গুলিস্তানের বিস্ফোরণে নিহত ১৬ জনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে
রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজার এলাকায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এ
লড়াই শুরু হয়ে গেছে এবং মানুষ রাস্তায় নেমে পড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, মানুষ কিন্তু পিছিয়ে নেই। প্রত্যেকটা সমাবেশ আমার এই বৃদ্ধ বয়সে আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে যে, এখন আরেকটা মুক্তিযুদ্ধ— সেই যুদ্ধের মধ্য দিয়ে এদের পরাজিত করতে হবে। আমাদের আরও শক্তি সঞ্চয় করে নিহত নয়ন, শাওন, রহিম ও আলিমের রক্তের ঋণ পরিশোধ করার জন্য তৈরি হতে হবে।
সোমবার (২১ নভেম্বর) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ৫৮তম জন্মদিন উপলক্ষে এ সভার আয়োজন করে উত্তরবঙ্গ ও বাংলাদেশ ছাত্র ফোরাম। মির্জা ফখরুল বলেন, আজ একটি খবরের কাগজে দেখলাম, বড়-বড় ব্যবসায়ীরা সমস্যা কথা বলেছেন। প্রত্যেক ব্যবসায়ী একটা কথা বলছেন, আমরা খুব খারাপ সময়ে মধ্যে আছি। ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এমন অবস্থা হয়েছে যে, শ্রমিকদের তাদের যে মজুরি দেব, সেই টাকা পর্যন্ত আমাদের কাছে থাকছে না। সবাই তো বলার চেষ্টা করে যে, রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধের কারণে নাকি এটা হচ্ছে। হয়তবা কিছুটা আছে। কিন্তু শুরুটা করেছে সরকার অনেক আগে থেকে। দেশের সব সম্পদ লুট করছে। ১০ বছরের ৮৬ লাখ কোটি টাকা পাচার করেছে। গত এক বছরেই শুধু ৭৮ হাজার কোটি টাকা পাচার করেছে। যে দেশের অর্থনীতিতে সরকারের লোকেরা পুরো সম্পদ লুট করে পাচার করে নিয়ে যায়, সেই দেশের অর্থনীতি কি থাকতে পারে।
তিনি আরও বলেন, ব্যবসায়ীরা বলছেন— এই সময়ে যদি আমরা প্রণোদনা পেতাম, এই সময়ে যদি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুবিধা পেতাম তাহলে হয়ত আমরা দাঁড়িয়ে থাকতে পারতাম। কিন্তু ব্যাংকগুলো নিয়ে শুনেছেন, পত্রিকা লিখছে, এলসি খোলা যায় না। কারণ তাদের ডলার নেই, ডলার দিতে পারছে না। রিজার্ভের টাকা তো লোপাট করে ফেলেছে আগে থেকেই এবং এত বেশি লোপাট করেছে যে, নিজেই ডিফেন্সিভ হয়ে বলছেন, না আমরা রিজার্ভ চিবিয়ে খাইনি। চিবিয়ে খাননি আমরা জানি, গিলে ফেলেছেন এবং সেগুলো আবার পাচার করে দিয়েছেন, এখানে নাই তো। প্রমাণিত সত্য। সাধারণ মানুষের কাছে যান, শ্রমিক-হকারের কাছে যান, সেই বলবে যে এই সরকার চোর।
বর্তমান অবস্থা থেকে উত্তরণে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘আমরা আন্দোলন করব এই সরকারকে সরানোর। সরকারকে সরানোর পরে আমরা আন্দোলনকারী সব দলকে নিয়ে একটি জাতীয় সরকার গঠন করব। তখন সবাইকে নিয়ে এ দেশকে আওয়ামী লীগ যে ডাস্টবিন বানিয়ে ফেলেছে, নর্দমা বানিয়ে ফেলেছে, এটাকে পরিষ্কার করব। বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমাদের বিচার ব্যবস্থা সংস্কার করতে হবে। প্রশাসন ব্যবস্থা সংস্কার করতে হবে। প্রশাসনকে ঢেলে সাজাতে হবে। শিক্ষাব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে, স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে। সত্যিকার অর্থে একটি আধুনিক জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্র গড়ে তুলতে হবে।
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, শহীদুল ইসলাম শাওনকে মেরে ফেলেছিল। উল্টো আমাদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে, সেখানে আমাদের কেন্দ্রীয় নেতা কামরুজ্জামান রতনকে গ্রেপ্তার করেছে। আজ সকালে তার স্ত্রী আমাকে ফোন করে বলল, আরেক ফলস কেইসে (মিথ্যা মামলা) ঢুকিয়ে রতনকে তিন দিনের রিমান্ড নিয়েছে। এদের কি বিবেকও কাজ করে না। আমি বিচার বিভাগকে বলতে চাই, বিচারকদের প্রতি সম্মান রেখে বলতে চাই, দয়া করে ন্যায় বিচার করুন। কারণ এ দেশে বহু প্রমাণ আছে— বিচারপতি তোমার বিচার করবে যারা, আজ জেগেছে সেই জনতা। সুতরাং কোনোটাই পার পাবেন না।
সরকারকে উদ্দেশ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আগে বলেছি, এখনও বলছি, সরে দাঁড়ান, নিরাপদে সরে দাঁড়ান। তা না হলে জনগণের মধ্যে যে উত্তাল তরঙ্গ সৃষ্টি হয়েছে, সুনামির মতো তাদের ভাসিয়ে নিয়ে যাবে এবং এর নেতৃত্বে আছেন আমাদের তারেক রহমান তারুণ্যের প্রতীক। সংগঠনের উপদেষ্টা আমিরুল ইসলাম খান আলিমের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য কাদের গনি চৌধুরী প্রমুখ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।