Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

প্রতীকী বক্সিংয়ে নিশাত-আল আমিনদের রাত

স্পোর্টস রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২১ নভেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

বাংলাদেশ বক্সিং ফাউন্ডেশনের (বিবিএফ) অনুমোদনে এবং এক্সেল স্পোর্টস প্রমোশন অ্যান্ড ম্যানেজমেন্টের ব্যবস্থাপনায় শনিবার বনানীর সোয়াট মাঠে অনুষ্ঠিত হলোÑ ‘ব্যাড বøাড বনানী’ শিরোনামে প্রতীকী বক্সিং প্রতিযোগিতা। এতে অংশ নেন বাংলাদেশ ও ভারতের প্রতিভাবান বক্সাররা। বিকাল থেকে রাত অবদি চলে খেলা। প্রতিযোগিতায় রিংয়ের লড়াইয়ে নিজেদের সামর্থ্য প্রমাণ করেছেন বাংলাদেশের বক্সাররা। ফাইটে অপ্রতিরোধ্য ছিলেন তারা। বলা যায় প্রতীকী বক্সিংয়ের রাতটি ছিল নিশাত-আল আমিনদের। এ আসরে সব আলো কেড়ে নিয়েছেন সাউথ এশিয়ান (এসএ) গেমসে বাংলাদেশের হয়ে স্বর্ণজয়ী বক্সার জুয়েল আহমেদ জনি, দেশসেরা বক্সার আল-আমিন, সুরো কৃষ্ণ চাকমা, প্রতিভাবান নারী বক্সার নিশাদ খান আর উৎসব খানরা। এরা শুধু ফাইট জেতেননি, প্রতিপক্ষকে খুব কম সময়ে নকআউট করে জানিয়ে রাখলেন পেশাদার বক্সিংয়ে দেশসেরাদের তালিকা করতে হলে তাদের নাম উপরেই রাখতে হবে। শনিবার বিকাল ৫টা থেকে রাত ১১ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয় সর্বমোট ১২টি বাউট। যার মধ্যে লাইট, ফেদার, ওয়েল্টারসহ বেশ কয়েক ক্যাটাগরির ম্যাচ ছিল।
ফ্লাই ক্যাটাগরিতে অনুষ্ঠিত প্রথম বাউটে পরসা সানজানা জয় তুলে নেন। লাইট ফ্লাই ক্যাটাগরিতে পরের ম্যাচে অভিষিক্ত আফরা খন্দকারের কাছে অধিকাংশ বিচারকের রায়ে হার মানেন রহিমা খন্দকার। এর পরের বাউটটা ছিল পাঞ্চ ও কাউন্টার পাঞ্চের! এতে এসএ গেমসে স্বর্ণজয়ী বক্সার জুয়েল আহমেদ জনি মুখোমুখি হয়েছিলেন আরেক শক্তিশালী বক্সার হিরা মিয়ার। পেশাদার বক্সিংয়ে এটিই ছিল জনির প্রথম ম্যাচ। চার রাউন্ডের এ ম্যাচে শেষ রাউন্ড পর্যন্ত চলে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। ম্যাচটি শেষ পর্যন্ত জিতে নেন জনিই। জেতার পর জনি নিজের অনুভ‚তি প্রকাশ করেন এভাবে, ‘এই অনুভ‚তি দারুণ! পেশাদার বক্সিংয়ে আমার অভিষেকটা স্মরণীয় করতে পেরেছি বলে ভালো লাগছে। বিবিএফের চেয়ারম্যান আদনান হারুণ ভাইকে ধন্যবাদ এমন সুন্দর এক আয়োজনের জন্য। আমাদের যাদের ক্যারিয়ারার শেষের দিকে, তাদের জন্য এটি দারুণ এক সুযোগ নিজেকে প্রমাণ করার। এরপর সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত নেমে আসলে সোয়াট মাঠে বাড়তে থাকে দশর্কের ভিড়। চলতে থাকে একের পর এক বাউট। পরের কয়েকটি বাউটে জয় পান সানেয়া ইসলাম (ওয়েল্টার) তানজিলা (লাইট ফ্লাইট),আমিনুল ইসলাম (ফেদার)। শেষদিকে কয়েকটি বাউট ছিল দারুণ আকর্ষণীয়। সপ্তম বাউটে দেশের প্রতিভাবান নারী বক্সার নিশাদ খানের সামনে দাঁড়াতেই পারেননি প্রতিপক্ষ আফসানা আসফিন। চার রাউন্ডের ম্যাচের দ্বিতীয় রাউন্ডেই নিশাদের এক পর এক হিটে টেকনটিক্যাল নকআউট হন আফসানা। সঙ্গে সঙ্গে উল্লাসে ফেটে পড়ে সোয়াট মাঠে উপস্থিত নিশাদ সমর্থকরা। ম্যাচ জিতে নিজের অনুভ‚তি প্রকাশ করতে গিয়ে একটু আক্ষেপই ঝরলো পেশায় ফ্যাশন ডিজাইনার নিশাদের কণ্ঠে, ‘এই বাউটের জন্য শেষ কয়েক মাস কঠোর পরিশ্রম করেছি। ১২ রাউন্ড পর্যন্ত খেলার প্রস্তুতি নিতে হয়েছিল। সে তুলনায় চার রাউন্ড একটু কম হয়ে যায়। তাও সেটুকু পর্যন্তও খেলা গড়ায়নি।’ ১০ম বাউটে দেশের আরেক জনপ্রিয় বক্সার উৎসব খান রেখেছেন প্রতিভার স্বাক্ষর। চার রাউন্ডের বেনথেম ক্যাটাগরিতে অনুষ্ঠিত এই ফাইটে তিনি মাত্র ৭৯ সেকেন্ডে রাজু মিয়াকে টেকনিক্যাল নকআউট করেন। শেষের দুই বাউটে সুরো কৃষ্ণ চাকমা ও আল-আমিনরা ছিলেন আরো বেশি অপ্রতিরোধ্য। প্রথম রাউন্ডেই তারা প্রতিপক্ষকে নকআউট করেন। ১১তম বাউটে খেলতে নামেন দেশের অন্যতম সেরা পেশাদার বক্সার সুরো কৃষ্ণ চাকমা। রিংয়ে নেমে তিনি দেখান আগুন ঝরা পারফরম্যান্স। কদিন আগেই বক্সিং ক্যারিয়ারের সাফল্যকে আরও এগিয়ে নিতে বিকাশের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হয়েছেন তিনি। এই খুশি উদযাপন করতেই কিনা শনিবারের ফাইটে প্রতিপক্ষকে পাত্তাই দিলেন সুরো কৃষ্ণ। তার উপর্যুপরি পাঞ্চ, আপার কাট, জ্যাবে চার রাউন্ডের খেলা শেষ হয় প্রথম রাউন্ডেই! আর সুরো কৃষ্ণ ম্যাচ জিততে সময় নেন মাত্র ১১০ সেকেন্ড!
‘ব্যাড বøাড বনানী’র শেষ অর্থাৎ ১২তম বাউটটি ছিল প্রতিযোগিতার সবচেয়ে হাইভোল্টেজ ম্যাচ। এটি প্রতীকী বক্সিংয়ের একমাত্র আন্তর্জাতিক ম্যাচও বটে। যে ম্যাচে মুখোমুখি হন জাতীয় প্রতিযোগিতায় স্বর্ণপদক জয়ী বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বক্সার আল-আমিন ও ভারতের পাঞ্চাব প্রদেশের প্রখ্যাত বক্সার বালজিৎ সিং। এই দুজনের মধ্যকার ফাইটটি দেখার দীর্ঘ অপেক্ষায় ছিলেন দর্শকরা। রাত ১০টার পর ম্যাচটি যখন শুরু হয় তখন বনানীর সোয়াট মাঠে ছাপিয়ে আশপাশের সড়কও ছিল উৎসুক জনতায় ঠাসা। শুরুতে নিজ নিজ দেশের পতাকা হাতে একে একে রিংয়ে ওঠেন আল-আমিন ও বালজিৎ সিং। করতালির মাধ্যমে তাদের স্বাগত জানান দর্শকরা। রিংয়ের চারপাশে ঘুরে অভিবাদনের জবাব দেন বালজিৎ সিং। এ সময় তাকে বেশ উচ্ছ¡সিত দেখাচ্ছিল। তবে ম্যাচ শুরুর পর তার উচ্ছ¡াস আর থাকেনি। শুরুর বাঁশি বাজার সঙ্গে সঙ্গেই স্বভাবজাত আগ্রাসী ভঙ্গিমায় আল আমিন একের পর এক পাঞ্চে দিশেহারা করে ফেলেন বালজিৎকে। তার প্রতিটি পাঞ্চে বাঁধ ভাঙা উল্লাসে ফেটে পড়ে ‘বাংলাদেশ বাংলাদেশ’ চিৎকারে আল-আমিনকে সাহস যোগান দর্শকরা। দর্শকদের আস্থার প্রতিদান দিতে একটানা আক্রমণে মাত্র ৮২ সেকেন্ডই বালজিৎকে কুপোকাত করেন আল-আমিন। ফলে চার রাউন্ডের ম্যাচ শেষ হয় প্রথম রাউন্ডেই।
ম্যাচ হারলেও বাংলাদেশের আতিথেয়তায় খুশি বালজিৎ। ম্যাচ শেষে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ আমার নিয়মিতই এসে থাকি। ঢাকা আমার খুব পছন্দের শহর।’ প্রতীকী বক্সিং প্রতিযোগিতার মতো সুন্দর আয়োজনের জন্য তিনি বিবিএফের চেয়ারম্যান আদনান হারুনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। বাংলাদেশের বক্সারদের ভারতে খেলার আমন্ত্রণও জানান তিনি। প্রতিযোগিতা শেষে বিবিএফের চেয়ারম্যান আদনান হারুন বলেন,‘বিগত ৬ মাস ধরে আমরা বাংলাদেশে পেশাদার বক্সিংয়ের চর্চা করে আসছি। পেশাদার বক্সিংয়ে এটি আমাদের চতুর্থ ইভেন্ট। এখানে নতুন পুরোনো সব বক্সাররা অংশ নিয়েছেন। আগামীতে প্রতি বছর ৫/৬টা পেশাদার বক্সিং ইভেন্ট করার পরিকল্পনা আছে আমাদের।’ তিনি যোগ করেন, ‘আমরা দেশের প্রতিটি জেলায় এই ইভেন্ট চালু করার পরিকল্পনা হাতে নিচ্ছি। আমরা আশা করি অ্যামেচার বক্সিংয়ের মতো পেশাদার বক্সিংয়েও বাংলাদেশ একদিন আন্তর্জাতিক আসরে সুনাম অর্জন করবে।’



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ