Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চিংড়ি খাতে হ য ব র ল অবস্থা

| প্রকাশের সময় : ১৯ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম


রপ্তানীতে স্থবিরতা, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে ধস
শামসুল হক শারেক, কক্সবাজার থেকে : দেশের অন্যতম বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী সাদা সোনা খ্যাত চিংড়ি খাতে বিরাজ করছে হ য ব র ল অবস্থা। সারাদেশের ২ লাখ ৬০ হাজার হেক্টর চিংড়ি চাষের জমির অধিকাংশই টাউট বাটপারদের হাতে জিম্মী হয়ে পড়ায় সরকার হারাচ্ছে বিশাল অঙ্কের রাজস্ব। চিংড়ি চাষি, ঘের মালিক, হ্যাচারী মালিক, রপ্তানী কারক ও সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সমন্বয় হীনতার কারণে স্থবির হয়ে আছে হাজার হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন।
এক অনুসন্ধানে জানাগেছে, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ভূমি মন্ত্রণালয়ের চিংড়ি সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটি গঠিত হয়। এ পর্যন্ত এই কমিটির ৪টি সভা হলেও নির্দেশনামূলক কোন সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা যায়নি। একইভাবে কক্সবাজার চিংড়ি মহাল কমিটি গঠিত হয়েছে গত দু’বছর আগে। এখানেও দু’একটি সভা ছাড়া নাকি আর কিছুই হয়নি। পরিবেশবাদী সংগঠন বেলার অহেতুক মামলার কারণেও নাকি চিংড়ি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে চিংড়ি।
কক্সবাজার চিংড়ি খামার গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক নূরুল আমিন জেলা চিংড়ি মহাল কমিটির উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, কক্সবাজারে সরকারী বেসরকারী মিলে ৬০ হাজার হেক্টর চিংড়ি জমি রয়েছে। মহাল কমিটির অদক্ষতা ও অনীয়মের কারণে একদিকে সরকার যেমন রাজস্ব হারাচ্ছে অন্যদিকে খামারিরা চিংড়ি চাষে আগ্রহ হারাচ্ছে। এই সুযোগে হাজার হাজার একর চিংড়ি জমি জবর দখলকারীদের হাতে চলে যায়। নিয়ম বহির্ভূতভাবে জবর দখলে থাকা এসব চিংড়ি জমি উদ্ধারেরও কোন উদ্যাগ নেয়া হচ্ছেনা।
আরো জানাগেছে, বিগত কমিটি ও বর্তমান কমিটির অনুমোদিত শত শত ফাইল মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়নি। একইভাবে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো শত শত ফাইল নাকি তদবীরের অভাবে ছাড় হচ্ছে না। এতে করে বিশাল অঙ্কের রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।
সম্প্রতি সংসদে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী এলআর ফান্ড বন্ধ করে দেয়ার কথা বললেও কক্সবাজার রাজস্ব কর্মকর্তারা এলআর ফান্ডের নামে দ্বিগুণ টাকা আদায় করে নিচ্ছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে কক্সবাজার চিংড়ি খামার গ্রুপের পক্ষ থেকে।
জানাগেছে, ভারত, চীন ও থাইল্যান্ড ইত্যাদি দেশ তাদের উন্নত ব্যবস্থাপনা ও প্রযুক্তির  কারণে প্রতি হেক্টরে দুই থেকে আড়াই হাজার কেজি চিংড়ি উৎপাদন করে থাকে। অথচ আমাদের দেশে এখনো চলছে সনাতন পদ্ধতীর চিংড়ি চাষ। অব্যবস্থাপনার কারণে প্রতি হেক্টর জমিতে চিংড়ি উৎপাদন হয়ে থাকে মাত্র ১৬০-২০০ কেজি মাত্র।
অভিযোগ রয়েছে, বেকসিমকোসহ কয়েকটি কোম্পানী তাদের ঘেরে একর প্রতি ৫-৭ হাজার কেজি চিংড়ি উৎপাদন করে থাকলেও তাদের কোন মূল্যায়ন হচ্ছে না। বেকসিমকোর এমডি কুতুব উদ্দিন এ প্রসঙ্গে বলেন, পরিকল্পিতভাবে চিংড়ি চাষের জন্য সরকারকে বুঝানোর কেউ আছে বলে মনে হয়না। সনাতন পদ্ধতির পরিবর্তে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতীতে চিংড়ি চাষ করা হলে দেশে চিংড়ি খাতে বিপ্লব সাধিত হবে। চিংড়ি বিশেষজ্ঞ কুতুব উদ্দিন অরো বলেন ২০ হাজার হেক্টর জমিতে পাইলট প্রজেক্ট করে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চিংড়ি ছাষ করা হলে বর্তমানে সনাতন পদ্ধতির ৩ লাখ হেক্টর জমির সমপরিমাণ চিংড়ি উৎপাদন হতে পারে। এত বিশাল জমিতে চিংড়ি চাষের প্রয়োজন হবেনা। তখন শুধু কক্সবাজার থেকে উৎপাদিত চিংড়ি রপ্তানী করেই বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে সরকারের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
কক্সবাজার চিংড়ি খামার গ্রুপের পক্ষ থেকে ২০ হাজার হেক্টর চিংড়ি জমি নিয়ে পাইলট প্রজেক্ট করে অর্থনৈতিক জোন ঘোণার মাধ্যমে আধা নিবিড় চাষের উদ্যাগ নেয়ার জন্যও প্রস্তাব করা হয়। এতে করে প্রতি হেক্টরে গড়ে কমপক্ষে ৩ হাজার কেজি চিংড়ি উৎপাদন করা সম্ভব বলেও দাবী করেন তারা।
এদিকে দেশে চিংড়ি উৎপাদনে বিপ্লব সাধনের লক্ষ্যে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চিংড়ি পোনা উৎপাদনের জন্য স্থাপিত হ্যাচারীগুলোতেও দেখা দিয়েছে নৈরাজ্য। নীতিমালার অভাবে এসব হ্যাচারীগুলো লোকসানের ভারে ন্যূব্জ। অসম প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে শত শত কোটি টাকা বিনিয়োগ করে অর্ধ শতাধিক অপ্রয়োজনীয় হ্যাচারী স্থাপন করে বিনিয়োগকারীরা আজ বিপাকে। অকিাংশ হ্যাচারী এখন বন্ধ।
দেশে চিংড়ি উৎপাদনে বিপর্যয়ের প্রভাব পড়েছে রপ্তানী খাতেও। হিমায়িত মৎস্য রপ্তানী কারখানাগুলোর অধিকাংশই এখন লোকসান গুনছে। এতে করে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে সাদা সোনা চিংড়ি রপ্তানী করে বিশাল অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চিংড়ি

২১ নভেম্বর, ২০১৭

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ