পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
বেসরকারিভাবে জ্বালানি তেল আমদানি করার চিন্তাভাবনা করছে সরকার। বিষয়টি বিশ্লেষণ করে দেখার জন্য নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রিসভা। গত সোমবার মন্ত্রিসভা বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনার পর সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মন্ত্রিসভায় আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সিদ্ধান্তটি হচ্ছে, বিশেষ পরিস্থিতিতে তেল, গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম সরাসরি বৃদ্ধি এবং কমানোর বিষয়ে সরকারের ক্ষমতার বিধান। উল্লেখ্য, বর্তমানে তেল, গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম নির্ধারণ করে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। এক্ষেত্রে কিছু জটিলতা রয়েছে। এতে গণশুনানির পর সিদ্ধান্ত নিতে ৯০ দিন সময় লাগে। এ সময়ের মধ্যে তেলের দাম কম-বৃদ্ধির তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। এজন্য সরকার এখন থেকে প্রয়োজনবোধে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নেবে। এক্ষেত্রে সুবিধা হচ্ছে, বিইআরসি’র সিদ্ধান্ত নিতে তিন মাস সময় লাগলেও সরকার বাজার পরিস্থিতি বুঝে ঐ সময়েই জ্বালানির মূল্য নির্ধারণ করতে পারবে। বিশ্ববাজারের সাথে জ্বালানির মূল্য কমে গেলে তা তাৎক্ষণিকভাবে কমাতে পারবে। বেড়ে গেলে সমন্বয় করতে পারবে। পর্যবেক্ষরা সরকারের দুইটি সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে।
বেসরকারিভাবে জ্বালানি তেল আমদানির বিষয়টি নিয়ে অনেক আগেই চিন্তাভাবনা করা উচিৎ ছিল। এতে এককভাবে সরকারের আমদানির ক্ষেত্রে যে জটিলতা দেখা দেয় তা অনেকাংশে কমে যেত। দেশে জ্বালানির মজুত যেমন থাকত, তেমনি সঙ্কটের সময় তা সামাল দেয়া সহজ হতো। তাছাড়া সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাতও বিভিন্ন উৎস সন্ধান করে দ্রুত জ্বালানি আমদানি ও সরবরাহ করতে পারবে। এতে সরকারের ওপর থেকে চাপও কমে যাবে। আমরা মনে করি, সরকারের উচিত বেসরকারি খাতে জ্বালানি আমদানির সুযোগ করে দেয়া। বর্তমান বিশ্ব পুরোপুরি জ্বালানি তেল নির্ভর। বিদ্যুৎ উৎপাদন থেকে শুরু করে যানবাহন, কৃষিকাজসহ সর্বত্র জ্বালানি অপরিহার্য উপকরণ। এর সরবরাহে বিঘ্ন ঘটলে সবকিছুই অচল হয়ে যায়। আমাদের মতো আমদানি নির্ভর দেশে জ্বালানি সঙ্কট হলে কি পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়, তা ইতোমধ্যে দেখা গেছে। জ্বালানি তেল নির্ভর বিদ্যুৎকেন্দ্র সঙ্কটে পড়ায় দুর্বিষহ লোডশেডিংয়ের শিকার হতে হয়েছে। শিল্পকারখানায় উৎপাদন কমে গেছে। এর মধ্যেই বিদ্যুতের দাম বাড়াতে হয়েছে। বলা বাহুল্য, ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী জ্বালানি তেলের সঙ্কট সৃষ্টি হওয়ায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। তার মাশুল আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোকে খুব বেশি পরিমাণে দিতে হচ্ছে। তবে জ্বালানি তেল এবং গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি নিয়ে বরাবরই একধরনের অসন্তোষ জনগণের মধ্যে বিরাজ করে। বিশ্ববাজারে মূল্যবৃদ্ধি পেলে সমন্বয়ের কথা বলে জ্বালানির দাম বৃদ্ধি করা হয়। তবে কমে গেলে দাম কমায় না। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি করা হলেও বিশ্ববাজারে এখন দাম সর্বনিম্ন অবস্থায় রয়েছে। এ প্রেক্ষিতে, দেশে জ্বালানি তেলের দাম কমার কথা থাকলেও বিপিসি দামের সমন্বয়ের কোনো উদ্যোগ নেয়নি। ইউক্রেন যুদ্ধের আগেও বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার সাথে সাথে দেশে দাম বাড়িয়েছে। অথচ কমে গেলে তা আর কমানো হয়নি। উল্টো বর্ধিতমূল্যে বিপিসি ব্যাপক লাভ করেছে। এ নিয়ে বিশেষজ্ঞরা কঠোর সমালোচনা করেছেন। তারা বলেছেন, বিপিসি জনগণের স্বার্থ বিবেচনা না করে নিজের ব্যবসার কথা চিন্তা করেছে। অন্যদিকে, বিপিসি ভর্তুকি কমানোর কথা বলেছে। এমন এক পরিস্থিতিতে, সরকার পরিস্থিতি বুঝে জ্বালানি তেল, গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানো-কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটা ইতিবাচক। এতে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নিয়ে মূল্য সমন্বয় করতে পারবে।
জ্বালানি তেল, গ্যাস ও বিদ্যুতের দামবৃদ্ধি জনজীবনে ব্যাপক নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। এর প্রভাবে যানবাহন খরচসহ নিত্যপণ্যের মূল্য অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যায়। বিশ্ববাজারে দাম বৃদ্ধির কারণ দেখিয়ে মূল্যবৃদ্ধি করলেও পরবর্তীতে কমে গেলে তা আর সমন্বয় করা হয় না। ইতোমধ্যে তেলের উচ্চমূল্যের কারণে সর্বত্র এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। পণ্যমূল্য বৃদ্ধিসহ কৃষি ও শিল্পখাতের উৎপাদন ব্যয় বেড়ে গেছে। অনেক কারখানা ব্যয় সঙ্কুলান করতে না পেরে উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছে। শ্রমিক ছাঁটাই করেছে। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমার সাথে দেশেও দাম কমানো জরুরি। সরকার যেহেতু পরিস্থিতি বুঝে তেল, গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম নির্ধারণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাই এখনই দাম সমন্বয়ের দিকে নজর দিতে পারে। সামনে বোরো মৌসুম। এ সময় সেচ কাজ স্বাভাবিক রাখার জন্য প্রচুর তেল ও বিদ্যুতের নিরবিচ্ছিন্ন সরবরাহ রাখার বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে ব্যত্যয় ঘটলে তার নেতিবাচক প্রভাব উৎপাদনে পড়বে। নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ব্যহত হবে। এ বিবেচনায় সরকারের উচিত তেল ও বিদ্যুতের দাম যৌক্তিক পর্যায়ে রাখা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।