Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চিকিৎসা বর্জ্যে স্বাস্থ্যঝুঁকি মারাত্মক

| প্রকাশের সময় : ১৫ ডিসেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

নানাবিধ দূষণে দেশের পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য মারাত্মক হুমকির মুখে এসে দাঁড়িয়েছে। দূষণজণিত ও সংক্রামক ব্যাধির ঝুঁকি ক্রমেই বেড়ে চলেছে। এ অবস্থায় মানুষ যতই চিকিৎসা সেবার জন্য হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনোস্টিক সেন্টারগুলোতে ভীড় করছে, মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি যেন ততই বেড়ে চলেছে। চিকিৎসাসেবা ও হাসপাতাল ব্যবস্থাপনায় মেডিকেল বর্জ্যব্যবস্থাপনায় মারাত্মক ঘাটতি, অনিয়ম ও অসচেতনতার কারণে এই ঝুঁকি দেখা দিয়েছে। অবস্থা ক্রমেই খারাপের দিকে যাচ্ছে। হাসপাতাল বর্জ্যব্যবস্থাপনা ও পরিবেশগত নিরাপত্তার বিষয়ে দেশে আইন থাকলেও তা একদিকে অপর্যাপ্ত অন্যদিকে বিদ্যমান আইনের সঠিক বাস্তবায়ন ও নজরদারি না থাকায় তা কোনো কাজে আসছে না। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ(টিআইবি)’র সাম্প্রতিক এক গবেষণা রিপোর্টের আলোকে গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত প্রতিবেদনে চিকিৎসা বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় অরাজকতার কারণে জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশগত ঝুঁকির বিষয়টি উঠে এসেছে। গত মঙ্গলবার একটি ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে টিআইবি তার গবেষণা জরিপের তথ্য প্রকাশ করেছে। সেখানে বিদ্যমান আইনের ত্রুটি, সীমাবদ্ধতা এবং আইনের বাস্তবায়নে সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতর ও কর্তৃপক্ষের অনীহা, অদক্ষতা, নিস্ক্রিয়তার চিত্র বেরিয়ে এসেছে।

পরিবেশ সংরক্ষণ আইন-১৯৯৫-এর সংশ্লিষ্ট ধারায় চিকিৎসা বর্জ্যকে পরিবেশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর ও ঝুঁকিপূর্ণ বলে বিবেচনা করে চিকিৎসা বর্জ্যব্যবস্থাপনা উন্নয়নের জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, স্বাস্থ্য অধিদফতর, সিটি কর্পোরেশন/ পৌরসভাসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সমন্বিত উদ্যোগের কথা বলা হয়েছে। পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে হাসপাতাল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে পরিবেশগত আইনটি যথেষ্ট নয়। তারই প্রেক্ষিতে ২০০৮ সালের চিকিৎসা বর্জ্যব্যবস্থাপনা ও প্রক্রিয়াজাতকরণ আইন প্রণীত হলেও গত ১৪ বছরেও আইন বাস্তবায়নে কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা ১৯৯৭ অনুসারে ‘লাল’ শ্রেণীভুক্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিটি হাসপাতালে তরল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য এফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্লান্ট(ইটিপি) থাকা বাধ্যতামূলক করা হলেও টিআইবির গবেষণা রিপোর্টে দেখা যায়, শতকরা ৮৩ শতাংশ হাসপাতালেই ইটিপি নেই। হাসপাতাল থাকলেও শতকরা ৮০ শতাংশ সিটি কর্পোরেশন/পৌরসভায় চিকিৎসা বর্জ্য শোধনাগার নেই। এমনকি ২০০৮ সালের চিকিৎসা বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আইন অনুসারে বর্জ্য সংরক্ষণের জন্য ৬টি ক্যাটাগরিতে আলাদা রঙের পাত্র রাখার নির্দেশনা থাকলেও জরিপকৃত হাসপাতালগুলোর মধ্যে শতকরা ৬০ ভাগ এ নির্দেশনা পালন করছে না। বেশিরভাগ হাসপাতালে যত্রতত্র বর্জ্য ফেলা হচ্ছে এবং সব ধরণের বর্জ্য একসাথে ডাম্পিং করা হচ্ছে। অনেক হাসপাতালে চিকিৎসা বর্জ্য সংরক্ষণের জন্য আলাদা কোনো স্থানও নেই বলে টিআইবি রিপোর্টে বলা হয়েছে। সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, ডিসপোজেবল চিকিৎসা সামগ্রী ব্যবহারের পর যত্রতত্র ডাম্পিং করার পাশাপাশি অনেক ক্ষেত্রে এসব সামগ্রী কুড়িয়ে নিয়ে পরিস্কার করে পুনরায় ব্যবহারের জন্য বিক্রি হচ্ছে।

অসুস্থ্য মানুষ নিয়ে সমৃদ্ধ জাতি গঠন অসম্ভব। পরিবেশগত দূষণ, খাদ্যপণ্যে অনিয়ন্ত্রিত ভেজাল ও মানহীনতার কারণে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ অসুস্থ হয়ে রোগ নির্নয় ও চিকিৎসার জন্য হাসপাতাল-ডায়াগনোস্টিক সেন্টারে যেতে বাধ্য হচ্ছে। হাসপাতাল ও ডায়াগনোস্টিক সেন্টারের বর্জ্যব্যবস্থাপনার ঘাটতির কারণে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকির সম্মুখীন হচ্ছে সেখানে আগত সব মানুষ। সাধারণ ডিজেনারেটিভ স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়ে রোগীর সাথে যাওয়া সুস্থ স্বজনদের হাসপাতালের বর্জ্যব্যবস্থাপনার অনিয়মের কারণে মারাত্মক সংক্রামক ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বিদ্যমান। স্বাস্থ্যখাতে প্রতি বছর সরকারকে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করতে হয়। এরপরও প্রতিবছর হাজার হাজার মানুষ চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাচ্ছে। এ খাতে আরো কয়েক হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক মূদ্রা খরচ হয়ে যাচ্ছে। দেশের পরিবেশগত সুরক্ষা, বর্জ্যব্যবস্থাপনা ও হাসপাতাল ও চিকিৎসা বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে যুগোপযোগী করার পাশাপাশি আইনের সঠিক বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে স্বাস্থ্য ঝুঁকি এবং চিকিৎসা খাতের খরচ অনেকটা কমিয়ে আনা সম্ভব। জাতীয় স্বার্থে টিআইবির গবেষণা জরিপটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও সময়োপযোগী। স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়ন ও চিকিৎসা বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম, দুর্নীতি ও সুশাসনের অভাব দূর করতে টিআইবি’র ১১ দফা সুপারিশ সরকারের বিবেচনার দাবি রাখে। চিকিৎসা বর্জ্যব্যবস্থাপনার সাথে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের মধ্যে সমন্বয় নিশ্চিত করে তা বাস্তবায়ন করতে একটি ‘কর্তৃপক্ষ’ গঠনের প্রস্তাব কার্যকর করা যেতে পারে। শুধু আইন প্রণয়ন করলেই হবে না, জনস্বার্থে আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন