পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সেগুনবাগিচায় বৃহৎ করদাতা ইউনিটের (এলটিইউ) অফিস সংলগ্ন ফুটপাতে পান-সিগারেটের বিক্রেতা সালাহ উদ্দিন। দিনভর যা আয় হয় তা দিয়ে চলে সংসারের বাজার। আর স্ত্রী অন্যের বাসায় কাজ করে যা পান তা ঘর ভাড়ায় শেষ হয়ে যায়। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে মধ্যবিত্ত পরিবারের লোকজনও যখন অনেকটা দিশেহারা, তখন নিম্নআয়ের সেলিম উদ্দিনের অবস্থা আরও নাজুক।
বর্তমান বাজারদরের প্রেক্ষাপট নিয়ে কথা বলতে গিয়ে সালাহ উদ্দিনের চেহারায় দেখা গেলো হতাশা ও আতঙ্ক। তিনি বলেন, ঘরে বাজার না নিলে রান্না হবে না, উল্টো বউয়ের কথা শুনতে হবে। বউ-বাচ্চার কাছে সম্মানও থাকবে না। বেচাবিক্রিও তেমন নাই। আগে পাঁচ প্যাকেট সিগারেট চললেও এখন তিন প্যাকেট শেষ হয় না। বুঝতেছি না সামনে কিভাবে চলব।
এটাতো গেল ফুটপাতের দোকানি সালাহ উদ্দিনের কথা। একই চিত্র ফুটে উঠেছে বাদবাকিদের কণ্ঠেও। এদিকে ব্যাংকে ডলার সঙ্কট, রিজার্ভ কমে যাওয়া, রফতানিও কমে গেছে। ডলার সঙ্কটের কারণে ব্যাংকে এলসি খুলতেও সমস্যার মধ্যে পড়ছেন ব্যবসায়ীরা। অর্থনীতির নাজুক পরিস্থিতির মধ্যে নিত্যপণ্যের বাজারে দেখা দিয়েছে অস্থিরতা। ক্রমেই নানা অজুহাতে বাড়ছে জিনিসপত্রের দাম।
যদিও সরকারের একাধিক সংস্থা বাজার নিয়ন্ত্রণ, মজুতদারদের বিরুদ্ধে মাঝেমধ্যে অভিযান চালিয়ে জরিমানা করলেও এর খুব একটা প্রভাব পড়ছে না বাজারে। বরং কঠোর অভিযান শুরু হলেও সরকারের বেধে দেওয়া দামে পণ্য কেনা তো যায় না, বরং পণ্য সরিয়ে ফেলেন ব্যবসায়ীরা। তাই বাড়তি দাম মেটাতে গিয়ে ব্যয় সংকোচন নীতির দিকে হাঁটছেন বেশিরভাগ মানুষ।
তবে বাজার বিশ্লেষকরা এই ধরণের অভিযান জোরদার করার তাগিদ দিচ্ছেন। অন্যথায় সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ আরও বাড়বে। যদিও অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ভোক্তা অধিকার আইনের জরিমানা বাড়াতে আইন সংশোধন হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অধিদফতরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান। তিনি বলেন, বিদ্যমান আইনে জরিমানা অপরাধ অনুযায়ী যথেষ্ট নয়। তাই আইনের সংশোধন প্রয়োজন। ওই আইনে যে জরিমানা ও শাস্তি রয়েছে তা দ্বিগুণ করা হচ্ছে।
মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় বাজারে গিয়ে বাজেট মিলাতে পারছেন না ক্রেতারা। ফলে ব্যয়ের ক্ষেত্রে কাটছাঁট করতে একরকম বাধ্য হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। বাজারের অস্থিরতার কারণে সরকারের ন্যায্যমূল্যে ‘ওএমএস’ কার্যক্রমের আওতায় চাল-আটা বিক্রির দোকানেও মানুষের লম্বা লাইন। কারণ বাজারের চেয়ে অনেক কমে এখানে চাল-আটা মিলছে। আগে লোকজনের খুব চাপ না থাকলেও কিছুদিন ধরে নির্ধারিত সময়ের কয়েক ঘণ্টা থেকে নানা শ্রেণি-পেশার দোকানের সামনে দাঁড়াচ্ছেন।
এদিকে বাজারে কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি, মূল্য কারসাজি ঠেকাতে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরসহ সরকারের নয়টি সংস্থা মাঠে নেমেছে। যার নেতৃত্ব আছেন বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের পরিচালক (খাদ্যের বিশুদ্ধতা পরিবীক্ষণ ও বিচারিক কার্যক্রম) ড. সহদেব চন্দ্র সাহা। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের মনিটরিং অফিসার মো. ইমরান হোসেন মোল্লা বলেন, আপাতত প্রতি মাসে একবার এই নয়টি সরকারি সংস্থার সমন্বিত অভিযান পরিচালনা করা হবে। প্রয়োজন হলে একাধিকবার অভিযান চালানো হবে। এর বাইরেও প্রতিটি সংস্থা নিজ নিজ কার্যক্রম পরিচালনা করবে।
গতকাল শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, চাল, ডাল, ডিম, চিনি ও তেলসহ প্রায় প্রতিটি নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের দাম এখন আকাশচুম্বী। শীতের সবজিতেও ফেরেনি স্বস্তি। শুধুমাত্র মুলা ও পেঁপের দাম কিছুটা কম। ভরা মৌসুম চললেও এই দুই পদের সবজি ছাড়া অন্য প্রায় সব সবজির দাম চড়া। সাধ্যের বাইরে গরু-মুরগি ও খাশির গোশতও।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বাজারে শীতকালীন সবজির প্রচুর আমদানি রয়েছে। কিন্তু সে অনুযায়ী দাম কমেনি। এ নিয়ে ক্রেতাদের অনেকে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। যদিও দোকান ভাড়া, আমদানি ও পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধিকে দাম বাড়ার কারণ বলছেন খুচরা ও পাইকারি বিক্রেতারা।
শীতকালীন অধিকাংশ সবজি ৫০-৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এরমধ্যে শিম, পটলের তুলনায় অন্য সবজির দাম বেশি। একটি বড় সাইজের ফুলকপি ৪০-৫০ টাকা, বাঁধাকপি ও চালকুমড়াও বিক্রি হচ্ছে একই দামে। অন্যদিকে বরবটি, করলা, বেগুন, কচুর্মুখী, কাকরোল, ঝিঙে, চিচিঙ্গার কেজি বাজারভেদে ৬০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাকা বা আমদানি টমেটোর কেজি ১১০ থেকে ১২০, গাজর ১২০ থেকে ১৩০ টাকা কেজি।
চাল ব্যবসায়ীরা বলছেন, এক সপ্তাহের ব্যবধানে নতুন করে মোটা চালের দাম না বাড়লেও বেড়েছে চিকন চালের দাম। সরকারের বিপণন সংস্থা টিসিবি চিকন চালের কেজি ৩ টাকা বাড়িয়ে ৬৫ থেকে ৭২ টাকা, মাঝারি বা পাইজাম চাল ২ টাকা বেড়ে ৫৪ থেকে ৬০ টাকা এবং মোটা চালের কেজিতে ২ টাকা বাড়িয়ে ৪৮ থেকে ৫৩ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যদিও বাজারের খুচরা ব্যবাসয়ীরা বলছে, টিসিবির তথ্যের থেকে কেজিতে ৫ থেকে ৭ টাকা বেশি দামে চাল বিক্রি হচ্ছে।
অন্যদিকে প্যাকেটজাত আটা কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে ৬৫ থেকে ৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্যাকেট ময়দায় ৫ টাকা বেড়ে ৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে গত ১৭ নভেম্বর থেকে সয়াবিন তেল ও চিনির দাম আরও বেড়েছে। এখন সয়াবিন তেল প্রতি লিটার বিক্রি হচ্ছে ১৯০ টাকায়। আগের চেয়ে কেজিতে বেড়েছে প্রায় ১২ টাকা। আর প্যাকেটজাত চিনি কেজিতে ১২ টাকা বাড়িয়ে বিক্রি করা হয়েছে ১০৭ টাকায়। যদিও বাজারে নির্ধারিত দামের তেল পাওয়া গেলেও চিনি কিনতে ক্রেতাদের গুণতে হচ্ছে বাড়তি টাকা। সরবরাহ সঙ্কটের কারণে বাজারভেদে চিনি বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে।
অন্যদিকে প্রতি কেজি আমদানি করা রসুন বিক্রি হচ্ছে ১৩০-১৪০ টাকায়। যা গত সপ্তাহে ছিল ১০০-১১০ টাকা। প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৫-১০ টাকা কমে ৪০-৫০ টাকা এবং আমদানি করা পেঁয়াজ ৫ টাকা কমে ৪০-৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বোতলাজাত তেল প্রতি লিটার বিক্রি হচ্ছে ১৯০ টাকায়।
এছাড়া বাজারে প্রতিকেজি গরুর গোশত ৭০০ টাকা ও খাশির গোশত ৯০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে কেজিতে ২০-৩০ টাকা কমে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়, সোনালি মুরগী ২৫০ টাকা ও দেশি মুরগী ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া মুরগির ডিম প্রতি ডজন ১২০ টাকা আর হাঁসের ডিম প্রতি ডজন ২১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।