Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বড়দিন: যিশুর শিক্ষা এবং আজকের বাস্তবতা

আফতাব চৌধুরী | প্রকাশের সময় : ২৫ ডিসেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

বড়দিন খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব। শত শত বছর ধরে ২৫ ডিসেম্বর দিনটি যিশুখ্রিস্টের জন্মদিন হিসেবে সারাবিশ্বে উৎসবমুখর পরিবেশে উদ্যাপিত হয়ে আসছে। ধর্মীয় উৎসব হলেও দিবসটি খিস্ট্রান অধ্যুষিত দেশে, সাংস্কৃতিক জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়েছে। বড়দিন এলেই মনে হয়, এটা সব দেশের, সব ধর্ম ও বর্ণের এক আন্তর্জাতিক ছুটির দিন। আর কোনো ধর্মের প্রবর্তক বা ধর্মগুরুকে ঘিরে, তাঁর জন্মদিন নিয়ে হই-হুল্লোড় করে আন্তর্জাতিকভাবে ছুটি কাটানো হয় না। বেথেলহেমের আস্তাবলে জন্ম নেওয়া যিশুখ্রিস্ট বোধহয় ভাবতেও পারেননি যে, তাঁর জন্মদিন ২৫ ডিসেম্বরকে বিভিন্ন্ন ধর্মানুসারী এমনভাবে ছুটি কাটানোর জন্য বেছে নেবে।

বলাবাহুল্য যে, দিবসটির তাৎপর্য শুধু উৎসব-আনুষ্ঠানিকতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। দুই সহস্রাধিক বছর আগে তার আবির্ভাব পৃথিবীর জন্য বহন করে এনেছিল অসাধারণ এক মঙ্গলবার্তা। বাইবেল অনুযায়ী, যিশুখ্রিস্টের জন্ম হয়েছিল জেরুজালেমের বেথেলহেমের একটি গোয়ালঘরে। ভক্ত ও অনুসারীরা গভীরভাবে বিশ্বাস করে যে, অতি সাধারণ পরিবেশে নিঃস অবস্থায় তাঁর এই জন্মেরও বিশেষ প্রতীকী তাৎপর্য রয়েছে। তিনি নিঃস্ব, রিক্ত, রুগ্ন ও হতদরিদ্র মানুষের কান্ডারি। এ যেন তারই পূর্বাভাস। সর্বোপরি, এমন একটি সময়ে তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন, যখন পৃথিবী অজ্ঞতা, কুসংস্কার, লোভ, ঘৃণা ও ভন্ডামিতে ভরে গিয়েছিল। মানুষ শুদ্ধতার পথ থেকে দূরে সরে গিয়েছিল। পরিত্যক্ত হয়েছিল সবপ্রকার নীতি ও নৈতিকতা।

চরম হতাশাপূর্ণ এই অন্ধকারে যিশু মানুষকে প্রেম ও আশার বাণী শুনিয়েছিলেন। তাদের উজ্জীবিত করেছিলেন পাপকে ঘৃণা করতে ও পাপীকে ক্ষমা করতে। নিজে ক্রশবিদ্ধ হয়েছেন কিন্তু বিচ্যুত হননি ক্ষমা ও ভালোবাসার মন্ত্র থেকে। শান্তিময় পৃথিবীর জন্য যিশুর এই শিক্ষা যে কতখানি তাৎপর্যপূর্ণ তা সহজেই অনুমেয়।
পোপ ষোড়শ বেনেডিক্টের মতে, মানবতাই হলো বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্ম। ঈশ্বরকে কাছে টানবার সেরা উপায় হলো এই মানবতা। দুর্গত ও দুর্দশাগ্রস্তদের পাশে দাঁড়াবার তাগিদে তিনি বলেছেন, আমরা এখন নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত থাকি। সবটুকু সময় ব্যয় করি নিজের জন্য। অপরের পাশে দাঁড়াবার কথা আমাদের মনেই থাকে না। পোপের এই বক্তব্যে সমকালীন নির্মম বাস্তবতাই শুধু নয়, দারিদ্র্যপীড়িত বিশ্বপ্রেক্ষাপটে এর গুরুত্ব নিঃসন্দেহে অপরীসিম।
বড়দিন মানেই বড় রকমের আনন্দের দিন। কেক, কমলালেবু ইত্যাদির সুরার সমাহার। আনন্দে আত্মহারা, ছুটি উপভোগে মাতোয়ারা অনেকেই জানে না, কার জন্মদিন বা কেই বা তিনি। জানারও দরকার নেই। গির্জায় গির্জায় আলোয় আলোকিত ধর্মগুরুকে স্মরণ করা হয় বটে, কিন্তু নানাভাবে ছুটি কাটানোর কাছে সে সমস্ত নেহায়েতই গৌণ হয়ে যায়। আগে বড়দিনের সময় সাহেবদের বড়দিনের আনন্দ উৎসব দেখতে ভিড় করত ঘরকুনো বাঙালিসহ অন্যান্য জাতি। কিন্তু এখন বাঙালি পরম উৎসাহে তোড়জোড় করে লেগে যায় বড়দিনের ছুটি উপভোগ করতে। বাড়িতে বাড়িতে চলে কেক, কমলার কাড়াকাড়ি। শহরাঞ্চলের কেকের দোকানের বিরাট লাইনে ক্রেতাদের ধৈর্য দেখার মতো। এ তো গেল শহরের কথা। মফস্বল এলাকাও থমকে দাঁড়িয়ে থাকে না। মফস্বলের অলিতে-গলিতে গজিয়ে উঠে অস্থায়ী কেকের দোকান রং-বেরং আর নানা আকারের পসরা।

বস্তুত মনুষ্যত্বের কল্যাণ সাধনই হলো সকল ধর্মের মর্মকথা। মানুষ যখন পথভ্রষ্ট হয়েছে তখনই ঈশ্বর-প্রেরিত দূত আবির্ভূত হয়েছেন। মানবতার পথ দেখাতে যাঁরা ধরাধামে জন্ম নেন, তাঁরা মহান সৃষ্টিকর্তার কৃপাধন্য আধ্যাত্মিক সাধক। তাঁরা মানবতার কল্যাণবার্তাই শুনিয়ে গেছেন। বলে গেছেন: লোভ, লালসা, হিংসা, হানাহানির পথ পরিহার করার কথা। বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার এই নির্ভরযোগ্য পথে যে মানুষ চলতে চায় না, তা অবশ্য বলার অপেক্ষা রাখে না। আমরা মনীষীদের সুপরামর্শ অনুসরণ করি না। আবেগের বশে হিংসা ও বিদ্বেষ তাড়িত হয়ে বিপথে চালিত হই। এর পরিণাম ভালো হবার কথা নয়।

দুই সহস্রাধিক বছর আগে যিশুখ্রিষ্ট মানুষের অন্তঃকরণে যে আধ্যাত্মিকতার আলো প্রজ্বলিত করেছিলেন, একবিংশ শতাব্দীর এই বিজ্ঞানমনস্ক সময়েও তাঁর গুরুত্ব এতটুকু কমেনি। বরং যতদিন যাচ্ছে এসবের গুরুত্ব আরো বাড়ছে। বর্তমান হিংসা, হানাহানি ও সংঘাতময় বিশ্বে ক্ষমা ও ভালোবাসাপূর্ণ আলোকিত অন্তঃকরণই যে ভবিষ্যৎ পৃথিবীর শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য সর্বাপেক্ষা বড় রক্ষাকবচ, তা অস্বীকার করার উপায় নেই।

লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
function like(cid) { var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "clike_"+cid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_comment_like.php?cid="+cid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function dislike(cid) { var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "cdislike_"+cid; document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_comment_dislike.php?cid="+cid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function rlike(rid) { //alert(rid); var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "rlike_"+rid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_reply_like.php?rid="+rid; //alert(url); xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function rdislike(rid){ var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "rdislike_"+rid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_reply_dislike.php?rid="+rid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function nclike(nid){ var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "nlike"; document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com//api/insert_news_comment_like.php?nid="+nid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } $("#ar_news_content img").each(function() { var imageCaption = $(this).attr("alt"); if (imageCaption != '') { var imgWidth = $(this).width(); var imgHeight = $(this).height(); var position = $(this).position(); var positionTop = (position.top + imgHeight - 26) /*$("" + imageCaption + "").css({ "position": "absolute", "top": positionTop + "px", "left": "0", "width": imgWidth + "px" }).insertAfter(this); */ $("" + imageCaption + "").css({ "margin-bottom": "10px" }).insertAfter(this); } }); -->