মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের সবচেয়ে সফল টিভি সিরিজ ছিল ১৯৭৩ সালের একটি স্পাই থ্রিলার। ধারাবাহিক এই গুপ্তচর কাহিনির নাম ছিল ‘সেভেনটিন মোমেন্টস অফ স্প্রিং’। বলা হয় এই ছবিই পুতিনকে গোয়েন্দা সংস্থা কেজিবিতে যোগদানে অনুপ্রাণিত করেছিল। কীভাবে - সে প্রসঙ্গ একটু পরে।
কাহিনির মূল চরিত্র ছিল ম্যাক্স অটো ভন স্টিয়ারলিৎজ নামে এক গুপ্তচর – যিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মানিতে নাৎসি শীর্ষ রাজনৈতিক মহলের ভেতরে ঢুকেছিলেন চর হয়ে। স্টিয়ারলিৎজ ছিলেন রাশিয়ার জেমস বন্ড। সোভিয়েভ ইউনিয়ন ১৯৭০এর দশকে খুঁজছিল একজন নায়ককে- যে সাহসী আর কম্যুনিস্ট ভাবাদর্শের মূর্ত প্রতীক। যে শক্তিধর, কিন্তু মৃদুভাষী- ইস্পাতের মত কঠিন। এমন একটা চরিত্র তখন অনুপ্রাণিত করেছিল বহু তরুণ রাশিয়ানকে যাদের অন্যতম ছিলেন বর্তমান রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
অভিনেত্রী এলিয়েনোরা শাশকোভা অভিনয় করেছিলেন গুপ্তচর ম্যাক্সের স্ত্রী আলেকসান্ড্রার ভূমিকায়। বিবিসির ডিনা নিউম্যানকে বলছিলেন প্রত্যেকটা এপিসোডের সম্প্রচার ছিল একটা সাড়া জাগানো ঘটনা। ‘তখন রাস্তাঘাট সব শুনশান ফাঁকা হয়ে যেত। মানুষজন কাজ থেকে তড়িঘড়ি ঘরে ছুটতো পরের এপিসোডে গল্প কোন দিকে মোড় নিচ্ছে তা দেখতে। প্রথম পর্ব থেকেই প্রতিটি পর্বের গল্পে ছিল টানটান উত্তেজনা। পর্বগুলো দর্শকদের যাদুর মত টানত।’
সোভিয়েত গুপ্তচর স্টিয়ারলিৎজ কীভাবে ১৯৪৫এর বসন্তকালে নাৎসি ও আমেরিকানদের মধ্যে গোপন শান্তি আলোচনা ভেস্তে দিচ্ছেন তা গোগ্রাসে গিলত আনুমানিক হিসাব অনুযায়ী পাঁচ থেকে আট কোটি সোভিয়েত টিভি দর্শক। অভিনেত্রী শাশকোভা বলছিলেন, সোভিয়েত গুপ্তচরদের কাজের গুরুত্বই ছিল এই কাহিনীর মূল উপজীব্য। ‘আমাদের দেশে গুপ্তচরদের খুবই সম্মানের চোখে দেখা হয়। কারণ এরাই গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নিয়ে আসেন দেশের জন্য এবং ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আমাদের জিততে সাহায্য করেন। যুদ্ধ পরবর্তী প্রজন্মের জন্য এটি ছিল দেশপ্রেম উদ্ধুদ্ধ করার একটা ছবি।’
এ টিভি সিরিজ ছিল সোভিয়েত গোয়েন্দা সংস্থা কেজিবির জনসংযোগ কার্যক্রমের একটা অংশ। তাদের উদ্দেশ্য ছিল কেজিবির ভাবমূর্তি উন্নত করা এবং শিক্ষিত তরুণদের সংস্থার কাজে আকৃষ্ট করা। এই সিরিজের মাধ্যমে উঠে এসেছিল গোয়েন্দা সংস্থার রহস্যময় কাজের জগতের একটা চিত্র এবং তাদের পেশাদারিত্ব আর দক্ষতার নৈপুণ্য।
গুপ্তচর স্টিয়ালিৎজকে যদিও বলা হয় রাশিয়ার জেমস বন্ড- কিন্তু রুশ এই গুপ্তচর বন্ডের মত স্টান্ট বা ভেলকি দেখান না, তাকে পর্দায় দেখা যায়- বেশিরভাগ সময় তিনি তথ্য নিয়ে ভাবছেন- সেগুলো অনবরত বিশ্লেষণ করছেন। তার হাতে মূল্যবান ও অত্যাধুনিক সব যন্ত্রপাতি বা সরঞ্জাম নেই- তার মনোরঞ্জনের জন্য তার পাশে নেই লাস্যময়ী ও সুন্দরী তরুণী সঙ্গীরা। তিনি বরং পছন্দ করেন তার কাজে ডুবে থাকতে। সামনে ধোঁয়া ওঠা কফির পেয়ালা আর মুখে সিগারেট নিয়ে চিন্তামগ্ন স্টিয়ারলিৎজকে দেখা যায় তাকিয়ে আছেন জানালার বাইরে -ভাবনায় ডুবে থাকতেই তিনি ভালবাসেন।
সুপরিচিত ব্রিটিশ ডবল এজেন্ট কিম ফিলবি যিনি ব্রিটিশ গোয়েন্দা দপ্তরের কর্মী ছিলেন এবং একইসঙ্গে রাশিয়ার হয়ে চরের কাজ করতেন, এই সিরিজটি খুবই পছন্দ করতেন। কিন্তু তিনি মন্তব্য করেছিলেন যে, একজন গুপ্তচর এত লম্বা সময় ধরে শুধু চিন্তায় ডুবে থাকলে এই কাজে তার টিকে থাকা কঠিন হবে। এমনকি স্টিয়ারলিৎজের চরিত্রে যিনি অভিনয় করেছিলেন সেই ভিয়াচেসলাভ টিখোনভেরও মনে হয়েছিল তার চরিত্রের একঘেঁয়েমি কাটাতে এই স্পাই সিরিজে কিছু রোমান্টিক দৃশ্য রাখা দরকার।
‘একবার ভিয়াচেস্লাভ টিখোনভ পরিচালককে বললেন - মনে হয় যেন কাজের বাইরে আমার আর কোন জীবন নেই,’ বলছিলেন এলিয়েনোরা শাশকোভা। ‘ভিয়াচেস্লাভ বলেছিলেন, আমার জন্য একজন প্রেমিকার চরিত্র দিন না যাকে আমি ভালবাসব? যার মাধ্যমে আমার আবেগের জায়গাগুলো ছবিতে আমি ফুটিয়ে তুলতে পারব? তিনি পরিচালককে তার এক বন্ধুর কথা বলেছিলেন যিনি বাস্তব জীবনে একজন সাবেক গুপ্তচর।
ভিয়াচেস্লাভ বলেছিলেন তার ঐ বন্ধু যখন বিদেশে চর হিসাবে কাজ করছিলেন তখন তাকেও একবার গোপনে তার স্ত্রীর সাথে দেখা করতে দেয়া হয়েছিল!” অভিনেত্রী শামকোভা বলছিলেন, “সব শুনে পরিচালক তাতিয়ানা লিওযনোভা উত্তর দিয়েছিলেন- ‘বাহ্- দারুণ তো। আমরাও সিরিজে ওরকম দৃশ্য রাখব’।”
কাহিনি ছিল এরকম যে, স্টিয়ারলিৎসের স্ত্রী থাকেন ঘটনাস্থল জার্মানি থেকে বহু দূরে - যুদ্ধ বিধ্বস্ত রাশিয়ায়। ফলে গল্পের প্লট অনুযায়ী সোভিয়েত গোয়েন্দা সংস্থা কেজিবি তাকে সীমান্ত পার করে নিয়ে এল বার্লিনে। এরপর স্টিয়ারলিৎজের তার সঙ্গে অল্প সময়ের জন্য দেখা করার একটা প্লট সাজানো হল কফির দোকানে। স্টিয়ারলিৎজকে বসানো হল দোকানের এক কোণে। তার স্ত্রীকে ঢুকতে দেখে তিনি কফি অর্ডার করলেন। দুজনের মধ্যে কিন্তু কোন কথা হলো না। দুজন দুজনের দিকে শুধু প্রেমভরা দৃষ্টি বিনিময় করলেন বার কয়েক।
“পর্দায় পুরো পাঁচ মিনিটের ঐ নীরব চাহনি বিনিময়ের দৃশ্যটি ছিল সোভিয়েত জমানার টিভি অনুষ্ঠানে অন্যতম সবচেয়ে বিখ্যাত ও জনপ্রিয় দৃশ্যপট,” বলছিলেন অভিনেত্রী শাশকোভা। ওই দৃশ্যে স্ক্রিনজুড়ে ছিল প্রথমে স্টিয়ারলৎজের আকুতিভারা চোখ। এরপর তার স্ত্রীর প্রেমভরা দুই চোখ। আবার গুপ্তচরের দৃষ্টিতে রোমান্টিক আদানপ্রদান। যার পর উঠে দাঁড়ালেন তার স্ত্রী। বেরিয়ে গেলেন ধীরে ধীরে।
এলিয়েনোরা শাশকোভা বলেন, অভিনয় করার সময় তার মনে হতো গল্পের স্টিয়ারলিৎজ কীভাবে তার স্ত্রীকে ছেড়ে অতদিন থাকছেন, তার মনে হতো কী কঠিন জীবন কাহিনীর চরিত্র স্টিয়ারলিৎজের। ‘তবে আমি জানি এটা কতটা বাস্তব। আমার দেশের আসল গুপ্তচরদের, স্ত্রী-পরিবার ছেড়ে বহু বহু বছর বিদেশে কাটাতে হতো - একেবারে একা। কাজ ছাড়া তাদের অন্য কোন দিকে নজর দেবার সুযোগ ছিল না। মনে হতে পারে এটা অবাস্তব। কিন্তু না- সেসময়টা ছিল আলাদা। সেটা ছিল যুদ্ধের সময়।’
‘সেভেনটিন মোমেন্টস অফ স্প্রিং’ ধারাবাহিক গুপ্তচর সিরিজের থিম সঙ্গীতটি ১৯৯০এর দশকের প্রথম দিকে আবার ব্যবহার করা হয় আরেকটি চলচ্চিত্রে। ছবিটি ছিল সেন্ট পিটার্সবার্গ শহরের অল্পপরিচিত এক কর্মকর্তাকে নিয়ে। ঐ কর্মকর্তার নাম – ভ্লাদিমির পুতিন। সেন্ট পিটার্সবার্গ শহরের মেয়রের দপ্তর থেকে স্থানীয় রাজনীতিকদের নিয়ে ধারাবাহিক এক সিরিজে বেশ কয়েকটি তথ্যচিত্র তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়ছিল। যদিও ওই সিরিজে মাত্র একটি তথ্যচিত্রই শেষ পর্যন্ত তৈরি হয়েছিল – সেটি ভ্লাদিমির পুতিনকে নিয়ে।
ঐ ছবিতে প্রথমবারের মত পুতিন প্রকাশ্যে ঘোষণা করেন যে তিনি কেজিবির একজন গুপ্তচর ছিলেন। সেখানে তিনি স্টিয়ারলিৎজের চরিত্রের অনুকরণে নিজেকে তুলে ধরেন। যেন বাস্তবে তিনিই স্টিয়ারলিৎজের মূর্ত প্রতীক। এমনকী সেভেনটিন মোমেন্টস অফ স্প্রিং ফিল্ম সিরিজের শেষ দৃশ্যটিও তিনি পর্দায় তুলে আনেন। যে দৃঢ়তা, স্থিরতা, পেশাদারিত্ব ও সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষমতা স্টিয়ারলিৎজের চরিত্রের বিশেষত্ব ছিল, সেই গুণগুলো ঐ তথ্যচিত্রে উপস্থাপন করে পুতিন নিজের ভাবমূর্তি সমুন্নত করতে সক্ষম হন। সূত্র: বিবিসি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।