Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সীমান্তে বিএসএফ’র বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ড

| প্রকাশের সময় : ২৫ ডিসেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

সীমান্ত হত্যাকাণ্ড শূন্যে নামিয়ে আনার কথা থাকলেও ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ তা মানছে না। একের পর এক নিষ্ঠুর ও বর্বর পন্থায় বাংলাদেশী হত্যা করে চলেছে। কখনো গুলি করে, কখনো ধরে নিয়ে নির্যাতনে হত্যা করছে। গত ১১ ডিসেম্বর পরিবারের সাথে অভিমান করে বাংলাদেশের পুটখালী সীমান্ত দিয়ে শাহিনুর রহমান শাহিন নামে এক তরুণ পাসপোর্ট-ভিসা ছাড়াই ভারতে প্রবেশ করে। ঐ দিনই ঘোনারমাঠ ক্যাম্পের বিএসএফ সদস্যরা তাকে আটক করে মারধর করে বনগাঁও থানায় সোপর্দ করে। গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টায় বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে ইমিগ্রেশনের মাধ্যমে শাহিনুরের লাশ পোর্ট থানা পুলিশের কাছে বিজিবি হস্তান্তর করে। লাশের শরীরে অনেক জখমের চিহ্ন থাকায় তাকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে বলে শাহিনুরের পরিবার দাবী করেছে। বিএসএফ বলেছে, আটকাবস্থায় শাহিনুর অসুস্থ হয়ে মৃত্যুবরণ করেছে। প্রশ্ন উঠেছে, আটকের ১২ দিন পার হয়ে গেলেও বিএসএফ কেন শাহিনুরকে আটকের খবর বিজিবিকে জানায়নি? সাধারণত দুই দেশের কোনো নাগরিক সীমান্ত অতিক্রম করে ধরা পড়লে উভয় দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিষয়টি পরস্পরকে অবহিত করে। এক্ষেত্রে বিএসএফ বিজিবিকে জানায়নি বলে সংশ্লিষ্ট এলাকার কমান্ডিং অফিসার জানিয়েছেন। স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধি বিবিসিকে বলেছেন, বাংলাদেশের ভেতরে কোনো ভারতীয় অবৈধভাবে প্রবেশ করলে তাকে আটকে আমরা বিএসএফকে খবর দেই। নির্যাতন করে মেরে ফেলা হয় না। বিএসএফ কেন আমাদের লোক অবৈধভাবে প্রবেশ করলে খবর না দিয়ে নির্যাতন ও মেরে ফেলে?

বাংলাদেশ ও ভারত সীমান্তে বিএসএফ’র দ্বারা বাংলাদেশী হত্যা ও নির্যাতন নতুন কিছু নয়। বছরের পর বছর ধরে চলছে। বলা হয়ে থাকে, বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক সীমান্ত। এই সীমান্তে বিএসএফ পাখির মতো গুলি করে বাংলাদেশীদের হত্যা করে। ধরে নিয়ে নির্যাতন করে। অজুহাত হিসেবে দাঁড় করায় মাদক ও অন্যান্য পণ্যের চোরাকারবারি হিসেবে। অথচ আমরা দেখেছি, জমিতে কৃষিকাজরত কিংবা নদীতে মাছ ধরারত অবস্থায় বিএসএফ গুলি করে বাংলাদেশী হত্যা করেছে। কখনো কখনো সীমান্ত অতিক্রম করেও হত্যা করেছে। সীমান্তে বিএসএফ-এর এই অমানবিক আচরণ বন্ধে দুই দেশের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে সমঝোতা হলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। ভারত অঙ্গীকার রক্ষা করেনি বা করছে না। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত বছরের জুন থেকে এ বছরের জুন পর্যন্ত বিএসএফ ২৩ বাংলাদেশীকে হত্যা করেছে। এর সাথে সর্বশেষ যুক্ত হয়েছে শাহিনুর। মানবাধিকার সংস্থা অধিকার-এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০০০ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত বিএসএফ-এর হাতে নিহত হয়েছে ১২৫৩ বাংলাদেশী। এসব হত্যাকাণ্ডের সাথে সংশ্লিষ্ট বিএসএফ’র সদস্যদের কারো বিচার হয়নি। ভারত সরকারও এ ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ নেয়নি। বরং বিএসএফকে নিয়ন্ত্রণের পরিবর্তে প্রশ্রয় দেয়া হচ্ছে। অথচ কথায় কথায় বাংলাদেশের সাথে ভারতের বন্ধুত্ব স্বর্ণশিখরে রয়েছে বলে বলা হয়। এসব কথা যে কথার কথা ছাড়া কিছুই নয়, তা সীমান্তে বাংলাদেশী হত্যার মধ্য দিয়েই প্রতিভাত হচ্ছে। অন্যদিকে, বাংলাদেশ সরকারও এ ব্যাপারে কোনো ধরনের প্রতিবাদ করে না। সীমান্ত হত্যাকাণ্ড শূন্যে নামিয়ে আনার যে অঙ্গীকার রয়েছে, তা বাস্তবায়নেও জোর প্রচেষ্টা প্রতীয়মান হচ্ছে না। বিএসএফ কোনো ধরনের সীমান্ত নীতিই মানছে না।

ভারতের সাথে তার অন্যান্য প্রতিবেশীরও সীমান্ত রয়েছে। সেসব সীমান্তে বিএসএফ’র এমন আচরণের কথা শোনা যায় না। এ থেকে এটাই প্রতীয়মান হয়, সেসব দেশের পররাষ্ট্রনীতি অত্যন্ত শক্তিশালী, যার ফলে বিএসএফ কোনো ধরনের বিরূপ আচরণ করতে পারে না। এমনকি ভারতের চিরশত্রু পাকিস্তান সীমান্তেও বাংলাদেশের সীমান্তের মতো বিএসএফ এমন আচরণ করতে সাহস পায় না। অথচ বাংলাদেশের সাথে ভারতের চমৎকার সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও বিএসএফ সীমান্তে বাংলাদেশীদের হত্যা করছে। এটা কেমন সুসম্পর্ক এবং তা দাবী করা কতটা যৌক্তিক, তা বোধগম্য নয়। বলার অপেক্ষা রাখে না, ইতোমধ্যে ভারত বাংলাদেশের কাছে তার যত ধরনের স্বার্থ ও দাবী করেছে, তার সবই পূরণ করা হয়েছে। বিনিময়ে বাংলাদেশ তার ন্যূনতম দাবীর কিছুই পায়নি। বলা যায়, বন্ধুত্বের নামে ভারত বাংলাদেশের সাথে বৈষম্যমূলক আচরণ করছে। আমাদের সরকার তা হজম করে যাচ্ছে। অনেকের মতে, এই নতজানুতা প্রদর্শনই সীমান্ত হত্যার মূল কারণ। নাগরিকদের জীবন ও সম্পদ রক্ষায় সরকারকে যথোচিত দৃষ্টিভঙ্গী ও পদেক্ষেপ নিতে হবে।



 

Show all comments
  • Md. Aman Ullah Talukder ২৫ ডিসেম্বর, ২০২২, ১১:০১ এএম says : 0
    এটা বাংলাদেশীদের জন্য ঠিকই আছে! কারন যাদের মারা হয় তারা হয় গরু পাচারকারী না হয় চোরাচালানকারী!! নতজানু পররাস্ট্রনীতি থাকলে এইরুপ হওয়াই স্বাভাবিক!!!
    Total Reply(0) Reply
  • jack ২৫ ডিসেম্বর, ২০২২, ১:০৩ পিএম says : 0
    অতীতে মুসলিমরা সংখ্যায় ছিল স্বল্প কিন্তু তারা বিশ্বের মধ্যে সুপারপাওয়ার ছিল শুধু তাই নয় জ্ঞানে-বিজ্ঞানে তারা শ্রেষ্ঠ ছিল আজ আমরা মুসলিমরা কোরআন থেকে 3 ট্রিলিয়ন মিলিয়ন দূরে বসবাস করছি এর পরিপ্রেক্ষিতে কাফেররা আমাদেরকে ইঁদুরের মতো মারছে আমাদের দেশ যদি কোরান দিয়ে শাসন করা হতো তাহলে ইন্ডিয়া বাবার মার বাপের সাহস হতোনা আঙ্গুল তুলে তাকাতে তাহলে আমরা তাদের আঙুল তুলে ফেলতাম
    Total Reply(0) Reply
  • Bakhtiar ২৫ ডিসেম্বর, ২০২২, ৭:০৭ পিএম says : 0
    অসাধারন ইনকিলাব! এরকম যদি আর দুই একটা জাতীয় গণমাধ্যম এগিয়ে আসত, তাহলে হয়তো সরকারের টনক নড়ত, কিন্তু দুর্ভাগ্য বাংলাদেশের, দেশপ্রেমিক সেই গণমাধ্যম আর নেই, সবই একরকম আত্মসমর্পন করে বসে আছে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন