Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিশ্বে গণহত্যা ও সম্পদ লুণ্ঠনের রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন

জামালউদ্দিন বারী | প্রকাশের সময় : ২১ ডিসেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

খৃষ্টীয় সপ্তম শতক থেকে পঞ্চদশ শতক পর্যন্ত মুসলমানদের খিলাফতের অবক্ষয় ও পতনের পর বিশ্বে যে আঞ্চলিক ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্যবাদের বিকাশ ও পুঁজি লুন্ঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল তা এখন সর্বশেষ ধাপে উন্নীত হয়েছে। আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ভাষায় ডেমোক্রেসির বিপরীতে ক্লেপ্টোক্রেসি’র ধারণা এখন প্রায় প্রতিটি রাষ্ট্রে নিজ নিজ অবয়বে শেকড় গেঁড়ে সমাজদেহের রক্তরস শোষণ করে কোটি কোটি মানুষকে অধিকারহীন-বঞ্চনার শিকারে পরিনত করা হয়েছে। বিগত শতকে দুইটি মহাযুদ্ধ ছিল ঊনবিংশ শতকের পশ্চিমা ঔপনিবেশিক আধিপত্যবাদী শক্তির প্রতিযোগিতার ফল। সেসব যুদ্ধে কোটি কোটি মানুষের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থার গোড়াপত্তন ঘটানো হয়েছিল। ঊনবিংশ শতকের শুরুতে বৃটিশ ঔপনিবেশিক লুন্ঠনের বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যে নতুন রাজনৈতিক ভাবধারার উন্মেষ ঘটেছিল তাই আধুনিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ভিত্তি রচনা করেছিল। পরবর্তী মার্কিন শাসকদের কর্পোরেট পুঁজিতান্ত্রিক ষড়যন্ত্র ও একদেশকেন্দ্রিক, বর্ণবাদী চেতনা মার্কিন ফাউন্ডিং ফাদারদের গণতান্ত্রিক চেতনার ইলিউশনকে এক ধরণের ফ্যাসিবাদী চেতনার দিকে ধাবিত করেছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর নতুন বিশ্ব ব্যবস্থা থেকে হোয়াইট সুপ্রিম্যাসি, আগ্রাসী সামরিক তৎপরতা ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমেরিকা ফার্স্ট নীতির মধ্যে ইউরোপীয় ঔপনিবেশিক আমলের জাত্যাভিমানী চেতনাই কাজ করেছে। সেই পুঁজিতান্ত্রিক চেতনার সর্বশেষ ধাপে গড়ে উঠেছে মিলিটারি ইন্ডাসট্রিয়াল কমপ্লেক্স ও ওয়ার ইকোনমির নির্লজ্জ প্রতিযোগিতা। বিশ্বের সম্পদের উপর লুন্ঠনের আধিপত্য টিকিয়ে রাখতেই পশ্চিমাদের নেতৃত্বাধীন রাষ্ট্রীয় সংগঠনগুলোর সব ধরণের তৎপরতা ও কারসাজি নিবদ্ধ রয়েছে। মার্কিন ফেডারেল রির্জাভ ব্যাংক, কারেন্সী বিনিময় ও বাণিজ্য ব্যবস্থা, লীগ অব নেশনস থেকে জাতিসংঘ, বিশ্ববাণিজ্য সংস্থা, আইএমএফ থেকে শুরু করে আঞ্চলিক অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংস্থাগুলোর পেছনে পশ্চিমাদের আধিপত্যবাদী মেকানিজম সদা সক্রিয় রয়েছে। এসব সংস্থার কর্মতৎপরতা সব মানুষের অধিকার নিশ্চিত করার বদলে নিয়ন্ত্রণ ও বৈষম্য বাড়িয়ে তোলার লক্ষ্যেই কাজ করেছে। সাবেক ঔপনিবেশিকতার উত্তরাধিকার তারা কখনোই হারাতে চায় না। বিশ্বে গণতন্ত্রের সবক দিয়ে মানুষের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক অধিকার হরণ ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ধারাবাহিক ঘটনাবলী ও আপস-সমঝোতার ভিত্তিতে দেশে দেশে ফ্যাসিবাদ ও আঞ্চলিক আধিপত্যবাদের জন্ম হয়েছে। বিংশ শতকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ইঙ্গ-মার্কিন সামরিক গোয়েন্দা তৎপরতার মূল লক্ষ্য ছিল গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে নস্যাৎ করা ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করা। কোরীয় যুদ্ধ, ভিয়েতনাম যুদ্ধ, পঞ্চাশের দশকে ইরানে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে সেখানে পশ্চিমা বশংবদ শাহের রাজতন্ত্র পুন:প্রতিষ্ঠা থেকে শুরু করে এই শতকের শুরুতে মিশরে হাজার বছরের ইতিহাসে প্রথম গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে সামরিক স্বৈরতন্ত্র কায়েমের ঘটনাকে উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরা যেতে পারে।

গ্রিক, রোমান সভ্যতার পতনের পর বিশ্ব ইতিহাসের এক চরম সময়ে মধ্যপ্রাচ্যে ইসলামের আর্বিভাবের মধ্য দিয়ে বিশ্বে রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক ও সমাজব্যবস্থায় যে নতুন ভাবধারার উন্মেষ ঘটেছিল তার সমকক্ষ বা সমান্তরাল আর কোনো ইজম আজ পর্যন্ত দেখা যায়নি। একটি অসম্পুর্ণ ও খণ্ডিত ব্যবস্থা হলেও পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে মন্দের ভাল হিসেবে মার্কিন গণতন্ত্রের রূপরেখাকে বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষ বেছে নিতে আগ্রহী হলেও পুঁজিতান্ত্রিক লুন্ঠন ব্যবস্থার কাছে গণতন্ত্র আজ অসহায় হয়ে পড়েছে। পশ্চিমা ঔপনিবেশিক শোষণ ব্যবস্থার উত্তরাধিকার এই ইভিল ক্যাপিটালিজমের পরিসমাপ্তি ছাড়া মানুষে মানুষে বৈষম্য রোধ ও মানুষের মানবিক অধিকার ও রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক মুক্তির ফয়সালা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার পতন এবং রাশিয়া ও চীনের মত পরাশক্তির পুঁজিবাদী ব্যবস্থার সাথে আপসের মধ্য দিয়ে ইউনিপোলার বিশ্বব্যবস্থা বিশ্বকে আরো অস্থিতিশীল ও অনিরাপদ করে তুলেছে। পুঁজির জন্য আপস করে চলার নীতি কারো জন্যই সুফল বয়ে আনেনি। ঔপনিবেশিক দখলদারিত্বের ধারাবাহিকতায় অন্যায় যুদ্ধের মধ্য দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের ভরকেন্দ্রে রাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা কায়েম হলেও সাধারণ মুসলমানরা কখনোই আধিপত্যবাদী লুন্ঠনতন্ত্র মেনে নিতে পারেনি। ইসলামের সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক মনস্তত্ত্ব পশ্চিমা পুঁজিবাদী ভোগবাদের সাথে যায় না। সভ্যতার দ্বন্দের আপেক্ষিক তত্ত্ব, ইসলামোফোবিয়া, রিজিম পরিবর্তন, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধসহ পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক-সামরিক তৎপরতাগুলো ব্যর্থতায় পর্যবসিত হওয়ার পর ইউক্রেনে রুশ-মার্কিন ও ইউরোপীয় বাহিনীর সংঘাতের পটভূমি একটি নতুন বিশ্বব্যবস্থার জন্ম দিতে শুরু করেছে। একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্রের উপর আঞ্চলিক অন্যকোনো শক্তির হস্তক্ষেপ কখনোই সমর্থনযোগ্য নয়। শুধুমাত্র পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদী শক্তির একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় অর্থনৈতিক-বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞার কারণে দারিদ্র্য-দুর্ভীক্ষে বিশ্বের দেশে দেশে মানবিক বিপর্যয়, যুদ্ধে কোটি কোটি মানুষের মৃত্যু এবং অন্তহীন যুদ্ধের লাগামহীন প্রেক্ষাপট পাল্টে দিতেই ইউক্রেন যুদ্ধকে একটি টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে গ্রহণ করেছে বিশ্বের বহু সংখ্যক মানুষ। গণমাধ্যমসহ পশ্চিমা নিয়ন্ত্রিত বিশ্বব্যবস্থায় প্রকৃত চিত্র দৃশ্যমান হওয়া অসম্ভব হলেও পারিপার্শ্বিক চিত্র ইতিমধ্যেই পাল্টে যেতে শুরু করেছে। গত দুই দশক ধরে মধ্যপ্রাচ্যে জায়নবাদী স্বার্থের যুদ্ধ পরিচালনার পাশাপাশি পশ্চিমা বিশ্বব্যবস্থার চ্যালেঞ্জ হিসেবে চীনের সম্ভাব্য উত্থান ঠেকাতে সম্ভাব্য সব পরিকল্পনা এখনো সক্রিয় রয়েছে। তবে ইউক্রেন যুদ্ধ চীনের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক উত্থানকে অনেকটাই ত্বরান্বিত করেছে। গত একশ বছর ধরে বিশ্বে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একাধিপত্যের মূলে রয়েছে সম্পদের বিনিময় মুদ্রা হিসেবে মার্কিন ডলারের একাধিপত্য। মার্কিন পারমানবিক বোমা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বিজয়ের নিয়ামক শক্তি হিসেবে কাজ করার পর থেকে সেই বিজয় ধরে রাখতে ডলার এবং যুদ্ধবাদী নীতিকেই ব্যবহার করা হচ্ছে। ব্যতিক্রমী চেতনার ধারক ইরানে পশ্চিমা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা অনেকটা ব্যর্থ হলেও মধ্যপ্রাচ্যের দেশে দেশে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা যুদ্ধের চেয়েও ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে। ঠিক একই কায়দায় রাশিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং শত শত কোটি ডলারের সম্পদ জব্দ করার মধ্য দিয়ে ইউক্রেন যুদ্ধকে যে পরিনতির দিকে নিয়ে যেতে চেয়েছিল তাও ইতিমধ্যে ব্যর্থ হয়েছে। সে প্রয়াস চীনের দিক থেকে বুমেরাং হয়ে মার্কিন অর্থনৈতিক স্বার্থে আঘাত হানতে শুরু করেছে। এতদিন ধরে মার্কিন বশংবদ মধ্যপ্রাচ্যের পেট্টো-ডলারের দেশগুলো এখন চীনের সাথে নতুন বোঝাপড়ায় উপনীত হতে চলেছে। সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, ডলারের পরিবর্তে বিনিময় মুদ্রা হিসেবে ইউয়ান ব্যবহারের শর্তে মধ্যপ্রাচ্যের শাসকদের বাণিজ্য নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিচ্ছেন প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। চীনের নতুন প্রস্তাবনার সাথে গাল্ফ কো-অপারেশন কাউন্সিলের সম্মতি বাণিজ্য এবং বেল্টরোড ইনিশিয়েটিভে নতুন গতি সঞ্চার করবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।

ইউক্রেন যুদ্ধ নতুন মার্কিন নেতৃত্বাধীন বিশ্বব্যবস্থাকে একটি পরিসমাপ্তির দিকে নিয়ে যাচ্ছে। যে লক্ষ্য নিয়ে রুশ-চীন ঐক্যের ভিত্তিতে ব্রিক ও সাংহাই কো-অপারেশন চুক্তি হয়েছিল ইউক্রেন যুদ্ধের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষ থেকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে উপর্যুপরি নিষেধাজ্ঞার পরও রাশিয়ার অনমনীয় অবস্থানই প্রমান করে এসব আর রাশিয়াকে দমিয়ে রাখতে কার্যকর ভ’মিকা রাখতে পারছে না। যুদ্ধের উস্কানি পশ্চিমাদের দিক থেকে আসলেও ইউক্রেন দখলের অভিযান রাশিয়াই শুরু করেছে। অতীতের অভিজ্ঞতার আলোকে সম্ভাব্য নিষেধাজ্ঞার বিষয়টিও হয়তো ভøাদিমির পুতিনের মাথায় ছিল। পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে ইউরোপে জ্বালানি সরবরাহ নিয়ন্ত্রণসহ সম্ভাব্য আরো পদক্ষেপের আশঙ্কা সামনে রেখে ইউরোপের অর্থনীতি ও ব্যবসায়-বাণিজ্য কার্যক্রমে পতন শুরু হলেও তারা রাশিয়ার বিরুদ্ধে নবম দফা নিষেধাজ্ঞা আরোপের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। শান্তি আলোচনা ও সমঝোতার প্রস্তাব এড়িয়ে নিজেদের সমুহ বিপদ জেনেও যুদ্ধে নতুন রসদ সরবরাহ এবং রাশিয়ার উপর নতুন নিষেধাজ্ঞার অবস্থান থেকেই ইঙ্গ-মার্কিন ঐক্য ও ইউরোপের উপর তাদের নিয়ন্ত্রনের চিত্রটি ধরা পড়ে। আর এই মরণপণ প্রয়াসের নেপথ্যে রয়েছে বাকি দুনিয়ার উপর পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদী শক্তির অর্থনৈতিক আধিপত্য ও রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার সমুহ আশঙ্কা। ইউক্রেনের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রতি দরদ দেখিয়ে ইউক্রেনীয়দের নিরাপত্তা ও মানবাধিকার রক্ষায় জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় আলোচনা ও রাজনৈতিক সমাধানের পথ রুদ্ধ করে দিয়ে প্রতিমাসে সেখানে শত শত কোটি ডলারের অস্ত্র সরবরাহের পথেই হাঁটছে তারা। ন্যাটোর অস্ত্রে ইউক্রেনের ইহুদি শাসকরা ডনবাস অঞ্চলে রাশিয়ান বংশোদ্ভুত লোকদের উপর গণহত্যা চালাচ্ছে বলে কানাডিয়ান সাংবাদিক ইভা বার্টলেট অভিযোগ করেছেন। ইভা বার্টলেট ও তার সহকর্মীরা ডোনেস্ক ও ডনবাস এলাকা সফরে গিয়ে স্বচক্ষে কিয়েভ বাহিনীর গণহত্যার কার্যক্রম দেখে এসব তথ্য নথিভুক্ত করেছেন বলে শিলার ইনস্টিটিউট আয়োজিত একটি ভিডিও কনফারেন্সে জানিয়েছেন। কিয়েভ প্রশাসনের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ তুলে বিচারের সম্মুখীন করার দাবি জানিয়েছে তারা। সাংবাদিক বার্টলেট ডোনেস্ক অঞ্চলে কিয়েভ বাহিনীর গণহত্যার বিষয়ে পশ্চিমা মিডিয়ার নিরবতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। আধিপত্যবাদী নিয়ন্ত্রণ টিকিয়ে রাখতে শিখণ্ডী শাসকদের নিজ দেশের জনগণের উপর নির্যাতন ও গণহত্যার এসব তথ্যই বলে দেয় পশ্চিমা আধিপত্যবাদী বংশবদ শাসকরা ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে কতটা বেপরোয়া হয়ে উঠতে পারে। ইভা বার্টলেট ডনবাসে জেলেনস্কি বাহিনীর হাতে সাড়ে ৪ হাজার বেসামরিক মানুষ হত্যার তথ্য দিয়েছেন। এরা সম্ভবত রাশিয়ান বংশোদ্ভুত নাগরিক, যারা সাম্প্রতিক রেফারেন্ডামে রাশিয়ান ফেডারেশনে যোগ দেয়ার পক্ষে ভোট দিয়েছে। এই অপরাধে ওদেরকে হত্যা করছে কিয়েভের জায়নবাদী পশ্চিমা পুতুল সরকারের বাহিনী।

ল্যাটিন আমেরিকান সাংবাদিক, অ্যাক্টিভিস্ট বেন নরটনের লেখা একটি নিবন্ধের শিরোনাম, ‘বৃটিশ অ্যাম্পায়ার কিল্ড ১৬৫ মিলিয়ন ইন্ডিয়ানস ইন ফোরটি ইয়ার্স: হাউ কলোনিয়ালিজম ইনস্পায়ার্ড ফ্যাসিজম। শুধুমাত্র সম্পদ লুন্ঠন ও বর্ণবাদী দৃষ্টিভঙ্গির কারণে বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদীরা যেভাবে ১৬৫ মিলিয়ন (সাড়ে ১৬ কোটি) মানুষ হত্যা করেছিল তার বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে নিবন্ধে। এ সপ্তাহে আইসিএইচ অনলাইনে নিবন্ধটি প্রকাশিত হয়েছে। বৃটিশ শাসনে ১৮৮০ সাল থেকে ১৯২০ সালের মধ্যে প্রায় ১০ কোটি মানুষ নিহত হয়েছিল বলে নরটনের নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রায় ২০০ বছরের ঔপনিবেশিক শাসনের সময় ভারত থেকে ৪৫ ট্রিলিয়ন ডলারের সম্পদ বৃটেনে পাচার করা হয়েছিল বলে একজন অর্থনীতিবিদের বিশ্লেষণের আলোকে তিনি উল্লেখ করেছেন। বৃটিশদের এমন অনৈতিক গণহত্যা ও লুণ্ঠনের প্রতিক্রিয়ায় ইউরোপে হিটলার-মুসোলিনীর ফ্যাসিবাদের উত্থান ঘটেছিল বলে নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়। বৃটিশরা ভারত ত্যাগ করার মাত্র ৪ বছর আগে ১৯৪৩ সালে বাংলায় দুর্ভীক্ষে প্রায় ৩০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছিল শুধুমাত্র বৃটিশদের বেপরোয়া পুুঁজি পাচারের কারণে। তখন ভারত থেকে খাদ্য রফতানি অব্যাহত থাকলেও খাদ্য আমদানি ও খাদ্য নিরাপত্তার কোনো ব্যবস্থা না থাকায় এ মহামারি দেখা দিয়েছিল। বাংলার কৃষকদের উৎপাদিত উদ্বৃত্ত খাদ্যশস্য ইউরোপে পাঠিয়ে দিয়ে এ দেশের মানুষকে দুর্ভিক্ষের মুখে ঠেলে দিয়ে হত্যা করেছিল নোবেল বিজয়ী প্রধানমন্ত্রী উইনস্টিন চার্চিলের সরকার। চরম বর্নবাদী চার্চিল একদিকে হিটলার ও মুসোলিনীকে প্রসংশা ও সমর্থন করেছেন, অন্যদিকে ভারতীয়দের প্রতি চরমভাবে ঘৃণা পোষণ করতেন। ভারতীয় রাজনীতিবিদ- কূটনীতিক জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি শশি থারুর বলেছেন, ‘চার্চিলের হাতে হিটলারের চেয়েও বেশি রক্ত ছিল । চার্চিলের এক কলমের খোঁচায় ভারতের ৪৩ লাখ মানুষকে দুর্ভীক্ষে মরতে হয়েছিল।’ খ্যাতিমান অর্থনীতিবিদ উতশা পাটনায়েকের হিসাব অনুসারে বৃটিশ ঔপনিবেশিক শাসকরা ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে ৪৫ ট্রিলিয়ন ডলারের সম পরিমান সম্পদ বৃটেনে পাচার করেছিল। ঔপনিবেশিক শক্তির বশংবদ, পুঁজিবাদী লুন্ঠনের কুশীলব এ উপমহাদেশের রাজনৈতিক অর্থনৈতিক দুর্বৃত্তরা এখনো সম্পদ পাচার অব্যাহত রেখেছে। বিশাল বৃটিশ-ভারতের ক্ষুদ্র ভগ্নাংশ বাংলাদেশ থেকে গত দেড় দশকে ১০ লক্ষকোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়ে গেছে। প্রায় ২ কোটি প্রবাসি বাংলাদেশি কর্মীর পাঠানো রেমিটেন্স এবং তৈরীপোশাক শিল্প ও কোটি কোটি কৃষকের ঘামে শ্রমে-বিনিয়োগে সম্ভাবনাময়, অগ্রসরমান বাংলাদেশের ১৭ কোটি মানুষ আবারো একটি নীরব দুর্ভীক্ষের সম্মুখীন। আঞ্চলিক আধিপত্যবাদী শক্তির মদদে চেপে বসা রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ণ ও দুর্নীতির করাল গ্রাস থেকে মুক্তির জন্য গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার উত্তরণের কোনো বিকল্প পথ নেই।

[email protected]



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন