Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

১০ ডিসেম্বরের সমাবেশ : যুক্তরাষ্ট্রসহ উন্নয়ন সহযোগীদের আহ্বান

| প্রকাশের সময় : ৮ ডিসেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশ করার সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়েছে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর। মঙ্গলবার মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের এক প্রেস ব্রিফিংয়ে মুখপাত্র নেড প্রাইস বাংলাদেশে চলমান পরিস্থিতি সম্পর্কে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান তুলে ধরেন। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের দাবিসহ নিত্যপণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণ এবং বিরোধী নেতাকর্মীদের উপর হামলা মামলা বন্ধের দাবিতে বিএনপির ধারাবাহিক বিভাগীয় সমাবেশের শেষ কর্মসূচি হিসেবে ১০ ডিসেম্বর ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষিত হয়েছিল মাসাধিককাল আগেই। প্রায় প্রতিটি বিভাগীয় সমাবেশের আগে সরকার সমর্থক পরিবহন মালিকদের পরিবহন ধর্মঘটসহ নানাবিধ প্রতিবন্ধকতা, পুলিশি বাঁধা ও সরকারি দলের ক্যাডারদের সন্ত্রাস ও হুমকি সত্ত্বেও দেশের সবগুলো বিভাগের সমাবেশ শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়েছে। প্রতিটি সমাবেশে লাখো মানুষের ঢল নেমে মহাসমাবেশে পরিনত হতে দেখা গেছে। এহেন বাস্তবতায় ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশ ঘিরে সরকারের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক দেখা দিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। সমাবেশের আর দুইদিন বাকি থাকলেও রবিবার পর্যন্ত ঢাকা সমাবেশের ভেন্যু নির্ধারণ নিয়ে বিএনপি ও সকারের মধ্যকার রশি টানাটানি ও অনিশ্চয়তা কাটেনি। অন্যদিকে এই সমাবেশকে ঘিরে সারাদেশে বিএনপি নেতাকর্মীদের উপর পুরনো ও নতুন মামলায় পুলিশি ধরপাকড় চলছে।এখনো পরিবহন ধর্মঘটের কোনো ঘোষণা না আসলেও আগের দিন বা সমাবেশের দিন তা হতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মঙ্গলবার বিদেশি কূটনীতিক, গণমাধ্যম ও দলীয় নিতাকর্মীদের প্রতি ১০ তারিখের সমাবেশ অবশ্যই হবে বলে নিশ্চিত করেছেন।

দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে এক ধরণের বিরাজনীতিকিকরণের প্রভাব লক্ষ্যনীয় হয়ে উঠেছিল। সরকারের দমন-পীড়ন নীতির কারণে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো রাজপথে দাঁড়াতে পারছিলনা। আওয়ামীলীগ সরকারের তৃতীয় মেয়াদের শেষ পর্যায়ে এসে বিরোধীদলগুলো আবারো নির্বাচনকালীন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে সোচ্চার হয়েছে। তবে সরকারের মধ্যে আপস-সমঝোতার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছেনা। এ পরিস্থিতিতে প্রধান বিরোধীদল বিএনপি সরকারের নানা প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও একের পর এক বিভাগীয় সমাবেশগুলোতে লাখো মানুষের সমাবেশ ঘটিয়ে দেশের গণতন্ত্রকামী মানুষের মধ্যে নতুন আশা সঞ্চার করতে সক্ষম হয়েছে। একইভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো এবং জাপানের মত উন্নয়ন অংশীদাররা বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনকে ঘিরে সামগ্রিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে তাদের অবস্থান নিশ্চিত করেছে। বিএনপির ঢাকা সমাবেশের ৩ দিন আগেই জাপান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, গ্রেটবৃটেনসহ ১৫টি দেশের কূটনৈতিক মিশনের পক্ষ থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার উত্তরণ, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, সভা-সমাবেশের অধিকার, পুলিশি ধরপাকড়, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলোর কথা উল্লেখ করা হয়েছে। যৌথ বিবৃতিতে অবাধ সুষ্ঠু, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনী প্রক্রিয়া শুরুর আহ্বান পুর্নব্যক্ত করার পাশাপাশি জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণাপত্রের অঙ্গিকারের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়েছে। লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসের নেতৃত্বে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাংলা ও ইংরেজীতে প্রকাশিত ১৫টি দেশের যৌথ বিবৃতি প্রকাশের একই সময়ে ওয়াশিংটনের মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র নেড প্রাইসের বিবৃতি প্রকাশিত হয়েছে।

বাংলাদেশে একটি রাজনৈতিক সমঝোতা এবং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপদানে জাতিসংঘসহ পশ্চিমাদের আহ্বান এবং মধ্যস্থতার প্রয়াস দেড় দশক ধরে ব্যর্থতায় পর্যবসিত হচ্ছে। এবার বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো যেমন সুসংগঠিত অবস্থান নিয়েছে, উন্নয়ন অংশীদার ও পশ্চিমা দেশগুলোর বার্তাও পূর্বের যে কোনো সময়ের চেয়ে সুদৃঢ় এবং স্বচ্ছ হচ্ছে। সম্প্রতি জাপানের রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশে বিগত নির্বাচন এবং আগামী নির্বাচন সম্পর্কে তাঁদের অবস্থান তুলে ধরেছেন। দেশে বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক সঙ্কটকালে মঙ্গলবার নারায়ণগঞ্জে জাপানের বিনিয়োগে বাস্তবায়নাধীন বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের উদ্বোধন হয়েছে। সেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাপানের সাথে বন্ধুত্বের সুদীর্ঘ ঐতিহ্যের প্রসঙ্গ উল্লেখ করেছেন। জাপানের জন্য বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল উদ্বোধন বিনিয়োগের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে বলে আশা করা যায়। তবে তার জন্য অনুকূল রাজনৈতিক ও মানবিক পরিস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে। আমরা লক্ষ্য করছি, জাপানসহ উন্নয়ন ও বাণিজ্যিক অংশীদাররা বাংলাদেশের গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিয়ে নিজেদের অবস্থান বার বার তুলে ধরার পরও সরকার এখনো ভিন্ন পথেই হাঁটছেন। দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতিতে কোনো প্রকার রাজনৈতিক সংঘাত ও বিশৃঙ্খলা দেশের ও অর্থনীতির জন্য বড় ধরণের বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশ ঘিরে ভেন্যু নির্ধারনে টালবাহানা, পুলিশি শর্ত, হাজার হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা, ধরপাকড় এবং দলীয় সন্ত্রাসীদের লেলিয়ে দেয়ার উস্কানিমূলক কথাবার্তা পরিহার করে সমঝোতার পথে আসার কোনো বিকল্প নেই। রাজনীতিতে শেষকথা বলে কিছু নেই। সরকারী দলের মুখপাত্র হিসেবে কট্টরপন্থা ও অবস্থান পরিহার করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে বিএনপি’র সাথে আলোচনার প্রস্তাব নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। দেশের অর্থনৈতিক সঙ্কট, ব্যাংকিং সেক্টরের দেউলিয়াত্ব ও মূল্যস্ফীতির কারণে নাভিশ্বাস অবস্থা থেকে সাধারণ মানুষকে উদ্ধার করতে হলে রাজনৈতিক সমঝোতার মাধ্যমে ক্ষমতার শান্তিপূর্ণ হস্তান্তরের কোনো বিকল্প নেই।



 

Show all comments
  • Imran Imran ৮ ডিসেম্বর, ২০২২, ১২:৪৪ এএম says : 0
    ভারত ও চীনের পক্ষ থেকে কিছু বলা হলো না কেন???
    Total Reply(0) Reply
  • Al Mamun ৮ ডিসেম্বর, ২০২২, ১২:৪৪ এএম says : 0
    ইনশাআল্লাহ,, অচিরেই এই অবৈধ ভোট চোর সরকারের পতন হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • মনির হাওলাদার ৮ ডিসেম্বর, ২০২২, ১২:৪১ এএম says : 0
    ১৫ কূটনৈতিক মিশন"কে বাংলাদেশের সকল গনতন্ত্রকামী জনতার পক্ষ থেকে- অশেষ ধন্যবাদ, এবং ১৫ টি দেশ সহ বিশ্বের সকল দেশের সরকারের প্রতি আহবান জানাই, বাংলাদেশের গনতন্ত্র পূর্ণ উদ্ধার এ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বি এন পি"র সহযোগিতা করার জন্য, বাংলাদেশের গনতন্ত্র আবার ফিরে পাবই ইনশাল্লাহ।
    Total Reply(0) Reply
  • মোঃরাসাদুল ইসলাম তালুকদার ৮ ডিসেম্বর, ২০২২, ১২:৪১ এএম says : 0
    ইনশাআল্লাহ,, অচিরেই এই অবৈধ সরকারের পতন হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • MA Hasan Mithu ৮ ডিসেম্বর, ২০২২, ১২:৪২ এএম says : 0
    ইনশাআল্লাহ মানবতার জয় হবে
    Total Reply(0) Reply
  • Zakir Khan ৮ ডিসেম্বর, ২০২২, ১২:৪৪ এএম says : 0
    সময়ের উপযোগী বিবৃতি প্রদান করার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন