিবহনব্যবস্থায় এক অনন্যসাধারণ মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হবে। পদ্মাসেতুর পর দেশের অবকাঠামো উন্নয়নে মেট্টোরেল এক অভিনব সংযোজন। ঢাকার যানজট-দুর্ভোগ লাঘবে এই প্রকল্প নগরবাসীর মনে নতুন প্রত্যাশা সঞ্চারিত করেছে। এমন একটি কালজয়ী প্রকল্প বাস্তবায়নে দূরদর্শী ও সাহসী উদ্যোগের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমাদের আন্তরিক অভিনন্দন। এক জটিল আর্থ-সামাজিক বাস্তবতায় বিপুল ব্যয়সাপেক্ষ মেট্টোরেল প্রকল্প সাফল্যের সাথে এগিয়ে নেয়ার জন্য সেতু ও যোগাযোগ মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং এমআরটি-৬ প্রকল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আমাদের অভিনন্দন।

তৃতীয় বিশ্বের দরিদ্র দেশের তকমা ঘুচিয়ে দেশকে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির সোপানে নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি নিজস্ব অর্থায়ন ও আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগিতায় অভাবনীয় বৃহৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যোগ্য, সাহসী, স্বাধীন ও দৃঢ়চেতা নেতৃত্বের পরিচয় উদ্ভাসিত হয়েছে। আমরা আশা করব, এমআরটি-৬ প্রকল্পের অবশিষ্ট অংশ শেষ করে আগামী বছরের মধ্যে উত্তরা থেকে মতিঝিল, কমলাপুর পর্যন্ত মেট্টোরেল সার্ভিস চালু হবে। আগারগাও পর্যন্ত অত্যাধুনিক, ডিজিটাল মেট্টোরেল চালুর মধ্য দিয়ে ঢাকার যানজট নিয়ে হতাশার মেঘ অনেকটা কেটে যাবে বলে আশা করা যায়। এমআরটির ৬টি লাইনের সম্মিলিত দৈর্ঘ্য ১২৮ কিলোমিটার। লক্ষকোটি টাকা ব্যয়সাপেক্ষ এই প্রকল্প ২০৩০ সালের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা। এমআরটি-১ প্রকল্পের ৩১ কিলোমিটার পথের বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ১৬ কিলোমিটার হবে দেশের প্রথম পাতাল রেল। পূর্বাচল ডিপো পর্যন্ত মোট ১৯টি স্টেশনের ১২টি থাকবে মাটির নিচে কমলাপুর থেকে পূর্বাচল পর্যন্ত ৭টি স্টেশন থাকবে ফ্লাইওভারের উপরে। ঢাকার চলমান যানজট ও বাণিজ্যিক গুরুত্ব বিবেচনায় প্রথম ধাপে ৬ নম্বর লাইন বাস্তবায়নের উদ্যোগ যৌক্তিক ও সাজুয্যপূর্ণ। এমআরটি লাইন ফোর বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে মেট্টোলাইন সার্ভিস নারায়নগঞ্জ পর্যন্ত সম্প্রসারণের মধ্য দিয়ে দেশের রফতানি বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন যাত্রায় নতুন গতি নিয়ে আসতে পারে। শেখ হাসিনার এই সাহসী উদ্যোগে জাইকা তথা জাপানের অর্থনৈতিক ও কারিগরি সহায়তার উদ্যোগ ও উন্নয়নের সেতুবন্ধনকে আমরা সাধুবাদ জানাই।

ঢাকার যানজটের বিড়ম্বনা সম্পর্কে নতুন করে বলার কিছু নেই। এই যানজটের কারণে বছরে প্রায় লক্ষকোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে, যা মোট জিডিপির ২ শতাংশের বেশী। শুধুমাত্র আর্থিক হিসাবে এর ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ সম্ভব নয়।এমআরটি প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে যানজট অর্ধেক কমিয়ে আনা গেলে তা আমাদের উন্নয়ন অগ্রগতির যাত্রায় নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করবে। এমআরটি-৬ প্রকল্পের পুরো কাজ শেষ হওয়ার আগেই তা বাণিজ্যিকভাবে চালুর উদ্যোগ নিয়ে অনেকের দ্বিমত থাকলেও দেশের জন্য প্রথম অত্যাধুনিক ডিজিটাল মেট্টোরেল প্রকল্প হিসেবে প্রাথমিকভাবে উত্তরা থেকে আগারগাও পর্যন্ত চালুর উদ্যোগের কিছু ইতিবাচক দিকও রয়েছে। তবে চালু হওয়া মেট্টোরেলের স্টেশনগুলোতে যাতায়াত নির্বিঘœ রাখতে কার্যকর উদ্যোগ নিশ্চিত করতে হবে। মতিঝিল থেকে ২০টি এবং উত্তরার হাউজ বিল্ডিং থেকে ১০টি বিআরটিসির দোতলা বাস চালুর উদ্যোগের কথা জানা গেছে। তবে মেট্টোরেল প্রকল্পের সার্থকতা নিশ্চিত করতে হলে প্রকল্পের পুরোটা চালু হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। যেখানে মতিঝিল থেকে বিমানবন্দর -গাজীপুর যেতে ঘন্টার পর ঘন্টা যানজটে বসে থাকতে হয়, সেখানে মাত্র ৩০ মিনিটে মাস র‌্যাপিড ট্রানজিটের সুযোগ এক যুগান্তকারী উদ্যোগ। এমআরটির পরিকল্পিত ৬টি লাইনের সফল বাস্তবায়নের পর ঢাকার চারপাশে তা আরো সম্প্রসারিত হতে পারে। ঢাকার নি¤œবিত্ত নাগরিকদের আর্থিক সঙ্গতির দিক বিবেচনা করেই মেট্টোরেলের ভাড়া নির্ধারণ করতে হবে। বিশ্বের আধুনিক নগরীগুলোর মেট্টোরেল সার্ভিসের আদলে এর পরিচ্ছন্নতা,শৃঙ্খলা-স্বচ্ছতা ও নিরাপত্তাব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। মেট্টোরেলের বাইরে ও নিচের রাস্তায় ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নয়ন ও যাতায়াত নির্বিঘœ রেখে যানজট কমিয়ে আনার জন্য সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। আজ থেকে শুরু হওয়া উত্তরার দিয়াবাড়ি থেকে আগারগাও পর্যন্ত মেট্টোরেলে মাত্র ৪ঘন্টার পরীক্ষামূলক সার্ভিস থেকে যে বাস্তবতা ধরা পড়বে, পরবর্তী ধাপগুলোর উন্নয়নে তা কার্যকর ভ’মিকা রাখতে পারে। মেট্টোরেলের উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে ঢাকার গণপরিবহণের এই নবযাত্রা প্রত্যাশার দ্বারপ্রান্তে পৌছে যাক, এই প্রত্যাশা আমাদের।



 

Show all comments
  • hassan ২৯ ডিসেম্বর, ২০২২, ১২:১০ পিএম says : 0
    স্বপ্ন-দুঃস্বপ্ন>> সাধারণ জ্ঞানে বলে যদি কোন লোকের দুই পা থাকে না বা একপা না থাকে >তারা কি দৌড় প্রতিযোগিতায় জিততে পারে> স্বাধীনতার পর থেকেই যারা দেশ শাসন করছেন> তারা জানেনা কিভাবে দেশ শাসন করতে হয়>>তারা জানে হত্যা গুম লুণ্ঠন> কোন কিছু করতে গেলেই বিদেশিদের সহায়তা লাগে> আর এই বিদেশিদের সহায়তা এত টাকা ঋণ নেয় >সেই ঋণ থেকে সাগর চুরি করে দেশের সরকার > সেই চুরি করা টাকা ঋণ সুদসহ জনগণকে দিতে হয়>> এই সরকার দেশটাকে পরনির্ভরশীল করে রেখে দিয়েছি যাতে জীবনে আমরা নিজের পায়ে দাঁড়াতে না পারি>>>আর এরাই হচ্ছে দেশদ্রোহী লুণ্ঠনকারী
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন