পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন বিষয়ে প্রেসিডেন্ট মোঃ আবদুল হামিদ ও বিএনপি প্রতিনিধি দলের মধ্যকার আলোচনায় ইতিবাচক বার্তা রয়েছে। আলোচনায় প্রেসিডেন্ট আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে একটি শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠন সম্ভবপর হবে। বিএনপিও আলোচনায় সন্তোষ প্রকাশ করেছে। পত্র-পত্রিকার খবর মোতাবেক, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন ১১ সদস্যের প্রতিনিধিদল প্রেসিডেন্টের কাছে ১৩ দফার একটি প্রস্তাব দিয়েছে। একই সঙ্গে সার্চ কমিটির জন্য ১০ জনের একটি তালিকা প্রদান করেছে। আলোচনা সম্পর্কে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ জানিয়েছেন, অত্যন্ত ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে। প্রেসিডেন্টও মনে করেন, সংকট নিরসনে আলোচনা দরকার। বিএনপি আশা করে, এ ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্ট যথাযথ ভূমিকা পালন করবেন। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, অত্যন্ত হৃদ্যতাপূর্ণ পরিবেশে আলোচনা হয়েছে। আলোচনায় বিএনপি খুশী হয়েছে, আশাবাদী হয়েছে। আলোচনার বিষয়ে বঙ্গভবনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বিএনপির প্রতিনিধিদলের নির্বাচন কমিশন গঠন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। প্রেসিডেন্ট বলেছেন, আজকের আলোচনা গণতন্ত্রের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যে কোনো আলোচনা সমস্যা সমাধানে বহুমুখী পথ দেখায়। সার্চ কমিটি গঠন ও নির্বাচন কমিশন গঠন প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিএনপি যে প্রস্তাব দিয়েছে তা নির্বাচন কমিশন গঠনে সহায়ক হবে। তিনি এ ব্যাপারে বিভিন্ন দলের সহায়তা কামনা করেছেন।
শক্তিশালী ও সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠনে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা এবং সেই আলোচনার মাধ্যমে একটি রাজনৈতিক ঐকমত্যে পৌঁছানো এ মুহূর্তে অত্যন্ত জরুরি ও গুরুত্বপূর্ণ। প্রেসিডেন্ট মোঃ আবদুল হামিদ এই জাতীয় তাকিদ থেকেই রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগ নিয়েছেন। এ উদ্যোগকে সকল মহল, যার মধ্যে ক্ষমতাসীন দলও রয়েছে, স্বাগত জানিয়েছে। সবাই আশা করে, এ আলোচনা সফল ও ফলপ্রসূ হবে। রাজনৈতিক সমাঝোতা ও ঐকমত্যের ভিত্তিতে কাক্সিক্ষত নির্বাচন কমিশন গঠন সম্ভব হবে। রাষ্ট্রের অভিভাবক হিসেবে এ ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্টের যথাযথ ও কার্যকর ভূমিকা সকলেই কামনা করে। আসলে এই বিষয়টির সুরাহা সকল দল মহলের পক্ষ থেকে প্রেসিডেন্টের ওপরই ন্যস্ত করা হয়েছে। তিনিই এখন কা-ারী এবং আশা-ভরসার স্থল। তিনি সফল হলে বিদ্যমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে বড় রকমের অগ্রগতি হবে। সুতরাং তাকে সফল হতেই হবে। গোটা জাতি এখন তাকিয়ে আছে তার দিকে। এ কথা আরো অজানা নেই, চলমান রাজনৈতিক সংকটের কারণ অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন না হওয়া। এ জন্য প্রধানত দায়ী বর্তমান নির্বাচন কমিশন। এ নির্বাচন কমিশন সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। অদক্ষতা, অযোগ্যতা ও পক্ষপাতিত্বের কারণে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারী সংসদ নির্বাচন থেকে শুরু করে পরবর্তীকালের কোনো নির্বাচনেই জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। এতে গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক রাজনীতি যেমন বেদিশা ও বিপন্ন হয়ে পড়েছে তেমনি আন্তর্জাতিকভাবেও দেশের ভাবমর্যাদার অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য এমন একটি শক্তিশালী, সক্ষম, নিরপেক্ষ, দক্ষ ও যোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠন করা আবশ্যক যে নির্বাচন কমিশন প্রত্যাশিত নির্বাচন অনুষ্ঠানে সফল হবে এবং তার মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও সংকটের অবসান ঘটবে।
নির্বাচন কমিশন সংক্রান্ত একটি আইন করার যে নির্দেশনা সংবিধানে আছে, সে অনুযায়ী আজ পর্যন্ত কোনো আইন করা হয়নি। আইন হলে নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে কখনোই কোনো বিতর্ক উঠতে পারতো না। আমরা দেখেছি, ব্যতিক্রম বাদে প্রতিটি নির্বাচন কমিশন গঠনের আগেই তুমুল বিতর্ক তৈরি হয়েছে। আর বিতর্কিত নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত নির্বাচন বিতর্কিত হয়েছে। এত বছরেও নির্বাচন কমিশন সংক্রান্ত আইনটি কেন হলো না, তার কোনো জবাব নেই। বর্তমান নির্বাচন কমিশন গঠনের আগেও এ বিষয়ে অনেক কথা-বার্তা হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত সার্চ কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়। কিন্তু সেই নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের ইতিহাসে দূরপনেয় কলঙ্কজনক অধ্যায় যোজনা করেছে। এখনো আইনের অনুপস্থিতিতে সার্চ কমিটি গঠনের কথা বলা হচ্ছে। বস্তুত, সার্চ কমিটি যদি দলনিরপেক্ষ ব্যক্তিদের নিয়ে গঠিত না হয় তাহলে দলনিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করাও সম্ভব নয়। এমতাবস্থায়, সার্চ কমিটি দলনিরপেক্ষ ব্যক্তিদের নিয়েই গঠন করতে হবে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা ও ঐকমত্যের ওপর সবচেয়ে বেশী গুরুত্ব প্রদান করছেন। একই সঙ্গে আলোচনা ও ঐকমত্যের ভিত্তিতে সার্চ কমিটি ও নির্বাচন কমিশন গঠন সম্ভবপর হতে পারে বলে তারা মনে করছেন। প্রেসিডেন্ট আলোচনা শুরু করেছেন। সব দলের সঙ্গে আলোচনার মধ্য দিয়ে একটা ঐকমত্যের জায়গায় পৌঁছানো যাবে আশা করা হচ্ছে। বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো প্রেসিডেন্টের ওপর আস্থা স্থাপন করেছে। ক্ষমতাসীন দলের তরফেও বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্ত মেনে নেয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী ইতোপূর্বে বলেছেন, তিনি প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন দেখতে চান না। তার এ কথার মধ্যে একটি বার্তা আছে। বস্তুত তিনি অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনই চান। আর সেটা নিশ্চিত করতে হলে শক্তিশালী, দলনিরপেক্ষ, দক্ষ-যোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠনের বিকল্প নেই। প্রেসিডেন্টের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর চলমান আলোচনা লক্ষ্য অর্জনে সফল হোক, এটাই আমাদের একান্ত কামনা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।