Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পোশাক শিল্পে অস্থিরতা

সম্পাদকীয়-২

প্রকাশের সময় : ২২ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১০:১৯ পিএম, ২১ ডিসেম্বর, ২০১৬

গত কয়েক দিনের টানা শ্রমিক অসন্তোষের মুখে ঢাকার আশুলিয়ার ৫৫ তৈরি পোশাক কারখানা গত মঙ্গলবার অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দিয়েছে মালিকরা। এদিকে আন্দোলনের কারণে রপ্তানি বাজার হারানোর আশঙ্কা করছে বিজিএমইএ। কারখানা বন্ধ থাকলেও শ্রমিকদের চাকরি থাকবে তবে তারা বেতন পাবে না। শ্রমিকদের কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে শান্তিপূর্ণভাবে কাজে ফিরলে কারখানা খুলে দেয়া হবে। গত মঙ্গলবার রাজধানীর বিজিএমইএ ভবনে মালিকপক্ষ সাংবাদিক সম্মেলনে শ্রমিকদের এ আন্দোলনকে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র আখ্যা দিয়ে ষড়যন্ত্রকারীদের শাস্তি দেয়ার দাবি জানিয়েছে। সংগঠনের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেছেন, বিভিন্ন সময়ে শ্রমিকদের উস্কানি দিয়ে পোশাক শিল্পকে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দেয়া হয়েছে। এ শিল্প নিয়ে বড় ধরনের চক্রান্ত শুরু হয়েছে। তিনি বলেছেন, চক্রান্তকারীরা জানে পোশাক শিল্পকে ধ্বংস করা গেলে বাংলাদেশের অর্থনীতির মেরুদ- ভেঙে যাবে। প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, গত সোমবার সরকারের চারজন মন্ত্রী মালিকপক্ষ ও শ্রমিক নেতাদের ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের পরও  শ্রমিকরা শান্ত হয়নি। শ্রমিকরা কাজ না করায় কারখানায় উৎপাদন বন্ধ ছিল। ফলে পোশাক রপ্তানি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। বন্ধ কারখানাগুলোতে দু’লাখের মত শ্রমিক কাজ করছে। সংগঠনের একজন সহসভাপতি তাৎক্ষণিক হিসাব করে জানিয়েছেন, কারখানাগুলোতে দিনে কমপক্ষে এক কোটি মার্কিন ডলারের পোশাক উৎপাদন করা হয়।
বেশ ক’দিন আগেই আশুলিয়া এলাকায় গার্মেন্টসে ন্যূনতম মজুরি বর্তমানের চেয়ে তিনগুণ বাড়ানোর দাবি সম্বলিত লিফলেট ছড়িয়ে দেয়া হয়। বেনামে ছড়িয়ে দেয়া ওই লিফলেটের জের ধরে একটি দু’টি করে কারখানার শ্রমিকরা কর্মবিরতি শুরু করে। কিছু শ্রমিক নিয়ে ওই এলাকায় একটি সমাবেশও হয়েছে। প্রতিদিনের মত গত মঙ্গলবারও সকাল আটটার মধ্যে শ্রমিকরা নিজ নিজ কর্মস্থলে হাজির হলেও কাজ না করে বসে থাকে। সকাল সোয়া ৮টা থেকে দুপুর ১২টার মধ্যে অন্তত ২৫টি কারখানার শ্রমিকরা বের হয়ে অসে। শ্রমিক ও প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণ অনুযায়ী, শ্রমিকদের একটি অংশ সকাল সোয়া নয়টার দিকে  আবদুল্লাহপুর-বাইপাইল সড়কের আশুলিয়ার জামগড়া ও শিমুলতলা এলাকায় সড়ক অবরোধের চেষ্টা করে। এসময়ে তারা যানবাহনে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে এবং ধাওয়া করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এর পরই সড়কে র‌্যাব-পুলিশের টহল জোরদার করা হয়। প্রতিটি কারখানার সামনে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। বেতন-ভাতা নিয়ে আন্দোলন হলেও মালিক-শ্রমিক উভয় পক্ষেরই ভিন্ন সুর রয়েছে। একথা অস্বীকার করা যাবে না, সরকার একতরফাভাবে দেশের আমলাদের বেতন বৃদ্ধির বিরূপ প্রতিক্রিয়া এখন সর্বত্র পড়তে শুরু করেছে। একদিকে ভ্যাট-করের আওতা দিন দিনই বৃদ্ধি পাচ্ছে, অন্যদিকে দ্রব্যমূল্য অসহনীয় হয়ে উঠছে। সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের শিল্প বাস্তবতা এখন খুবই নাজুক। শিল্পবান্ধব পরিস্থিতির অনুপস্থিতিতে দেশের অর্থনীতি নতুন ঝুঁকির মুখে পড়তে যাচ্ছে। এই বাস্তবতায় দেশের রফতানি খাতের প্রধান উৎস তৈরি পোশাক শিল্পের অচলাবস্থা প্রকৃত বিবেচনাতেই উদ্বেগের। লক্ষণীয় হচ্ছে কোন পক্ষই কঠোর অবস্থানে যায়নি। মালিক কারখানা বন্ধ করলেও শ্রমিক ছাঁটাই বা কঠিন কোন পরিস্থিতি তৈরি করেনি। শ্রমিকদের থেকেও অলোচনার দ্বার বন্ধ হয়ে গেছে এমন মনে হবার কোনা কারণ নেই। ইতোমধ্যেই দাবির কোন কোন অংশ মেনে নেয়া হয়েছে বলে বলা হয়েছে। মজুরি বৃদ্ধির ব্যাপারে সময়ের বাধ্যবাধকতার যে বিষয়টি উঠে এসেছে, সেটি অবশ্যই আলোচনার ভিত্তিতে মীমাংসার যোগ্য।
অস্বীকার করা যাবে না বাংলাদেশের পোশাক শিল্প নিয়ে এক ধরনের চক্রান্ত রয়েছে। চক্রান্তের গতি-প্রকৃতি কি তা অবশ্যই খতিয়ে দেখা দরকার। মূলত বাংলাদেশের অর্থনীতি যারা ধ্বংস করতে চায় তারাই এদেশের পোশাক শিল্পের বিকাশ সহ্য করতে পারছে না। এটি বেতন-ভাতার আন্দোলনের সাথে কতটা সম্পৃক্ত তা অবশ্যই দেখার বিষয়। বাস্তবতা হচ্ছে, অনেক পোশাক কারখানা বন্ধ রয়েছে। এখন কাজের মওসুম। বিদেশ থেকে যারা অর্ডার পেয়েছেন তারা যদি সময় মত অর্ডার সরবরাহ করতে না পারেন তাহলে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে বাধ্য। এটা অর্থনীতির জন্য উদ্বেগের। এমনিতেই বলা হয়েছে, বাংলাদেশে আমদানি ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। তার উপর পোশাকখাতে নতুন করে আন্দোলন দেখা দিলে তা মোকাবিলা করা কঠিন হয়ে উঠতে পারে। সে কারণে জাতীয় স্বার্থেই পোশাক কারখানাগুলো খোলা রাখার আন্তরিক উদ্যোগ প্রয়োজন। শ্রমিকদেরও এটা অনুভব করতে হবে কারখানা বন্ধ রেখে ফায়দা আদায় সম্ভব নয়। সংশ্লিষ্ট সকলে আন্তরিক ও উদ্যোগী হলে এ সংকট মোকাবিলা করা তেমন কঠিন নয়।  



 

Show all comments
  • Mohammed Shah Alam Khan ২২ ডিসেম্বর, ২০১৬, ৯:৫৬ পিএম says : 0
    আমি এই শ্রমিক আন্দলনের পেছনে কারা কাজ করছেন সেদিকে নজর দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরকে অনুরোধ করব।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন