পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
ইউনাইটেড নেশন্স কনফারেন্স অন ট্রেড অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আঙ্কটাড) প্রতিবেদন ২০১৬-এ বলা হয়েছে, ২০২৪ সালে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বের হবে। ২০১৮ সালেই সে প্রয়োজনীয় লক্ষ্যগুলো প্রাথমিকভাবে অর্জন করবে। নিয়ম অনুযায়ী, মাথাপিছু আয়, মানব সম্পদ উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা- এ তিন সূচকের মধ্যে কমপক্ষে দু’টিতে নির্ধারিত লক্ষ্য অর্জন করতে হয়। এরপর আরো তিন বছর অর্থাৎ ২০২১ সাল পর্যন্ত অর্জনগুলোর ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে। পরে নানা আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে বাংলাদেশকে এলডিসি থেকে উত্তরণের বিষয়টির অনুমোদন পেতে হবে। গত শনিবার আঙ্কটাডের পক্ষে বাংলাদেশের গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে। এ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়েছে, ২০২৪ সালে বাংলাদেশ এলডিসি থেকে বের হলেও বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে এলডিসি হিসেবে যে সুবিধা পায় সে সুবিধা ২০২৭ সাল পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। বলার অপেক্ষা রাখে না, বাংলাদেশের এলডিসি থেকে উত্তরণের যে রূপরেখা আঙ্কটাড প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে, তা উৎসাহজনক ও ইতিবাচক। তবে এলডিসি থেকে বের হয়ে আসার জন্য যে তিনটি সূচকের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে সেই তিন সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান আরও উন্নত করতে হবে। ২০১৫ সালের পর্যালোচনায় বাংলাদেশ শুধু অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচকে নির্ধারিত লক্ষ্য অর্জন করেছে। এ সূচকে ৩২ পয়েন্টের নীচে থাকতে হবে; বাংলাদেশের অর্জিত পয়েন্ট ২৫ দশমিক ১। মানব সম্পদ উন্নয়ন সূচকে ৬৬ পয়েন্টের ওপরে থাকতে হবে; বাংলাদেশের আছে ৬৩ দশমিক ৩। আর মাথাপিছু আয়ের তিন বছরের গড় হতে হবে ১২৪২ ডলার; বাংলাদেশের আয় হলো ১১৯০ ডলার। শেষোক্ত দুই সূচকের অন্তত একটিতে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সম্ভাবনা তুলনামূলকভাবে মানবসম্পদ উন্নয়নেই বেশী। ইতোমধ্যে মানবসম্পদ উন্নয়নের বেশ কিছু দিকে বিশেষ করে পুষ্টি, শিশু মৃত্যুর হার হ্রাস ও শিক্ষার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অনেক এগিয়েছে। আগামী কয়েক বছর এ খাতে জোর দেয়া হলে সহজেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হতে পারে।
স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে পরবর্তী দেশের তালিকায় বাংলাদেশের উত্তরণ হবে অবশ্যই একটি বড় ঘটনা বা অর্জন। প্রশ্ন হচ্ছে, এই উত্তরণই কি যথেষ্ট হবে, যদি উন্নয়ন টেকসই না হয় এবং এর ধারাবাহিকতা অক্ষুণœ না থাকে? আঙ্কটাড প্রতিবেদনেও বলা হয়েছে, টেকসই উন্নয়নের মাধ্যমে এলডিসি থেকে বের হতে উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি অর্থনীতির কাঠামোগত পরিবর্তন সাধন করতে হবে। বলা বাহুল্য, উৎপাদন ক্ষমতা বাড়াতে বিনিয়োগ, শিল্পায়ন, রফতানিÑ সব কিছুই বাড়াতে হবে এবং সে জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কারও করতে হবে। সিপিডি’র ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এ প্রসঙ্গে বলেছেন, এলডিসি থেকে বের হয়ে যাওয়া গুরুত্বপূর্ণ নয়; উন্নয়ন কতটা টেকসই হলো, সেটা দেখতে হবে। টেকসই উন্নয়ন হলে পরবর্তী সময়েও এগিয়ে যাওয়া সহজ হয়। এ জন্য একটি জাতীয় নীতিমালা প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন। টেকসই উন্নয়ন সম্পর্কে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য আরও বলেছেন, শুধু প্রবৃদ্ধি ও রফতানি খাতকে প্রাধান্য দিয়ে বাংলাদেশের উন্নয়নের বিষয়টি এখন আর বিবেচনা করা যায় না। যারা এসব চিন্তা করেন তারা বর্তমান উন্নয়ন ধারণা থেকে অনেক পিছিয়ে আছেন। এখন প্রবৃদ্ধি দিয়ে উন্নতি বিবেচনা করা হয় না। অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি, আইনের শাসন এবং শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের মতো সামাজিকখাতে সমৃদ্ধি দিয়েই উন্নয়ন টেকসই হয়। আগে উন্নয়ন, না আগে গণতন্ত্র, এ প্রসঙ্গে তিনি একটি উদাহরণ টেনে বলেছেন, গত কয়েক বছর ইথিওপিয়ায় ১০ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি হয়েছে। সেখানকার তথাকথিত গণতন্ত্র, সামরিক সহিংসতা, গোত্রগত সহিংসতা থাকায় টেকসই উন্নয়ন হচ্ছে না।
বাংলাদেশকে যদি কাক্সিক্ষত অর্থনৈতিক উন্নয়ন, সমৃদ্ধি ও অবস্থানগত উন্নতি অর্জন করতে হয় তাহলে টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্য বিনিয়োগ, শিল্পায়ন, উৎপাদন, রফতানি, কর্মসংস্থান যেমন বাড়াতে হবে তেমনি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, গণতন্ত্র, আইনের শাসন, মানবাধিকার, ন্যায়বিচারের প্রাপ্যতা ইত্যাদিও সুনিশ্চিত করতে হবে। সরকার বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য চেষ্টার কোনো ত্রুটি করছে না; তারপরও বিনিয়োগ চাঙ্গা হচ্ছে না। ফলে শিল্পায়ন, উৎপাদন, রফতানি, কর্মসংস্থানও আশানুরূপ বাড়ছে না। বিনিয়োগ না হওয়ার বহুবিধ কারণের মধ্যে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, গণতন্ত্রের বিকাশ রুদ্ধ হয়ে থাকা, আইনের শাসনের ঘাটতি, মানবাধিকার লংঘন, নাগরিক নিরাপত্তার অভাব এবং বিচারহীনতার সংস্কৃতির উত্থান ইত্যাদি বিশেষভাবে দায়ী। সরকার আগে উন্নয়ন, পরে গণতন্ত্র, এরকম একটি নীতি অনুসরণ করছে। এ নীতির অনুসরণ দেশের সার্বিক উন্নয়ন কখনোই ত্বরান্বিত করতে পারবে না। এই বিষয়টি যথাযথভাবে আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় কার্যব্যবস্থা গ্রহণের বিকল্প নেই। অবশ্যই গণতান্ত্রিক রাজনীতির চর্চা উন্মুক্ত করতে হবে। সরকার পরিবর্তনে জনগণের হারানো ক্ষমতা ফিরিয়ে দিতে হবে। আইনের শাসন, মানবাধিকার ও নাগরিক নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এসব ব্যাপারে সরকারকেই দায়িত্ব নিতে হবে, কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।