পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির লাগাম কোনোভাবেই টেনে ধরা যাচ্ছে না। প্রতিদিনই বাড়তি দামের মধ্যেই দাম বাড়ছে। বাজারে পণ্যের যথেষ্ট যোগান থাকলেও তা সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। প্রয়োজন ও পরিমাণমতো পণ্য কিনতে পারছে না। এই শীতের মৌসুমে ব্যাপক শাক-সবজি উৎপাদিত হলেও দাম ঊর্ধ্বমুখী। সাধারণত শীতে বিভিন্ন রকমের শাক-সবজির দাম সহনীয় পর্যায়ে থাকে এবং সাধারণ মানুষ তা ব্যাপকহারে ভোগ করে। এবারের চিত্র একেবারেই ভিন্ন। তারা চাহিদা মোতাবেক কিনতে পারছে না। শুধু শাক-সবজিই নয়, চাল, আটা, ডাল, তেল, পেঁয়াজসহ অন্যান্য পণ্যের মূল্যও আকাশছোঁয়া হয়ে রয়েছে। আটার দাম চালের দামের চেয়েও বেশি। আমনের ভরা মৌসুমে চালের দাম হু হু করে বাড়ছে। এবার ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের আঘাত ও বিরূপ প্রকৃতির কারণে আশঙ্কা করা হয়েছিল, সরকারনির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আমন উৎপাদন কম হবে। এ আশঙ্কাকে পেছনে ফেলে আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১১ শতাংশ বেশি উৎপাদিত হয়েছে। ধারণা করা হয়েছিল, এ সুখবরে চালের দাম কমবে। বাজারে তার প্রভাব পড়বে এবং সাধারণ মানুষ কিছুটা হলেও স্বস্তি পাবে। বাস্তবে তা সত্যি হয়নি। বরং চালের দাম ক্রমেই বাড়ছে। খাদ্যপণ্যসহ প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে সাধারণ মানুষের জীবনযাপন কঠিন হয়ে পড়েছে।
বলার অপেক্ষা রাখে না, আমাদের দেশে খাদ্যপণ্যের মূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকলে পারিবারিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকে। বিগত কয়েক মাস ধরে নিত্যপণ্যের মূল্য ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যাওয়ায় সার্বিক পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে। এখন প্রায় প্রতিদিন পত্রপত্রিকায় সাধারণ মানুষের জীবনযাপনের কষ্টের চিত্র তুলে ধরা হচ্ছে। খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে প্রয়োজন অনুযায়ী কিনতে না পারায় অসংখ্য মানুষ খাবারের তালিকা থেকে গোশত ও মাছ বাদ দিয়েছে। তারা শাক-সবজি ও ডালের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। দেখা যাচ্ছে, এখানেও স্বস্তি মিলছে না। এতে একজন মানুষের দৈনিক যে পুষ্টির প্রয়োজন, তাতে ঘাটতি দেখা দিচ্ছে। সাধারণত একজন পূর্ণবয়স্ক পুরুষের দৈনিক গড়ে প্রয়োজন আড়াই হাজার কিলোক্যালরি এবং মহিলার প্রয়োজন দুই হাজার কিলোক্যালরি। এই পরিমান ক্যালোরি গ্রহণ করতে না পারলে পুষ্টির ঘাটতি দেখা দেয়। বর্তমান বাস্তবতায় পণ্যমূল্যবৃদ্ধি এবং খাদ্য তালিকা থেকে ক্যালোরিসম্পন্ন খাদ্য বাদ দেয়ায় অসংখ্য মানুষ প্রয়োজনীয় ক্যালোরি গ্রহণ করতে পারছে না। এটা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ায় মানুষ অসুস্থতার দিকে ধাবিত হচ্ছে। মানুষই যদি অসুস্থ হয়ে পড়ে, তাহলে যতই উন্নয়নের কথা বলা হোক না কেন, তা কোনো কাজে আসবে না। অসুস্থ জাতি দেশের বোঝা হয়ে দাঁড়াবে এবং অর্থনৈতিক গতিকে শ্লথ করে দেবে। বলা বাহুল্য, অসুস্থ জনগোষ্ঠী নিয়ে দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি কখনোই সম্ভব নয়। দেশে খাদ্য সংকট মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বারবার অনাবাদি জমি চাষের আওতায় আনার কথা বলেছেন। প্রতি ইঞ্চি জায়গায় চাষ করার তাকিদ দিয়েছেন। তাঁর নির্দেশ মতো চাষাবাদও হয়েছে। শাক-সবজিসহ ধানের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। ঘাটতিও অনেকাংশে পূরণ হয়েছে। এর সুফল কি সাধারণ মানুষ পাচ্ছে? পাচ্ছে না। এসব পণ্যের মূল্য তাদের নাগালের বাইরে রয়ে গেছে। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে, মধ্যসত্ত্বভোগী ও কিছু ব্যবসায়ীর অসৎ আচরণ। অতি মুনাফার লোভে তারা পণ্যমূল্য বৃদ্ধি করে চলেছে। তাদের কাছে সাধারণ মানুষ জিম্মি হয়ে রয়েছে।
দেশের বিপণন ব্যবস্থা বরাবরই দুর্বল। উৎপাদিত পণ্য বাজার পর্যন্ত পৌঁছাতে মধ্যসত্ত্বভোগী থেকে শুরু করে ব্যবসায়িক সিন্ডিকেটের কারসাজির কবলে পড়ে। দেখা যায়, যেখানে পণ্য উৎপাদিত হয়, সেখান থেকে খুচরা বাজার পর্যন্ত পৌঁছাতে দাম কয়েক গুণ বেড়ে যায়। এ দামবৃদ্ধির ক্ষেত্রে নানা অজুহাত দেয়া হয়। অন্যদিকে, কৃষক তার ন্যায্যমূল্য পায় না। এমনও দেখা গেছে, কৃষক তার ফসলের ন্যায্যমূল্য না পেয়ে সড়কে ফেলে দিয়ে প্রতিবাদ করেছে। একদিকে পণ্যের উৎপাদক ন্যায্যমূল্য পায় না, অন্যদিকে ক্রেতা-ভোক্তা পণ্যের উচ্চমূল্য বৃদ্ধির কারণে তা কিনতে পারে না। দীর্ঘদিন ধরেই এটা চলে আসছে। এখন দেশের খাদ্যসংকটকে পুঁজি করে মধ্যসত্ত্বভোগী ও একশ্রেণীর ব্যবসায়ী ফায়দা লুটছে। এদিকে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন। প্রথমত তাকে ক্রেতাস্বার্থ দেখতে হবে। তারা সাধ্যমতো পণ্য কিনতে পারছে কিনা, তা নিশ্চিতে যে ধরনের পদক্ষেপ নেয়া দরকার তাই নিতে হবে। তারা যাতে সচ্ছন্দ ও স্বস্তিতে চাহিদামতো পণ্য ক্রয় করতে পারে তা নিশ্চিত করতে হবে। উৎপাদকের ন্যায্যমূল্য দিতে হবে। একইসঙ্গে মধ্যসত্ত্বভোগী ও সিন্ডিকেটের দৌরাত্ব্য কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে এবং বিপণন ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।