পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
দেশের অর্থনীতি এক ধরণের স্থবিরতা ও অনাস্থার দুষ্টচক্রে হাবুডুবু খাচ্ছে। বছরের শুরু থেকেই ক্রমে জটিল হতে থাকা জ্বালানি ও ডলারের সংকট ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করেছে। এরই মধ্যে দেশের বৃহত্তম তফশিলি ব্যাংক ইসলামি ব্যাংক থেকে তিরিশ হাজার কোটি টাকার ঋণ কেলেঙ্কারিসহ প্রায় সবগুলো বাণিজ্যিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে নামে বেনামে টাকা তুলে নেয়ার সংবাদগুলো দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্কের জন্ম দিয়েছে। একদিকে স্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্য তথ্যের ঘাটতির কারণে অনেক মানুষ আতঙ্কিত হয়ে ব্যাংক থেকে তাদের আমানত তুলে নিচ্ছে, অন্যদিকে আয়ের সাথে সঙ্গতিহীন অস্বাভাবিক মূল্যস্ফীতির কারণে জীবনযাত্রার ব্যয় নির্বাহ করতে ব্যাংকে সঞ্চিত অর্থ তুলে খরচ করতে বাধ্য হচ্ছে। সেই সাথে ব্যাংকে রেমিটেন্সের অন্যতম উৎস প্রবাসি কর্মীদের পাঠানো অর্থের প্রবাহও উল্লেখযোগ্য হারে কমে যাওয়ায় ডলারের সংকট ক্রমশ জটিল হয়ে উঠেছে। গতকাল ঢাকার একটি দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম তিনমাসে(জুলাই-সেপ্টেম্বর) দেশের তফশিলি ব্যাংকে তারল্য কমেছে ২৭ হাজার ১৫১ কোটি টাকা। বাণিজ্য ঘাটতি এবং ব্যাংক থেকে অর্থ তুলে নেয়ার কারণেই এ পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
সরকারের পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবের সাথে বাস্তব পরিস্থিতির গড়মিল এবং আইএমএফসহ বিভিন্ন সংস্থার ভিন্ন তথ্য পরিবেশনের কারণে জনমনে এক ধরণের অনাস্থা দেখা দিয়েছে। তবে ব্যাংকে নিম্নমুখী তারল্যের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে উল্লেখিত চারটি কারণ হচ্ছে, করোনার পর হঠাৎ করে চাহিদাবৃদ্ধি, বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহে বাড়তি প্রবৃদ্ধি, আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম বাড়ায় আমদানি ব্যয়ের মাত্রাতিরিক্ত প্রবৃদ্ধি এবং ব্যাংক থেকে নগদ টাকা তুলে নিয়ে নিজেদের হাতে রাখার প্রবণতা। এর মধ্যে শেষোক্ত কারণটির পেছনে নানাবিধ সমীকরণ কাজ করছে। ব্যাংক থেকে আমানত ও সঞ্চয়পত্র তুলে নেয়ার হিড়িক থেকে বোঝা যায়, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ এবং ব্যাংকিং সেক্টরের পরিস্থিতি সম্পর্কে অর্থমন্ত্রনালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য ও আশ্বাস তেমন কোনো কাজে আসছে না। দেশের অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর দেয়া তথ্য ও পরিসংখ্যান নিয়ে জনমনে সংশয় ও অনাস্থা থাকলে অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে গতিশীলতা ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা অসম্ভব। এ ক্ষেত্রে ব্যাংকিং সেক্টরে বিদ্যমান অস্বচ্ছতা, বিশৃঙ্খলা এবং জবাবদিহিতার সংকট দূর করার উদ্যোগ নেয়ার বিকল্প নেই। একদিকে ব্যাংকগুলো তারল্যকে বিনিয়োগে ব্যবহারে ব্যর্থ হচ্ছে অন্যদিকে মানুষ তাদের সঞ্চয় ভেঙ্গে খাচ্ছে। এ ধরণের পরিস্থিতি দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির জন্য অশনিসংকেত।
গার্মেন্ট রফতানি ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান খাতে বড় ধরণের আশঙ্কার কোনো কারণ না থাকলেও ব্যাংকিং সেক্টরের বেহাল দশার পেছনে যে জন অনাস্থা কাজ করছে, তা দূর করার কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। আইএমএফ মিশন প্রধান রাহুল আনন্দের নেতৃত্বে আগত প্রতিনিধি দল কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রির্জাভসহ আর্থিক সেক্টরের পরিসংখ্যান ও ব্যবস্থাপনা নিয়ে তাদের দ্বিমত ও অভিমত তুলে ধরেছেন। সাড়ে চার বিলিয়ন ডলারের ঋণচুক্তির শর্ত হিসেবে তারা ব্যাংকিং সেক্টর ও আর্থিক-প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনায় ব্যাপক সংস্কারের প্রস্তাব দিয়েছে। বেশিরভাগ প্রস্তাবের সাথে সরকারের সংশ্লিষ্টরাও একমত হয়ে তা বাস্তবায়নে সম্মত হয়েছে। তবে দেশের চলমান অর্থনৈতিক বাস্তবতার সাথে প্রাতিষ্ঠানিক অব্যবস্থাপনা ও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার দায় অগ্রাহ্য করার সুযোগ নেই। সরকার ব্যবসায়ীদের আশ্বস্ত করতে পারলেও সাধারণ মানুষ কিছুতেই আশ্বস্ত বা নিরাপদ বোধ করছে না। নিম্ন আয়ের কোটি কোটি মানুষকে জীবনযাত্রা ও অস্তিত্বের সংকটে রেখে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা অসম্ভব। প্রথমেই সিন্ডিকেটেড মুনাবাজি ও অস্বাভাবিক মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরতে হবে। দেশের বেশিরভাগ মানুষ নি:স্ব হয়ে পড়লে, অর্থনৈতিক বৈষম্য আরো বেড়ে গেলে সামাজিক-অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বেসামাল হওয়া স্বাভাবিক। এ ধরনের বাস্তবতায় রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে সাধারণ মানুষের অনাস্থা দূর করতে যা কিছু করণীয় তাই করতে হবে। দেশের মানুষ সরকারের কাছে বিশ্বাসযোগ্য তথ্য ও ইতিবাচক কর্মতৎপরতা দেখতে চায়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।