পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
ভুয়া নাম ঠিকানা ব্যবহার করে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে লোপাট করে দেয়া নতুন কিছু নয়। ঋণের নামে এ ধরনের অর্থ লোপাটের ঘটনা অহরহ ঘটছে। বিগত একদশকের বেশি সময় ধরে ব্যাংক খাতে বড় বড় আর্থিক কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটেছে। সোনালি ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাং, ফারমার্স ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংকে অর্থ লুটপাটের ঘটনা রয়েছে। ব্যাংকের টাকা এভাবে লুটপাটের ঘটনা দেশ ও বিদেশে ব্যাপক প্রশ্নের অবতারনা করে। এসব দুর্নীতির সাথে সাথে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি জড়িয়ে আছে। এর মধ্যে হলমার্ক, বিসমিল্লাহ গ্রুপ, পি কে হালদারসহ বড় বড় প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির নাম আলোচিত। এর মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকে অর্থ চুরির ঘটনাও ঘটেছে। এসব দুর্নীতির সুরাহা এবং অর্থ উদ্ধার এখন পর্যন্ত হয়নি। ব্যাংক থেকে ভুয়া নাম ও ঠিকানার মাধ্যমে ঋণ নিয়ে অর্থ লোপাটের নতুন ঘটনা ঘটেছে। এবার এর সাথে যুক্ত হয়েছে, ইসলামী ব্যাংক, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক। এই তিন ব্যাংকে এ মাসে সন্দেহজনক ঋণ বাবদ ৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা লেনদেন করা হয়েছে। যেসব প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ দেয়া হয়েছে, সেগুলোর যথাযথ ঠিকানা খুঁজে পাওয়া যায়নি বলে বিভিন্ন পত্রপত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। এতে সন্দেহ করা হচ্ছে, এই বিপুল অংকের অর্থ বিদেশে পাচার হয়ে যেতে পারে কিংবা লোপাট করে দেয়া হতে পারে। এ নিয়ে দেশের ব্যাংকিং খাতে তোলপাড় চলছে।
এখন তীব্র অর্থসংকট চলছে। আমদানি ব্যয় ও বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করতে গিয়ে রিজার্ভ আশঙ্কাজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। ডলার সংকটের কারণে আমদানিকারকরা এলসি বা ঋণপত্র খুলতে পারছে না। সার্বিক অর্থনীতিতে স্থবিরতা বিরাজ করছে। এমতাবস্থায়, তিনটি ব্যাংক থেকে কাগুজে প্রতিষ্ঠানের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ দেয়ার বিষয়টি অর্থনীতিবিদদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। তারা বলেছেন, এ সময়ে এ ধরনের ঋণ দেয়া দেশের অর্থনীতির জন্য খুবই বিপজ্জনক। এ অর্থ দেশে থাকবে না বলে তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন, বিগত একদশক ধরে দেশ থেকে অর্থপাচারের হিড়িক পড়েছে। ইতোমধ্যে লাখ লাখ কোটি টাকা পাচার হয়ে গেছে। পাচারকৃত অর্থ দেশে ফেরত আনা দূরে থাক, কোনোভাবেই পাচার ঠেকানো যাচ্ছে না। তিন ব্যাংকে ঋণদানে যেসব ঘটনা ঘটেছে, তা পুরো ব্যাংক খাতকে গ্রাহকদের কাছে আস্থাহীন করে তুলেছে। ব্যাংকে গচ্ছিত অর্থ ফেরত পাওয়া যাবে না এমন আশংকাও দেখা দিয়েছে। ফলে প্রধানমন্ত্রীকে পর্যন্ত বলতে হয়েছে, ব্যাংককে যথেষ্ট অর্থ রয়েছে। ভয়ের কিছু নেই। সাধারণত কোনো প্রতিষ্ঠান ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে যথাযথ প্রজেক্ট প্রোফাইল জমা দিয়ে আবেদন করে। ব্যাংক তা পুঙ্খানুপুঙ্খ যাচাই করে ঋণ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, প্রকৃত প্রতিষ্ঠান ঋণ নেয়ার জন্য প্রজেক্ট জমা দিলে তা অনুমোদন হতে বিলম্ব হয়। বিলম্বের কারণে অনেক সময় সংশ্লিষ্ট প্রকল্প থমকে যায়। পক্ষান্তরে কোনো প্রতিষ্ঠান প্রকল্প দেখিয়ে ঋণের আবেদন করলে তা দ্রুত অনুমোদিত হয়। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের মালিকপক্ষ ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের সাথে সুসম্পর্ক এবং স্বার্থ জড়িত থাকে। এ পর্যন্ত যেসব বড় বড় ব্যাংক কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটেছে, সেগুলোর ক্ষেত্রে এ ধরনের যোগসাজশের নজির রয়েছে। ধারাবাহিক এসব ঘটনায় জড়িতরা নামে-বেনামে কোম্পানি খুলে ব্যাংকের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সাথে সুসম্পর্ক সৃষ্টির মাধ্যমে অর্থ লোপাট করেছে। দুর্নীতি ধরা পড়ার পর কেউ কেউ গ্রেফতার হলেও অর্থ উদ্ধার করা যায়নি। আবার কারো বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। দুর্নীতির পেছনে অনেক সময় রাজনৈতিক সম্পর্ক থাকায় অনেকে পার পেয়ে যায়। ইসলামী ব্যাংক দেশের অন্যতম নামকরা ব্যাংক হিসেবে পরিচিত। এই ব্যাংকে যখন সন্দেহজনক ঋণ প্রদান করা হয়, তখন গ্রাহকদের মধ্যে শঙ্কা জাগা স্বাভাবিক। অন্য দুটি ব্যাংকও সুনামের সাথে কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। সেখানেও একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে। ফলে এর নেতিবাচক প্রভাব গ্রাহকদের মধ্যে পড়া অস্বাভাবিক নয়। যদিও ইসলামী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বলেছে, তারা যথাযথভাবেই ঋণ দিয়েছে।
অর্থনীতি সচল রাখার ক্ষেত্রে ব্যাংক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আমানত গ্রহণ ও ঋণ বিতরণের মাধ্যমে বিনিয়োগ করে অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে সহায়তা করে। এতে ব্যক্তি পর্যায় থেকে শুরু করে ক্ষুদ্র ও বৃহৎ ব্যবসায়ীরা জড়িয়ে থাকে। এ খাতে অনিয়ম, দুর্নীতি ও অর্থলোপাটের ঘটনা ঘটলে সর্বত্র এর নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া এবং আস্থার সংকট সৃষ্টি করে। দেশের অর্থসংকটের এই সময়ে হাজার হাজার কোটি টাকার সন্দেহজনক লেনদেন মানুষের মধ্যে নিশ্চিতভাবেই বিরূপ প্রভাব ফেলবে এবং ফেলছে। এ পরিস্থিতিতে সরকারকে ব্যাংক খাতের শৃঙ্খলার দিকে কঠোর দৃষ্টি দিতে হবে। তিন ব্যাংক থেকে যে ঋণ দেয়া হয়েছে, তা যথাযথভাবে হয়েছে কিনা তা ব্যাপকভাবে খতিয়ে দেখতে হবে। তদন্ত করে এর প্রকৃত তথ্য জনগণের সামনে তুলে ধরতে হবে। সন্দেহ, সংশয় দূর করতে হবে। সার্বিকভাবে ব্যাংক খাতের লেনদেনের বিষয়টি কঠোর মনিটরিংয়ের আওতায় আনতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।