পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
দেশের আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক অবস্থা এক ভয়াবহ বিপর্যয়ের সম্মুখীন। গত দেড় দশক ধরে দেশ থেকে শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক রাজনীতি ও সহাবস্থানের পরিবেশ তিরোহিত হয়েছে। বিরোধী রাজনৈতিক মত দমনে সরকারের পক্ষ থেকে একের পর এক চরম পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি সংবিধান পরিবর্তন করে বিগত তিনটি জাতীয় নির্বাচন একপাক্ষিকভাবে অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে দেশে যে রাজনৈতিক সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে, বিরোধীরা তাকে ফ্যাসিবাদ বলে আখ্যায়িত করার সুযোগ পাচ্ছে। নির্দলীয়-নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার অধীনে জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে ১৭৩ দিন হরতাল ও জ্বালাও-পোড়াও আন্দোলন কর্মসূচি পালন করে বিএনপি সরকারকে দাবি মেনে নিতে বাধ্য করেছিল আওয়ামীলীগ-জামায়াতসহ দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো। সে সময় তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা শেখ হাসিনা বাংলাদেশে চিরদিনের জন্য নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তনের দাবি তুলেছিলেন। নব্বইয়ের গণআন্দোলনের সময় সর্বদলীয় ঐক্যের মধ্য দিয়ে প্রথম বাংলাদেশে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের প্রতি সর্বদলীয় আস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এরশাদের পতনের পর ১৯৯১ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত তিনটি জাতীয় নির্বাচন নিরপেক্ষ তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত কোনো নির্বাচনেই ক্ষমতাসীন সরকার দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় যেতে পারেনি। ক্ষমতাসীনদের অধীনে এবং তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের ফলাফল ও পার্থক্য ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির ৬ষ্ঠ ও জুনের সপ্তম জাতীয় নির্বাচনের মধ্য দিয়ে পরিষ্কার হয়ে যায়। নিজেদের অধীনে অনুষ্ঠিত ফেব্রুয়ারির একতরফা নির্বাচনে আওয়ামী লীগসহ প্রধান দলগুলো অংশগ্রহণ না করায় যেখানে বিএনপি ২৭৮টি আসনে জয়লাভ করে সেখানে জুনমাসে তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিএনপি ১১৬ আসন পেয়ে সংসদে প্রধান বিরোধিদলের আসনে বসেছিল। পচাত্তরে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ২১ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকার পর পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ধর্মনিরপেক্ষ আওয়ামী লীগের নেত্রী শেখ হাসিনা তসবিহ্ হাতে মোনাজাতের ছবি দিয়ে পোষ্টার ছাপিয়ে ভোটারদের যে বার্তা দিয়েছিলেন, ভোটের রাজনীতিতে তা কাজে লেগেছিল। তবে জনগণের ভুল ভাঙ্গতে বেশি সময় লাগেনি, ২০০১ সালে বিচারপতি লতিফুর রহমানের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি জোট নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয়লাভ করে ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন করেছিল। সেই নির্বাচনে ইনকামবেন্ট আওয়ামী লীগ মাত্র ৬২ আসন পেয়ে বিরোধিদলের আসনে বসেছিল। লক্ষ্যণীয় বিষয় হচ্ছে, নিবন্ধিত অর্ধশতাধিক রাজনৈতিক দলও জোট নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলেও ৯৫ শতাংশের বেশি আসন ও প্রায় ৯০ শতাংশ ভোট পেয়েছিল চারটি প্রধান রাজনৈতিক দল, বিএনপি(১৯৩), আওয়ামীলীগ(৬২), জামায়াতে ইসলামি(১৭), জাতীয় পার্টি(৪) । ছেচল্লিশটি দল কোনো আসনে জয়লাভ করতে পারেনি। বাংলাদেশের নির্বাচন ও ক্ষমতার রাজনীতি মূলত দ্বিদলীয় বৃত্তে আবদ্ধ।
নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবির সাথে একাত্মতা প্রকাশের পরও সংবিধানের দোহাই দিয়ে ১৯৯৬ সালে খালেদা জিয়া প্রথমে তা মেনে নিতে রাজি না হলেও পরে মেনে নিয়ে ক্ষমতা ছাড়তে রাজি হন। জাতীয় সংসদ থেকে আওয়ামীলীগের সদস্যদের পদত্যাগের কারনে পরিস্থিতি জটিল হয়ে পড়ায় তত্ত্বাবধায়ক বিল পাসের জন্য ৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ মাত্র ১২ দিনের জন্য স্থায়ী হয়েছিল। আইনগতভাবে নির্বাচন বৈধ হলেও খালেদা জিয়া রাষ্ট্রশক্তি ব্যবহার করে ক্ষমতা কুক্ষিগত করার চেষ্টা করেননি। পুলিশ-র্যাব দিয়ে আন্দোলন দমনের নিষ্ঠুরতার পথে তিনি কখনো হাটেননি। পক্ষান্তরে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপিসহ দেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ না করায় দেশে-বিদেশে প্রশ্নবিদ্ধ একপাক্ষিক নির্বাচনের আগে এবং ফল প্রকাশের পরে সব দলের সাথে রাজনৈতিক সমঝোতার মাধ্যমে অল্পদিনের মধ্যে আরেকটি নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। পশ্চিমা দেশগুলোর পক্ষ থেকেও একটি অংশগ্রহণমূলক মধ্যবর্তী নির্বাচনের চাপ ছিল। বিরোধীদের পক্ষ থেকে অভিযোগ হচ্ছে, ভারতের সমর্থন এবং নেপথ্য প্রভাবের কারণে বাংলাদেশের মহাজোট সরকার রাজনৈতিক সমঝোতার বদলে বিরোধীদল নির্মূলের রাজনৈতিক এজেন্ডা গ্রহণ করেছিল। একাত্তরে মানবতা বিরোধী অপরাধের বিশেষ ট্রাইবুনাল গঠন করে জামায়াত ও বিএনপি নেতাদের ফাঁসি দিয়ে দেশে একটি ব্যাপক রাজনৈতিক সংক্ষোভের জন্ম দিলেও শান্তি, স্থিতিশীলতা ও গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক পরিবেশ ও সহাবস্থান নিশ্চিত করতে গত দেড় দশকেও সরকারের পক্ষ থেকে একটি রিকনসিলিয়েশন বা রাজনৈতিক সমঝোতা প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ দেখা যায়নি। অষ্টম সংসদের মেয়াদ শেষে পরিকল্পিতভাবে দেশে একটি নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি তৈরী করে এক-এগারোর সেনা সমর্থিত সরকারের পথ সুগম করা হয়। সেনাশাসিত সেই সরকারের সাথে ভারতের মাধ্যমে পশ্চিমাদের সমঝোতার মধ্য দিয়ে ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদের অস্বাভাবিক ফলাফল নিশ্চিত করার কাহিনী বেশিদিন গোপন থাকেনি। সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিন্টন, ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জীসহ বিভিন্ন জনের বক্তব্যে তা পরিষ্কার হয়েছে। এ হিসেবে নবম থেকে ২০১৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর রাতের ভোটের একাদশ জাতীয় নির্বাচন পর্যন্ত পরপর তিনটি জাতীয় ও সারাদেশে অসংখ্য স্থানীয় সরকার নির্বাচনে জনমতের প্রতিফলন ঘটেনি। নতুন প্রজন্মের তরুণরা ভোটার হওয়ার পরও পরপর তিনটি নির্বাচনে ভোট দেয়ার সুযোগ পায়নি। একপাক্ষিক নির্বাচন ও সরকারের অগণতান্ত্রিক আচরণ দেশকে একটি বিচারহীনতার সংষ্কৃতি ও বল্গাহীন মানবাধিকার লঙ্ঘনের দিকে ঠেলে দিয়েছে। ক্ষমতাকে কুক্ষিগত রাখতে যে কোনো ধরণের রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ পুলিশি ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে দমনের প্রয়াস জাতিসংঘ, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা, মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং উন্নয়ন সহযোগী দেশগুলো কখনোই স্বাভাবিকভাবে মেনে নেয়নি।
যে দেশের মানুষ গণতন্ত্র, আত্মমর্যাদা ও অর্থনৈতিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে পশ্চিম পাকিস্তানী শাসকদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। যে নেতা হিন্দুত্ববাদের প্রতিপক্ষে দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে পাকিস্তান আন্দোলনে যুবসমাজকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, সেই শেখ মুজিবুর রহমানই গণতন্ত্রের দাবিতে পাকিস্তানীদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতার ডাক দিয়ে বছরের পর বছর কারা নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন। একাত্তরের আগে এবং স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী পেরিয়ে এসে ২০২২ সালে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা যেন একই মেরুতে দাঁড়িয়ে আছে। ঊনসত্তরে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পরেও জেনারেল আইয়ুব খানের উন্নয়নের রেকর্ড বাজানো হয়েছিল। এ দেশের মানুষ সব সময় অবকাঠামো উন্নয়নের চেয়ে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার উন্নয়ন, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, সুশাসন এবং অর্থনৈতিক সাম্যের দাবিকেই বেশি গুরুত্ব দেয়। স্বৈরশাসনের রক্তচক্ষুকে পরাভুত করেই এ দেশে বার বার গণতান্ত্রিক শাসনের ভিত রচিত হয়েছে। দেশের সবচেয়ে প্রাচীন রাজনৈতিক দল হিসেবে, ইতিহাসের অগ্রগামী শক্তি হিসেবে স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ভুল পদক্ষেপ এবং তার প্রতিক্রিয়ায় সৃষ্ট অরাজনৈতিক অভিঘাত দেশের ইতিহাসকে কলঙ্কিত করেছে। স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পেরিয়ে এসে বাংলাদেশ যখন বিশ্বমানচিত্রে উন্নয়নের মহাসরণীতে পা রাখার সম্ভাবনাময় অবস্থানে দাঁড়িয়ে আছে তখন আবারো আওয়ামী লীগের হঠকারি রাজনৈতিক তৎপরতা দেশকে নতুন করে সংঘাত ও সংকটের মধ্যে ঠেলে দিতে শুরু করেছে। গত দেড় দশকে দেশ থেকে লাখ লাখ কোটি টাকা পাচার হয়ে গেছে। দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে শুরু করে প্রায় সবগুলো বাণিজ্যিক ও তফশিলি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান দুর্বৃত্তায়িত রাজনীতি, দুর্নীতি-জালিয়াতি ও লুটপাটের শিকার হয়ে দেউলিয়াত্বের মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে। গত এক দশক ধরে উন্নয়নের কথা বলতে বলতে এখন দেশের ব্যাংকিং সেক্টরের দেউলিয়াত্ব, রির্জাভ ঘাটতি, অস্বাভাবিক বাণিজ্য ঘাটতি, টাকার অবমূল্যায়ন, মূল্যস্ফীতির বাস্তবতার মধ্যে আগামি বছর একটি বড় অর্থনৈতিক সংকট ও দুর্ভিক্ষের আশঙ্কার কথা বলা হচ্ছে। দেশের এ অবস্থার জন্য গণতন্ত্রহীনতা, বিচারহীনতা, পুলিশি দমন-পীড়ন, রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন এবং সুশাসনের সংকটকেই দায়ী করা যায়। দেশকে এ অবস্থা থেকে উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতার পথে এগিয়ে নিতে হলে প্রথমেই গণতান্ত্রিক নির্বাচন, জনআকাঙ্খার প্রতিফলন, ক্ষমতার শান্তিপূর্ণ হস্তান্তর এবং সর্ব ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। প্রায় দেড় দশক ধরে অগণতান্ত্রিক পন্থায় ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ নেতারা জনগণের সেই প্রত্যাশা ও আকাঙ্খাকে দমিয়ে রাখতে এখনো রাষ্ট্রশক্তি ব্যবহারের ঘৃণ্য দৃষ্টান্ত রেখে চলেছে। জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি লুটে নেয়া ব্যক্তিরা জবাব দিহিতার বাইরে থাকলেও ১০-১৫ হাজার টাকার অনাদায়ী কৃষি ঋণের জন্য কৃষকদের কোমরে দড়ি বেঁধে আদালতে নিয়ে যায় পুলিশ। স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশে এভাবেই বার বার দেশের মানুষের সামনে ক্ষমতাসীনদের দেউলিয়াত্ব ও দু:শাসনের একচক্ষু চেহারা ধরা পড়েছে। গত দেড় দশকে সেই চেহারা যেন দানবীয় রূপ লাভ করেছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তথা পশ্চিমাদের মুখের দিকে তাকিয়ে দেশের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেয়া হলে এ দেশ কখনো স্বাধীন হতো কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। দেশের মানুষ যখন নিজেদের স্বার্থে রাজনৈতিক পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে তখনই ঐতিহাসিক-রাজনৈতিক পটপরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠেছে। জেনারেল আইয়ুব খান এবং জেনারেল এরশাদ রাষ্ট্রশক্তি ব্যবহার করে এক দশকের বেশি ক্ষমতা কুক্ষিগত রাখতে পারেননি। শেখ হাসিনা সে সীমা অতিক্রম করেছেন, যা গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগের জন্য আত্মঘাতী।
বিগত ওয়ান-ইলেভেন সরকারের সময় বিদেশি গণমাধ্যমে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে অত্যন্ত সংকটপূর্ণ, খাদের কিনারে বলে অভিহিত করা হয়েছিল। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও মেগা উন্নয়ন প্রকল্পের ডামাডোলের আড়ালে সে খাদ আরো গভীর ও বিপদসঙ্কুল হয়েছে। আগামি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকারের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক সমঝোতার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। উপরন্তু বিরোধীদল দমনে পুলিশ এবং আওয়ামী লীগ কর্মীদের বেপরোয়া আচরণ নৃশংসতা ও নিষ্ঠুরতার মাত্রা অতিক্রম করে চলেছে। বিএনপির ৯টি বিভাগীয় শহরে ধারাবাহিক শান্তিপূর্ণ গণসমাবেশের শেষ ধাপে ঢাকা সমাবেশকে সামনে রেখে সরকারদলীয় ক্যাডার এবং দলবাজ পুলিশের আগ্রাসি তৎপরতা জাতিকে হতবাক করেছে। ঢাকার ওয়ারিতে যুবদল নেতার বাড়িতে হামলা চালিয়ে ৭০ বছর বয়েসী পিতাকে পিটিয়ে হত্যা করার সংবাদ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। ১০ তারিখের সমাবেশের আগে বিএনপির প্রধান কার্যালয়ের সামনে জড়ো হওয়া নেতাকর্মীদের সরিয়ে দিতে নিরস্ত্র মানুষের উপর বৃষ্টির মত গুলি ও টিয়ারশেল নিক্ষেপের দৃশ্য আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও স্থান পেয়েছে। বুলেটে একজনের মৃত্যু, শতাধিক আহত এবং হাজার হাজার গ্রেফতারের পাশাপাশি নয়াপল্টনের কার্যালয়ের কক্ষগুলোতে ভাঙচুর লন্ডভন্ড করা এবং দলের মহাসচিব, যগ্মমহাসচিবসহ শীর্ষ নেতাদের গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে একদিকে সরকারের চরম আক্রোশের বহি:প্রকাশ ঘটেছে, অন্যদিকে ১০ তারিখের গণসমাবেশ বানচালের চক্রান্ত ধরা পড়েছে। এই চরম পরিস্থিতি সামনে রেখে ঢাকার চারপাশে ব্যারিকেড, গণগ্রেফতার, আওয়ামী লীগকর্মী ও পুলিশের মহড়া, তল্লাশি চৌকি এবং অঘোষিত হরতালের মাধ্যমে যানবাহন বন্ধ করে দেয়ার পরও গোলাপবাগের জনসভা মহাসমাবেশে পরিনত হওয়ার মধ্য দিয়ে জনগণ সরকারকে একটি চরম বার্তা দিয়েছে। সেই সাথে বিরোধিদলের সাথে সরকারের অগণতান্ত্রিক আচরণ ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে জাতিসংঘ এবং মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের তরফ থেকেও কঠোর বার্তা দেয়া হয়েছে। দেশের প্রতিটি বিভাগীয় সমাবেশে সরকারের অঘোষিত প্রতিবন্ধকতা ডিঙ্গিয়ে লাখো মানুষের শান্তিপূর্ণ জমায়েতের প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ ছিল বিশ্বসম্প্রদায়ের। মূলত সরকারের একগুয়েমি ও অগণতান্ত্রিক-আগ্রাসি আচরণ ও অর্থনৈতিক লুটপাটের প্রতিবাদে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ বিএনপি’র প্লাটফর্মে এসে দাঁড়িয়েছে। এভাবেই একটি অনিবার্য পরিবর্তনের পথে হাঁটছে বাংলাদেশ। এমনটি মনে করছেন ভারতীয় লেখক, আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক অভিনাশ পালিওয়াল। সোমবার ভারতীয় গণমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে প্রকাশিত অভিনাশ পালিওয়ালের নিবন্ধের শিরোনাম, ‘ বাংলাদেশ অন রেজর এজ: হোয়াই ইন্ডিয়া মাস্ট ওয়েক আপ টু দ্য লুমিং ইকোনমিক ক্রাইসিন অ্যান্ড পলিটিক্যাল ইনস্ট্যাবিলিটি টু ইটস ইস্ট’। আফগানিস্তানে ভারতের ভ’রাজনৈতিক লক্ষ্য বিনিয়োগের ব্যর্থতা এবং আফগানিস্তানে সোভিয়েত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক-রাজনৈতিক পরাজয়ের প্রেক্ষাপটে লেখা ‘মাই এনিমিজ এনিমি: ইন্ডিয়া ইন আফগানিস্তান ফ্রম দ্য সোভিয়েত ইনভেশন টু দ্য ইউএস উইথড্রয়াল’ নামক গবেষণাধর্মী বইয়ের লেখক মি: অভিনাশ পালিওয়াল বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক সংকটের প্রবণতা এবং বিএনপির প্রতি সাধারণ মানুষের বিপুল জনসমর্থনের কারণগুলো তুলে ধরলেও আওয়ামী লীগের অগণতান্ত্রিক ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের পেছনে ভারতের মোদি সরকারের নেপথ্য ভ’মিকার বিষয়টি সযত্নে এড়িয়ে গেছেন। আমরা আশা করব, গণতান্ত্রিক পশ্চিমা বিশ্বের সাথে একাত্ম হয়ে অন্যতম বৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশ ভারত বাংলাদেশের জনগণের আকাঙ্খার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা উন্নয়নে নিজেদের অবস্থান খোলাসা ও নিশ্চিত করবে। জনগণের সাথে জনগণের বিশ্বাসযোগ্য সামাজিক-অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সম্পর্কের উন্নয়ন ছাড়া প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সাথে টেকসই দ্বিপাক্ষিক সুসস্পর্ক গড়ে তোলা অসম্ভব।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।