Inqilab Logo

সোমবার, ২৪ জুন ২০২৪, ১০ আষাঢ় ১৪৩১, ১৭ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনই কাম্য

সম্পাদকীয়-১

প্রকাশের সময় : ২২ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১২:১৪ এএম, ২২ ডিসেম্বর, ২০১৬

বহুল আলোচিত-প্রতীক্ষিত নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন আজ। সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও ২৭টি ওয়ার্ডের কমিশনার ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর নির্বাচনের জন্য সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ১৭৪টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ চলবে। দেশের চলমান রাজনৈতিক বাস্তবতা, নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে সরকার এবং বিরোধীদল বিএনপি’র মধ্যে রাজনৈতিক টানপোড়েন, প্রেসিডেন্টের সংলাপ এবং আগামী নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে জনগণের প্রত্যাশিত সমঝোতায় এই নির্বাচন তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এটি ঢাকার বাইরের একটি স্থানীয় নির্বাচন হলেও দেশের সার্বিক রাজনৈতিক মোমেন্টাম এই নির্বাচনকে বাড়তি গুরুত্ববহ করে তুলেছে। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন এলাকার প্রায় পৌনে ৫ লাখ ভোটার যেমন আজ নিজেদের পছন্দনীয় মেয়র প্রার্থীকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করতে নির্ভয়ে-নিঃশঙ্কচিত্তে  ভোটকেন্দ্রে যেতে চায়। একইভাবে দেশের শান্তিপ্রিয়, গণতন্ত্রকামী জনগণও এই নির্বাচনকে দেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও ইতিবাচক নির্বাচনী সংস্কৃতি ফিরিয়ে আনার টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে দেখতে চায়। নানা হিসাব-নিকাশ ও রাজনৈতিক সমীকরণের মধ্য দিয়ে সরকার, মহাজোট, বিএনপি ও ২০ দলীয় জোট এই নির্বাচনের ফলাফলকে নিজেদের আয়ত্তে রেখে আগামী দিনের ভোটের রাজনীতিকে নিজেদের পক্ষে রাখতে চাইছে। তবে ভোটের রাজনীতির বল এখন পুরোপুরি সরকার এবং সরকারী দলের কোর্টে। তারা যেনতেন প্রকারে নারায়ণগঞ্জে নিজেদের বিজয় নিশ্চিত করতে চাইলে তা’ যেমন অসম্ভব নয়, তেমনি নির্বাচনকে অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু করার মধ্য দিয়ে নির্বাচনী ফলাফলের ভার ভোটার তথা জনগণের উপর ছেড়ে দিয়ে জয়-পরাজয়ের অনিশ্চয়তা মেনে নেয়ার মধ্য দিয়ে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির নমুনা প্রদর্শন করতে পারেন। এভাবে আওয়ামীলীগ সরকার ও নির্বাচন কমিশন এ নির্বাচনকে নিজেদের ভাবমর্যাদা উন্নয়নে কাজে লাগাতে পারেন।
বিএনপিসহ বেশীরভাগ রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনের বাইরে রেখে একতরফা, বেশীরভাগ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে আমাদের নির্বাচনী ব্যবস্থায় ভয়াবহ অবক্ষয় দেখা দিয়েছে। সব স্থানীয় নির্বাচনকেই  সরকারী দল যেভাবে ক্ষমতার মৌরসি পাট্টা হিসেবে সাব্যস্ত করেছে, দেশের গণতন্ত্রকামী মানুষ সে অবস্থার পরিবর্তন চায়। বিরোধীদল বিএনপি যেমন নাসিক নির্বাচনকে একটি টেস্ট কেস হিসেবে গ্রহণ করেছে, একইভাবে সরকার ও নির্বাচন কমিশনও এই নির্বাচনকে স্ব স্ব ক্ষেত্রে টেস্ট কেস হিসেবেই গ্রহণ করেছে বলে বিভিন্ন সময়ে তাদের পক্ষ থেকে দেয়া বক্তব্যে প্রতীয়মান হয়েছে। তবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের পক্ষ থেকে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রশ্নে ইতিপূর্বে যে সব আশঙ্কার কথা বলা হয়েছে, সে প্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশনের যথাযথ উদ্যোগ নিয়েছে কিনা তা’ নিয়ে সংশয় রয়েছে। বিএনপি জোটের সেনা মোতায়েনের দাবীর কথা বাদ দিলেও বিশেষত অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার এবং সন্ত্রাসী ক্যাডার বাহিনীর সম্ভাব্য তৎপরতা প্রতিরোধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের লিপসার্ভিস ছাড়া তেমন কোন অভিযান পরিচালনা করা হয়নি। এ কথা ঠিক যে, নির্বাচনই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার সব নয়। এমনকি নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ ও অনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখার প্রশ্নে শুধুমাত্র ভোটের দিনের নিরাপত্তা ব্যবস্থাই যথেষ্ট নয়। বিশেষত কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে কিছু সংখ্যক মাদক ব্যবসায়ী, অবৈধ অস্ত্রধারী ও চাঁদাবাজ ক্যাডার থাকায় নির্বাচনী পরিবেশ ও নিরাপত্তা নিয়ে আশঙ্কা দূর হয়নি। গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত এক রিপোর্টে নাসিক নির্বাচনে কাউন্সিলর প্রার্থীদের টাকা দিয়ে ভোট কেনার প্রতিযোগিতার কথা জানা যায়। নির্বাচনকে কালো টাকার প্রভাবমুক্ত রাখাও নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব। তবে মেয়র নির্বাচনে দুই প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী দলের প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে যেমন এক ধরনের চমক ছিল, দু’একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা বাদ দিলে  নির্বাচনী  প্রচারণার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত উৎসবমুখর পরিবেশ লক্ষ্য করা গেছে।
গোটা জাতি যখন একটি গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক জাতীয় নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেইং ফিল্ড প্রত্যাশা করছে, তখন নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচন সকল পক্ষের জন্য একটি অগ্নিপরীক্ষা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। নগণ্য কিছু ব্যতিক্রম থাকলেও সাম্প্রতিক  উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনসহ প্রায় সব স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সরকারীদলের পক্ষে একতরফা ও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার প্রবণতা দেখা গেছে। নির্বাচনের নামে পদ দখলের এ ধরনের তামাশায় সাধারণ জনগণ হতাশ ও বিক্ষুব্ধ। নাসিক নির্বাচনে বিএনপি’র অংশগ্রহণ ও ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থানে  দীর্ঘদিন পর নৌকা ও ধানের শীষের একটি মর্যাদার লড়াইয়ে পরিণত হয়েছে। জনগণের ব্যাপক সমর্থন ও প্রত্যাশা সত্ত্বেও  সরকারের প্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষতা ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে কঠোর ভূমিকা পালনে ব্যর্থ হলে সংশ্লিষ্ট সকলের জন্য তা’ বড় ধরনের ব্যর্থতা হিসেবে গণ্য হবে। নির্বাচনে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে শহরে ইতিমধ্যে বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। পুলিশ, র‌্যাবসহ নিরাপত্তাবাহিনীর ৯ হাজারের অধিক সদস্য মোতায়েন রাখা হচ্ছে বলে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে। দেশের নির্বাচনব্যবস্থা ও গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির উন্নয়নে সরকারীদল, নির্বাচন কমিশন এবং বিরোধীদলের কাছে প্রত্যাশিত ভূমিকা ও সদিচ্ছার প্রতিফলন দেখতে চায় জনগণ। আজকের নাসিক নির্বাচনে ভোটদানের মধ্য দিয়ে বন্দর নগরী নারায়ণগঞ্জবাসী যেমন তাদের প্রত্যাশিত প্রার্থীকে বিজয়ী করার সুযোগ পাবেন, তেমনি সারাদেশের মানুষ এই নির্বাচনকে আগামী দিনের নির্বাচনী ব্যবস্থার রোল মডেল হিসেবে দেখতে চায়। আজকে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে নারায়ণগঞ্জ থেকেই শুরু হোক গণতন্ত্রের নতুন অভিযাত্রা। এই প্রত্যাশা সকলের। 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন