২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত মোটা হবেন ৪০০ কোটি মানুষ
২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত ওজন বা মোটা হবেন বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ। সংখ্যার বিচারে যা
সারা বিশে^ ডায়াবেটিস একটি বড় সমস্যা। ডায়াবেটিস হলে ওষুধের পাশাপাশি খাওয়া দাওয়ার মাধ্যমে শরীরের শর্করার ভারসাম্য বজায় রাখতে হয়। কিছু খাবার রয়েছে যেগুলো শরীরের শর্করার ভারসাম্য বজায় রাখে। এই স্বাস্থ্যকর খাবারগুলো প্রতিদিন খাওয়া প্রাকৃতিকভাবেই ডায়াবেটিসের সঙ্গে লড়াই করে এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। বর্তমান বিশ্বে চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতির সাথে পাল্লা দিয়ে ডায়াবেটিক রোগীর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু ঘটায় এরকম প্রধান পাঁচটি কারণের মধ্যে ডায়াবেটিক অন্যতম। পৃথিবীতে প্রতি ১০ সেকেন্ডে একজন ডায়াবেটিক আক্রান্ত লোক মারা যায় এবং প্রতি ১০ সেকেন্ডে দুইজন ডায়াবেটিক রোগী সনাক্ত করা হয়। তাই ডায়াবেটিকসের ভয়াবহতা প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা একান্ত জরুরি। ডায়াবেটিস বা বহুমূত্র রোগ পুরোপুরি বা সম্পূর্ণ নিরাময় করা যায় না। তবে কিছু নিয়ম মেনে চললে এটি নিয়ন্ত্রণে রেখে সুস্থ জীবনযাপন করা যায়। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করার অনেক উপায় আছে। ওষুধ, নিয়মিত ব্যায়ামসহ নানাভাবে এই রোগ নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। তবে সব প্রচেষ্টাই ব্যর্থ হবে যদি আপনি খাবার নিয়ন্ত্রণ না করেন। তাই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় এমন খাদ্য রাখতে হবে, যা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। আর সেটিও হতে হবে পরিমাণমতো। চলুন জেনে নেয়া যাক ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এমন কিছু খাবার সম্পর্কে।
১. খেজুর: বাদামি বা খয়েরি রঙের সুন্দর একটি ফল খেজুর। খেজুরের মিষ্টি স্বাদের কারণে অনেকেই ভেবে থাকেন, ডায়াবেটিক রোগীদের এটা খাওয়া ঠিক নয়। কিন্তু প্রচুর ফাইবারযুক্ত খেজুর আসলে ডায়াবেটিসের জন্য উপকারী। ডায়াবেটিস আক্রান্তদের ওষুধ হিসেবে কাজ করে খেজুর। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, আঙ্গুর, কমলালেবু ও ফুলকপির তুলনায় খেজুর শরীরে অনেক বেশি অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের জোগান দেয়।
২. তিসি : এটি একধরনের বীজ, যার ইংরেজি নাম ফ্লেক্সসিড। আমরা এটাকে তিসি হিসেবেই চিনে থাকি। তিসিবীজ আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী একটি খাবার। বিশেষ করে ডায়াবেটিস রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে এই বীজ খুবই কার্যকর। তিসি বীজ ফাইবার, ওমেগা-৩ ও ওমেগা-৬ ফ্যাটি এসিডের ভালো উৎস। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় তিসি রাখতে পারেন। এটা রক্তে চিনির মাত্রা কমায়, যা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। তিসিবীজ গুঁড়া করে প্রতিদিন দুই গ্লাস পানিতে তিন চা চামচ মিশিয়ে পান করুন।
৩. দুধ : ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ‘ডি’-এর ভালো উৎস দুধ। আর সেজন্য দুধ ডায়াবেটিস আক্রান্তদের জন্য উপকারী খাবার। অনেকের দুধ খেলে পেটে বায়ু হয়, তাই আপনি চাইলে দুধের ফ্যাটি অংশটি ছাড়া টকদই ও অন্যান্য দুগ্ধজাত খাবারও খেতে পারেন। সকালের নাশতায়ও আপনি রাখতে পারেন দুধ অথবা দুগ্ধজাত কোনো খাবার।
৪. তুলসী : ঔষধি গাছ তুলসীকে বলা হয় ডায়াবেটিস রোগের ইনসুলিন। গবেষণায় দেখা গেছে, তুলসীপাতা বিবিধভাবে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। খালি পেটে তুলসীপাতার রস পান করলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমে যায়। চাইলে তুলসীর রস আপনি চায়ের সাথে মিলিয়েও খেতে পারেন।
৫. কাঠবাদাম: কাঠবাদাম ডায়াবেটিস রোগীর জন্য পরম বন্ধু। এই খাবারে রয়েছে উচ্চ পরিমাণ আঁশ এবং প্রোটিন; যা ডায়াবেটিসের সঙ্গে লড়াই করে ৩০ দিনে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে।
৬. মাছ : ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড সমৃদ্ধ মাছ খাওয়া ডায়াবেটিসের জন্য ভালো। এটা ইনসুলিনের মাত্রা কমায়। সপ্তাহে অন্তত দুই দিন এই জাতীয় মাছ খেতে হবে।
৭. জলপাইয়ের তেল : বর্তমানে অনেকেই রান্নায় জলপাইয়ের তেল ব্যবহার করেন। এর মধ্যে রয়েছে ভালো মানের চর্বি; যেটা ইনসুলিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। নিয়মিত জলপাইয়ের তেল খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
৮. আপেল : বলা হয়, প্রতিদিন একটি আপেল খাওয়া রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়। এটি রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে ডায়াবেটিস কমাতে কাজ করে। এ ছাড়া এটি কোলেস্টেরলও কমায়।
৯. মটরশুঁটি : হৃদরোগ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা পালন করে মটরশুঁটি। এক গবেষণায় দেখা গেছে, মটরশুঁটি রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে, হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন ২০০ গ্রামের মতো মটরশুঁটি খেলে হৃদরোগ, টাইপ-২ ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপজনিত বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি কমে যায়। বর্তমানে আমাদের দেশে প্রায় সারা বছরই পাওয়া যায় মটরশুঁকি। যদি না থাকে তবে যখন মটরশুঁটির মওসুম, তখন বেশি করে কিনে ডিপ ফ্রিজে রেখে দিন। তারপর সারা বছর খাদ্য তালিকায় রাখুন এই সবজি।
১০. তেলাকুচা পাতা এবং ফল সবজির মতো খান।
১১. মেথি চূর্ণও খেতে পারেন ডায়াবেটিস থেকে বাঁচতে। বর্তমানে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। এই রোগের হাত ধরে আরো অনেক রোগ দেহে বাসা বাঁধে। তাই যতটুকু সম্ভব এ থেকে দূরে থাকতে হবে। গবেষণা করে দেখা গেছে, যে সব ডায়াবেটিক রোগীরা নিয়মিত মেথি খান, তাদের ডায়াবেটিস জনিত অসুখগুলো কম হয় এবং স্ট্রোক হওয়ার প্রবণতা তুলনামূলকভাবে কম। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য মেথি শ্রেষ্ঠ পথ্য। যাদের ডায়াবেটিস নেই মেথি তাদের জন্যও উপকারী। মেথি সীমিত মাত্রায় ডায়াবেটিস (টাইপ ১ ও টাইপ ২) নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে।
ডায়াবেটিস থেকে বাঁচতে বা এই রোগটিকে বিলম্বিত করতে নিচের চেষ্টাগুলো করা যেতে পারে।
* প্রতিদিন কমপক্ষে ৪০ মিনিট হাঁটা বা শারীরিক পরিশ্রম করতে হবে। হাঁটার ক্ষেত্রে টানা ৪০ মিনিট একটানা হাঁটলে উত্তম ফল পাওয়া যায়। * এমন ব্যায়াম বা পরিশ্রম করতে হবে, যাতে শরীর থেকে ঘাম ঝরে। * হঠাৎ খুব কঠিন ব্যায়াম শুরু না করে প্রথমে ওয়ার্কআপ বা হালকা ব্যায়াম দিয়ে শুরু করতে হবে। ধীরে ধীরে গতি বাড়াতে হবে। *দেহের ওজন বাড়তে দেয়া হবে না। যাদের ওজন ইতোমধ্যে বেড়েছে, তারা ওজন কমাতে ব্যবস্থা নিন (যেমন-খাদ্য নিয়ন্ত্রণ, ব্যায়াম, দৌড়ানো, হাঁটা ইত্যাদি)। * প্রতিদিন শাকসবজি রাখুন খাদ্য তালিকায়। আঁশযুক্ত খাবার বেশি খান। * কার্বোহাইড্রেট-জাতীয় খাবার, যেমন-ভাত, আলু কম খান। * বেশি গরু বা ছাগলের গোশত খাবেন না। * আইসক্রিম, পনির, ফাস্টফুড, কোল্ড ড্রিঙ্কস ও কৃত্রিম জুস এড়িয়ে চলুন। * ঘি বা মাখন কম খান বা বাদ দিন।* দিনে ৮-১০ গ্লাস পানি পান করুন। * ২৪ ঘন্টায় অন্তত ৬ ঘন্টা ঘুমান। * টেনশন কমাতে হবে।
মো: লোকমান হেকিম
চিকিৎসক-কলামিস্ট,
মোবাইলঃ- ০১৭১৬২৭০১২০।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।