পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে গত রোববার তার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সচিবসভায় সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিব হাজির ছিলেন বলে জানা গেছে। এটাই স্বাভাবিক, সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সভায় সব সচিবই উপস্থিত থাকবেন। দীর্ঘ এক বছরের বেশি সময় পর সচিবসভা অনুষ্ঠিত হলো। সচিবসভাকে সঙ্গতকারণেই গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কখনো কখনো এ গুরুত্ব বেশি করে প্রতিভাত হয় সময় ও পরিস্থিতির কারণে। পর্যবেক্ষক মহলের মতে, এবারের সচিবসভাটি বিশেষ গুরুত্ববহ। করোনা অতিমারির পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট বৈশ্বিক মন্দায় দেশে যে নাজুক অবস্থা তৈরি হয়েছে, তার পটভূমিতেই অনুষ্ঠিত হলো এ সভা। দেশের সর্বশীর্ষ কর্মকর্তা হিসেবে এই পরিস্থিতি উত্তরণে কী করা যায়, সে ব্যাপারে তাদের কাছ থেকে সুচিন্তিত অভিমত আশা করা গিয়েছিল। বাস্তবে সে ধরনের কোনো কিছু পাওয়া যায়নি। পত্রপত্রিকায় সভার যে বিবরণ প্রকাশিত হয়েছে, তাতে দেখা গেছে, সভায় যারা বক্তব্য রেখেছেন, তারা সকলেই তাদের দাবি-দাওয়ার কথা বলেছেন, সুখ-সুবিধা বাড়ানোর কথা বলেছেন। দেশ ও জনগণের কল্যাণ ও মঙ্গলের পক্ষে তেমন কোনো পরামর্শ তাদের বক্তব্যে উঠে আসেনি। বলার অপেক্ষা রাখে না, সচিবরা রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ সুবিধাভোগী। তাদের বেতন-ভাতা, সুযোগ-সুবিধা অন্যদের চেয়ে অনেক বেশি। এই বেতন-ভাতা ও সুযোগ-সুবিধা দেয়া হয় গরিব জনগণের কষ্টার্জিত টাকায়। সচিবরা উচ্চ শিক্ষিত ও মেধাবী। মানবিক ও সহানুভূতির গুণাবলী তাদের মধ্যে বেশি থাকার কথা। সে দিনের সভায় এ সবের কোনো পরিচয় মেলেনি। দেশের অর্থনীতির বেহাল অবস্থা কারো অজানা নয়। অর্থনীতির সব সূচক নিম্নমুখী। প্রবাসী আয়, রফতানি আয় কমছে। রাজস্ব আয় আশাব্যঞ্জক নয়। রিজার্ভ কমে আশঙ্কাজনক পর্যায়ে উপনীত হয়েছে। ডলার সংকট ক্রমবর্ধমান। এলসি পর্যন্ত খোলা যাচ্ছে না। মূল্যস্ফীতি রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। খাদ্যপণ্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সকল পণ্যের দাম বাধাহীনভাবে বাড়ছে। নিম্নআয়ের মানুষ তো বটেই, মধ্যবিত্ত মানুষেরও জীবন নির্বাহ কঠিন হয়ে পড়েছে। এ সময়ে সাশ্রয়, সংযম পরার্থে ত্যাগ বা সেক্রিফাইস খুবই জরুরি।
সরকার বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাশ্রয় কর্মসূচী গ্রহণ করেছে। জ্বালানি, গ্যাস ও বিদ্যুৎ ব্যবহার কমিয়েছে। জনগণকে কমানোর জন্য অনুরোধ করেছে। সরকারের সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগ খরচ কমানোর পদক্ষেপ নিয়েছে। জনগণকেও অনুরূপ পরামর্শ দেয়া হয়েছে। জনগণের মধ্যেও বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংযম প্রদর্শনের মনোভাব দেখা যাচ্ছে। এ মুর্হূতে অন্যের হিতের জন্য ত্যাগ স্বীকারের প্রয়োজন অপরিসীম। এই কাজটি তুলনামূলকভাবে যারা ভালো অবস্থায় আছে, তাদের কর্তব্য। আগেই উল্লেখ করা হয়েছে, সচিবরা রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ সুবিধাভোগী। তাদের অধস্তন কর্মকর্তা কর্মচারীরাও খারাপ অবস্থায় নেই। তাদের অন্তত নিয়মিত বেতন-ভাতা ও সুযোগ-সুবিধার নিশ্চয়তা আছে। দেশের অধিকাংশ মানুষের তা নেই। দেশের ও আমজনতার এই দুঃসময়ে সচিবরা সচিবসভায় দাবি-দাওয়া ও সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর কথা না বলে জনকল্যাণে ও দেশহিতার্থে ত্যাগ স্বীকারের মনোভাব দেখাতে পারতেন। আগে সরকারি-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এমন মনোভাবের পরিচয় দিতে দেখা গেছে। এখন কেন ব্যতিক্রম দেখা যাচ্ছে, সেটা ব্যাপক আলোচনা-গবেষণার দাবি রাখে। পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, আত্মকেন্দ্রিকতা, অন্ধ স্বার্থপরতা, মূল্যবোধের অবক্ষয় ও প্রকৃত শিক্ষা-সংস্কৃতির অভাব এজন্য দায়ী। যোগ্য ব্যক্তিদের যথোপযুক্ত অবস্থানে নিয়োগ ও পদায়ন না করাও এজন্য কম দায়ী নয়। এর দায় সরকার এড়িয়ে যেতে পারে না। সচিবসভায় সচিবদের দাবি-দাওয়া ও সুযোগ-সুবিধাকেন্দ্রিক বক্তব্যে মানুষ ব্যথিত হয়েছে। তাদের কাছ থেকে তাদের পদের উপযুক্ত বক্তব্যই মানুষ প্রত্যাশা করে। মন্ত্রণালয় ও বিভাগের প্রধান নির্বাহী হিসেবে দিক নির্দেশক পরামর্শ আশা করে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সচিবসভায় সচিবদের দেয়া বক্তব্য শুনেছেন। খবর মোতাবেক, তাতে তিনি খুব একটা সাড়া দেননি। একটি মাত্র বিষয় অর্থাৎ সরকারি কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব না দেয়ার বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে বৈশ্বিক পরিস্থিতি ও দেশের অবস্থার উল্লেখ করে ১৩ দফার একটি নির্দেশিকা প্রদান করেছেন। বৈশ্বিক মন্দায় করণীয়, খাদ্য নিরাপত্তা, আমদানি ব্যয়ের সংকোচন, প্রকল্প বাস্তবায়নে ফিজিবিলিটি স্টাডি ঠিক মতো করা, কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি, তথ্য প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে আয় বৃদ্ধি, রেমিট্যান্স বাড়ানো, বাজার নিয়ন্ত্রণ, সুশাসন প্রতিষ্ঠা, জঙ্গীদের ব্যাপারে সতর্ক থাকা ইত্যাদির ওপর তিনি গুরুত্ব আরোপ করেছেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রধানমন্ত্রীর এই ১৩ দফা চলতি ও আগামী পরিস্থিতি উত্তরণে অত্যন্ত কার্যকর বলে ভূমিকা রাখতে পারে। কাজেই, তার সুচারু ও যথাযথ বাস্তবায়ন অত্যাবশ্যক। জ্বালানি ও খাদ্য নিরাপত্তা, কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধিসহ ১৩ দফার বর্ণিত বিষয়গুলো নিয়ে প্রধানমন্ত্রী সাম্প্রতিককালে বারবারই কথা বলছেন, সবাইকে সচেতন ও সতর্ক করছেন। এসব বিষয়ে সরকারের তরফে ব্যবস্থাও নেয়া হচ্ছে। প্রসঙ্গত এটা বলা প্রয়োজন, প্রধানমন্ত্রী বা সরকারের সকল নীতিনির্দেশ ও কার্যব্যবস্থা বাস্তবায়নের দায়িত্ব বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের, যাদের শীর্ষনির্বাহী সচিবগণ। আমরা আশা করবো, তারা নির্দেশিত বা অর্পিত দায়িত্ব পালনে সততা, স্বচ্ছতা, আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার পরিচয় দেবেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।