পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক বাজার দরের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ বেশি দামে জ্বালানি তেল আমদানির নামে বিদেশে টাকা পাচারের অভিযোগ উঠেছে। এ সংক্রান্ত প্রকাশিত খবরে একটি দৈনিকে বলা হয়েছে, স্থানীয়ভাবে তেল আমদানির নামে টাকা লোপাটেরও অভিযোগ রয়েছে। এবার খোদ বাংলাদেশ ব্যাংক বিপিসির বিরুদ্ধে জ্বালানি তেল আমদানির নামে সরকারি অর্থ অপব্যবহারের অভিযোগ এনেছে। অভিযোগে বলা হয়েছে, বিপিসি তেল আমদানির নামে গত চারবছরে ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ১৪ হাজার কোটি টাকার এলসির বিপরীতে কোন পণ্য আমদানি করেনি। অথচ এর বিপরীতে দেনা শোধ করেছে। বলা হচ্ছে, এসব এলসির বিপরীতে যথাযথভাবে পণ্য দেশে আসেনি বা এলেও বিপিসি তার বিপরীতে শুল্ক বিভাগ থেকে বিলআপ এন্ট্রি সংগ্রহ করে দাখিল করেনিÑ যা বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, একটি চক্র বিপিসির মাধ্যমে নানা প্রক্রিয়ায় দেশ থেকে অর্থ পাচার করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তারা আগে কম দামের তেল বেশি দামে আমদানি করে টাকা পাচার করত। এখন এবিষয়ে ব্যাপক লেখালেখির পর তারা এলসির বিপরীতে দেনা শোধ করে, কিন্তু তেল আমদানি করে না। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে টাকা পাচার করছে। বাংলাদেশ ব্যাংক মনে করছে, এই প্রক্রিয়া গত চারবছর ধরে চলে আসছে।
বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমে যাবার পরেও বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে তেলের দাম আনুপাতিকহারে না কমার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের লোকসানের আলোচনা অনেকদিন থেকেই উঠে আসছে। অর্থমন্ত্রী বারবার এই সংস্থার লোকসানের অজুহাত তুলে বাজারে তেলের দামের সমন্বয় করছেন না। গত কিছুদিনে কোন যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়াই গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির কথাও বলা হয়েছে। এখন দেখা যাচ্ছে, যে সংস্থার লোকসানের বোঝা দেখিয়ে জনগণের ঘাড়ে দিনদিনই অতিরিক্ত বোঝা চাপিয়ে দেয়া হয়েছে এবং হচ্ছে। সেখানে অনেকদিন ধরে চলে আসছে মারাত্মক অনিয়ম। অভিযোগ উঠেছে শতশত কোটি টাকা লোপাটের। এসব ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোন ব্যবস্থাও নেয়নি। প্রচলিত নিয়মানুযায়ী দেশে এলসির বিপরীতে কোন পণ্য আমদানি হলে তা শুল্ক বিভাগের মাধ্যমে দেশের ভেতরে প্রবেশ করে। কিন্তু বিপিসি তেল আমদানির বিপরীতে এধরনের কোন সনদ ব্যাংকে জমা দেয়নি। সরকার যখন জ্বালানি তেল আমদানি করে তখন পরিমাণ অনেক বেশি হয়। এতে আন্তর্জাতিক বাজারদরের চেয়ে কম দামে আমদানি করা যায়। ব্যারেল প্রতি ৪০ থেকে ৪২ ডলার দাম হলেও বিপিসিই তেল ৬১.৩১ ডলারে আমদানির উদ্যোগ নিয়েছিলÑ যা ওই সময়ের বাজার দরের চেয়ে ৪১.২৮ শতাংশ বেশি। সংস্থাটি এর আগেও এধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে। টাকা লোপাট প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংক চিঠি দেয়ার পর দু’সপ্তাহ পার হলেও বিপিসি এখন পর্যন্ত কোন উদ্যোগ নেয়নি। এব্যাপারে বিপিসির একজন জেনারেল ম্যানেজার জানিয়েছেন, ট্যারিফ ভ্যালুর হেরফেরের জন্যই এমনটি ঘটেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক বিপিসির বক্তব্য মানতে রাজি নয়। ট্যারিফ ভ্যালুর যেকথা তারা বলছে তার আগেও ছিল, এখনো রয়েছে। বিশ্বব্যাপী নিয়ম রয়েছে বেশি পরিমাণে যেকোন পণ্য কিনলে দাম একটু কম পড়বে। কেবল বিপিসির ক্ষেত্রে সেটি প্রযোজ্য হচ্ছে না।
বিপিসির টাকা লোপাটের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুতর। দীর্ঘদিন ধরে তারা এ প্রক্রিয়া চালু রেখেছে অথচ ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে এর নেপথ্যের কুশীলবরা। এই টাকা লোপাটের ফলে একটি বিষয় অত্যন্ত পরিষ্কার যে তেলের দাম কম-বৃদ্ধি নিয়ে সরকারি বক্তব্য অনেকটা প্রহসনমূলক। একদিকে বাধ্যতামূলকভাবে জনগণের পকেট কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, অন্যদিকে সেই টাকা পাচার করা হচ্ছে বিদেশে। কোন বিবেচনাতেই এটি গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। এর সাথে যে চক্র জড়িত তাদের শেকড় কতটা গভীরে তা সহজেই অনুমেয়। অবাক হবার বিষয় হচ্ছে, দীর্ঘদিন ধরে এমনটা ঘটছে অথচ সংশ্লিষ্টরা তা চেপে যাচ্ছেন। এই লোপাটের টাকা উদ্ধারে কার্যকর তৎপরতার পাশাপাশি জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা হওয়া জরুরি। সেই সাথে তেলের দাম আন্তর্জাতিক বাজার দরের সাথে সমন্বয় করা জরুরি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।