মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
ইউক্রেন সীমান্ত থেকে কয়েক শ’ কিলোমিটার দূরে রাশিয়ার পৃথক দুটি বিমানঘাঁটিতে ড্রোন হামলায় হতাহতের জেরে ইউক্রেনজুড়ে ‘ব্যাপক হামলা’ চালিয়েছে রাশিয়া। স্থানীয় সময় সোমবার রুশ হামলায় ইউক্রেনের দক্ষিণ-পূর্ব ইউক্রেনের বাড়িঘর ধ্বংস হয়েছে এবং সেখানকার বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এতে কমপক্ষে চারজন নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, ইমারজেন্সি ব্লাকআউটের শঙ্কার মধ্যে রয়েছে ইউক্রেন। দেশটির কিছু অংশে তাপমাত্রা শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াসের (৩২ ফারেনহাইট) নিচে রয়েছে। রাশিয়ার হামলায় ইউক্রেনের বেশ কিছু অংশ অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে। জেলেনস্কি বলেন, ‘ইউক্রেনে প্রায় ৭০টি ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত হয়েছে। বিদ্যুৎ সংযোগ পুনরায় চালু করতে কাজ শুরু করা হয়েছে।’ এদিকে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, রিয়াজান এবং সারাতোভের দুটি বিমানঘাঁটিতে ইউক্রেনের ড্রোন হামলায় তিনজন নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন চারজন। এটিকে ‘সন্ত্রাসী’ কার্যক্রম বলে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। তবে রাশিয়ায় হামলার বিষয়ে দায় শিকার করেনি ইউক্রেন। উল্লেখ্য, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হয়। রাশিয়ার দাবি যদি সঠিক হয়, তাহলে এটিই রাশিয়ায় চালানো ইউক্রেনের সবচেয়ে বড় হামলা।
ব্ল্যাকআউটের শঙ্কা : যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরে নতুন করে ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। রুশ সামরিক বাহিনীর দু’টি বিমানঘাঁটিতে বিস্ফোরণে হতাহতের ঘটনার পর ব্যাপক এই হামলা চালানো হয়। আর এরপরই ইমারজেন্সি ব্লাকআউটের শঙ্কার কথা জানিয়েছে ইউক্রেন। নতুন করে রুশ ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর দেশের কয়েকটি অঞ্চলে আবারও জরুরি ব্ল্যাকআউট হবে বলে সতর্ক করেছে ইউক্রেন। দেশটির দাবি, রুশ হামলা ইউক্রেনীয়দের বাড়িঘর ধ্বংস করে দিয়েছে এবং বহু এলাকাকে বিদ্যুৎবিহীন করে দিয়েছে। যদিও ক্ষয়ক্ষতি মেরামতের কাজ করছে ইউক্রেন।
রয়টার্স বলছে, ইউক্রেনজুড়ে নতুন করে রুশ ক্ষেপণাস্ত্র হামলার শঙ্কা বেশ কয়েকদিন ধরেই করা হচ্ছিল। আর সোমবারই সেই রুশ হামলা হয়, আর সেটিও ঠিক এমন এক সময়ে যখন আগের রুশ হামলার জেরে সৃষ্ট ক্ষতি মেরামত করে ইমারজেন্সি ব্লাকআউট শেষ হওয়ার পথে ছিল। সোমবার গভীর রাতে দেয়া এক ভিডিও বার্তায় জেলেনস্কি আরও বলেন, ‘অনেক অঞ্চলে, ইমারজেন্সি ব্ল্যাকআউট হবে। তবে স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধারের জন্য আমরা সবকিছু করব।’
সংবাদমাধ্যম বলছে, রাশিয়া সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ইউক্রেনে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা বাড়িয়েছে। মূলত, ক্রিমিয়া উপদ্বীপের সাথে রাশিয়াকে সংযুক্তকারী ইউরোপের বৃহত্তম রেল ও সড়ক সেতুতে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার প্রতিশোধ হিসেবে গত ৮ অক্টোবর থেকে ইউক্রেনের জ্বালানি নেটওয়ার্ক ও অবকাঠামোগুলোতে আক্রমণ শুরু করে রাশিয়া। এর মধ্যে গত মাসে অধিকৃত ক্রিমিয়া উপদ্বীপের বৃহত্তম বন্দরনগরী সেভাস্তোপলের কাছে কৃষ্ণ সাগরে রুশ নৌবহরে ড্রোন হামলার ঘটনা ঘটে। এরপর বেশ কয়েক দফায় ইউক্রেনের জ্বালানি স্থাপনা লক্ষ্য করে রাশিয়া কার্যত ক্ষেপণাস্ত্র বৃষ্টি চালায়। মূলত সম্মুখসারির যুদ্ধে ব্যর্থতার পর রাশিয়ার সাম্প্রতিক এসব হামলা একটি বিস্তৃত কৌশলের অংশ এবং শীত শুরু হওয়ার সাথে সাথে ইউক্রেনে রুশ এই কৌশলের প্রভাব আরও তীব্রভাবে অনুভূত হতে শুরু করেছে।
বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত ক্রিমিয়ার সেই সেতু পরিদর্শন করলেন পুতিন : রাশিয়ার সঙ্গে ক্রিমিয়ার একমাত্র সংযোগ স্থাপনকারী সেতু ‘কের্চ ব্রিজ’ পরিদর্শন করেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন। চলতি বছরের অক্টোবরে বড় ধরনের বিস্ফোরণে সেতুটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ওই সেতুটিতে পুতিন পরিদর্শনে আসার ছবি ও ভিডিও প্রকাশ করা হয়েছে।
ছবিতে দেখা যায়, মার্সিডিজ গাড়ির সামনে রাশিয়ার উপ-প্রধানমন্ত্রী মারাত খুশনুলিন দাঁড়িয়ে আছেন; তার পাশেই রয়েছেন পুতিন। এক ভিডিওতে দেখা যায়, সেতুটিতে হাঁটছেন পুতিন। সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়, সেতু পরিদর্শনকালে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর এটির মেরামতের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট। ওই সেতুর নাম ‘কের্চ ব্রিজ’ হলেও ক্রিমিয়া উপদ্বীপের সঙ্গে রাশিয়ার সংযোগ স্থাপন করায় এটি ক্রিমিয়া সেতু নামে পরিচিত। ইউক্রেনে রুশ বাহিনীর রসদ সরবরাহের প্রধান পথ হিসেবে সেতুটি ব্যবহার করে আসছিল মস্কো। ইউক্রেনীয় বাহিনীর একটি বড় টার্গেট হিসেবে দেখা হচ্ছিল ১৯ কিলোমিটার দীর্ঘ ব্রিজটিকে।
লুহানস্কে ভারী ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে ইউক্রেনীয় সেনা : ইউক্রেনীয় সশস্ত্র বাহিনী লুহানেস্কর আর্টেমোভস্কে রুশ সেনাদের সাথে যুদ্ধে লোকবলের দিক থেকে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে, কিন্তু অবিলম্বে তারা আবার নতুন লোক সেখানে নিয়োগ করছে, লুহানস্ক পিপলস রিপাবলিকের অভ্যন্তরীণ মন্ত্রীর সহযোগী ভিটালি কিসেলেভ সোমবার বলেছেন। ‘আর্টেমোভস্কের দিকে ইউক্রেনীয় সৈন্যরা জনশক্তি এবং সরঞ্জামের ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। এমনকি পশ্চিমা বিশেষজ্ঞরা অনুমান করেছেন সেখানে প্রতিদিন ৫০০- ৮০০ লোক নিহত হচ্ছে। তবে তারা দ্রুত তাদের শূণ্যস্থান পূরণ করে। দেশের জনগণকে তারা বুঝতে দিতে চাইছে না যে যুদ্ধক্ষেত্রে আসলে কী ঘটছে,’ তিনি বলেছিলেন।
কিসেলেভের মতে, নিজেদের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে রাশিয়ান বাহিনী আর্টেমোভস্কে অবস্থানরত ইউক্রেনীয় সেনাদের উপরে সর্বাত্মক হামলা চালাচ্ছে না। ‘ডনবাসের ভূখণ্ডে ইউক্রেনীয়রা খুব দ্রুত মারা যাচ্ছে। তারা ইতিমধ্যেই শুধুমাত্র মধ্য ইউক্রেন থেকে নয়, পশ্চিমাঞ্চল থেকে এখানে এসেছে। এটি দেখায় যে আমাদের সৈন্যরা কতটা সঠিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলি সম্পাদন করে, তারা শত্রুকে প্রতিহত করে, ধ্বংস করে। এটি প্রধানত আমাদের বিমান বাহিনীর দক্ষতার ধন্যবাদ। এবং অবশ্যই, আমদেরকে আর্টিলারির কথা উল্লেখ করতে হবে, যেটি বিশেষ সামরিক অভিযানের সময় শত্রুকে প্রায় সুনির্দিষ্টভাবে ছিটকে দিতে পেরেছে,’ তিনি বলেছিলেন। রোববার, রাশিয়ান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট জেনারেল ইগর কোনাশেনকভ জানিয়েছেন যে, ডোনেৎস্কের দিকে রাশিয়ান সেনারা আর্টেমভস্কের কাছে সফল আক্রমণ পরিচালনা করছে।
ইউক্রেনে শান্তির জন্য ইইউ নীতিতে কোনো পরিবর্তন দেখছে না রাশিয়া : ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ সোমবার সাংবাদিকদের বলেছেন যে, ক্রেমলিন ইউক্রেনের কূটনৈতিক মীমাংসার জন্য নির্দেশিত ইউরোপীয় নীতিতে কোনও পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছে না। ইউক্রেনীয় সংঘাতের কূটনৈতিক নিষ্পত্তির দিকে ইউরোপীয় অবস্থানে কোনও পরিবর্তন হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে ক্রেমলিন কর্মকর্তা বলেন, ‘না, আমরা তা মনে করি না।’
এর আগে, ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ তার মার্কিন সফরের পরে টিএফ১ টিভি চ্যানেলের সাথে একটি সাক্ষাতকারে বলেছিলেন যে, ভবিষ্যতের ইউরোপীয় নিরাপত্তা স্থাপত্যে রাশিয়ার জন্য গ্যারান্টি অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। তার মতে, এই ইস্যুটি শান্তি আলোচনার অংশ হবে, তাই চিন্তা করা দরকার যে ফ্রান্স এবং ইইউ কীভাবে তাদের মিত্রদের রক্ষা করতে পারে এবং একই সাথে রাশিয়াকে নিরাপত্তা গ্যারান্টি প্রদান করতে পারে, একবার যখন দলগুলো আলোচনার টেবিলে ফিরে আসবে। ম্যাখোঁ জোর দিয়েছিলেন যে, তিনি ইউক্রেনের সংঘাতের কোনও সামরিক সমাধান দেখতে পাননি এবং বলেন যে, পরিস্থিতি সমাধানের একমাত্র উপায় আলোচনা। সূত্র : তাস, রয়টার্স, সিএনএন, আল-জাজিরা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।