পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সমন্বিত মহাপরিকল্পনার খসড়া প্রকাশ করেছে সরকার। এর কিছু অসংগতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি)। সংস্থাটি বলেছে, মহাপরিকল্পনায় নবায়ণযোগ্য জ্বালানিকে উপেক্ষা করে কয়লা ও এলএনজি’র ওপর জোর দেয়া হয়েছে। এটি সরকারের অত্যন্ত উচ্চাভিলাষী এবং অনেকটা রাজনৈতিক। সংস্থাটি বলেছে, ২০৪১ সালে বাংলাদেশ উন্নত দেশে পরিণত হবে বলে মহাপরিকল্পনায় ধরা হয়েছে। সে অনুযায়ী, ঐ সময় মাথাপিছু আয় হতে হবে অন্তত সাড়ে ১২ হাজার ডলার। এমন উচ্চাভিলাষী রাজনৈতিক লক্ষ্য থেকে সরকারের সরে আসা দরকার। দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য নিয়ে মহাপরিকল্পনা করা উচিৎ নয়। মধ্যমেয়াদী লক্ষ্য থাকা দরকার। মহাপরিকল্পনা তৈরির ক্ষেত্রে কাঠামো, জ্বালানি নিরাপত্তা, নবায়ণযোগ্য জ্বালানি, জ্বালানি রূপান্তর, বিনিয়োগ ও আর্থিক ব্যবস্থাপনার মতো বিষয়গুলো বিশ্লেষণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মহাপরিকল্পনার খসড়ায় বিষয়গুলো সেভাবে রাখা হয়নি। এতে এলএনজি খাতকে উৎসাহ দেয়া হয়েছে। ক্ষেত্র বিশেষে কয়লা ব্যবহারকেও উৎসাহিত করা হয়েছে।
ইউক্রেন যুদ্ধসহ নানা কারণে বিশ্বে এখন জ্বালানি সঙ্কট চলছে। উন্নত দেশগুলো নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় এই সংকট নিরসন ও জ্বালানি মজুত গড়ে তুলছে। আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর পক্ষে এ জ্বালানি সঙ্কট মোকাবেলা এক প্রকার দুরুহ ব্যাপার। বিশেষ করে আমদানি নির্ভর হওয়ায় সংকট আরও গভীর হচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে, নিজস্ব জ্বালানির সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়ার বিকল্প নেই। দেখা যাচ্ছে, সরকার নবায়ণযোগ্য জ্বালানির চেয়ে আমদানি নির্ভর জ্বালানির দিকেই বেশি ঝুঁকেছে। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে দাম বেড়ে যাওয়ায় কয়েক মাস আগে এলএনজি আমদানি বন্ধ করে দেয়ায় দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদনে বড় ধরনের ঘাটতি দেখা দেয়। লোডশেডিং বৃদ্ধি পেয়ে বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়। সে সময় জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, গ্যাস নির্ভর বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে যদি দেশের গ্যাস ক্ষেত্র থেকে পর্যাপ্ত সরবরাহ করা যেত, তাহলে কিছুটা হলেও এ বিপর্যয় সামাল দেয়া যেত। সরকার দেশের গ্যাস ক্ষেত্রগুলো থেকে উত্তোলনের যথাযথ ব্যবস্থা নেয়নি। উপেক্ষা করে আমদানির দিকে বেশি মনোযোগ দিয়েছে। বলা বাহুল্য, বহু আগে থেকেই বিশেষজ্ঞরা ভূ-ভাগ ও সাগরে গ্যাসের অনুসন্ধান জোরদার করার তাকিদ দিয়ে আসছেন। বিগত দশ বছরে এ ক্ষেত্রে তেমন কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। ফলে হঠাৎ সঙ্কট দেয়ায় বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। এছাড়া পরিবেশের জন্য ক্ষতিকারক কয়লার ওপর জোর দেয়া হয়েছে। সারা বিশ্ব যখন কয়লা নির্ভর বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে সরে আসছে, তখন আমাদের দেশ এর দিকেই বেশি ঝুঁকেছে। জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাত নিয়ে অনেক অভিযোগ থাকলেও সরকার তা আমলে নিচ্ছে না। ক্যুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে। বিশেষ পরিস্থিতি সমাল দিতে নির্দিষ্ট মেয়াদে এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র করা হলেও তা এখন অনেকটা স্থায়ী রূপ লাভ করেছে। এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের কোনো কোনোটি বিদ্যুৎ উৎপাদন না করেই অর্থ পাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। বছরের পর বছর ধরে সরকার ভর্তুকি দিয়ে কেন এগুলো বহাল রেখেছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাময়িক ব্যবস্থা হিসেবে এগুলো কার্যকর হলেও স্থায়ী হতে পারে না বলে বিশেষজ্ঞর অভিমত ব্যক্ত করেছেন। দেখা যাচ্ছে, সামগ্রিক জ্বালানি খাতে টেকসই ব্যবস্থার পরিবর্তে এক ধরনের অস্থায়ী ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে পরিচালনা করা হচ্ছে। এতে সঙ্কট মোকাবেলা কঠিন হয়ে পড়ছে।
আগামী বছর বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সঙ্কট তীব্র হতে পারে বলে ইতোমধ্যে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা আভাস দিয়েছে। এতে আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলো অর্থনৈতিক মন্দাবস্থার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। বিশেষ করে জ্বালানি সঙ্কট তীব্র আকার ধারণ করতে পারে। এতে কৃষি ও উৎপাদন খাত ব্যাপক সমস্যার সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এমন এক শঙ্কার মধ্যে সরকার যে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের মহাপরিকল্পনার খসড়া প্রণয়ন করেছে, তাতে বিভিন্ন অসঙ্গতি ও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা যে অসঙ্গতিগুলো তুলে ধরেছে সরকারের উচিৎ সেগুলো আমলে নিয়ে সংশোধন করা। দীর্ঘমেয়াদী মহাপরিকল্পনার চেয়ে মধ্যমেয়াদী ও বাস্তবায়নযোগ্য মহাপরিকল্পনা করা উচিৎ। পাশাপাশি সক্ষ্যমতার বিষয়টিও বিবেচনায় রাখা দরকার। জাপানের মতো উন্নত দেশ এ ধরনের মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দ্বারপ্রান্তে। তার এ মহাপরিকল্পনা আগামী বছরের মার্চে সম্পন্ন হবে। আমাদেরও এমন পরিকল্পনা করা জরুরি যা বাস্তবসম্মত। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সঙ্কট মোকাবেলায় অতিরিক্ত আমদানি নির্ভর না হয়ে নিজস্ব ব্যবস্থাপনার ওপর বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। ভূ-ভাগে যেসব গ্যাস ক্ষেত্র রয়েছে সেগুলো থেকে গ্যাস উত্তোলন জোরদার করতে হবে। পাশাপাশি নতুন গ্যাসক্ষেত্র অনুসন্ধান করতে হবে। সমুদ্রে গ্যাসের যে সম্ভাবনা রয়েছে, সেখানেও অনুসন্ধান ও উত্তোলনের উদ্যোগ নিতে হবে। এতে জ্বালানি সঙ্কট অনেকটাই সমাধান করা যাবে। নবায়ণযোগ্য জ্বালানি নির্ভর হতে হবে। এজন্য যে ধরনের পদক্ষেপ নেয়া দরকার তাই নিতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।