পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ককে চারলেন থেকে আটলেনে উন্নীত করার পরও নির্বিঘেœ যানবাহন চলাচল করতে পারছে না। এ সংক্রান্ত দৈনিক ইনকিলাবের খবরে বলা হয়েছে, কাঁচপুর সেতু থেকে শিমরাইল মোড় মেঘনা ও গোমতি সেতুর এপাড়-ওপাড়ে স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিনই ১৫-২০ মিনিট যানজট লেগেই থাকছে। গাড়ীর চাপ বাড়লে জটের সময় দীর্ঘতর হয়। এ প্রসঙ্গে হাইওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি বলেছেন, আগের তুলনায় মহাসড়কের যানজটের অবস্থার অনেক উন্নতি হয়েছে। তারপরেও প্রতিদিনই কমবেশি যানজট কেন হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, নতুন করে সেতু না হওয়া পর্যন্ত এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের কোন উপায় নেই। বিশেষ করে মেঘনা সেতুতে ওঠার সময় অতিরিক্ত মালবাহী যানগুলো খুব ধীরে ওঠে। এতে পেছনের দিকের যানবাহনগুলো থেমে যায়। এদিকে প্রত্যক্ষদর্শীর উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, আট লেনের মধ্যে দুই বা তিন লেন দখল করে সারি সারি বাস দাঁড় করিয়ে রাখা হচ্ছে। কোথাও কোথাও লেনের উপরই রয়েছে বাস কাউন্টারসহ বিভিন্ন সামগ্রীর দোকান। কোথাও কাভার্ডভ্যান ও ট্রাকের স্ট্যান্ড। মহাসড়ক দখলের জন্য ট্রাফিক পুলিশকে নিয়মিত চাঁদা দেয়ার কথা স্বীকার করে একজন কাউন্টার ম্যানেজার বলেছেন, পুলিশ না চাইলে মহাসড়কে কেউ থাকতে পারবে না। বলা হচ্ছে, যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী যখন এপথে যান তখন মহাসড়ক থেকে সকলকেই উঠে যেতে হয়।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানজটের বিষয়টি নতুন কিছু নয়। স্বাভাবিক সময়েও ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকা এবং সেকারণে যাত্রীভোগান্তিসহ নানা অসুবিধার কথা নানাভাবে আলোচিত হয়েছে। দেশের লাইফলাইন বলে পরিচিত বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামের সাথে যাতায়াতের সময় কমিয়ে আনার ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবেই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ককে চারলেনে উন্নীত করা হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে কাঁচপুর সেতু পর্যন্ত রয়েছে আটলেন। মূলত যে লক্ষ্যও উদ্দেশ্য নিয়ে আটলেন করা হয়েছে শুরুতেই তা হোঁচট খায়। উদ্বোধনের পরপরই চেহারা পাল্টে যায়। দখলদাররা দখল করে নেয় মহাসড়কের দু’দিকের দু’টি করে লেন। এনিয়ে লেখালেখির পর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের টনক নড়লেও উচ্ছেদের একদিন পর আবার সেগুলো স্বরূপে প্রত্যাবর্তন করে। ভেঙ্গে ফেলা গ্যারেজ, দোকান-পাট, বাজার-বসতি আবার নতুন করে তৈরি করা হয়। আটলেন সড়কের পূর্বদিকে শনির আখড়ায় সড়ক ও জনপদের জায়গা দখল করে বিশাল বাজার বসিয়েছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা। এইভাবে রায়েরবাগ ও মাতুয়াইল এলাকায় যেসব স্থাপনা ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে সেগুলোও আবার গড়ে ওঠেছে। স্থানীয় দখলদাররা জানিয়েছে, স্থানীয় এমপিকে জানিয়ে তারা আবার নতুন করে ঘর তুলেছেন। এবার আর উচ্ছেদ করা হবেনা বলে অবৈধ দখলদারদের আশ্বস্ত করেছেন এমপি’র লোকজন। অন্যদিকে আলোচ্য মহাসড়কের কাঁচপুর সেতু এলাকায় সেতুতে ওঠার আগে মহাসড়কের ২-৩লেন দখল করে বসানো হয়েছে বাসকাউন্টার। মোবাইল ফোনের দোকানসহ বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী। সব মিলে অবস্থাটা এই যে নিয়ম-কানুনের কথা যাই থাকুক মূলত একশ্রেণীর প্রভাবশালী এবং একশ্রেণীর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যের অবৈধ চাঁদাবাজির কারণে যে যানজট নিরসনের লক্ষ্য নিয়ে লেনের সংখ্যা বর্ধিত করা হয়েছিল তা সফল হচ্ছেনা। এসব ব্যাপারগুলো খোদ রাজধানীতেও রয়েছে। বাস কাউন্টারের নামে রাজধানীতেও মূলত একধরনের মাস্তানীর প্রবর্তন করা হয়েছে। অলোচ্য ক্ষেত্রেও দেখা যাচ্ছে, একশ্রেণীর পুলিশের সহায়তায় এধরনের কাউন্টার বা স্টপেজ চালিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে স্থানীয় এমপি বা তার লোকরাই অবৈধ দখলে সহায়তা করছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। বিবেচ্য বিষয় হচ্ছে, যারা আইনের পালনকারী তারা যদি অবৈধতাকে প্রশ্রয় দেন তাহলে পরিস্থিতির উন্নতি করবে কারা?
রাজপথ দখলমুক্ত রাখার অঙ্গীকার অনেক পুরনো। রাজপথ, সড়ক-মহাসড়ক অবৈধ দখলদারদের কবলে থাকার কারণেই অধিকাংশ ক্ষেত্রে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে। দেখা যায় ঘটনা- দুর্ঘটনার পর সংশ্লিষ্টরা উচ্ছেদে তৎপর থাকলেও দু’একদিন পর আবার যা তাই হয়ে যায়। এ অবস্থা মোটামুটি সারাদেশের। এ অবস্থার পরিবর্তন হওয়া জরুরি। যেহেতু সড়ক-মহাসড়কগুলো তৈরি করা হয়েছে যানবাহন চলাচলের জন্য সেকারণে যানবাহন চলাচলের জন্যই তাউন্মুক্ত রাখা জরুরি। কাজটি যে অসাধ্য নয় সেটি প্রমাণ করেছেন রাজধানীর উত্তরের মেয়র। তিনি নিজ দায়িত্বে সেসব জায়গা থেকে এ ধরনের অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ করেছেন তার অধিকাংশই টিকে রয়েছে। বিশেষ করে গাবতলী, তেজগাঁ থেকে যাদের উচ্ছেদ করেছেন তারা আর ফিরে আসতে পারেনি। এ থেকে প্রমাণিত হয় উচ্ছেদ এবং তা টিকিয়ে রাখতে যে ধরনের দৃঢ়তা প্রয়োজন তা না থাকলে উচ্ছেদ নাটকে পরিণত হতে বাধ্য। এতে অপচয় আরো বাড়ে। সংশ্লিষ্ট সকলে সড়ক-মহাসড়কগুলো অবৈধদখলমুক্ত করতে যত্মবান হবেন- এটাই জনগণ প্রত্যাশা করে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।