পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহে ৫৭ সেনা কর্মকর্তা হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, আমরা মনে করি, এই ঘটনার যেভাবে তদন্ত হওয়ার দরকার ছিলো, যেভাবে সুষ্ঠু তদন্তের মধ্য দিয়ে প্রকৃত অপরাধীদেরকে এবং এর পেছনে যারা ছিলেন তাদেরকে বের করে নিয়ে আসার যে তদন্ত প্রক্রিয়া হওয়া উচিত ছিলো সেটা দুর্ভাগ্যজনকভাবে সংঘটিত হয়নি। সেনাবাহিনী একটি তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করেছিলো সেটার পূর্ণাঙ্গ যে চেহারা সেটা দেশবাসী জানতে পারেনি। পরবর্তিকালে যে বিচারের ব্যবস্থা হয়েছে, সেই বিচারের ব্যবস্থায় আমরা দেখেছি- দুই বিষয়ে বিচার হয়েছে। একটি হলো বিদ্রোহ এবং হত্যা, আরেকটি হলো বিস্ফোরক। সাজা হয়েছে কিছু মানুষের, কিছু মানুষের মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে, কিছু মানুষকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। কিন্তু ৭ হাজারের মতো সৈনিক যারা অনেকে দাবি করেন যে, তারা সম্পূর্ণভাবে নির্দোষ তাদেরকে কিন্তু এখন পর্যন্ত মামলাটার শুনানী শেষ করা হয়নি।
গতকাল শনিবার বনানী সেনা কবরাস্থানে নিহতদের স্মৃতি স্তম্ভে শ্রদ্ধা নিবেদনের পরে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের কাছে এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমি কিছুদিন আগে কারাগারে ছিলাম। সেখানে দেখেছি যে, অনেক প্রাক্তন বিডিআরের সদস্য যাদেরকে এই মামলার সাথে সম্পৃক্ত করা হয়েছে তারা ১৩/১৪ বছর ধরে সেখানে মানবেতর জীবনযাপন করছে। তাদের পরিবার নষ্ট হয়ে গেছে, তাদের সমস্ত ভবিষ্যত নষ্ট হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, আমাদের দাবি, যে অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধে আনা হয়েছে, জুডিশিয়ারি সমস্যাগুলো অতিদ্রুত সম্পাদন করে এদের একটা ব্যবস্থা করা উচিত, তাদের মুক্তি দেয়া উচিত। এই মানুষগুলোকে তাদের পরিবার-পরিজনের কাছে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার একটা সুযোগ সৃষ্টি করা হোক।
২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানার সদর দফতরে বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় সংস্থাটির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদসহ ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন নিহত হন। এই ঘটনায় হত্যা মামলায় ২০১৩ সালে বিশেষ আদালতে ১৫২ জনকে ফাঁসি, ১৬০ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা প্রদান করে এবং খালাশ পায় ২৭৮জন।
পিলখানার এই নির্মম ঘটনার পর বিডিআরের সাংগঠনিক কাঠামো ভেঙে সংস্থাটি পুনর্গঠন করে ‘বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-(বিজিবি)’ নামকরণ করা হয়।
দিবসটি উপলক্ষে সকাল সাড়ে ১০টায় বনানীর সামরিক কবরাস্থানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল নিহতদের স্মৃতি স্তম্ভে পুস্পমাল্য অর্পন করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। নেতৃবৃন্দ তাদের রুহের মাগফেরাত কামনা করে মোনাজাত করেন।
এ সময়ে কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, সাবেক বিমান বাহিনী প্রধান অবসরপ্রাপ্ত এয়ার ভাইস মার্শাল ফখরুল আজম, অবসরপ্রাপ্ত রিয়ার এডমিরাল মুস্তাফিজুর রহমান, অবসরপ্রাপ্ত বিগ্রেডিয়ার জেনারেল জহুরুল আলম, অবসরপ্রাপ্ত কর্ণেল ফয়সাল, অবসরপ্রাপ্ত কর্ণেল জয়নাল আবেদীন, অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্ণেল সৈয়দ কামরুজ্জামান, অবসরপ্রাপ্ত মেজর মিজানুর রহমান, অবসরপ্রাপ্ত মেজর নিয়াজ আহমেদ, অবসরপ্রাপ্ত মেজর কোহিনুর আলম নূর, অবসরপ্রাপ্ত ফ্লাইট লেফট্যান্টে হারুনুর রশীদ ভুঁইয়া, জাগপার খন্দকার লুতফর রহমান প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।
পিলখানার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা এই দিনে সেই সমস্ত চৌকশ কর্মকর্তা যারা আমাদের সম্পদ ছিলেন দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা করার ক্ষেত্রে তাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাচ্ছি এবং তাদের রুহের মাগফেরাত কামনা করছি। পরম করুনাময় আল্লাহ তা’আলার কাছে এই দোয়া চাইছি তিনি যেন তাদেরকে বেহস্ত নসিব করেন। ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তা ও তাদের পরিবার-পরিজন ছাড়া অন্যান্য যারা হত্যা হয়েছেন তাদের প্রতিও আমরা বিএনপির পক্ষ থেকে, আমাদের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে এবং দলের অসংখ্য কোটি নেতা-কর্মীদর পক্ষ থেকে গভীর শ্রদ্ধা জানাচ্ছি।
বিএনপি মহাসচিব বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় নিহত মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদের ছেলে রাকিন আহমেদ ভুঁইয়ার সাথে কথা বলেন এবং তাকে সঙ্গে নিয়ে স্মৃতি স্তম্ভে যান।
মির্জা ফখরুল বলেন, এই দিনটি দুঃখজনক ও কলঙ্কের দিন। এ দিনের আমাদের তখনকার বিডিআর, সীমান্ত রক্ষা বাহিনীর ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাকে অত্যন্ত নৃশংসভাবে তাদের পরিবার-পরিজনসহ হত্যা করা হয় এবং একটা ভয়াবহ নৃশংস ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করা হয়। এটা (পিলখানার হত্যাকান্ড) একটা চক্রান্ত ছিলো দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে, আমাদের গর্বিত সেনাবাহিনীর মনোবলকে ভেঙে ফেলার জন্য।
তাদেরকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয় অভিযোগ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, সেদিনের ২৫ ফেব্রুয়ারি অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে ভয়াবহ চক্রান্ত, ষড়যন্ত্র হয়েছিল এদেশের বিরুদ্ধে, এই জাতির স্বাধীনতা-সাবভৌমত্বের বিরুদ্ধে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে এই ঘটনার মধ্য দিয়ে আমাদের যে নিরাপত্তা ব্যবস্থা, সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতা তা প্রচণ্ডভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছিলো। আমরা মহান মুক্তিযুদ্ধেও এতজন সেনা কর্মকর্তাকে হারাইনি।
তিনি বলেন, এই ঘটনার উদ্দেশ্য ছিলো মূলত; আমাদের যে গর্ব সেনা বাহিনী তার মনোবলকে ভেঙে দেয়া। আমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে রক্ষার জন্য যারা তাদের প্রাণ উৎসর্গ করেন, যারা শপথ নিয়েছেন তাদেরকে সম্পূর্ণ নৃশংসভাবে, অন্যায়ভাবে, বেআইনিভাবে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা। এটা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে একটা ষড়যন্ত্র ছিলো।
আ.লীগের অভিযোগ মিথ্যা: ২৫ ফেব্রুয়ারি বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনার দিন সকাল থেকে বেগম খালেদা জিয়ার গতিবিধি সন্দেহজনক ছিলো- আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফের- এই বক্তব্যের বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এটা হচ্ছে সম্পূর্ণভাবে দায়িত্বহীন একটা কমেন্ট। এতো বড় একটা ঘটনা যে ঘটনায় আজকে সমস্ত জাতি ক্ষতিগ্রস্থ হযেছে সেই ঘটনাগুলো কোনো একজন ব্যক্তি যার সম্পর্কে বলা হচ্ছে তিনি (খালেদা জিয়া) এই দেশের তিন বারের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, তিনি এদেশের মুক্তিযুদ্ধে প্রথম নারী মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন, বাংলাদেশের সেনা প্রধান, স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমানের স্ত্রী ছিলেন। তিনি এদেশে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য সারাটার জীবন উৎসর্গ করেছেন এবং গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি এখনো কারাবরণ করেছেন, অন্তরীন হয়ে আছেন। সুতরাং এসব কমেন্ট একেবারেই ডায়ভারসন করা। উনাদের সমস্যাটা হচ্ছে, উনারা মূল সমস্যায় না গিয়ে সব সময় অন্য দিকে যেতে চান। কারণ এই ঘটনাগুলো তারা সেভাবে সমাধান করতে পারেননি।
তিনি বলেন, আমরা এদিনের দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে রক্ষার জন্য আমরা বাংলাদেশের মানুষ, বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল, বাংলাদেশের সেনাবাহিনী, অন্যান্যবাহিনীসহ সবাই আমরা এক সাথে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে রক্ষা করতে চাই। আমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বই হচ্ছে দেশের সবচেয়ে বড় সম্পদ। এজন্য এখন প্রয়োজন সমস্ত জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে যে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা যা ছিলো মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সেই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে আমরা ফিরে পেতে চাই। আমরা মনে করি, সমস্ত সংকটের মূলে রয়েছে এখানে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে পুনরুদ্ধার করা, একটি সত্যিকার অর্থে সুষ্ঠু, অবাধ, সকলের কাছে গ্রহনযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান করা এবং সেই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আমরা সংকটগুলোর সমাধান করতে পারবো।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।