পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
প্রায় এক দশক আগে দেশের বৃহত্তম রাষ্ট্রায়াত্ত্ব ব্যাংক সোনালি ব্যাংক থেকে হলমার্ক গ্রুপের ঋণ জালিয়াতি, বিভিন্ন ব্যাংক থেকে বিসমিল্লাহ গ্রুপের ১২শ কোটি টাকা ঋণ জালিয়াতির তথ্য ফাঁস হওয়ার পর এ নিয়ে দেশে তোলপাড় হয়েছিল। তবে ঋণ জালিয়াতি বন্ধে কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। উপরন্তু ব্যাংকিং সেক্টরের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার জন্য আইনগত বাধ্যবাধকতা আরো শিথিল করে কয়েকটি শিল্পগ্রুপ ও পরিবারের হাতে ব্যাংকিং সেক্টরের মালিকানা কুক্ষিগত করার সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। দেশের ব্যাংকিং সেক্টর তারই দায়ভার বহন করছে। বিশেষত ইসলামি ব্যাংক থেকে এস আলম গ্রুপের ঋণ দেশের ইতিহাসে বৃহত্তম ঋণ কেলেঙ্কারি হিসেবে গণ্য হচ্ছে। রাষ্ট্রায়াত্ত্ব ব্যাংকগুলোকে পেছনে ফেলে দেশের ব্যাংকিং সেক্টরে আস্থার শীর্ষে অবস্থান করে আন্তর্জাতিক সুখ্যাতি অর্জনে সক্ষম হয়েছিল ইসলামি ব্যাংক। দেশের বৈদেশিক রেমিটেন্সের বেশিরভাগ আসতো ইসলামি ব্যাংকের মাধ্যমে। গত এক দশকে রাজনৈতিক প্রভাব ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে ইসলামি ব্যাংকের প্রশাসনিক ও মালিকানা পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে ব্যাংক থেকে শুধু এস আলম গ্রুপই অর্ধলক্ষ কোটি টাকার বেশি হাতিয়ে নিয়েছে বলে এখন রিপোর্ট বের হচ্ছে। প্রভাবশালী মহলের যোগসাজশে ভুয়া ডক্যুমেন্টে দেশের প্রায় সবগুলো ব্যাংক থেকে নানাভাবে হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে বিদেশে পাচার করে দেশের ব্যাংকিং সেক্টর তথা অর্থনীতিকে দেউলিয়াত্বের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাওয়ার এই তৎপরতা হঠাৎ করেই শুরু হয়নি। দীর্ঘ একযুগ ধরে ধারাবাহিকভাবে এই অপতৎপরতা চলছে।
ব্যাংকিং সেক্টরের প্রতি সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীরা আস্থা হারালে দেশের অর্থনীতি, বিনিয়োগ ও ব্যবসা-বাণিজ্য গতি হারাতে বাধ্য। গত এক দশক ধরে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি নিয়ে যথেষ্ট কথা হয়েছে। এখন পরিস্থিতি এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে, ব্যাংকগুলো রফতানি বাণিজ্যে এলসি দায় মেটাতে পারছে না। ডলারের সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের নানা উদ্যোগের পরও ডলারের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়নি। এহেন বাস্তবতায় দেশের অর্থনীতির অনিশ্চিত গন্তব্যে টালমাটাল বাস্তবতায় এস আলম গ্রুপের ঋণচিত্র উন্মোচিত হয়েছে। ইসলামি ব্যাংক থেকে এই গ্রুপের ঋণজালিয়াতির তথ্য জনসম্মুখে উঠে আসার আগেই দেশের ১৩ টি ব্যাংকের শোচনীয় অবস্থার চিত্র খোদ বাংলাদেশ ব্যাংকের রিপোর্টে উঠে এসেছে। দেশের ব্যাংকিং সেক্টরের প্রতি মানুষের আস্থা এবং অর্থনীতিতে এই সেক্টরের যথাযোগ্য ভূমিকা নিশ্চিত করতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা ফিরিয়ে আনার বিকল্প নেই। ইসলামী ব্যাংক থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে একটি শিল্পগ্রুপের নামে- বেনামে আশি হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণ নিয়ে ব্যাংকটিকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দেয়ার হঠকারিতার পেছনে যারাই থাকুক, তাদেরকে আইনের আওতায় এনে ঋণের টাকা ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করতে হবে।
বলার অপেক্ষা রাখে না, কতিপয় শিল্পগোষ্ঠী ও প্রভাবশালী মহলের শেয়ারবাজার লুন্ঠন, ব্যাংক জালিয়াতি, বিদেশে অর্থপাচারের মধ্য দিয়ে দেশের অর্থনীতি সংকটজনক পরিস্থিতে উপনীত হয়েছে। ব্যাংকিং সেক্টরে মালিক ও উচ্চ পদাধিকারীদের সাথে একশ্রেণীর ব্যবসায়ীর যোগসাজশের বিষয়টি এখন ওপেন সিক্রেট। এস আলম গ্রুপের ঋণ জালিয়াতির ঘটনা তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অর্থনীতিবিদ ও পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক আহসান এইচ মনসুরের বরাত দিয়ে গতকাল প্রত্রিকায় প্রকাশিত এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, কয়েক বছর আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক পলিসি মিটিংয়ে এস আলম গ্রুপের লক্ষকোটি টাকার ঋণ গ্রহণ এবং এর ভয়াবহ পরিনতি সম্পর্কে কথা বললে বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনরসহ উপস্থিত কেউই কোনো জবাব দেননি। ব্যাংকিং সেক্টরের নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভূমিকা ও নিস্ক্রিয়তা সম্পর্কে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি। যে দেশে ১০ হাজার টাকার ক্ষুদ্র ঋণ পেতে সব ধরণের কাগজপত্র নিয়ে গ্রাহকদের ব্যাংকে গিয়ে হয়রানির শিকার হতে হয়, সেখানে লক্ষকোটি টাকা ঋণ দিয়ে পুরো ব্যাংকিং সেক্টর খালি করে দিতে কোনো যাচাই-বাছাই না করার নেপথ্য কারণ উদঘাটিত হওয়া জরুরি। দেশ আজ রাজনৈতিক-অর্থনৈতিকভাবে এক চরম সংকটকাল অতিক্রম করছে। এস আলম গ্রুপের ৭০ কোটি টাকা মূল্যের একটি সম্পত্তিকে ৫০০ কোটি টাকা দেখিয়ে ঋণ গ্রহণের তথ্য গতকাল একটি ইংরেজী দৈনিকে প্রকাশিত হয়েছে। এস আলম গ্রুপের ঋণ জালিয়াতির পেছনে প্রভাবশালী মহলের মদদ থাকার অভিযোগ রয়েছে। এহেন বাস্তবতায়, প্রধানমন্ত্রীর তদন্তের নির্দেশ বাস্তবায়নের উপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। শুধু এস আলম গ্রুপই নয়, অনুরূপ আরো অনেক গ্রুপই থাকতে পারে, যারা একই কায়দায় ব্যাংক থেকে অর্থ তুলে নিয়েছে। যেসব প্রতিষ্ঠান অসত্য তথ্য দিয়ে ঋণ নিয়েছে, তাদের ব্যাপারে খোঁজ-খবর নেয়া এবং তা তদন্ত করা জরুরি। দেশের অর্থনীতি এবং ব্যাংকিং সেক্টরকে বাঁচাতে ব্যাংক মালিক, কর্মকর্তা এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্টদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।