Inqilab Logo

রোববার, ০৭ জুলাই ২০২৪, ২৩ আষাঢ় ১৪৩১, ৩০ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

নাসিক নির্বাচন : নিরাপত্তার শঙ্কা দূর হোক

| প্রকাশের সময় : ২১ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচারণা পর্ব ইতিমধ্যেই শেষ হয়েছে। আজ রাত পোহালেই বন্দর ও শিল্পনগরী নারায়ণগঞ্জের বহুল আলোচিত-প্রতীক্ষিত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন। প্রায় এক মাসের নির্বাচনী পরিক্রমা অনেকটাই শান্তিপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক হিসেবে দেখা গেলেও নির্বাচনের দিনটি নিয়ে এখনো যথেষ্ট শঙ্কা রয়েছে। বিএনপি’র পক্ষ থেকে অস্ত্র উদ্ধার ও সেনা মোতায়েনের দাবী জানানো হলেও তা রক্ষিত না হওয়ায় শেষ মুহূর্তে প্রশাসন ও সরকারের দলীয় প্রভাবের আশঙ্কা করছে বিএনপি। শত বছরের পুরনো নারায়ণগঞ্জ পৌরসভাকে সিটি কর্পোরেশনে উন্নীত করার পর এটি দ্বিতীয় নির্বাচন হলেও দলীয় প্রতীকে এটিই প্রথম নির্বাচন। সরকারীদল আওয়ামীলীগ এবং প্রধান বিরোধীদল বিএনপি নৌকা ও ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করায় এই নির্বাচন বাংলাদেশের সাম্প্রতিক স্থানীয় সরকার নির্বাচনের ধারাবাহিকতায় অনেকটা ভিন্নতর মেজাজ ও মাত্রা নিয়ে হাজির হয়েছে। তাছাড়া বর্তমান নির্বাচন কমিশনের ৫ বছরের টেনিউর শেষ হয়ে যাওয়ায় মূলত এই নির্বাচনটিই হবে তাদের ইমেজ রক্ষার শেষ নির্বাচন। আগামী ২৮ ডিসেম্বর সারাদেশে জেলা পরিষদ নির্বাচনের সিডিউল থাকলেও সেটি অনেকটা একদলীয় নির্বাচন হওয়ায় নির্বাচনী রাজনীতির হিসাব নিকাশে তা’ কার্যত গুরুত্বহীন। ঢাকার বাইরের একটি স্থানীয় সরকার নির্বাচন হলেও নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন নানা কারণে একটি জাতীয় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনসহ আগামী মাসগুলোতে জাতীয় রাজনীতির গতি-প্রকৃতি নির্ধারণে এই নির্বাচন একটি গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াতে পারে বলে মনে করছেন দেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণহীন, ১৫৩টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারীর দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে অগ্রহণযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হওয়ার পরও পরবর্তী প্রায় সব স্থানীয় নির্বাচনই একপাক্ষিক ও কারচুপিমূলকভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিগত উপজেলা নির্বাচন এবং প্রথমবারের মত দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও সরকারী দলের একচ্ছত্র প্রভাবের মধ্য দিয়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়া এবং বিজয় নিশ্চিত করার প্রবণতা দেখা গেছে। উপজেলা পরিষদ, ইউনিয়ন পরিষদ এবং পৌরসভাগুলোতে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরাই শুধু জেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোটার হওয়ায় এবং বিরোধীদল বিএনপি অংশগ্রহণ না করায় এই নির্বাচনে আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থীদের বিজয় নিশ্চিত হওয়ার পরও ইতিমধ্যে এক-তৃতীয়াংশের বেশী জেলায় চেয়ারম্যানদের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয় নিশ্চিত হয়েছে। অর্থাৎ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার বাসনা সরকারী দলের একটি রাজনৈতিক ভ্রান্তিবিলাসে পরিণত হয়েছে। নাসিক নির্বাচনকে সে অর্থে ব্যতিক্রম দেখতে চায় দেশবাসী। এমনকি সরকার এবং নির্বাচন কমিশনও এই নির্বাচনকে তাদের ইমেজ সংকট উত্তরণের পথ নির্দেশক হিসেবে গণ্য করতে যাচ্ছে বলে অনেকে মনে করছেন। সরকার এবং নির্বাচন কমিশনের রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলে একটি অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাইলফলক হিসেবে নাসিক নির্বাচনকে কাজে লাগানো অসম্ভব নয়।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে গুম-হত্যা ও সন্ত্রাসের জনপদ হিসেবে নারায়ণগঞ্জ বারবার আলোচ্য বিষয়ে পরিণত হয়েছে। সন্ত্রাসীদের হাতে আগ্নেয়াস্ত্রের ছড়াছড়ি এবং রাজনৈতিক উত্তাপে নারায়ণগঞ্জ যখন সাধারণ মানুষের কাছে একটি ভীতিকর জনপদ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, তখন একটি হাইপ্রোফাইল নির্বাচনের আগে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কোন তৎপরতা পরিলক্ষিত হয়নি। সরকার ও নির্বাচন কমিশন সেনা মোতায়েন ছাড়াই একটি অবাধ নির্বাচনের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে জনগণ মাঠ পর্যায়ে তার বাস্তবায়ন দেখতে চায়। এমনকি সরকারদলীয় প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াত আইভীও কোন তৃতীয় পক্ষ নির্বাচনে সন্ত্রাস করতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। অন্যদিকে বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের প্রার্থী এডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খানকে প্রাণনাশের হুমকি দেয়া হয়েছে বলে ইতিমধ্যে অভিযোগ উঠেছে। বিশেষত, কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে কিছু ভাল ও সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য প্রার্থী যেমন আছেন, সেই সাথে চিহ্নিত সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, মাদক ব্যবসায়ী, অস্ত্রধারী ক্যাডাররাও প্রার্থী হিসেবে মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। এরা নির্বাচনকে নিজেদের মত করে প্রভাবিত করতে চাইবে, এটা নিশ্চিত। ইতিমধ্যে নির্বাচনী এলাকায় লাইসেন্সধারী বৈধ অস্ত্রের মালিকদের অস্ত্র জমা দিতে বলা হলেও তা’ কতটা বাস্তবায়িত হয়েছে তা’ এখনো স্পষ্ট নয়। তবে অবৈধ অস্ত্রের সংখ্যা নিঃসন্দেহে অনেক বেশী এবং সে সব অস্ত্র উদ্ধারে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কোন অভিযান পরিচালিত হয়নি। নির্বাচনকে সামনে রেখে পলাতক ও দীর্ঘদিন আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরাও প্রকাশ্যে ভোটের মাঠে নেমে এসেছে বলে ইতিপূর্বে খবর প্রকাশিত হয়েছে। এসব বাস্তবতায় নাসিক নির্বাচনকে অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করা সংশ্লিষ্ট সকলের জন্য অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। সরকার ও নির্বাচন কমিশনের সদিচ্ছা থাকলে অনেক কঠিন হলেও নির্বাচনকে মন্দের ভাল হিসেবে গ্রহণযোগ্য করা অসম্ভব নয়। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি গণমাধ্যম এবং রাজনৈতিক দলগুলোর নেতা-কর্মীদের গণতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি ও উৎসবমুখর অংশগ্রহণে নারায়ণগঞ্জ থেকে একটি গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক জাতীয় নির্বাচনের ভিত্তি রচিত হোক। এই প্রত্যাশা সকলের। 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন