মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
ইউক্রেন কিয়েভ-নিয়ন্ত্রিত শহর খেরসন থেকে বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়া ঘোষণা দিয়েছে। দেশটির মন্ত্রণালয় তাদের ফেসবুকে লিখেছে, ‘খেরসন থেকে বিনামূল্যে উচ্ছেদ শুরু হয়েছে। আজ, প্রথম ১শ’ জন খেরসন বাসিন্দা নিয়ে একটি ট্রেন খমেলনিটস্কির উদ্দেশ্যে খেরসন ছেড়ে গেছে।’ মন্ত্রণালয়ের মতে, ওডেসা, নিকোলায়েভ এবং ক্রিভয় রগ-এ বাসে করেও লোকজনকে সরিয়ে নেওয়া যেতে পারে। ইতিমধ্যে ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চল থেকে ১ লাখ ১৫হাজারেরও বেশি লোককে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
এদিকে, ইউক্রেনে বিশেষ সামরিক অভিযানে দেশটির ছয়টি সেনা কমান্ড পোস্ট ধ্বংস করে দিয়েছে রাশিয়া। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট-জেনারেল ইগর কোনাকেঙ্কভ শুক্রবার বলেছেন, ‘কৌশলগত অভিযান এবং সামরিক বিমান, ক্ষেপণাস্ত্র দল এবং কামান খারকভ অঞ্চলের পেত্রোপাভলোভকা, লুগানস্ক গণপ্রজাতন্ত্রের স্তেলমাখোভকা, ইয়ামপোলোভকা, তোরস্কয়, ইভানো-এর এলাকায় ছয়টি শত্রু সামরিক কমান্ড পোস্ট নিশ্চিহ্ন করেছে। দোনেত্স্ক পিপলস রিপাবলিকের দারিয়েভকা ও পোবেদা এবং ১শ’ ৬৪টি এলাকাতেও ৬৭টি আর্টিলারি ইউনিট, জনশক্তি এবং সামরিক সরঞ্জাম ফায়ারিং পজিশনে অবস্থান করছে।›
কোনাশেঙ্কভ জানিয়েছেন যে, রাশিয়ান বাহিনী নির্ভুল অস্ত্র দ্বারা হামলা চালিয়ে গত দিনগুলিতে খারকভ অঞ্চল এবং দোনেস্ক পিপলস রিপাবলিকের ৩শ’রও বেশি বিদেশী ভাড়াটে সৈন্যদের নির্মূল করেছে। গত ২৪ ঘন্টায় ক্রাসনি লিমান এলাকায় ইউক্রেনীয় সামরিক বাহিনীর ৭০ জন সৈন্য নিহত ও আহত হয়েছে, একটি ট্যাঙ্ক, চারটি সাঁজোয়া যান এবং দুটি পিকআপ ট্রাক হারিয়েছে। ইউক্রেনে বিশেষ সামরিক অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকে রাশিয়ান সশস্ত্র বাহিনী সব মিলিয়ে ৩শ’ ৩৩টি ইউক্রেনীয় যুদ্ধবিমান, ১শ’ ৭৭টি হেলিকপ্টার, ২ হাজার ৫শ’ ৬২টি মনুষ্যবিহীন আকাশযান, ৩ শ’ ৯০টি সারফেস টু এয়ার মিসাইল সিস্টেম, ৬ হাজার ৮শ’ ১৩টি ট্যাংক এবং অন্যান্য সাঁজোয়া যান, ৯শ’ ২টি একাধিক রকেট লঞ্চার ৩ হাজার ৬শ’ ২০টি ফিল্ড এবং ৩ হাজার ৬শ’ ২০টি রকেট লঞ্চার এবং ৭ হাজার ৩শ’ ৫২টি বিশেষ সামরিক যান ধ্বংস করেছে। সূত্র: তাস।
নিষিদ্ধ আইনের মার্কিন সমালোচনার নিন্দা : ওয়াশিংটনে রাশিয়ান দূতাবাস এক বিবৃতিতে বলেছে যে, এলজিবিটি (লেসবিয়ান, গে, বাইসেক্সুয়াল, ট্রান্স জেন্ডার) মত নিষিদ্ধ করার রাশিয়ার নীতির বিষয়ে মার্কিন কর্মকর্তাদের সমালোচনাকে মস্কো তার দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ বলে মনে করে। দূতাবাসটি বলেছে, ‘আমরা রাশিয়ান ফেডারেশনের স্টেট দুমা কর্তৃক গৃহীত বিলের সমালোচনা করে অপ্রচলিত যৌন সম্পর্ক, শিশুদের যৌন নির্যাতন বা লিঙ্গ পরিবর্তনের আকাক্সক্ষা সৃষ্টিকারী তথ্যের প্রচারকে নিষিদ্ধ করার জন্য অসংখ্য মার্কিন কর্মকর্তার বক্তব্যের প্রতি মনোযোগ দিয়েছি। এ ধরনের বক্তব্যগুলিকে আমরা আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে চরম হস্তক্ষেপ বলে মনে করি।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘রাশিয়া ধারাবাহিকভাবে ঐতিহ্যগত পারিবারিক মূল্যবোধ রক্ষার পক্ষে। আমরা খোলাখুলিভাবে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলি অন্যান্য দেশের উপর মানবাধিকার সম্পর্কে ভন্ড-উদারবাদী এবং বিকৃত ধারণা চাপিয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টাকে প্রত্যাখ্যান করার বিষয়ে কথা বলি। আমরা দাবি করি যে, ওয়াশিংটন আমাদের জনগণের পছন্দের নৈতিক নির্দেশিকা মেনে চলার জন্য সম্মান জানাক, যা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে চলে আসছে এবং রাশিয়ান নাগরিক পরিচয়ের ভিত্তি।› বৃহস্পতিবার, স্টেট দুমা সদস্যরা সর্বসম্মতভাবে এই বিষয়ক একটি বিলের তৃতীয় শুনানিতে অপ্রচলিত যৌন সম্পর্ক, শিশু যৌন নির্যাতন এবং লিঙ্গ পরিবর্তন সার্জারি প্ররোচিত করতে সক্ষম তথ্য প্রচারের দায়ে যথেষ্ট জরিমানা করার পক্ষে ভোট দিয়েছেন।
যুদ্ধরত রুশ সেনাদের মায়েদের সঙ্গে পুতিনের সাক্ষাৎ : ইউক্রেনে যুদ্ধরত রুশ সেনাদের মায়েদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন। ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, পূর্বে ধারণ করা রুশ সেনাদের মায়েদের সঙ্গে প্রেসিডেন্ট পুতিনের এ বৈঠকটি রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে প্রচার করা হয়। পুতিন মায়েদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আপনাদের কষ্টের ভাগীদার আমরা। কোনো কিছুই সন্তান হারানোর ক্ষতিকে পুষিয়ে দিতে পারে না। বিবিসি জানায়, স্থানীয় সময় শুক্রবার মস্কোতে প্রেসিডেন্টের রাষ্ট্রীয় বাসভবনে পুতিনকে ১৭ জন মায়ের সঙ্গে একটি বড় টেবিলে বসে থাকতে দেখা গেছে। তাঁদের মধ্যে কারও কারও মাথায় শোকের প্রতীক হিসেবে গাঢ় রঙের স্কার্ফ দেখা দেখা গেছে।
মায়েদের উদ্দেশ্যে পুতিন বলেছেন, ‘ব্যক্তিগতভাবে আমি এবং দেশের সমস্ত নেতারা আপনাদের কষ্টের ভাগীদার।’ নিহত এক সেনার মাকে তিনি বলেছেন, ‘সে তার লক্ষ্য অর্জন করেছে। সে অনর্থক মারা যায়নি।’ তিনি আরও জানিয়েছে যে, তিনি মাঝে মাঝেই রুশ সেনাদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলেন। তাঁদেরকে ‘বীর’ আখ্যা দিয়েছেন পুতিন। উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর সবচেয়ে সিনিয়র জেনারেল মার্ক মিলি বলেছেন, গত ২৪ ফেব্রুয়ারিতে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত কমপক্ষে ১ লাখ রুশ সেনা এবং ১ লাখ ইউক্রেনের সেনা হতাহত হয়েছে। এদিকে, গত সেপ্টেম্বরে ক্রেমলিন বলেছিল, রুশ সেনাদের একত্রিত করার অভিযান কিছুটাপূর্ণ ছিল।
প্রকাশ্যে কিয়েভের মেয়রের সমালোচনায় জেলেনস্কি : ইউক্রেনের বেসামরিক অবকাঠামোগুলিতে বুধবার রাশিয়ার ক্ষেপনাস্ত্র হামলার দুই দিনের মধ্যে বিদ্যুৎ, তাপ ও পানিহীন হয়ে পড়েছে ইউক্রেনের বেশিরভাগ অঞ্চল এবং কিয়েভের ৬০ শতাংশ। জেলেনস্কি বলেছেন, প্রাথমিক পরিষেবাগুলি ধীরে ধীরে পুনরুদ্ধার করা হচ্ছে, তবে ১৫টি অঞ্চলে পানি সরবরাহে সমস্যা রয়েছে। এই হামলার কথা অস্বীকার করেনি মস্কো। ক্রেমলিন মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ এজন্য কিয়েভকে দোষারোপ করেছেন কারণ জেলেনস্কির সরকার শান্তি-সমঝোতার শর্তাদি গ্রহণ না করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, যা রাশিয়াকে ইউক্রেনের ভূখণ্ডগুলির নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দিতে অনুতসাহিত করেছে।
এদিকে, ইউক্রেনীয় নেতাদের সাথে শুক্রবার একটি বৈঠকে প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি কিয়েভের মেয়র ভিটালি ক্লিটসকোর কঠোর সমালোচনা করেছেন, যা একটি বিরল ঘটনা। তিনি বলেন যে, ক্লিটসকো এবং তার কর্মকর্তারা সাহায্য করার জন্য যথেষ্ট কাজ করেননি। কিয়েভের মেয়র রাশিয়ান হামলার পর বিদ্যুৎ ও তাপহীনদের সাহায্য করার জন্য জরুরী আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপনের কাজটি দুর্বলভাবে সেরেছেন।
ইউক্রেনে বিদ্যুৎ-উৎপাদন ব্যবস্থায় রাশিয়ার হামলার প্রেক্ষিতে ইউক্রেন হাজার হাজার তথাকথিত ‘অপরাজেয় কেন্দ্র’ প্রতিষ্ঠা করেছে যেখানে লোকেরা তাপ, পানি, ইন্টারনেট এবং মোবাইল ফোন সেবা উপলব্ধ করতে পারে। জেলেনস্কি বলেন, ‘দুর্ভাগ্যবশত, স্থানীয় কর্তৃপক্ষ সব শহরেই সফলভাবে কাজ সম্পন্ন করেনি। বিশেষ করে, কিয়েভে অনেক অভিযোগ রয়েছে, এটাকে অন্য কথায় বলতে গেলে, আরও কাজ করা দরকার। জেলেনস্কির মন্তব্যটি এমন সময় এসেছে, যখন তিনি যুদ্ধের সময় জাতীয় ঐক্যের একটি চিত্র প্রদর্শন করতে চাচ্ছিলেন। ৫১ বছর বয়সী প্রাক্তন পেশাদার বক্সার ক্লিটসকো ২০১৪ সালে কিয়েভের মেয়র নির্বাচিত হন। সূত্র : তাস রয়টার্স, দ্য গার্ডিয়ান।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।