পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
ইনকিলাবে প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়েছে: ‘একটি মামলা থেকে সরকারের আয় হচ্ছে ৫৫ পয়সা থেকে সর্বোচ্চ ৩০০ টাকা। মামলার বিষয়বস্তুর মূল্যমান যদি কয়েক হাজার কোটি টাকাও হয়, তাতে মামলাকারীকে গুনতে হয় বড় জোর ৪০ হাজার টাকা।’ উল্লেখ করা যেতে পারে, কোর্ট ফি আইন প্রণীত হয় ১৮৭০ সালে। এর সংশোধনী হয় ২০১০ সালে। ওই বছরই এর এসআরও প্রণীত হয়। সে অনুযায়ী, বর্তমানে কোর্ট ফি আদায় করা হচ্ছে। ২০১০ সালের সংশোধনীতে কোর্ট ফি সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়। আইনজীবীদের আপত্তির মুখে ফের ২ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ করার বিষয়, মামলা দায়েরের প্রবণতা ও সংখ্যা বাড়লেও এবং মামলার পরিচালন ব্যয় বর্ধিত হলেও রাষ্ট্রের আয় মোটেই বাড়নি। অথচ, বিচার নিষ্পত্তি ও মামলা ব্যবস্থাপনায় সরকারের ব্যয় বেড়েই চলেছে। মামলায় আইনজীবীদের দাবি যথেষ্ট বেড়েছে, যা মেটাতে মামলাকারীরা সর্বস্বান্ত হচ্ছে। তাদের গাটের টাকা আইনজীবীদের পকেটে ঢুকছে। রাষ্ট্র কিন্তু বাড়াতি কিছু পাচ্ছে না। এটা ঠিক, বিচার কোনো বাণিজ্যিক কার্যক্রম নয় যে, রাষ্ট্র এ থেকে আয় করবে। কিন্তু এও তো সত্য, রাষ্ট্রকে এজন্য যথেষ্ট ব্যয় করতে হয়। কোর্ট ফি’র যেহেতু প্রচলন আছে, সেহেতু তা যুক্তিসঙ্গত হওয়া উচিত। আইন সংশোধন করে কোর্ট ফি যখন বাড়ানো হয়, তখন আইনজীবীদের বক্তব্য ছিল, কোর্ট ফি বাড়ানো হলে মামলার পরিচালন ব্যয় বেড়ে যাবে, যা মামলাকারীদের বহন করা কঠিন হবে এবং বিচার প্রার্থনার ক্ষেত্রে এটা তাদের নিরুৎসাহিত করতে পারে। যুক্তি হিসেবে এটা যতই ভালো হোক, কোর্ট ফি আগের হারে নামিয়ে আনার সুফল মামলাকারীরা বাস্তবে খুব কমই পাচ্ছে। আইনজীবীরা কোর্ট ফি-সহ অন্যান্য খরচপত্র যা আদায় করছে, সেটা অনেক বেশি এবং দিনকে দিনই তা বাড়ছে। এই সঙ্গে আইনজীবীদের দেয় অর্থের পরিমাণও ক্রমাগত বাড়ছে। দেশে এখন বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ৩৮ লাখের মতো। এসব মামলায় আইনজীবীরা প্রতিবছর শত শত কোটি আয় করছে।
কোর্ট ফি এত কম হওয়ার কারণে যে-কেউ যখন-তখন প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে মামলা করছে। পর্যবেক্ষকদের মতে, বিচারাধীন মামলার সংখ্যা এত বেশি হওয়ার এটা অন্যতম বড় কারণ। ৫৫ পয়সা থেকে ৩০০ টাকা ফি দিয়ে যখন মামলা করা যায়, তখন যত কম আয়ের মানুষই হোক, মামলা করতে উৎসাহিত হতে পারে। আইনজীবীদের কাছে গেলে স্বভাবতই আইনজীবীরা তাদের প্ররোচিত করে। বিষয় মামলার উপযুক্ত হোক, না হোক আইনজীবীর পাল্লায় পড়ে অনেকেই মামলায় জড়িয়ে যায়। আর একবার মামলায় জড়ালে মামলাকারী কতদিনে যে, তা থেকে মুক্ত হবে কেউ বলতে পারে না। মামলা যত প্রলম্বিত হয়, আইনজীবীর ততই লাভ। পর্যবেক্ষকদের অনেকের অভিমত, আইনজীবীরা অনেক সময় ইচ্ছা করে মামলা ঝুলিয়ে রাখে। এতে অর্থক্ষয় ও অহেতুক হয়রানীর শিকার হয় মামলাকারী। ওদিকে ধনী ও বিত্তবানদের মধ্যে মামলাবাজি বিশেষভাবে লক্ষ করা হয়। তাদের অর্থাভাব নেই। সর্বোচ্চ ৪০ হাজার টাকা কোর্ট ফি দিয়ে তারা হাজার হাজার কোটি টাকা মূল্যমানের মামলা করতে পারে। তাদের মামলা করার একটা উদ্দেশ্য থাকে, বিষয়টি অনির্দিষ্টকাল ঝুলিয়ে রাখার। এছাড়া তাদের মধ্যে মানহানির মামলা দায়ের করার প্রবণতা লক্ষ করা যায়। মানহানির মামলা অধিকাংশ ক্ষেত্রে হয়রানি করার জন্য করা হয়। আইনজ্ঞদের মতে, কোর্ট ফি’র পরিমাণ মামলার প্রকৃতি ও মূল্যমান অনুযায়ী যথাযথ হলে তুচ্ছাতিতুচ্ছ কারণে বা অপ্রয়োজনে মামলা করার প্রবণতা কমতো।
আগের দিনে একশ্রেণীর মানুষ এমন ছিলো, যাদের মামলাবাজ বলে অভিহিত করা হতো। তারা অতি তুচ্ছ বিষয় নিয়ে প্রতিপক্ষ-প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে মামলা করতো, যাতে তাদের হয়রানি ও অর্থক্ষয় হয়। এই শ্রেণীর লোকেরা অন্যদের মামলা করতেও উৎসাহ দিতো। আগে এমন কথাও চালু ছিল যে, ‘কাউকে যদি সর্বস্বান্ত করতে চাও, তবে মামলা ঠুকে দাও।’ এই মামলাবাজি এখনও আছে। আছে মামলাবাজ প্ররোচনাকারীও। এক শ্রেণীর আইনজীবী তো মুখিয়েই আছে। তাদের কাছে গেলে মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে হলেও মামলা করতে বাধ্য করে। বিচারাঙ্গনের ব্যক্তিবর্গ, রাজনীতিবিদ, সমাজহিতৈষি সবার মতো, দেশে মামলার যে জট তৈরি হয়েছে, অতি দ্রুত তার নিরসন হওয়া দরকার। আর তা করতে হলে মানুষের মধ্যে মামলা করার প্রবণতা কমানোর উদ্যোগ নিতে হবে। বিকল্প বিচারব্যবস্থা প্রচলন করতে হবে। সালিশ ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। বিচার কার্যক্রম দ্রুতায়িত করতে হবে। বিচারাধীন মামলাগুলো শ্রেণীকরণ করে নিষ্পত্তির সময়সীমা নির্ধারণ করা হলে মামলার সংখ্যা দ্রুত কমে যাবে। বিচার পাওয়া নাগরিক অধিকার বটে। কেউ বিচার পেতে মামলার আশ্রয় নিতেই পারে। কিন্তু মামলা না করে যদি সমস্যা বা বিরোধের মীমাংসা করা সম্ভব হয়, তবে সেটাই করা উচিত। তাছাড়া কোর্ট ফি সময় ও বাস্তবানুগ হলে অহেতুক ও অপ্রয়োজনীয় মামলা অনেকটা স্বয়ংক্রিয়ভাবেই কমে যাবে বলে আইনবিদরা মনে করেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।