পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
গ্যাস ও বিদ্যুৎ সঙ্কট দেশের শিল্পোৎপাদনে বড় ধরণের নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করেছে। তৈরী পোশাক খাতসহ রফতানি বাণিজ্যে এই প্রভাব ইতিমধ্যে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। ইউক্রেন যুদ্ধ ও ব্যাংকে ডলার সঙ্কটের কারণে আমদানিকারকরা ঋণপত্র (এলসি) খুলতে না পারায় আমদানিপণ্যের সরবরাহ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এতে প্রায় প্রতিটি পণ্যের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। উৎপাদন খরচ ও আমদানি ব্যয়বৃদ্ধির কারণে সব ধরণের কাগজের অস্বাভাবিক মূল্যস্ফীতি দেশের সংবাদপত্র শিল্প, প্রকাশনা শিল্প ও পাঠ্যপুস্তক শিল্পে নজিরবিহীন সঙ্কট দেখা দিয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে নানা কারণে দেশের সংবাদপত্র শিল্প নানা সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে নিউজপ্রিন্টের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি সংবাদপত্র শিল্পকে সংকুচিত পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিয়েছে। সংবাদপত্র শিল্প নিছক একটি শিল্প নয়, এর সাথে দেশের হাজার হাজার সাংবাদিক-কর্মকর্তা, প্রেসকর্মী ও হকার পরিবারের রুটি-রুজি জড়িয়ে রয়েছে। অন্যদিকে সংবাদপত্র দেশের মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতা, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও আন্তর্জাতিক বিশ্বের সাথে যোগাযোগের টেকসই সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করে। রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে সংবাদপত্র শিল্পের অস্তিত্ব ও বিকাশের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের দায়িত্ব রয়েছে। এর স্বাভাবিক ধারা অবারিত রাখা ও প্রতিবন্ধকতাসমুহ দূর করা এখন সময়ের দাবী।
গত কয়েক মাসে দেশে সব ধরণের কাগজের মূল্য গড়ে ৪০ শতাংশের বেশি বেড়েছে। নিউজপ্রিন্টের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধির কারণে সংবাদপত্র শিল্পে মূলধারার বেশিরভাগ হাউজের টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে। সরকারি বিজ্ঞাপণ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে নিরপেক্ষ, সুষম ও ন্যায়ভিত্তিক বন্টন ব্যবস্থা না থাকা এবং বিজ্ঞাপণের বিল মাসের পর মাস ধরে আটকে রাখা ও পরিশোধে নানা টালবাহানা এই শিল্পের সঙ্কটকে আরো ঘণীভুত করেছে। অন্যদিকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের খড়গে দেশের সাংবাদিক ও সংবাদপত্রসেবীরা এক ধরণের সেল্ফ সেন্সরশিপে চলে গেছে। এতে সংবাদপত্রের স্বাভাবিক স্বাধীনতা বিঘিœত হচ্ছে। এবার কাগজসহ প্রকাশনা সরঞ্জামের নিয়ন্ত্রণহীন মূল্যবৃদ্ধি সংবাদপত্রের মালিক, প্রকাশকসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে অর্থনৈতিক সঙ্কটের মুখে নিপতিত করেছে। করোনাকালীন অর্থনৈতিক মন্দা না কাটতেই ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে জ্বালানি-বিদ্যুৎ ও ডলার সঙ্কটে মূল্যস্ফীতিতে সংবাদপত্র শিল্পের সাথে জড়িতরাও চরম দুর্ভোগের মধ্যে রয়েছে। জীবনযাত্রার ব্যয় মিটাতে হিমশিম খাচ্ছে। কাগজের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি শুধু সংবাদপত্র শিল্পে কুপ্রভাব ফেলছে না, দেশের সামগ্রিক মুদ্রণশিল্প, পাঠ্যপুস্তক, সৃজনশীল প্রকাশনা এবং শিক্ষাব্যবস্থার উপর বিরূপ প্রভাব ও অশনি সংকেত হিসেবে দেখা দিয়েছে। সংবাদপত্র শিল্পে নিজস্ব কর্পোরেট হাউজের স্বার্থ সংরক্ষণ বা ভিন্ন কোনো অভিসন্ধী নিয়ে কাজ করা একশ্রেণীর সংবাদপত্রের বাইরে মূলধারার ঐতিহ্যবাহী ও পেশাদারিত্বপূর্ণ সংবাদমাধ্যমগুলোই বেশি সঙ্কটে পড়েছে।
সাধারণত শিক্ষার্থীদের জন্য বিনামূল্যে বই বিতরণ এবং একুশে বইমেলাকে সামনে রেখে বছরের শেষদিকে দেশের সৃজনশীল প্রকাশনা শিল্পের সাথে জড়িতদের ব্যস্ততা বেড়ে যায়। কাগজসহ মুদ্রণশিল্পের পণ্যমূল্য অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় জানুয়ারীতে সময়মত শিক্ষার্থীদের হাতে পাঠ্যপুস্তক তুলে দেয়া নিয়ে ইতোমধ্যে শংসয়ের সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা উপকরণের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন। আয়ের সাথে ব্যয় সংকুলান করতে না পারায় এমনিতেই সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা কষ্টকর হয়ে পড়েছে। তার ওপর শিক্ষা উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ায় অনেক শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন ব্যহত হতে পারে। এতে শিক্ষার হার ও সামগ্রিক জীবনমানের উপর দীর্ঘস্থায়ী নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এহেন বাস্তবতায় শিক্ষার অন্যতম প্রধান উপকরণ কাগজের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখা জরুরী। নিউজপ্রিন্টের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় সংবাদপত্র শিল্পে যে সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে তা অশনি সংকেত। দেশের সংবাদপত্র মালিক ও প্রকাশনা শিল্পের সংশ্লিষ্টরা কাগজ আমদানিতে শুল্ক কমিয়ে এবং জরুরি ভিত্তিতে বিনাশুল্কে কাগজের কাচামাল আমদানির সুযোগ দেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহŸান জানিয়েছেন। সংবাদপত্র, পাঠ্যপুস্তক, সৃজনশীল প্রকাশনা ও জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার উপর উন্নত জাতি গঠন ও দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন-অগ্রগতি অনেকাংশে নির্ভরশীল। জনগণের আয় ও কর্মংসংস্থান না বাড়লেও কাগজের মত গুরুত্বপূর্ণ পণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির সুদুরপ্রসারি নেতিবাচক প্রভাব সম্পর্কে সরকারের সুদৃষ্টি থাকতে হবে। কাগজের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি এবং এর কারসাজি বন্ধের পাশাপাশি প্রতিবন্ধকতা দূর করার কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। সরকারকে সংবাদপত্রের যথাযথ বিকাশে এর সমস্যা ও সঙ্কট নিরসনে আশু পদক্ষেপ নিতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।