Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মারাত্মক মানবিক সঙ্কটে ইয়েমেন

আফতাব চৌধুরী | প্রকাশের সময় : ২৬ ডিসেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইয়েমেনে যুদ্ধ চলছে। দেশটির বিভিন্ন অংশে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়েছে। বলা হয়ে থাকে, ইয়েমেনের যুদ্ধের আড়ালে আদতে লড়াই চলছে সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে। ওদিকে আবার সৌদি আরব ও ইরানের পেছনে কলকাঠি নাড়ছে যুুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চীনের মতো পরাশক্তি। সব মিলিয়ে অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে, রাজায় রাজায় যুদ্ধ হচ্ছে আর উলুখাগড়ার প্রাণ যাচ্ছে।

রাজারা যাদের উলুখাগড়া মনে করেন, তারা হলো ইয়েমেনের সাধারণ মানুষ বা জনগণ। এই গৃহযুদ্ধে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। আশু ব্যবস্থা না নিলে মৃত্যুর তালিকা আরও দীর্ঘ হবে। কিন্তু কেন ইয়েমেনে দিনের পর দিন ধরে চলছে এই যুদ্ধ? আঞ্চলিক ও বৈশি^ক শক্তিগুলোই বা কেন উচ্চবাচ্য করছে না? যুদ্ধ চলতে থাকলে কোন অবস্থায় পৌঁছবে ইয়েমেন?

ইয়েমেনে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে ইন্ধন জুগিয়েছিল আরব বসন্ত। ক্ষমতার পালাবদলের আগে ইয়েমেনের দীর্ঘকালের প্রেসিডেন্ট ছিলেন একনায়ক আলি আব্দুল্লাহ সালেহ। প্রচন্ড বিক্ষোভের মুখে ২০১১ সালে আবদ রাব্বু মনসুর হাদির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন তিনি। নয়া প্রেসিডেন্ট হিসেবে শুরু থেকেই নানা প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হচ্ছিলেন হাদি। একদিকে জঙ্গিরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠছিল, অন্যদিকে ইয়েমেনের দক্ষিণে বিস্তার লাভ করছিল বিচ্ছিন্নতাবাদ। হুতি বিদ্রোহীরা তো ছিলই।

ইয়েমেনে ওই সময় আরও কিছু অভ্যন্তরীণ সমস্যা ছিল। আগের প্রেসিডেন্টের প্রতি নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের আনুগত্য ছিল বিব্রতকর। দুর্নীতি, খাদ্যভাব ও বেকারত্বের উচ্চহারের মতো বহু সমস্যায় জর্জরিত হয়ে পড়ে ইয়েমেন। এর মধ্যে শিয়া ধর্মাবলম্বী হুতিরা নতুন করে বিদ্রোহ শুরু করে। নয়া প্রেসিডেন্টে হাদির দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে উত্তর ইয়েমেনের ‘সানা’ প্রদেশ এবং এর আশপাশের এলাকা দখল করে নেয় হুতিরা। এ সময় সুন্নিসহ অনেক সাধারণ ইয়েমেনি নাগরিক হুতি বিদ্রোহীদের সমর্থন দিয়েছিল। ২০১৫ সালের শুরুর দিকে সানা দখল করে নেয় হুতিরা। ফলে ইয়েমেনে দু’টি পক্ষ দাঁড়িয়ে যায়। একটি সরকারপক্ষ, আরেকটি হুতি বিদ্রোহীরা। আলি আব্দুল্লাহ সালেহর সমর্থক সেনারাও হাত মিলিয়েছিল হুতিদের সঙ্গে। ২০১৫ সালের মার্চ মাসে এমন বিরূপ পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান মনসুর হাদি।

হুতি বিদ্রোহীদের ইরান সহযোগিতা করছে, এমন অভিযোগ তুলে এর পরপরই দৃশ্যপটে আসে সৌদি আরব। সৌদিদের পক্ষে যোগ দেয় আরব বিশে^র সুন্নিপ্রধান আরও ৮টি দেশ। শুরু হয়ে যায় হাদির পক্ষে জোটগত সামরিক অভিযান। ওই জোটকে গোয়েন্দা তথ্য ও সামরিক সহায়তা দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স। সেই থেকে ইয়েমেনে হানাহানি চলছেই।

২০১৫ সালের মার্চ মাসে সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন জোট ইয়েমেনে বোমাবর্ষণ শুরু করে। মনসুর হাদির সমর্থনে ওই বিমান হামলা শুরু হয়। নির্বাসনে থেকেই ইয়েমেনের প্রেসিডেন্ট হাদি এই অভিযানে সমর্থন দেন। হুতি বিদ্রোহীদের ইরান সমর্থন দিচ্ছে বলে বিশ^াস করে সৌদি আরব। কারণ, ইরান ও হুতি বিদ্রোহী, দুই-ই শিয়া মতাবলম্বী। সুন্নি সৌদি আরব তাই মনে করে, ইরানের শক্তিতে বলীয়ান হয়েই হুতিরা এত যুদ্ধংদেহী হয়ে উঠেছে। ওদিকে, যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ্য সমর্থন দিচ্ছে সৌদিকে। কারণ, ইরান, রাশিয়া ও চিনকে মধ্যপ্রাচ্যে ঠেকাতে চায় আমেরিকা।

কয়েক বছরের যুদ্ধে বিপর্যস্ত ইয়েমেন। দেশটিতে ঘটা মানব বিপর্যয় বিশে^র মধ্যে নিকৃষ্ট। জাতিংসংঘের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৫ সালের মার্চের পর থেকে এ পর্যন্ত সাত হাজারেরও বেশি মানুষ যুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছে। আহত হয়েছে ১১ হাজারের বেশি। নিহতদের ৬৫ শতাংশের মৃত্যুর কারণ সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের ফেলা বোমা। আর বাকিদের মৃত্যুর কারণ হুতি বিদ্রোহীরা। তবে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক পর্যবেক্ষণ সংস্থা আর্মড কনফ্লিক্ট লোকেশন অ্যান্ড ইভেন্ট ডাটা প্রজেক্টের দেওয়া হিসাব অনুযায়ী, ২০১৬ সালের জানুয়ারির পর থেকে এ পর্যন্ত ইয়েমেনে সহিংসতায় নিহত মানুষের সংখ্যা ৬৭ হাজারের বেশি। অন্যদিকে, ইয়েমেনের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৮০ শতাংশের বা ২ কোটি ৪০ লক্ষ মানুষের প্রয়োজন মানবিক সহায়তা।

সেভ দ্যা চিলড্রেনের দেওয়া হিসাব অনুযায়ী, ২০১৫ সালের এপ্রিল থেকে ২০১৮ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ইয়েমেনে প্রায় ৮৫ হাজার শিশুর মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে। এসব শিশু মারাত্মক পুষ্টিহীনতায় ভুগছিল। দেশটিতে প্রায় ২ কোটি মানুষ পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত। প্রায় ১ কোটি ৮০ লক্ষ মানুষ পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ পানি ও স্বাস্থ্যসম্মত শৌচাগারের সুবিধা পাচ্ছে না। এসব কারণে ২০১৭ সালের এপ্রিলে ইয়েমেনে ভয়ঙ্কর রূপে ছড়িয়ে পড়েছিল কলেরা রোগ। ওই সময় কলেরায় প্রায় তিন হাজার মানুষের মৃত্যু হয়, যাদের মধ্যে বেশির ভাগই শিশু ও মহিলা। সম্প্রতি আবার সেখানে কলেরা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। কারণ, অন্যান্য দেশের অবরোধের ফলে দেশটিতে জ¦ালানি তেলের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। সঙ্কট এতটাই তীব্র যে, আবর্জনাবাহী গাড়ি চালানোর মতো তেলও পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে সানাসহ কিছু এলাকায় আবর্জনা ও বর্জ্য পদার্থের স্তূপ তৈরি হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এভাবে চলতে থাকলে কিছুদিনের মধ্যে ফের কলেরা ছড়িয়ে পড়তে শুরু করবে।

ইউনিসেফের মতে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের শিক্ষকদের বেতন দু’বছর ধরে বন্ধ থাকায় অচিরেই অন্ধকারে তলিয়ে যেতে পারে ইয়েমেনের প্রায় ৩৭ লক্ষ শিশুর ভবিষ্যৎ। যুদ্ধের কারণে এমনিতেই দেশটিতে প্রায় ২০ লক্ষ শিশু-কিশোর নিয়মিত পড়াশোনা থেকে ঝরে পড়েছে। আবার দেশটির পাঁচ বছরের কম বয়সি প্রায় ১৮ লক্ষ শিশু ভুগছে মারাত্মক পুষ্টিহীনতায়।

ইয়েমেন মাধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম দরিদ্র দেশ। ইউএনডিপির দেওয়া সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, বর্তমান গৃহযুদ্ধ যদি ২০২৪ সাল পর্যন্ত চলে, তবে ইয়েমেন পৃথিবীর সবচেয়ে দরিদ্র দেশে পরিণত হবে। তখন দেশটির মোট জনসংখ্যার ৭৯ শতাংশ চলে যাবে দারিদ্রসীমার নিচে। অন্যদিকে, গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ রিপোর্ট অনুযায়ী, লিঙ্গসমতার দিক থেকে ইয়েমেনে মহিলাদের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ।

চলতি যুদ্ধে ঘরছাড়া হয়েছে ইয়েমেনের লক্ষ লক্ষ মানুষ। সংঘাতে ঘর ছেড়েছে ৩৩ লক্ষেরও বেশি মানুষ। এক কথায়, যুদ্ধবিধ্বস্ত ইয়েমেনে মানুষের জীবনের দামই সবচেয়ে সস্তা। এর চেয়ে ঢের দামি বুলেট বোমা। গৃহযদ্ধের শুরুতে আলি আব্দুল্লাহ সালেহর সঙ্গে হাত মিলিয়েছিল হুতিরা। কিন্তু ২০১৭ সালের নভেম্বরে সেই সন্ধি ভেঙ্গে যায়। সানার সবচেয়ে বড় মসজিদের নিয়ন্ত্রণ নেওয়াকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সম্পর্কে ফাটল ধরেছিল। মসজিদ দখলে নিয়েই হুতি বিদ্রোহীরা ঘোষণা করে, সালেহকে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনার পরই সরকার সমর্থিত বা হাদির পক্ষের শক্তিগুলোর সম্পর্কে ভাঙন দেখা দেয়। দক্ষিণ ইয়েমেনের বিচ্ছিন্নতাবাদীরা প্রথমে হাদির বাহিনীর সঙ্গে মিত্রতার সম্পর্ক গড়ে তুললেও, পরে তা নষ্ট হয়ে যায়। ইদানীং উপকূলবর্তী এডেনের দখল বুঝে নিয়েছে সাদার্ন ট্রানজিশনাল কাউন্সিল (এসটিসি)। আবার সংযুক্ত আরব আমিরশাহীর সেনাদের সঙ্গে এসটিসি’র সখ্য রয়েছে। সম্প্রতি ইয়েমেন ঘোষণা দিয়ে ফেলেছে আরব আমিরশাহী। ফলে সৌদি আরব নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট পড়েছে বিপদে।

ইয়েমেনে চলা গৃহযুদ্ধ আরব বিশে^ অস্থিরতার অন্যতম প্রধান কারণ। সংঘাত-সহিংসতার কারণে সেখানে ঘাঁটি গেড়েছে আল-কায়েদা ও ইসলামিক স্টেটের (আইএস) মতো সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো। এখান থেকেই বিশে^ হামলা চালানোর নীল নকশা হচ্ছে। তাই ইয়েমেনের যুদ্ধ পশ্চিমা বিশে^র জন্যও হুমকি হিসেবে দেখা দিয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, ইয়েমেনে চলা যুদ্ধ এক অর্থে ইরান ও সৌদি আরবের মধ্যকার ছায়াযুদ্ধে পরিণত হয়েছে। ইরান ও সৌদি আরবের মাধ্যমে আবার যুদ্ধ নাক গলাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র-চিন-রাশিয়া। সব মিলিয়ে একটি জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে ইয়েমেনের গৃহযুদ্ধ।

দরিদ্র দেশ ইয়েমেনের সংকট নিয়ে এত হেভিওয়েট রাষ্ট্রের আকৃষ্ট হওয়ার মূল কারণ হলো এডেন। লোহিত সাগর ও এডেন উপসাগরের মাঝখানে দেশটির অবস্থান। ওই নৌপথ দিয়েই বিশে^র সিংহভাগ তেলবাহী জাহাজ চলাচল করে। তাই ইয়েমেন যার নিয়ন্ত্রণে থাকবে, তার পক্ষে তেল সম্পদের ওপর খবরদারি করা সহজ হবে। ঠিক এই কৌশলগত কারণেই ইয়েমেন সবার কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সম্প্রতি ইয়েমেনে দু’টি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটেছে। ইয়েমেনের দক্ষিণাঞ্চলের বিচ্ছিন্নতাবাদীরা দখল করে নিয়েছে এডেন শহর। ভূ-রাজনৈতিক কারণে গুরুত্বপূর্ণ ওই এলাকার নিয়ন্ত্রণ বিরোধীদের হাতে চলে যাওয়ায় সৌদি আরব কিছুটা কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। আবার, আরব আমিরশাহীর সেনা প্রত্যাহারেও সামরিক জোটের মধ্যে বেশ অশ^স্তিতে পড়েছে সৌদি আরব।

বিশ্লেষকরা বলছেন স্বাভাবিকভাবেই বিচ্ছিন্নতাবাদীরা এবার দক্ষিণ ইয়েমেনে আরও এলাকা দখলে উৎসাহী হয়ে উঠবে। অন্যদিকে, হুতিরা দেশটির উত্তরাঞ্চলে প্রভাবশালী। এখনও সানা থেকেই তাদের হঠাতে পারেনি সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট। বর্তমান প্রেক্ষাপট বিবেচনায় তাই আশঙ্কা, ইয়েমেন হয়তো টুকরো টুকরো হয়ে যেতে পারে। আলোচনার মাধ্যমে ইয়েমেন সঙ্কটের সমাধান হওয়ার সম্ভাবনা বেশ ক্ষীণ। কারণ, ওই প্রক্রিয়া বছরখানেক ধরে চললেও তা থেকে ইতিবাচক কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। মাঝখান থেকে চিঁড়ে চ্যাপ্টা হচ্ছে ইয়েমেনের সাধারণ মানুষ। তাদের আর কত দিন ওই দুর্ভোগ পোহাতে হবে, কে জানে। উলুখাগড়াদের নিয়ে ভাবার মতো সময় যে রাজাদের নেই।

জাতিসংঘের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে প্রকাশ যুদ্ধবিধ্বস্ত দক্ষিণ ইয়েমেনের শিশুদের পুষ্টিহীনতা চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। জাতিসংঘ সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, ক্রমেই ভয়ানক খাদ্য সংকটের দিকে ধাবিত হচ্ছে ইয়েমেন। এ পুষ্টিহীনতার জন্য মহামারি করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব, আর্থিক মন্দা, বন্যা, দেশটিতে চলমান সংঘাত এবং চলতি বছর তাৎপর্যপূর্ণভাবে মানবিক সহায়তা কমে যাওয়াকে দায়ী করা হয়েছে এই প্রতিবেদনে। জাতিসংঘের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুদ্ধবিধ্বস্ত ইয়েমেনে চলতি বছর খাদ্যের জন্য হাহাকার আরও তীব্র হয়েছে। জাতিসংঘের ইয়েমেন বিষয়ক মানবিক সমন্বয়কারী লিজা গ্রেনডে বলেছেন, ‘আমরা গত জুলাই থেকে সতর্ক করে আসছি যে, ইয়েমেন বিপর্যয়কর খাদ্য সংকটের মধ্যে রয়েছে। এখনই যদি চলমান যুদ্ধ শেষ না হয় তাহলে বলতে হয় আমরা এমন একটা অবস্থার দিকে যাচ্ছি যেখান থেকে আগের অবস্থায় ফিরে আসা অসম্ভব।’ তাঁর মতে, বর্তমান অবস্থায় ইয়েমেনের তরুণ একটি প্রজন্ম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। দক্ষিণ ইয়েমেনের শিশুদের অপুষ্টি বিষয়ক এই সমীক্ষার তথ্য বলছে, ২০২২ সালে এসে পাঁচ বছরের কম বয়সি শিশুদের পুষ্টিহীনতার সংখ্যা ১০ শতাংশ ঠেকেছে, যা সংখ্যায় অর্ধ মিলিয়ন বা পাঁচ লাখেরও বেশি।

ইউনিসেফের ইয়েমেন প্রতিনিধি ফিলিপ্পে ডুয়ামেল্লে সংবাদসংস্থাকে বলেছেনে, ‘শিশুরা এই বয়সে পুষ্টিহীনতরা শিকার হলে মস্তিস্কের অপূরণীয় ক্ষতিসাধন হয় এবং এটা তাদের স্বাভাবিক বিকাশের ক্ষমতাকে নষ্ট করে দেয়। এটা আসলেই ভয়ঙ্কর ঘটনা।’

জাতিসংঘের প্রতিবেদন বলছে, ইয়েমেনের ১৫.৫ শতাংশ শিশু তীব্র অপুষ্টিতে ভুগছে। শুধু তাই নয়, দেশটির এক মিলিয়নের চতুর্থাংশ, অর্থাৎ প্রায় আড়াই লাখ গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী মায়ের অপুষ্টির চিকিৎসা দরকার। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সরকারের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে দক্ষিণ ইয়েমেনের প্রায় ১৪ লাখ শিশু, যাদের বয়স পাঁচ বছরের কম। তবে ইরান-সমর্থিত যোদ্ধাদের নিয়ন্ত্রিত উত্তর ইয়েমেনের শিশুদের অপুষ্টির তথ্য এই প্রতিবেদনে উঠে আসেনি। ইয়েমেনে তীব্র খাদ্য সংকট দেখা দিলেও এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে দুর্ভিক্ষ ঘোষণা করেনি ইয়েমেন সরকার।

বিশে^র মধ্যে সবচেয়ে মানবিক সংকটে ভুগছে ইয়েমেন। দেশটির ৮০ শতাংশ মানুষ মানবিক সহায়তার ওপর নির্ভরশীল।

লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট।



 

Show all comments
  • IBAN KHAN ২৮ ডিসেম্বর, ২০২২, ৫:৪৫ পিএম says : 0
    বিশ্বব্যাপি মুসলিমদের উপর যুলুম অত্যাচার গোলো অন্যান্য পত্রিকাগুলো প্রকাশ করতে অনাগ্রহী সেখানে- 'দৈনিক ইনকিলাব' এর টিক ব্যতিক্রম ইহা দেখে আমি অত্যন্ত খুশি হই। অত্যন্ত যত্নসহকারে খুটিয়ে খুটিয়ে বিশ্বের আনাচে কানাছে মুসলিমদের উপর বর্বর আগ্রাসন চলমান। এই খবর গুলো আপনারা নিয়মিত প্রকাশ করেন। নিঃসন্ধেহে একজন মুসলিম হিসেবে অন্তত আমাদের বিশ্বব্যাপি মুসলিম ভাইবোনদের বিপদ আপদের খবর রাখা ফরজ এবং এসবের স্বাক্ষী হতে পারাও ভালো। ইনশা আল্লাহ শীঘ্রই মুসলিমদের উপর এসব অত্যাচার রক্ষাকল্পে আল্লাহ আমাদের একজন বিশ্ব-ত্রানকর্তা পাঠাবেন। আর এসব খবর আমরা তার কাছে উত্থাপন করতে পারববো। এইভাবে ধারবাহিক নিউজ একসময় মুসলিম নেতাদের বিবেক জাগ্রত করবে বলে আশাবাধী আমি। একদিন আল্লাহ আমাদের একজন বিশ্ব ত্রান কর্তা পাঠাবেন ইনশা আল্লাহ। যার ফলে- যালেমদের জুলুমের সমাপ্তি করা সম্বব হবে ইনশা আল্লাহ। আমি অত্যন্ত কৃতজ্ঞ আপনাদের প্রতি।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন