পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
পুলিশ সারাদেশে বিশেষ অভিযান চালাচ্ছে। অভিযান শুরু হয়েছে ১ ডিসেম্বর। চলবে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত। পুলিশ সদর দফতরের অতিরিক্ত ডিআইজি স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে জানানো হয়, পুরানো ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত এলাকায় পুলিশের হেফাজত থেকে দুই জঙ্গি ছিনিয়ে নেয়ার প্রেক্ষাপট বিবেচনা, মহান বিজয় দিবস, খ্রিস্টানদের বড়দিন ও ইংরেজি বর্ষবরণ উদযাপন নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন করতে চলমান অভিযানের পাশাপাশি ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত সারাদেশে বিশেষ অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। অন্যান্য স্থানের পাশাপাশি আবাসিক হোটেল, মেস, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, কমিউনিটি সেন্টারসহ অপরাধীদের লুকিয়ে থাকার সম্ভাব্য স্থানগুলোতে কার্যকর অভিযান চালানো হবে। বলা বাহুল্য, কথিত চিঠি মোতাবেক, যথারীতি অভিযান ও ধরপাকড় শুরু হয়েছে এবং চলছে। তিনদিনে সারাদেশে ২ হাজার ৫৭৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আর ঢাকা মহানগরে ৪ দিনে গ্রেফতার করা হয়েছে ৪৭২ জনকে। এইসঙ্গে ঢাকার বিভিন্ন হোটেল ও মেসবাড়িতে ব্লক রেইড চলছে। আইনশৃংখলা সুরক্ষা ও অপরাধ দমনে পুলিশের অভিযান চালানো নতুন কিছু নয়। সব সময়ই এ অভিযান চলমান আছে। বিশেষ পরিস্থিতিতেই কেবল বিশেষ অভিযান চালানো হয়। না, দেশে কোনো বিশেষ আস্থা তৈরি হয়নি, যাতে এ ধরনের বিশেষ অভিযান চালাতে হবে। তাহলে কেন এই অভিযান? পর্যবেক্ষকদের মতে, ১০ ডিসেম্বর বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ লক্ষ করেই এ অভিযান চালানো হচ্ছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিএনপির নেতাকর্মীরা গ্রেফতারের শিকার হচ্ছে। বিএনপিরও দাবি, ১০ ডিসেম্বরের গণসমাবেশকে সামনে রেখেই এ অভিযান। বিএনপির তরফে বলা হয়েছে, ৩০ নভেম্বরের পর থেকে সারাদেশে তার প্রায় ২ হাজার ৭০০ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সরকারের পদত্যাগ, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন, খালেদা জিয়ার মুক্তি, নিত্যপণ্যে মূল্য হ্রাস, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ সব কালাকানুন বাতিল, মিথ্যা রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহার, গুম হওয়াদের ফেরৎ দেয়া ইত্যাদি দাবিতে বিএনপি বিভাগীয় শহরগুলোতে গণসমাবেশের যে কর্মসূচি নেয়, ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় অনুষ্ঠিতব্য গণসমাবেশ তারই অংশ। ইতোমধ্যে অনুষ্ঠিত গণসমাবেশগুলোর আগে নানারকম বাধা, পরিবহন ধর্মঘট, হামলা-মামলা, গ্রেফতার ইত্যাদি সমানে হয়েছে।
ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ স্বাভাবিক কারণেই অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ। এনিয়ে মন্তব্য-বক্তব্য, বাক-বিতণ্ডা, হুমকি-ধামকি, গুজব-রটনা অনেক হয়েছে ও হচ্ছে। সমাবেশটি কোথায় হবে, তার ফায়সালা এখনো হয়নি। বিএনপি নয়াপল্টনে তার কেন্দ্রীয় অফিসের সামনে গণসমাবেশ করতে চায়। ডিএমপি বা সরকার সেটা দিতে নারাজ। ডিএমপি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুমোদন দিতে চায়। বিএনপি বলেছে, সে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে করবে না, নয়াপল্টনেই করবে। এ নিয়ে রাজনৈতিক উত্তেজনা বেশ জোরালো। এর মধ্যেই ডিএমপি সোহরাওয়ার্দী উদ্যান বা নয়াপল্টন ব্যতীত অন্য কোথাও গণসমাবেশ করার প্রস্তাব দিয়েছে। প্রস্তাবটি বিএনপি বিবেচনায় নিয়েছে বলে জানা গেছে। এটা সংঘাত এড়িয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে বিএনপির ইতিবাচক ও অভিনন্দনযোগ্য মনোভাবের পরিচায়ক। সরকারের দিক থেকেও সংঘাত নয়, শান্তি ও সমঝোতার পথ বেছে নেয়াই উত্তম। অনেকের মনে প্রশ্ন: সরকার কি বিএনপির গণসমাবেশ দেখে চিন্তিত বা বিচলিত? না হলে ঢাকার গণসমাবেশকে ঘিরে দেশব্যাপী পুলিশের বিশেষ অভিযান ও গণগ্রেফতার কেন? বিএনপির গণসমাবেশের পাশাপাশি সরকারি দল আওয়ামী লীগও বিভিন্ন উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাল্লা দিয়ে জনসভা-গণসমাবেশ করছে। তাতেও প্রচুর লোকসমাগম হচ্ছে। অবশ্য সমাবেশ আয়োজনের ক্ষেত্রে দুই রকম চিত্র দেখা যাচ্ছে। সরকারি দলের সমাবেশ নির্বাধে, উৎসবের আমেজে গাড়ি-ঘোড়ায় চড়ে মানুষ হাজির হচ্ছে। আর বিএনপির গণসমাবেশে মানুষ আসতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, হুমকি-ধামকি তো আছেই। হামলার শিকারও হচ্ছে। দেশের যে অবস্থা, তাতে রাজনীতিতে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানটা খুবই জরুরি। অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো নয়। জনগণ ভালো নেই। তারা অধিকাংশই কোনো রকমে টিকে আছে। কতদিন এভাবে টিকে থাকতে পারবে, সেটাই প্রশ্ন। এমতাবস্থায়, সরকার যদি বিরোধ-সংঘাতের দিকে হাঁটে, তবে বিপর্যয় কেউ রুখতে পারবে না। দমন, পীড়ন, গ্রেফতার কোনো সমাধান এনে দিতে পারে না। রাজনীতিকে রাজনীতি দিয়েই মোকাবিলা করা বাঞ্ছনীয়। খবর বেরিয়েছে, জেলখানাগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হচ্ছে। এর পেছনে সরকারের কী উদ্দেশ্য থাকতে পারে, তা না বুঝতে পারার কিছু নেই। দেশের সব মানুষকে জেলখানায় ভরা যাবে না। জেলখানার সে ধারণ ক্ষমতা নেই। দেশের ৬৮টি জেলখানায় সর্বমোট ৪২ হাজার ২২৩ জনের স্থান দেয়া সম্ভব। এখন আছে দ্বিগুণ ৮৪ হাজার ১১৫ জন। সরকারের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে গণগ্রেফতার, হামলা-মামলার কুসংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসা উচিত।
সহনশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতি, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা নিশ্চিত করাসহ সর্বপ্রকার মানবাধিকার সংরক্ষণ এবং গুম-খুন ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধ পরিহার করার বিকল্প নেই। বহু বছর ধরে দেশের রাজনৈতিক অবস্থা সাংঘর্ষিক; শান্তিপূর্ণ ও সহাবস্থানমূলক নয়। এ নিয়ে দেশে-বিদেশে যথেষ্ট উদ্বেগ রয়েছে। মানবাধিকার লংঘনের বিষয়ে রয়েছে সবচেয়ে বেশি উদ্বেগ। জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের কথা সঙ্গতকারণেই বিরোধীদল ও আন্তর্জাতিক মহল, বিশেষত উন্নয়ন সহযোগীরাও বলছে। অন্যদিকে মানবাধিকার লংঘন বন্ধ করার দাবিতেও তারা সোচ্চার। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাপান প্রভৃতি দেশ গত কিছুদিন ধরে লাগাতার গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের তাকিদ দিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে মানবাধিকার সুরক্ষার কথাও বলছে। মানবাধিকার লংঘনের অভিযোগে এলিট ফোর্স র্যাব এবং তার কয়েকজন কমকর্তার বিরুদ্ধে ইতোপূর্বে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। নতুন করে আরো নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে বলে শংকা আছে। এনিয়ে সম্প্রতি পররাষ্ট্র প্রতি মন্ত্রী আশা প্রকাশ করে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের তরফে আর কোনো নিষেধাজ্ঞা আসবে না। যে কোনো দেশের জন্য এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা আশংকাজনক ও লজ্জাকর। যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা দেশের ভাবমর্যাদা বিনষ্ট করেছে এবং সহসা তা উঠে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। বিশেষজ্ঞদের সুচিন্তিত অভিমত: সরকারের এমন কিছু করা থেকে বিরত থাকা উচিত, যাতে কোনো দেশ এরকম নিষেধাজ্ঞা দিতে না পারে। আমরা আশা করবো, সরকার রাজনৈতিক পরিস্থিতির উন্নয়ন, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা এবং মানবাধিকার সুরক্ষায় যথোচিত কার্যব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।