Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

প্রধানমন্ত্রীর গুরুত্বপূর্ণ তাগিদ

| প্রকাশের সময় : ২২ নভেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

আবাদি জমি রক্ষায় পরিকল্পিত শিল্পায়নের ওপর জোর দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকী উপলক্ষে সারা দেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলে ৫০টি শিল্প ইউনিট, প্রকল্প ও সুযোগ-সুবিধার উদ্বোধনকালে তিনি বলেছেন, যত্রতত্র কোনো শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা যাবে না। আবাদি জমি ও তিন ফসলি জমির কোনো ক্ষতি করা যাবে না। বলা বাহুল্য, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একথা এই প্রথম বলেননি। এর আগেও তিনি একাধিকবার আবাদি জমি সুরক্ষা করে শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার তাকিদ দিয়েছেন। বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ। জনগণের খাদ্যের সংস্থান হয় কৃষির মাধ্যমে। কৃষি উৎপাদনের জন্য জমির অপরিহার্যতা প্রশ্নাতীত। অথচ, বাস্তবতা এই যে, প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ আবাদি জমি শিল্পকারখানা স্থাপন, বাড়িঘর নির্মাণ ও কৃষিবহির্ভূত কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। আবাদি জমি ক্রমাগত কমছে। এভাবে আবাদি জমি কমতে থাকলে কৃষি উৎপাদন বিশেষত খাদ্যশস্য উৎপাদন কমে যাবে, খাদ্য নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়বে। এজন্য কৃষি ছাড়া অন্য কোনো ক্ষেত্রে আবাদি জমি যাতে ব্যবহৃত না হয়, সেটা অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। তারপরও আবাদি জমি অন্যান্য ক্ষেত্রে কিছু না কিছু চলে যাবে। এজন্য আবাদি জমি বাড়ানোর প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে হবে। অনাবাদি জমি আবাদে আনার ব্যবস্থা করতে হবে। একইসঙ্গে জমিকে দু’ফসলি, তিন ফসলি জমিতে উন্নীত করার পদক্ষেপ নিতে হবে। অধিক ফলনশীল জাতের ফসল আবাদে প্রধান্য দিতে হবে।

আমরা লক্ষ করে আসছি, আবাদি জমি আবাদবহির্ভূত প্রয়োজনে ব্যবহার না করার আহ্বান সত্ত্বেও তা রক্ষা করা যাচ্ছে না। নতুন নতুন শিল্পকারখানার জন্য, বসতবাড়ি করার জন্য রাস্তাঘাটসহ বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণের জন্য আবাদি জমিতেই হাত পড়ছে। এটা হচ্ছে সচেতনতার অভাবে এবং সরকারি নীতি-উদ্যোগ বাস্তবায়নে যথাযথ গুরুত্ব না দেয়ার কারণে। শুধু তাই নয়, আবাদযোগ্য জমিও অনাবাদি পড়ে থাকছে। এক খবরে জানা গেছে, আবাদযোগ্য ৪ লাখ ৩১ হাজার হেক্টর জমি অনাবাদি পড়ে আছে। আবাদি জমিই কেবল অনাবাদি থাকছে না বা অন্য কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে না, বনভূমি পর্যন্ত দখল হয়ে যাচ্ছে। বন কেটে সাফ করে বাড়িঘর, শিল্পপ্রতিষ্ঠান, রাস্তাঘাট নির্মিত হচ্ছে। বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের আয়তন প্রতিবছরই কমে আসছে। বনের চারপাশে নির্মিত হচ্ছে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ বিভিন্ন শিল্পকারখানা। সুন্দরবনের অস্তিত্ব এসব কারণে বিপন্ন হয়ে পড়লেও সরকারের এদিকে নজর নেই। পরিবেশবাদীরা প্রতিবাদ করছে, আন্দোলন করছে, তাতে সরকার গুরুত্ব দিচ্ছে না। গাজীপুর-জয়দেবপুরের বনাঞ্চলের অংশ বিশেষ ইতোমধ্যেই বিভিন্ন জনের দখলে চলে গেছে। বাড়িঘর, রাস্তাঘাট ও স্থাপনা নির্মিত হয়েছে। দখল প্রক্রিয়া অব্যাহত আছে। দেশের অন্যান্য বনাঞ্চলের অবস্থাও এর চেয়ে আলাদা নয়। বন কেটে আবাদি জমি বের করা বন দখলের একটি পুরানো প্রক্রিয়া। আর এখন তো বনে শখের বাড়ি তৈরি হচ্ছে, কলকারখানা হচ্ছে। এভাবে সরকারি বনভূমি, সংরক্ষিত বনভূমিও কতটা যে বেহাত হয়ে গেছে, বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত মন্ত্রণালয়ের তা জানা আছে কিনা, আমাদের জানা নেই। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতিক্রিয়া মোকাবিলায় বনভূমির গুরুত্ব বলার অপেক্ষা রাখে না। যে কোনো দেশের কাম্য বনভূমি তার মোট ভূমির ২৫ শতাংশ হতে হয়। আমাদের বনভূমি আছে মোট ভূমির ৯ শতাংশের কম। পরিবেশগতভাবে আমরা কীরকম ঝুঁকিতে আছি, এ থেকেই তা উপলব্ধি করা যায়। গাছপালার সঙ্গে জীববৈচিত্র্যের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। জীবজন্তু, পশুপাখির সংখ্যা কমে যাওয়ার প্রধান কারণ পরিবেশ বিপর্যয়, বিশেষত বনভূমি কমে যাওয়া। কৃষিজমি যেমন সংরক্ষণ করতে হবে, তেমনি বনভূমিও রক্ষা করতে হবে। এর বিকল্প নেই।
ক্রমবর্ধমান খাদ্য চাহিদা পূরণ করে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কৃষিকেই সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে। এজন্য আবাদি জমি রক্ষা করতে ও বাড়াতে হবে। অন্যদিকে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় বনাঞ্চল রক্ষা করতে হবে, কাম্য বনাঞ্চল গড়ে তুলতে হবে। এই অতি গুরুত্বপূর্ণ দুটি কাজ শুধু বললে হবে না, করে দেখাতে হবে। এ দায়িত্ব সরকারের। নিজের থেকে সরকারকেই এব্যাপারে উদ্যোগী হতে হবে, পদক্ষেপ নিতে হবে। সরকারের তরফে এমন কর্মব্যবস্থা নিতে হবে, যাতে আবাদি জমি পারতপক্ষে কেউ অন্য কাজে ব্যবহার করতে না পারে। একইসঙ্গে দখল হয়ে যাওয়া বনভূমি উদ্ধার করে বনায়ন করতে হবে। ব্যাপকভাবে বৃক্ষ রোপণ করতে হবে অন্যত্রেও। বৃক্ষ রোপণ অভিযান লোক দেখানোর জন্য নয়, আসলেই কার্যকর করে দেখাতে হবে। জনগণকে সচেতন ও উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি সরকারের নীতি-সিদ্ধান্ত বেতোয়াক্কাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। তাহলেই প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান কাজে আসবে।



 

Show all comments
  • hassan ২৩ নভেম্বর, ২০২২, ১০:২৩ পিএম says : 0
    টেকসই উন্নয়ন তখনই হবে যখন নরপিচাশ নরখাদক নরাধম মানবতাবিরোধী সরকার এদেশ থেকে বিতাড়িত হবে এবং আল্লাহর জমিনে আল্লাহর আইন দিয়ে দেশ পরিচালনা করা হবে তখনই দেশের উন্নতি হবে
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন