Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মেট্রোরেলের কাজ দ্রুত শেষ করতে হবে

| প্রকাশের সময় : ১৭ নভেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

রাজধানী ঢাকার জনদুর্ভোগের অন্যতম ক্ষেত্র হচ্ছে যানজট। ঢাকার যানজট নিরসনে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে বেশকিছু ফ্লাইওভারসহ একের পর এক মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও যেনতেন প্রকারে প্রকল্প গ্রহণ, প্রকল্পের নকশায় ভুলভ্রান্তির কারণে কোনো প্রকল্পই সময়মত শেষ করা যায়নি। বর্তমানে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পগুলোও সময়সীমা পেরিয়ে একাধিকবার সময় ও বাজেটবৃদ্ধির পরও তা শেষ করতে পারছে না সংশ্লিষ্টরা। বছরের পর বছর ধরে দেরি হওয়ায় একদিকে প্রকল্প এলাকায় যানজট ও জনদুর্ভোগ তীব্র হয়ে উঠেছে, অন্যদিকে প্রকল্পগুলোর উপযোগিতা ও ফিজিবিলিটি মার খাচ্ছে। যানজট নিরসনেও ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারছে না। এমআরটি বা মাস র‌্যাপিড ট্রানজিট প্রকল্পের আওতায় উত্তরার দিয়াবাড়ি থেকে ঢাকার কমলাপুর পর্যন্ত প্রায় ৩১ কিলোমিটার মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে যানজট অনেকটাই কমে আসতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা আশা প্রকাশ করছেন। তবে প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদ শেষের পথে হলেও অর্ধেক কাজ শেষ করা সম্ভব হয়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল প্রকল্পের কাজ শেষ করার কথা থাকলেও ইতোমধ্যে প্রকল্পের দৈর্ঘ কমলাপুর পর্যন্ত বর্ধিতকরণের পাশাপাশি প্রকল্প ব্যয় বেড়ে দ্বিগুণের বেশি দাঁড়িয়েছে। সেই সাথে বাস্তবায়নকালও একবছর বর্ধিত করা হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রায় অর্ধেক শেষ হওয়া অংশে যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
যানজট নিরসনে এমআরটি প্রকল্পের আওতায় বিআরটি প্রকল্পের কাজ ৪ বছরে শেষ করার কথা থাকলেও একদশকেও তা শেষ হয়নি। ইতোমধ্যে বিআরটি’র অর্ধেক শেষ হওয়ার পর বিআরটির বিমানবন্দর-ময়মনসিংহ মহাসড়কের উত্তরা থেকে টঙ্গি পর্যন্ত ফ্লাইওভারের দু’টি লেন খুলে দেয়া হয়। এ সিদ্ধান্ত ইতোমধ্যে অপরিণামদর্শী বলে প্রমাণিত হয়েছে। ফ্লাইওভারের প্রান্তে অসংখ্য যানবাহনের বড় জটলা সব সময় লেগেই থাকছে। রাস্তার মাঝপথে যানজট আগের চেয়ে বেড়ে গেছে। মেট্রোরেল প্রকল্পের উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার শেষ হওয়ার পর একইভাবে তা যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হলে যানজট ও জনভোগান্তি আগের চেয়ে বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা প্রবল। এসব প্রকল্প গ্রহণের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণাংশের মধ্যে যানজটমুক্ত ও দ্রুত চলাচল নিশ্চিত করা। বাস ও ট্রেনে মতিঝিল থেকে উত্তরা যাওয়ার সময়সীমা আধাঘণ্টায় নামিয়ে আনার প্রত্যাশা নিঃসন্দেহে ঢাকার জনজীবনে এক যুগান্তকারী পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারে। তবে সময়মত প্রকল্পের কাজ শেষ করতে না পারা এবং ভুল পরিকল্পনা এবং যেনতেন প্রকারে কাজ শেষ না করেই রাজনৈতিক বাহবা কুড়ানোর জন্য অর্ধেক কাজ অসমাপ্ত রেখে যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়ার প্রবণতা আত্মঘাতী। এর ফলে উত্তরা থেকে মতিঝিল-গুলিস্তান-সদরঘাটগামী যাত্রীদের দুর্ভোগ আগের চেয়ে বাড়বে। যেখানে এখন বাসযাত্রীরা দীর্ঘ যানজট পেরিয়ে উত্তরা থেকে মতিঝিল-গুলিস্তানে যাচ্ছে, সেখানে মেট্রোরেলে চড়ে আগাওগাঁও নেমে আবারো বাসে ওঠার জন্য যাত্রীরা চরম বিড়ম্বনার শিকার হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
উত্তরা থেকে কমলাপুর ২৫ কিলোমিটার মেট্রোরেলের কাজ ভালভাবে সম্পন্ন করেই তা চলাচলের জন্য খুলে দিতে হবে। এই প্রকল্পের জন্য উত্তরা-বিমানবন্দর ও ময়মনসিংহ মহাসড়কের যাত্রীরা বছরের পর বছর ধরে অস্বাভাবিক যানজট ও দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। দ্রুত কাজ শেষ করে মানুষকে যানজট ও দুর্ভোগ থেকে মুক্তি দেয়া হোক। ঢাকার প্রথম মেট্রোরেল একটি চমৎকার-অবিভাজ্য প্রকল্প। মতিঝিল-কমলাপুর পর্যন্ত প্রকল্পের সফল সমাপ্তির পর তা দক্ষিণে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত সম্প্রসারণ করা যেতে পারে। তবে বার বার সময় ও বাজেট বাড়ানোর পর অর্ধেক কাজ অসমাপ্ত রেখে তড়িগড়ি তা যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত সমর্থনযোগ্য নয়। এই রুটের ট্রানজিট হিসেবে আগারগাঁও কোনো গুরুত্বপূর্ণ স্টপেজ নয়। এই মুহূর্তে মেট্রোরেল খুলে দেয়া হলে শতকরা ৮০ ভাগ যাত্রীকেই নতুন করে যানজটের বিড়ম্বনায় পড়তে হবে। উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে অত্যাধুনিক মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে ঢাকার যানজটের বদনাম ও দুর্ভোগ সহনীয় পর্যায়ে নেমে আসবে বলে আমরা আশা করি। বর্তমান সরকারের মেয়াদ আরো এক বছর বাকি থাকলেও মেট্রোরেল লাইন-৬ খুলে দেয়ার জন্য তাড়াহুড়ার কোনো কারণ নেই। তাই বিআরটি প্রকল্পের পর মেট্রোরেলের অর্ধেক অসমাপ্ত রেখে যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়ার এই পরিকল্পনা নিয়ে সরকারকে নতুন করে ভাবতে হবে। হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত স্বপ্নের মেগাপ্রকল্প তার সৌন্দর্য ও উপযোগিতা নিয়ে ঢাকার যানজট নিরসনে সর্বোচ্চ ভূমিকা পালনে সক্ষম হবে। এমনটাই সকলের প্রত্যাশা। বিআরটি ও মেট্রোরেল প্রকল্প এলাকার বিড়ম্বনা কমিয়ে দ্রুত বাস্তবায়নে কার্যকর উদ্যোগ দেখতে চায় নগরবাসী।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন