পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
শীত আসতে দেরি নেই। শীতে শুষ্কতা বৃদ্ধি পায়। ঢাকাসহ দেশের শহরগুলোতে পানিস্বল্পতার কারণে শুষ্কতার মাত্রা অনেক বেশি হয়। এ সময় বায়ুতে ধুলিবালির পরিমাণ বেড়ে যায়। বায়ুদূষণ চরম পর্যায়ে উপনীত হয়। বিশেষ করে, ঢাকা শহরে। বিগত বছরগুলোতে ঢাকা বিশ্বের বায়ুদূষিত শহরগুলোর মধ্যে শীর্ষে থাকছে। গত বুধবার এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সে (একিউআই) তালিকায় ঢাকার অবস্থান ছিল তৃতীয়। স্কোর ১৬২। পাকিস্তানের লাহোর এবং ভারতের দিল্লির স্কোর ছিল যথাক্রমে ২১৩ ও ২০২; অবস্থান প্রথম ও দ্বিতীয়। স্কোর ১০১ থেকে ২০০ হলে বলা হয়, অস্বাস্থ্যকর, ২০১ থেকে ৩০০ হলে বলা হয়, অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর। এই মূল্যায়নে ঢাকা অস্বাস্থ্যকর পর্যায়ে পড়ে। বায়ুদূষণ জনস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত হুমকিস্বরূপ। দূষণের নানা উপকরণ মিশে থাকে বায়ুতে, যা বিভিন্ন রোগব্যাধির কারণ। পরিবেশবাদীরা বায়ুদূষণকে মানুষের নিরব ঘাতক বলে অভিহিত করে থাকেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বায়ুদূষণের কারণে স্ট্রোক, হৃদরোগ, ক্রনিক অ্যাবস্ট্রাকটিভ পালনোমারি ডিজিজ, ফুসফুসের ক্যান্সার ও স্বাসযন্ত্রের নানান রোগ দেখা দেয়। এসব রোগে বিশ্বে প্রতি বছর অন্তত ৭০ লাখ লোক মারা যায়। বাংলাদেশেও মারা যায়, যার সংখ্যা একেবারে কম নয়। পাশাপাশি এসব রোগব্যাধির চিকিৎসায় মোটা অংকের অর্থ খরচ হয়ে যায়। ঢাকার বায়ুদূষণের কারণ বহুবিধ। এর মধ্যে চারটি কারণ প্রধান। যথা: অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা শহরের যেখানে সেখানে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি ও উন্নয়ন কাজ, পুরানা যানবাহনের আধিক্য, শহরের আশপাশে ইটভাটা ও শিল্পকারখানা এবং শহরের ভেতরে ময়লা-আবর্জনা ও তা পোড়ানো। ঢাকায় রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি সারাবছরই লক্ষ করা যায়। বিভিন্ন সেবাসংস্থা নির্মাণ ও সংস্কার কাজের জন্য রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি করে ফেলে রাখে দিনের পর দিন। এতে ধুলাবালি ও কাদাপানির উপদ্রব বৃদ্ধি পায়। বায়ু দূষিত হয়। মানুষ নানা দুর্ভোগের শিকার হয়। কিছু মেগা প্রজেক্টের কাজও চলছে। শেষ হওয়ার লক্ষণ নেই। এসব প্রকল্প ধুলাবালি উৎপাদনের কারখানা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঢাকা রাজধানী শহর বটে। কিন্তু এখানে আনফিট ও লক্কড়-ঝক্কড় মার্কা যানবাহনের সংখ্যা অগণিত। এসব যানবাহন প্রতিনিয়ত দূষিত ধোয়া উদ্গীরণ করে বায়ুদূষণ ঘটায়। অনুরূপভাবে এখানে গড়ে ওঠা হাজার হাজার ছোট বড় কারখানা প্রতিনিয়ত বিষাক্ত ধোয়া ছড়ায়। ঢাকার আশেপাশে রয়েছে অসংখ্য বৈধ-অবৈধ ইটভাটা। বায়ুদূষণের জন্য এসব ইটভাটা বিশেষভাবে দায়ী। ঢাকা শহরকে ময়লা-আবর্জনার ভাগাড় বলা হয়। শহরের বিভিন্ন জায়গায় ও রাস্তার আশেপাশে দিনের পর দিন ময়লা-আবর্জনা স্তূপাকারে পড়ে থেকে দূষণ ঘটায়।
শুধু বায়ুদূষণই নয়, শব্দদূষণ, মাটিদূষণ, পানিদূষণসহ সব ধরনের দূষণই এখানে এত বেশি যে, এর বাসযোগ্যতা ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিবেদনে ঢাকাকে বিশ্বের বসবাস-অযোগ্য শহরগুলোর তালিকায় শীর্ষস্থানে রাখতে দেখা যাচ্ছে। বছরের পর বছর ধরে এর এই অবস্থানের হেরফের হচ্ছে না। সার্বিক পরিবেশের অবক্ষয় ও দূষণ যেভাবে হচ্ছে, তাতে এমন এক সময় আসতে পারে, যখন এর অধিবাসীদের স্বেচ্ছায় বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে হতে পারে। অপরিকল্পিত শহরের প্রসার, জনস্ফীতি, যানজট ও পরিবেশের ক্রমাগত অবনতি ঢাকা শহরের অখ্যাতি ও জনদুর্ভোগের প্রধান কারণ। সব দেশেই রাজধানী শহরকে ছিমছাম, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, পরিবেশবান্ধব, সৌন্দর্যপূর্ণ, গতিময় ও নিরাপদ রাখতে চেষ্টা করা হয়। আমাদের দেশেই কেবল এর ব্যাতিক্রম। সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষসমূহের এদিকে নজর নেই। এই বিশাল শহরের দুই দুটি কর্তৃপক্ষ আছে, আছে পরিবেশ সংক্রান্ত মন্ত্রণালয়। শহরে বিভিন্ন সেবা ও কাজের সঙ্গে জড়িত আছে অর্ধশতাধিক সংস্থা। তারা তাহলে কী করছে? তারা যদি তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে, তবে শহরের এই নাজুক অবস্থা কেন? সুচিন্তিত পরিকল্পনায় শহর সম্প্রসারণ, জনস্ফীতি হ্রাস, ব্যাপক বিকেন্দ্রীকরণ, যানজট নিরসন, উন্নয়ন কাজগুলোর দ্রুত সম্পাদন, রাস্তাঘাট ও ড্রেনেজ সিস্টেমের উন্নয়ন, বায়ুদূষণসহ সব ধরনের দূষণ রোধ প্রভৃতির কথা অনেকবার বলা হয়েছে, অনেক দিন ধরে বলা হয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয়নি বা হচ্ছে না।
দুই সিটি করপোরেশন, পরিবেশসংক্রান্ত মন্ত্রণালয়, অন্যান্য পক্ষ ও সংস্থা শোচনীয় ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে যাচ্ছে। এতে ঢাকার অবনতমান স্থায়ী রূপ নিচ্ছে, জনদুর্ভোগ সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে এবং ব্যাপক অর্থনৈতিক ক্ষতি হচ্ছে। যানজটের কারণে কত কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে, তার আর্থিক মূল্য কত, পরিবেশ দূষণজনিত কারণে কী পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে কিংবা জনস্বাস্থ্য সেবায় কত অর্থ ব্যয় হচ্ছে, তার সঠিক হিসাব পাওয়া না গেলেও সাকল্য ক্ষতির অংক যে বিরাট-বিশাল, তা সহজেই আন্দাজ করা যায়। দূষণ নিরোধ, পরিবেশের উন্নয়ন ইত্যাদির জন্য সর্বোচ্চ আদালত বিভিন্ন সময় দিক নির্দেশনা দিয়েছেন। কিন্তু কোনো নির্দেশনাই ঠিকমত প্রতিপালিত হয়নি। এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। শীতকালে বরাবরের মতো বায়ুদূষণসহ নানান দূষণ বাড়বে। ইতোমধ্যে শহরের বাড়িঘর, রাস্তাঘাট, গাছপালায় ধুলার বিস্তার ঘটতে শুরু করেছে। সেটা শীতে বৃদ্ধি পাবে। এখনই এ ব্যাপারে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে, যাতে পরিবেশ যতটা সম্ভব সুরক্ষা করা যায়। নিয়মিত পানি ছিটানোর ব্যবস্থা ভালো ফল দিতে পারে। দুই সিটি করপোরেশন বিশেষ করে কমিশনারদের এখনই উদ্যোগী হতে হবে। তাদের স্ব স্ব এলাকায় বায়ুদূষণসহ বিভিন্ন দূষণ রোধে তারা সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি নিতে পারেন। এইসঙ্গে তারা জনগণকে সচেতন করার কাজটি ভালোভাবে করতে পারেন। জনসচেতনতা ব্যতীত এবং গণঅংশগ্রহণ ছাড়া কোনো গণকল্যাণকামী কর্মসূচিই সার্থকভাবে সম্পন্ন হতে পারে না। পরিবেশ অধিদফতরও মোটেই চুপ থাকতে পারে না। পরিবেশ রক্ষা তো তারই একান্ত দায়িত্ব। অধিদফতরের তরফে জানানো হয়েছে, বায়ু ও অন্যান্য দূষণ রোধে এর মধ্যেই কিছু কর্মসূচি নেয়া হয়েছে। এটা যেন কথার কথা না হয়, সেটাই আমাদের প্রত্যাশা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।