Inqilab Logo

শনিবার ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ২৯ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

গ্যাসের অপচয় বন্ধ করতে হবে

ড. অজয় কান্তি মন্ডল | প্রকাশের সময় : ২৫ ডিসেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

কর্মসূত্রে সাভারে অবস্থান করছি বেশ কিছুদিন। সাভার ক্যান্টমেন্ট এলাকার পাশেই বাসা। বাসায় ওঠার পর থেকে বেশ কিছু সমস্যার সম্মুখীন হলেও রান্নাবান্নার সমস্যাটি খুব বেশি পীড়া দিচ্ছে। বাসায় পাইপ লাইনে তিতাস গ্যাসের সংযোগ থাকলেও রান্নার চুলা জ্বলে না। চুলার চাবি চালু করলেও আগুন জ্বলার ন্যূনতম গ্যাস থাকে না। মাঝে মধ্যে এমন সময়ও গেছে অফিসে দুপুরের খাবার নেওয়া সম্ভব হয়নি। এরপর জানতে পারলাম, রাত ১১টা থেকে ভোর সাড়ে ৪টা পর্যন্ত গ্যাসের ভালোই সাপ্লাই থাকে। স্বভাবতই আমরা রাত ১১টার আগেই ঘুমিয়ে যাই। আবার সকালে ওঠারও চেষ্টা করি। কিন্তু প্রায় সাড়ে ৫টা বেজে যায়। তাই তিতাস গ্যাসের পাইপ লাইনে উঁকি দেওয়ার বিষয়টা আমাদের কাছে অনেকটা অজানা। গ্যাসের নাগাল পেতে আমার স্ত্রী শেষ রাতে ওঠে রান্নার চেষ্টা করে। কিন্তু সেখানেও সমস্যা। ভোর ৪টায় উঠে রান্না শেষ হওয়ার আগেই গ্যাসের সাপ্লাই বন্ধ হয়ে যায়। তাই ভোর ৪টায় উঠলেও গ্যাসের সাহায্যে রান্না সম্পন্ন করা বেশ দুরূহ। কেননা ভোর ৪টা থেকে গ্যাসের চাপ কমা শুরু করে এবং ৫টায় একেবারে শূন্যের কাছাকাছি গিয়ে দাঁড়ায়। মাঝরাতে যখন গ্যাসের সাপ্লাই চালু হয় তখন চুলার চাবি চালু করলেই অনেক বেশি শব্দ শোনা যায়। অর্থাৎ গ্যাসের চাপ তখন একেবারে তুঙ্গে। আশপাশের বাসায় তখন বেশ সোরগোলও শোনা যায়। সবাই তখন সারাদিনের রান্না করতে ব্যতিব্যস্ত। মাঝরাতে এমন কর্মতৎপরতা দেখে কারও বোঝার উপায় নেই, তখন রাত বেশ গভীর। তবুও প্রয়োজনের তাগিদে বাধ্য হয়ে মানুষের এই উপায় বেছে নেওয়া।

ক্রমান্বয়ে বিষয়গুলো বেশ ঝামেলায় পরিণত হলে বাধ্য হয়ে ব্যক্তিগত সিলিন্ডার ও একটি অটোচুলা কিনেছি। দরকারি সব কাজই এই সিলিন্ডারের চুলায় চালাতে হচ্ছে। ওদিকে পাইপ লাইনের গ্যাস ব্যবহার করতে না পারলেও মাসিক গ্যাস বিল দিতে হচ্ছে। সেখানে কোনো কমতি নেই। বাজারে বর্তমানের দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির সাথে সরকারি কর্মচারীদের আয়-ব্যয়ের হিসাব মেলাতে বেশ হিমশিম খেতে হয়। তার উপর নতুন বাসা নিয়ে অনেক জিনিস নতুন করে গোছগাছ করতে আমাদের হিসাবের খাতায়ও বেশ টানাটানি যাচ্ছে। তাই আমার স্ত্রীও ঠিক করেছে মাঝরাতে উঠে রান্না করবে। যদিও আমার বেশ অমত ছিল। কেননা, মাঝরাতে রান্না করলে বেশ কিছু সমস্যা দেখা দেবে। একদিকে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটবে অন্যদিকে মাঝরাতে রান্না করলে খেতেও হবে রান্নার পরে। অর্থাৎ সেটা অন্ততপক্ষে রাত ১২টার আগে হবে না। রাত ১২টায় খেয়ে ঘুমাতে যেতে সর্বনিম্ন রাত ১টা বাজবে। ওদিকে সকালে অফিসে রওনা দিতে গেলে ভোর ৬টায় ওঠা লাগে। তাই মাঝরাতে রান্নার রুটিনটা আমাদের কাছে বড্ড বেমানান। সবচেয়ে বড় সমস্যা রাতের খাবার আমি বরাবরই আগে খাই। সেটা যদি সন্ধ্যা ৬টায় হয়, সেখানেও আমার আপত্তি নেই। কেননা বিশেষজ্ঞদের মতে, রাতের খাবার যত তাড়াতাড়ি খাওয়া যায় ততই শরীরের জন্য ভালো। আর এই বিষয়টিকে পুরোপুরি মেনে চলেছি যখন চার বছর চীনে কাটিয়েছি। চীনারা অনেক বেশি স্বাস্থ্য সচেতন। আর এই সচেতনতার বড় একটা অংশ তাঁদের স্বাস্থ্যকর খাবার এবং খাবার গ্রহণের সময়সূচী।

চীনারা সন্ধ্যা ৭টার আগেই রাতের খাবার খেয়ে নেন। আমরাও চীনাদের নিয়মকানুনে অভ্যস্ত হয়ে পড়ায় বেশ সুস্থ্যভাবে প্রবাস জীবন পার করি। দেশে ফেরার পরে কিছুটা সমস্যার সম্মুখীন হলেও খাওয়ার রুটিনে খুব বেশি হেরফের হয়নি। কিন্তু সমস্যাটা বেঁধেছে সাভারে বাসা নেওয়ার পর। বিদ্যুতের লাগাতার লোডশেডিং তো আছেই, সাথে গ্যাস সংকট। অবাক হয়ে যাই, যখন দেখি এই ভরা শীতের মৌসুমেও সন্ধ্যা থেকে রাত ১০টা অবধি ২/৩ বার লোডশেডিং হয়। সম্প্রতি গ্রামেও বেশ কিছুদিন অতিবাহিত করেছি। কিন্তু সেখানকার বিদ্যুতের অবস্থা আমাদের এই সাভারের আবাসিক এলাকার চেয়ে ঢের ভালো। জানি না, এই এলাকায় বসবাস করা মানুষের প্রতি গ্যাস সাপ্লাই বা বিদ্যুৎ সাপ্লাই কর্তৃপক্ষের কোনো ক্ষোভ আছে কিনা! তা না হলে এখানকার মানুষের এত বেশি ভোগান্তি কেন হবে!

সপ্তাহের ছুটির দিন বা অন্যান্য ছুটির দিনেও সমস্যার কোনো উন্নতি নেই। গ্যাসের এই সমস্যার বেশ কয়েকটি কারণ থাকতে পারে বলে আমার মনে হয়। যেমন, শীতের সময়ে গ্যাসের উৎপাদন ক্ষমতা কম থাকতে পারে। প্রয়োজনের তুলনায় গ্রাহকের চাহিদা বেশি থাকতে পারে। অথবা কর্তৃপক্ষ ইচ্ছাকৃতভাবে এসব এলাকায় গ্যাস সাপ্লাই বন্ধ রাখতে পারে। এছাড়া আরও নানাবিধ কারণ আছে। তবে আমার মনে হয় ইচ্ছাকৃতভাবে গ্যাসের সাপ্লাই বন্ধ রাখার ধারণাটা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। বিদ্যুতের উৎপাদনের তুলনায় চাহিদা বেশি হওয়ায় যেমন লোডশেডিংয়ের ব্যবস্থা আছে, ঠিক তেমনি গ্যাসের সাপ্লাইয়ের ক্ষেত্রেও এমনটা করা হয়ে থাকতে পারে। কিন্তু সারাক্ষণ গ্যাস সাপ্লাই বন্ধ রেখে রাত ১১টা থেকে ভোর ৪টা পর্যন্ত গ্যাসের পূর্ণ সাপ্লাই অনেকটা যুক্তিহীন। যেখানে একজন গ্রাহক পুরো মাসের বিল দিচ্ছেন, সেখানে তিনি তাঁর প্রয়োজন মিটাবেন সেই প্রতিশ্রুতিটুকু অন্ততপক্ষে কর্তৃপক্ষের কাছে আশা করতে পারেন। কেননা, গ্যাসের এই সংকট শুধুমাত্র সাভারে নয়। যারা পাইপলাইনে মিটারবিহীন গ্যাস ব্যবহার করে কমবেশি সবাই এই সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে।

তবে আমার কাছে মনে হয়, কর্তৃপক্ষের যদি স্বদিচ্ছা থাকে সব এলাকার মানুষের গ্যাসের চাহিদা মেটাবেন, তাহলে কিছু বিষয় ভেবে দেখতে পারেন। এমনটা হতে পারে, লাগাতার ফুল স্পিডে গ্যাস না দিয়ে দিনের একটা নির্দিষ্ট সময় গ্যাসের পূর্ণ সাপ্লাই দিতে পারেন। বিশেষ করে সকালে, দুপুরে এবং সন্ধ্যায়। সেই বিষয়ে উক্ত এলাকার জনগণকে পূর্ব হতে অবহিত করে এই ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এছাড়াও এই সমস্যা সমাধানের সবচেয়ে ভালো উপায় মিটার সিস্টেমে গ্যাসের সাপ্লাই দেওয়া। তাহলে গ্রাহক পর্যায়ে অবশ্যই প্রয়োজনের অতিরিক্ত গ্যাস ব্যবহারের কোনো মন মানসিকতা থাকবে না। গ্রাহকের খরচও কমবে আবার গ্যাসের অপচয়ও কমবে। আরও ভালো সমাধান হচ্ছে পাইপ লাইনে গ্যাসের সাপ্লাই বন্ধ করে সবাইকে সিলিন্ডার ব্যবহার করতে বাধ্য করা। আমার জানামতে, উন্নত বিশ্বেও এভাবে পাইপলাইনে বেহিসাবি গ্যাস সাপ্লাইয়ের ব্যবস্থা নেই। পাইপলাইন থাকলেও সেখানে মিটার সংযুক্ত আছে। গ্রাহক কতটুকু ব্যবহার করছে তার উপর হিসাব করেই গ্রাহককে বিল পরিশোধ করতে হয়। এতে করে একজন গ্রাহক হিসাব করে যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু গ্যাসই ব্যবহার করেন। অপচয় করেন না। কিন্তু আমাদের দেশের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। বড় বড় শিল্প কারখানা ব্যতীত বাসা বাড়িতে পাইপ লাইনে গ্যাসের সাপ্লাই বন্ধ করলে এই সমস্যা থেকে উত্তরণের সুষ্ঠু সমাধান আশা করা যায়।

উন্নত বিশ্বের মতো অর্থনৈতিকভাবে আমরা শক্তিশালী না হলেও প্রাকৃতিক সম্পদে আমরা বেশ শক্তিশালী। প্রাকৃতিক গ্যাস তার মধ্যে অন্যতম। তাই বলে এই সম্পদেরও শেষ আছে। ব্যবহার করতে করতে সেটা একদিন অবশ্যম্ভাবী নিঃশেষ হবে। তাই এই সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার সকলের নৈতিক দায়িত্বের ভিতর পড়ে। প্রাকৃতিক সম্পদের প্রাচুর্য ভৌগোলিক দিক দিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান একরকমের আশীর্বাদ স্বরূপ বললেও ভুল হবে না। কিন্তু এই প্রাকৃতিক সম্পদের রক্ষণাবেক্ষণ, ব্যবহারবিধি নিয়ে জনমনের বেশ উদাসীনতা রয়েছে। তিতাস গ্যাসের যে পাইপলাইনে গ্যাস সরবরাহ করা হয়, তার অধিকাংশ সংযোগই ত্রুটিপূর্ণ। গ্যাস সংযোগ দেওয়ার সময় যেখানে রেগুলেটর যুক্ত করা হয়, মূলত সেইসব সংযোগ পয়েন্টগুলোতে লিকেজ আছে। যেখান থেকে অনবরত গ্যাস বের হচ্ছে। সম্ভবত, প্রত্যেক বাড়িতেই সংযোগ স্থাপনের সময় রেগুলেটরের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহ করা হয়। সংযোগ স্থাপনের সময় গ্যাসের পাইপ মাটির নিচ দিয়ে গেলেও রেগুলেটর সংযোগের স্থানটি মাটি থেকে উপরে হয়। অনেকটা উল্টো ইউয়ের মতো দেখেতে সংযোগ পাইপের শীর্ষে ধূসর রঙের ছোট পাতিল আকৃতির রেগুলেটর থাকে। জায়গাটিতে একাধিক অ্যাঙ্গেল, রেগুলেটরের উপস্থিতিতে কয়েকটি জয়েন্ট থাকে, যার থেকেই ফাঁকফোকড় দিয়ে গ্যাস বেরিয়ে যায়। একটু ভালোভাবে খেয়াল করলে অধিকাংশ সংযোগ পয়েন্ট থেকেই অল্প হলেও লিক হয় এবং বড় আকারের লিক পাওয়া মোটেই দুষ্প্রাপ্য নয়। দেশব্যাপী সরবরাহকৃত সকল অঞ্চলেই একই রকম চিত্র পাওয়া যাবে বলে আমার ধারণা। মরিচা পড়া, শীত-গ্রীষ্মে তাপমাত্রা পরিবর্তনজনিত সংকোচন-প্রসারণ, বড় গাড়ি দ্বারা সৃষ্ট কম্পন এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক ক্ষয়ের কারণে সময়ের ব্যবধানে লিক সৃষ্টি ও বৃদ্ধি পায়। এমন লাখ লাখ সংযোগ পয়েন্ট থেকে বছরের পর বছর, দিনে-রাতে অনবরত গ্যাস বেরিয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন এলাকার তিতাসের যে আবাসিক লাইনগুলো আছে, সেগুলো মিটার বিহীন। অর্থাৎ গ্যাস বের হলেও সেটাতে গ্রাহকের কোনো কিছু আসে যায় না। তাই এই সব লিক নিয়ে গ্রাহকের কোনো মাথাব্যথা নেই বললেই চলে। প্রাকৃতিক গ্যাসের প্রধান উপাদান মিথেন, যা বায়ু থেকে হালকা সেইসাথে লিকগুলো খোলা জায়গায় হওয়ায় অগ্নিকাণ্ডের সম্ভাবনাও কম। তাই এসব লিকেজ নিয়ে তিতাস গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানিরও তেমন কোনো পদক্ষেপ চোখে পড়ে না। যদিও মাঝে মধ্যে ছোটখাট উদ্যোগ নেওয়া হয়, কিন্তু সেগুলো প্রাকৃতিক গ্যাসের এই অপচয় বন্ধে অপ্রতুল।

ইচ্ছা বা অনিচ্ছাকৃতভাবে এই প্রাকৃতিক গ্যাস সরাসরি বায়ুমণ্ডলে উন্মুক্ত হয়ে বৈশ্বিক উষ্ণায়নকে স্বাভাবিকের চেয়ে আরও বেশি ত্বরান্বিত করছে। তেল, কয়লা বা অন্যান্য জীবাশ্ম জ্বালানির মতো প্রাকৃতিক গ্যাসও একটি জীবাশ্ম জ্বালানি। এই প্রাকৃতিক গ্যাসের দহনে উৎপন্ন কার্বন-ডাই-অক্সাইড বায়ুমণ্ডলে উন্মুক্ত হয়, যা বায়ুমন্ডলের গ্রিন হাউস প্রতিক্রিয়ার জন্য দায়ী। আবার প্রাকৃতিক গ্যাসের প্রধান উপাদান মিথেন (৯৬ শতাংশ) যেটি নিজেও একটি গ্রিন হাউস গ্যাস। বৈশ্বিক উষ্ণায়নে সার্বিক অবদানের দিক থেকে এই মিথেনের অবস্থান দ্বিতীয়। বায়ুমণ্ডলে পরিমাণের দিক থেকে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের তুলনায় মিথেনের পরিমাণ নগণ্য হলেও, ইউএনইপির জুলাই, ২০২২ সালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুসারে, বৈশ্বিক উষ্ণায়নে মিথেনের অবদান ২৫ শতাংশের অধিক। কারণ, হিসেবে বলা হয়, মিথেনের রয়েছে উচ্চ তাপ ধারণ ক্ষমতা। স্বাভাবিক হিসাবে মিথেনের তাপ ধারণ ক্ষমতা কার্বন ডাই অক্সাইডের তুলনায় ১০০ গুণেরও বেশি, তবে যেহেতু বায়ুমণ্ডলে অবস্থানকালে মিথেন নিজে থেকেই ধীরে ধীরে বিয়োজিত হয়ে যায়, তাই সময়ের ব্যবধানে এই পার্থক্য কমে আসে। ২০ বছরের ব্যবধানে তা হয় ৮০ গুণ, ১০০ বছরের ব্যবধানে হয় ২৫ গুণ। সহজ কথায়, একই পরিমাণ মিথেন ও কার্বন ডাই-অক্সাইড যদি একই সময়ে বায়ুমণ্ডলে ছেড়ে দেওয়া হয়, তাহলে ২০ বছরে কার্বন ডাই-অক্সাইড যে পরিমাণ উষ্ণায়ন ঘটাবে, মিথেন তার ৮০ গুণ ঘটাবে। এককথায় বায়ুমন্ডলে মিথেনের আধিক্য পুরো বিশ্বের জন্য হুমকিস্বরূপ। তাই ত্রুটিপূর্ণ সংযোগ বা পাইপলাইনের কোনো লিকেজের কারণে বায়ুমণ্ডলে যে মিথেন উন্মুক্ত হচ্ছে এই বিষয়টি নিয়ে অবশ্যই গুরুত্ব সহকারে ভাববার আছে। কর্তৃপক্ষের উচিত এদিকে সজাগ দৃষ্টি দেওয়া।

২০২১-২২ সালের তিতাসের তথ্য মতে, বছরে বিক্রীত গ্যাসের পরিমাণ ১৫,৬৫৭ মিলিয়ন ঘনমিটার এবং আবাসিক বৈধ ক্রেতার সংখ্যা ২৮ দশমিক ৫৬ লাখ। মিটারবিহীন একজন গ্রাহকের সংযোগে বিইআরসি অনুমোদিত মাসিক গড় ব্যবহার ৭৭ ঘনমিটার ধরা হয়। এদিকে প্রিপেইড সংযোগের বিল অনুযায়ী এই মান ৪০ ঘনমিটার। এখানে যাদের প্রিপেইড সংযোগ দেওয়া হয়েছে তাঁরাও পুরোপুরিভাবে নিজেদের যাবতীয় প্রয়োজন মিটিয়েছেন। তাহলে সহজ হিসাবে বোঝা যায়, শুধুমাত্র মিটার না থাকাতে গ্রাহক পর্যায়ে এই গ্যাসের ব্যবহার দ্বিগুণ হচ্ছে, যার অর্ধেকটা অপচয়। অর্থাৎ মিটার না থাকাতে একজন গ্রাহক প্রায় দ্বিগুণ গ্যাস ব্যবহার করছে। বর্তমানে বিশ্বব্যাপী যেখানে জ্বালানি খাতে হাহাকার চলছে, সেখানে এই অপচয় একেবারে সমীচীন নয়।

বাসা-বাড়ির জ্বালানি চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি প্রাকৃতিক গ্যাস আমাদের বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রধান কাঁচামাল। এছাড়াও সার ও প্লাস্টিকসহ গুরুত্বপূর্ণ কিছু শিল্পের কাঁচামাল, কলকারখানার জ্বালানি ও পরিবহন খাতে গ্যাস ব্যবহৃত হয়। খাদ্য উৎপাদন, শিল্প উৎপাদন, বিদ্যুৎ উৎপাদন, পরিবহন খাতসহ ইত্যাদি ক্ষেত্র গ্যাসের সরবরাহের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এই প্রাকৃতিক সম্পদকে অপচয়ের হাত থেকে রক্ষা করে সঠিক ব্যবহার করতে কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি প্রতিটি জনগণের নৈতিক দায়িত্বের ভিতর পড়ে। দেশের বৃহৎ জনগোষ্ঠীর একটা বড় অংশের জ্বালানি চাহিদা মেটাতে প্রাকৃতিক গ্যাসের কোনো জুড়ি নেই। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধিতে আমাদের এই প্রাকৃতিক সম্পদকে নিয়ে নতুন করে ভাববার সময় এসেছে। যেখানে গ্যাসের অপচয় রোধ করে সুষ্ঠু বণ্টনের মাধ্যমে এই সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা অতীব জরুরি। তাই নীতি নির্ধারক, পরিবেশবাদী ও গবেষকদের একদিকে যেমন নিত্যনতুন দেশীয় জ্বালানি অনুসন্ধানে মনোযোগ দিতে হবে, অন্যদিকে বিদ্যমান গ্যাসের সংকট কাটাতে সুষ্ঠু বণ্টন নিশ্চিত করতে হবে।

লেখক: গবেষক ও কলামিস্ট।



 

Show all comments
  • hassan ২৫ ডিসেম্বর, ২০২২, ১:০৭ পিএম says : 0
    আল্লাহ দ্রোহী দেশদ্রোহী সরকারের আদেশ চালায় বলেই আজকে আমরা যারা সাধারণ মানুষ তাদের অত্যাচারে আমরা অতিষ্ঠ কেন আমরা দেশ স্বাধীন করেছিলাম আমরা যারা বৃদ্ধ এইভাবে পাকিস্তানি বর্বর শাসকরা আমাদের সাথে এইভাবে ব্যবহার করে নাই আরেরাজ এটা করছে সেটা পাকিস্তানি বর্বর আর্মি থেকে কোটি কোটি কোটি কোটি গুন খারাপ
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন