Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ২২ কার্তিক ১৪৩১, ০৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

হালাল খাদ্য ও পণ্য রফতানির বাজার ধরতে হবে

| প্রকাশের সময় : ১০ ডিসেম্বর, ২০২২, ১২:০৫ এএম

বিশ্বব্যাপী হালাল খাদ্য থেকে শুরু করে নিত্যব্যবহার্য হালাল পণ্যের চাহিদা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। শুধু মুসলমান দেশ নয়, অমুসলিম দেশগুলোতেও হালাল খাদ্য ও পণ্যের চাহিদা এবং জনপ্রিয়তা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। ওয়ার্ল্ড হালাল সামিট কাউন্সিলের মতে, বিশ্বব্যাপী ইসলামী অর্থনীতি, খাদ্য, ট্যুরিজম, প্রসাধনী, ঔষধ, ও টেক্সটাইলে হালাল বিষয়টি প্রাধান্য পাচ্ছে। আগামী পাঁচ বছরে হালাল পণ্যের বাজার ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পেয়ে ১০ ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি হবে। এর মধ্যে ইসলামী অর্থনীতি ৩.৫ ট্রিলিয়ন, খাবার ও পানীয় ২ ট্রিলিয়ন, হালাল পর্যটন ৪০০ বিলিয়ন, কসমেটিকস শিল্প ২০০ বিলিয়ন এবং ফ্যাশন ২৪০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছবে। অন্যদিকে, বিশ্বখ্যাত আইএমএআরসি (আইমার্ক) গ্রæপ বলেছে, এ বছর বিশ্বব্যাপী হালাল পণ্যের বাজার ২ হাজার ২২১ বিলিয়ন ডলারের বেশি পৌঁছেছে। ২০৩০ সালে এ বাজার পৌঁছবে ৪ হাজার ১৭৭ বিলিয়ন ডলারের বেশি। এ খাতে প্রবৃদ্ধি হবে শতকরা ১০.৮ ভাগ। ইতোমধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ হালাল খাদ্য ও পণ্য উৎপাদনে মনোযোগী হয়েছে। বর্তমানে হালাল খাদ্য ও পণ্যের ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিচ্ছে তুরস্ক। ২০১০ সালে দেশটি বিশ্বের ১৩টি দেশ নিয়ে গঠন করে স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড মেট্রোলজি ইনস্টিটিউট ফর ইসলামিক কান্ট্রি। এটি ইসলামিক নিয়মনীতি পরিপূর্ণভাবে মেনে একটি অর্থনৈতিক কাঠামো গঠনের উদ্দেশ্যে করা হয়েছে।

পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ হালাল খাদ্য ও পানীয় গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন। সচেতন মুসলমানরা এ নির্দেশ যথাযথভাবে পালন করে থাকেন। হারাম খাদ্য যে স্বাস্থ্য থেকে শুরু করে পারিবারিক ও সামাজিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে তা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দেখা যাচ্ছে। এ নিয়ে উন্নত বিশ্ব বিশেষ করে অমুসলিম দেশগুলোর সরকারও বেশ উদ্বিগ্ন। দেশগুলো এখন অর্থনীতি থেকে শুরু করে হালাল খাদ্য ও পণ্য আমদানি এবং উৎপাদনের দিকে জোর দিয়েছে। ইতোমধ্যে শ্রীলঙ্কা হালাল খাদ্য উৎপাদন এবং রফতানি করা শুরু করেছে। মুসলমান দেশ তো বটেই অমুসলমান দেশেও পণ্য রফতানি করছে। আফ্রিকা এবং ইউরোপসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এখন হালাল খাদ্য ও পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশের জন্য এটি একটি বড় সুযোগ। মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ হিসেবে আমাদের খাদ্য ও অন্যান্য সব পণ্যই হালালভাবে উৎপাদিত হচ্ছে। বলা যায়, হালাল পণ্যের একটি বড় উৎস হয়ে রয়েছে। বিশ্বে প্রায় ২০০ কোটি মুসলমানের বিশাল হালাল খাদ্য ও পণ্যের বাজার রয়েছে। মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকাসহ অন্যান্য দেশে হালাল পণ্যের চাহিদা প্রচুর। এমনকি ইহুদি নিয়ন্ত্রিত বিশ্বের প্রভাবশালী প্রতিষ্ঠানগুলো এখন মুসলমান গ্রাহক ধরার ক্ষেত্রে প্রসাধনীসহ অন্যান্য হালাল পণ্য উৎপাদন করছে। বাংলাদেশ হালাল খাদ্য ও পণ্যের বিশাল হাব হওয়ায় বিশ্বে প্রভাব বিস্তারের ব্যাপক সম্ভাবনার সৃষ্টি হয়েছে। ধান-চাল উৎপাদনে আমরা প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ। হালাল উপায়ে মাছ-গোশত, ডিম, শাক-সবজি উৎপাদনেই বিশ্বের মধ্যে শীর্ষ তালিকায় রয়েছি। ঔষধ শিল্পেও বিশ্বে বাজার সৃষ্টি হয়েছে। প্রায় ৮৫টি দেশে ঔষধ রফতানি হচ্ছে। ইতোমধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ ও ইউরোপে শাক-সবজি ও মাছ রফতানি শুরু হয়েছে। হালাল প্রক্রিয়ায় উৎপাদিত হওয়ায় দিন দিন এসব পণ্যের চাহিদাও বাড়ছে। সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করলে বিশ্বে এসব পণ্যের নিয়মিত বাজার সৃষ্টি সম্ভব। আমাদের রফতানি খাত খুব বেশি নেই। দেশের প্রধানতম রফতানি পণ্য গার্মেন্ট ও জনশক্তি। গার্মেন্ট রফতানির মাধ্যমে প্রায় ৮৩ ভাগ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়। গার্মেন্ট, জনশক্তি ও ঔষধের বাইরে পাট ও চামড়াজাত পণ্য ছাড়া উল্লেখ করার মতো অন্য তেমন কোনো পণ্য নেই। রফতানির এই খাত বৃদ্ধির ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাপী হালাল খাদ্য ও পণ্যের যে বাজার সৃষ্টি হচ্ছে, এ তালিকায় আমাদের ধান-চাল, মাছ-গোশত, শাক-সবজি, ডিম, দুধ যুক্ত হতে পারে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বাজার পর্যবেক্ষণ করে উদ্যোগ নিলে এসব হালাল পণ্যের আলাদাভাবে রফতানি খাত সৃষ্টি করা অসম্ভব কিছু নয়।

বিশ্বে হালাল পণ্যের চাহিদা ও বাজার বৃদ্ধি পাওয়ায় তা ধরার জন্য এখন থেকেই উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরি। তুরস্ক যেভাবে জোট করে হালাল খাদ্য ও পণ্যের বাজার সৃষ্টির উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, তাতে শামিল হওয়ার জন্য প্রচেষ্টা চালাতে হবে। মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে হালাল খাদ্যের চাহিদা পর্যবেক্ষণ করে সরকারি ও বেসরকারিভাবে উদ্যোগী হওয়া প্রয়োজন। এক্ষেত্রে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে হালাল খাদ্য উৎপাদকদের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য যথাযথ পরামর্শ ও সহায়তা দিতে হবে। অর্থনীতির নতুন উৎস সৃষ্টি এবং রফতানিতে হালাল খাদ্য ও পণ্যের নতুন সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হবে। বলার অপেক্ষা রাখে না, বিশ্বব্যাপী হালাল পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশ-বিদেশের বিনিয়োগেরও সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। হালাল পণ্যের হাব হিসেবে বাংলাদেশকে বিশ্বে তুলে ধরলে পারলে দেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাবে বলে আমরা মনে করি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন