Inqilab Logo

মঙ্গলবার ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ২০ কার্তিক ১৪৩১, ০২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ক্লাসের পড়া ক্লাসেই শেখানো হবে

মো. আরফাতুর রহমান (শাওন)

| প্রকাশের সময় : ১২ ডিসেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

প্রাথমিকের নতুন শিক্ষাক্রম চালু হলে শিক্ষার্থীদের ক্লাসের পাঠ ক্লাসেই সম্পন্ন করা হবে। কমিয়ে আনা হবে শিক্ষার্থীদের বাড়ির কাজ। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) চূড়ান্ত করেছে ‘পরিমার্জিত জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষাক্রম ২০২১’। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শিক্ষার্থীদের প্রতিদিনের ক্লাসের পড়া ক্লাসেই চর্চা করা হলে, তাদের বাড়ির কাজের চাপ থাকবে না। সন্তানদের নিয়ে অভিভাবকদেরও ছুটতে হবে না কোচিংয়ে।

নির্দিষ্ট দিনের পাঠ যেন শ্রেণিকক্ষেই শেষ হয়, সে ধরনের শিখন কার্যক্রম পরিচালনায় সচেষ্ট হয়ে বাড়ির কাজ বা হোমওয়ার্ক কমানোর অনুশাসন দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া শিশুদের খেলাধুলা ও সৃজনশীল কার্যক্রমের মাধ্যমে শিক্ষা প্রদানের ওপর গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের অনুপ্রেরণা ও স্বীকৃতি প্রদানের উদ্দেশ্যে প্রতি স্তর শেষে শিক্ষার্থীকে সনদ দেওয়ার বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে। এক গবেষণা জরিপে বলা হয়েছে, ক্লাসে শিক্ষকদের অমনোযোগিতার কারণে ছেলেমেয়েদের নিয়ে অভিভাবকরা কোচিংয়ে ছোটেন। আবার কোথাও কোথাও শ্রেণির শিক্ষকরাই কোচিংয়ে যেতে উৎসাহিত করেন। তারা ক্লাসে না পড়িয়ে কোচিংয়ে পড়ান। অভিভাবকদের মনে শঙ্কা থাকে শ্রেণিশিক্ষকের কোচিংয়ে না পড়লে তার সন্তান পরীক্ষা ভালো ফল করবে না। এ ধরনের অনৈতিক কর্মকান্ড থেকে এখন রেহাই পাবেন শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকরা। সংশ্লিষ্টদের তথ্যমতে, পরিমার্জিত কারিকুলামে শুধু পাঠদান পদ্ধতিতে পরিবর্তনই আসবে না, সেই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের যোগ্যতার ধারণাও বদলে যাবে। এই কারিকুলামের মূল লক্ষ্য হচ্ছে- জ্ঞান, দক্ষতা, মূল্যবোধ এবং দৃষ্টিভঙ্গি।

প্রথম শ্রেণি থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত কোনো পরীক্ষা হবে না। চতুর্থ শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, ইংরেজি, গণিত, সামাজিক বিজ্ঞান ও বিজ্ঞান বিষয়ে ক্লাসে মূল্যায়ন হবে ৬০ নম্বর, বাকি ৪০ নম্বরের পরীক্ষা নেওয়া হবে। তবে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য শিক্ষা, ধর্মশিক্ষা এবং শিল্পকলা বিষয়ে ধারাবাহিক মূল্যায়ন হবে ১০০ নম্বরের। উল্লেখ্য, ২০১২ সালের জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষাক্রম ছিল অন্তর্ভুক্তিমূলক। মূল্যায়ন পদ্ধতি ও কৌশল ছিল না। পরিমার্জিত কারিকুলামে যোগ্যতা, শিখনফল এবং পরিকল্পিত কাজসমূহ অন্তর্ভুক্তিমূলক করে পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে। এখানে মূল্যায়ন পদ্ধতি ও কৌশল এবং ধারাবাহিক মূল্যায়নের নির্দেশনা সংযোজন করা হয়েছে।

নতুন কারিকুলামে পড়ার চেয়ে কাজ বেশি। এখানে তেমন বোঝানোর কিছু নেই। কাজের মাধ্যমে শিখবে শিক্ষার্থী। সে কাজের ওপর তার অভিজ্ঞতা তৈরি হবে। সারাদিন শিক্ষার্থী কী করেছে সেটি ডায়রিতে লিখতে বলা হতে পারে। পড়ার সময় জানবে তার কী কী করা উচিত, আর সে কী করেছে। প্রতিদিন সে নিজের কাজ নিজে করবে। কিছু কিছু কাজ আছে শিক্ষকরা যদি ফোনেও বলেন তাহলেও সেটি করা সম্ভব।

বিশ্লেষণে দেখা গেছে, নতুন কারিকুলামে এসএসসির আগে কোনো পাবলিক পরীক্ষা থাকছে না। প্রচলিত পদ্ধতিতে পঞ্চম শ্রেণির পিইসি-ইবতেদায়ি, জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা নেওয়ার সুযোগ নেই। ২০২৪ সাল থেকে প্রচলিত জেএসসি পরীক্ষা ও ২০২৫ সাল থেকে প্রচলিত পিইসি পরীক্ষাও থাকছে না। শিক্ষাবিদদের মতে, এই পরীক্ষার বাহুল্য যত কমানো যায়, তত ভালো। এখন পরীক্ষা কমিয়ে দেওয়া হয়েছে, সেটা আমাদের কাছে সঠিক মনে হচ্ছে। কেননা, পাবলিক পরীক্ষার নাম দিয়ে শিশুদের পরীক্ষামনস্ক করে তোলা, গাইডবই-কোচিংয়ের দিকে ঝোঁকা, এটা অন্যায্য কাজ। তারা আরো বলেন, এই ছোট ছোট বাচ্চা ছোটবেলা থেকেই ফার্স্ট, সেকেন্ড, থার্ড, এসব অসুস্থ প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে বড় হয়। এখন এটা থাকবে না, কিন্তু একটা মূল্যায়ন ঠিকই হয়ে যাবে। তবে নবম-দশম শ্রেণিতে বিভাজন না থাকায় শিক্ষার্থীদের উপর চাপ কমবে বলে মনে করেন।

অষ্টম থেকে নবম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হওয়ার পরই শিক্ষার্থীদের একটি বিভাগ পছন্দ করতে হতো। অর্থাৎ বিজ্ঞান, মানবিক ও বাণিজ্য বিভাগের যেকোনো একটিতে যেতে হতো। নতুন প্রণীত জাতীয় শিক্ষাক্রমে এ বিভাজন থাকছে না। নবম ও দশম শ্রেণিতে সব শিক্ষার্থীকে অভিন্ন ১০টি বিষয় পড়তে হবে। দশম শ্রেণির আগে কোনো পাবলিক পরীক্ষাও নেওয়া হবে না। দশম শ্রেণির পর এসএসসি নামে পাবলিক পরীক্ষা হবে, তবে তা হবে শুধু দশম শ্রেণির পাঠ্যসূচির ভিত্তিতে। এখন নবম ও দশম শ্রেণির পাঠ্যসূচির ভিত্তিতে পাবলিক পরীক্ষা হয়। তারা বলছেন, ‘নবম ও দশমে শিক্ষার্থী সবাই একই বিষয়ে পড়াশোনা করবে। এ পর্যায়ের কোনো শিক্ষার্থী বিশেষ কোনো বিষয়ে পারদর্শী থাকলে, তাকে সে বিষয়ে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে। উচ্চমাধ্যমিক অর্থাৎ এইচএসসি থেকে শিক্ষার্থীদের আগের মতো বিভাগ বিভাজন করতে হবে।’

খসড়া শিক্ষাক্রম অনুযায়ী ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত সব শিক্ষার্থীকে ১০টি অভিন্ন বিষয়ে পড়ানো হবে। এরপর একাদশ শ্রেণিতে গিয়ে শাখা পরিবর্তনের সুযোগ রাখা হবে। বর্তমানে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত কিছু অভিন্ন বই পড়তে হয় এবং নবম শ্রেণিতে গিয়ে বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা, এসব শাখায় ভাগ হয়ে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করে। নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত যে ১০ বিষয়ে পড়ানো হবে সেগুলো হলো: বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, সামাজিক বিজ্ঞান, জীবন ও জীবিকা, ধর্ম, স্বাস্থ্য শিক্ষা এবং শিল্প ও সংস্কৃতি। বর্তমানে এসব শ্রেণিতে ১২ থেকে ১৪টি বই পড়ানো হয়।

২০২৩ সাল থেকে প্রাথমিকের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণি এবং মাধ্যমিকের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে শুরু হবে নতুন শিক্ষাক্রম। ২০২৪ সালে তৃতীয়, চতুর্থ, অষ্টম ও নবম শ্রেণি এবং ২০২৫ সালে পঞ্চম ও দশম শ্রেণিতে এ শিক্ষাক্রম শুরু হবে। ২০২৫ সালের মধ্যে পুরো শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন করা হবে।

লেখক: শিক্ষক, মিল্লাত উচ্চ বিদ্যালয়, বংশাল, ঢাকা।



 

Show all comments
  • Monir ১৫ ডিসেম্বর, ২০২২, ৪:১৬ পিএম says : 0
    আমি খুব একজন অসহায় ব্যক্তি আমাকে কিছু টাকা দিয়ে সাহায্য করুন সবাই মিলে
    Total Reply(0) Reply
  • Monir ১৫ ডিসেম্বর, ২০২২, ৪:১৬ পিএম says : 0
    আমি খুব একজন অসহায় ব্যক্তি আমাকে কিছু টাকা দিয়ে সাহায্য করুন সবাই মিলে
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন