২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত মোটা হবেন ৪০০ কোটি মানুষ
২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত ওজন বা মোটা হবেন বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ। সংখ্যার বিচারে যা
আমাদের দেশে যারা গরীব পেট পুরে খেতে পায় না কেবল তারাই নয় পুষ্টি জ্ঞানের অভাবে ধনীরাও অপুষ্টির শিকার। প্রয়োজনীয় পুষ্টির জন্য সব সময় নামিদামী মাছ, মাংস, ডিম প্রচুর পরিমাণে খেতে হবে এমন কোন বাধ্যবাধকতা নেই বরং সস্তা দামের শীতের শাক-সবজি নিয়মিত খেলে রক্তস্বল্পতা, রাতকানা, অন্ধত্ব, মুখ বা ঠোঁটের কোণে ঘা এসব রোগ বালাই থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
পুষ্টি সম্পর্কে দেশবাসীকে সচেতন করে তোলা আপনার আমার সকলের দায়িত্ব। গাঁওগ্রামে এমনকি শহরেও মেহমানদের খাবার পরিবেশনায় শাক থাকে না। কারণ বিবিধ। তবে অন্যতম কারণ হলো শাক গরিবের খাদ্য। তাই মনে করা হয়। কিন্তু ধারণাটা যে ভুল তা অনেকে জানে না। অনেকে অস্বীকার করেন। শাক অতি সহজলভ্য। দামে সস্তা। আর আমাদের বিত্তবানদের কাছে সস্তা জিনিসের কদর নেই। অথচ শাক অত্যন্ত পুষ্টিসমৃদ্ধ ও উপকারী। আমরা এই পুষ্টিকর শাক ছেড়ে পোলাও, বিরিয়ানি ও তেহারি খেয়ে উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, কিডনি, সমস্যা ও পেটের পীড়ায় ভুগি। তারা যখন এসব রোগের শিকার হয়ে ডাক্তারের কাছে যান, ডাক্তার ওইসব খাবার বর্জন করে শাকসবজি খেতে বলেন। তত দিনে ক্ষতি যা হাওয়ার হয়ে গেছে। অথচ বিভিন্ন শাক মুখরোচক আবার উপকারী।
লাউশাক ছোট মাছ দিয়ে রান্না করলে দারুণ মজা হয়। থানকুনি ভর্তা করলে ভাতের সাথে খুবই মুখরোচক হয়। বিভিন্ন প্রকার শাক শরীরের রক্ত, রস, মাংস মেদ মজ্জা, অস্থি ও বীর্য পোষক। আয়ুর্বেদ ও হেকিমদের মতে, এক এক শাকে এক একগুণ। এই গুণাগুণ জানা থাকলে আমরা শাক খেয়ে অনেক রোগ থেকে রক্ষা পেতে পারি। এসব শাক দামেও তুলনামূলক সস্তা। হাত বাড়ালেই পাওয়া যায়। শীতের মওসুমে আমরা হরেক রকম শাকের সমারোহ দেখি। আসুন এসব শাকের উপকারিতা জেনে নেই।
১. লালশাক - লালশাক অতি সহজলভ্য। প্রায় সারা বছরই পাওয়া যায়। নিজেরা ছাদে টবে বা সামান্য ৬ ইঞ্চি উঁচু মাটিতে লালশাকের বীজ ছাড়িয়ে পনের-বিশ দিনের মধ্যে লালশাক পেতে পারি। লালশাক আমাদের শরীরের রক্তে হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধি করে। বিশেষ করে যারা এনিমিয়া বা রক্তস্বল্পতায় ভুগছে যারা তারা নিয়মিত লালশাক খেলে রক্তস্বল্পতা ও রক্তে হিমোগ্লোবিন পূরণ করে।
২. পালংশাক -পালংশাককে শাকের রাজা বলা হয়। এর পুষ্টিগুণের জন্যই রাজা বলা হয়। যাদের পিত্তথলি বা গল ব্লাডারের ও কিডনি সমস্যা আছে তাদের নিয়মিত পালংশাক খাওয়া উচিত। এই শাকে জন্ডিস সারে। রক্ত পরিষ্কার করে। ডায়াবেটিস কমায়। পেটের অন্ত্র সচল রাখে। কিডনির পাথর গলাতে সাহায্য করে। পালংশাকে ভিটামিন এ,বি,সি, ও ই রয়েছে। আরো রয়েছে অ্যামাইনো এসিড। পালংশাক পুঁটি মাছ দিয়ে রান্না করলে মুখরোচক হয়।
৩. মুলাশাক- অনেকে বলেন, মুলার চেয়ে মুলাশাক বেশি উপকারী। বাজারে মুলাশাক এসে গেছে। দাম একটু বেশি। যারা অর্শ্বরোগে ভুগছেন তারা দৈনিক একবার মুলাশাক খেলে উপকার পাবেন। যাদের হাত-পা জ্বালাপোড়া করে তারাও মুলাশাক খেলে উপকার পাবেন। মুলাশাক কফ ও বাত নাশক। যারা কোষ্ঠকাঠিন্যে ভুগছেন তারা মুলাশাক খাবেন। উপকার হবে।
৪. লাউশাক- পুষ্টিবিদরা বলেন, লাউ অপেক্ষা লাউশাক বেশি পুষ্টিসমৃদ্ধ। আসলে লাউপাতা, ডগা ও লাউ সবই উপকারী। লাউশাক মায়ের বুকের দুধ বাড়ায়। অপুষ্টি দূর করে। মায়ের শরীরে শক্তি জোগায়। দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করে। শরীরের ক্ষয় পূরণ করে।
৫. কচুশাক- কচুশাককে সবাই হেলাফেলা করে। অথচ কচুশাক অত্যন্ত ভিটামিন যুক্ত। চক্ষু বিশেষজ্ঞরা চোখের জন্য কচুশাক খেতে বলেন। যাদের শরীরে আয়রনের ঘাটতি আছে, তাদের কচুশাক খাওয়া উচিত। শহর-নগরে, গাঁওগ্রামে সর্বত্র কচুশাক পাওয়া যায়। গ্রামগঞ্জে কচুশাক কিনতে হয় না। যাদের প্রস্রাবে জ্বালা-যন্ত্রণা হয় তারা কচুশাক খেতে পারেন। উপকার হবে। কচুশাক মায়ের বুকের দুধ বৃদ্ধি করে। এতে বেশি লৌহ আছে বিধায় মেয়েদের কচুশাক খাওয়া উচিত।
৬. কলমি শাক-গাঁওগ্রামে খালবিলে পুকুরে সর্বত্র কলমি শাক হয়। কলমি শাকের ফুল মনোহরা। কলমি দুই প্রকার ডাঙা কলমি ও জলো কলমি। ডাঙা কলমিকে কোনো কোনো অঞ্চলে ঢোল কলমিও বলে। এই ডাঙা কলমি কেউ খায় না। জলো কলমি পুকুরে ও খালবিলে পানির ওপর লতিয়ে চলে। অনেকে স্বেচ্ছায় নিজ পুকুরে জলো কলমি লাগায়। এতে পুকুরের পানি নির্মল থাকে। মাছ এর শিকড় খায়।কলমি শাকের ক্রিয়া কিডনি ও মূত্র যন্ত্রের ওপর বেশি। যাদের ফোঁটায় ফোঁটায় সর্বক্ষণ প্রস্রাব পড়ছে, তারা কলমি শাক ভাজা বা রান্না করে খেলে উপকার পাবেন। ডায়াবেটিস রোগেও কলমি শাক উপকারী। মেয়েদের হিস্টিরিয়া রোগেও কলমি শাক উপকারী। পেট ও পিত্ত ঠাণ্ডা রাখে। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। মায়ের বুকে দুধ বাড়ায়।
৭. পুঁইশাক-কথায় বলে, শাকের মধ্যে পুঁই, আর মাছের মধ্যে রুই। তবে পুঁইশাক সবাই হজম করতে পারে না, পেট গরম হয়। পুঁইশাকের পাতার চেয়ে ডগায় বেশি ভিটামিন। খেতেও ভালো। পুঁইশাক বল, বীর্যবর্ধক এবং পুষ্টিসমৃদ্ধ। পিত্তনাশক। পুঁইশাক দৈনিক এক বেলার বেশি না খাওয়া ভালো।
৮. হেলেঞ্চা শাক- হেলেঞ্চা শাক ও কলমি শাক একই জাতের তবে হেলেঞ্চা শাক কলমি শাকের চেয়ে বেশি ভালো। হেলেঞ্চা শাকও খালবিল ও পুকুরে হয়। হেলেঞ্চা শাকও পিত্তনাশক এবং পেট ঠাণ্ডা রাখে। হেলেঞ্চা রক্ত পরিষ্কার করে। হজমে সহায়ক। ডায়াবেটিস রোগেও উপকারী। কবিরাজ ও বৈদ্যরা হেলেঞ্চার রস খেতে বলেন, যারা প্রমেহ বা ডায়াবেটিস ও কিডনি রোগে ভুগছে।
৯. থানকুনিপাতা - গ্রামদেশে মাঠে ঘাটে সর্বত্র পাওয়া যায় এবং থানকুনিপাতা খুবই উপকারী। আয়ুর্বেদ মতে, থানকুনিপাতা সপ্ত ধাতুর উপকার করে। সপ্ত ধাতু বলতে-রস, মেদ, মজ্জা, রক্ত, মাংস, অস্থি ও বীর্যকে বোঝায়। বিশেষভাবে পেটের সর্বপ্রকার সমস্যা থানকুনিপাতা অমোঘ ওষুধ। কবিরাজ বলেন, থানকুনিপাতা দীর্ঘ জীবন দান করে। কাশি, অর্শ, লিভারের অসুখ, জন্ডিস, প্রস্রাবের সমস্যা, কৃমি, অজীর্ণ প্রভৃতি ভালো হয়। থানকুনিপাতা ভালো করে ধুয়ে, বেটে তাতে রসুন, জোয়ান, কাঁচামরিচ, গোলমরিচ, সামান্য লবণ, কয়েক ফোঁটা খাঁটি সরিষার তেল দিয়ে মেখে গরম ভাতের সাথে খেলে পেটে যত বর্জ্য সব বেরিয়ে যায়। পাকস্থলীকে শক্তিশালী করে। হজমশক্তি বৃদ্ধি করে। আমাশয় হলে থানকুনিপাতা ছেচে রস করে খেলে ভালো হয়।
মো: লোকমান হেকিম
চিকিৎসক-কলামিস্ট, মোবা: ০১৭১৬২৭০১২০
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।