পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দরে ভারতীয় পণ্য উঠানামায় অগ্রাধিকার দিয়ে চুক্তি স্বাক্ষর করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এ সংক্রান্ত চুক্তির খসড়াও তৈরি করা হয়েছে। দুই দেশের সরকার চাইলে যে কোনো দিন চুক্তি স্বাক্ষর হতে পারে। এ ধরনের সংবাদ প্রকাশিত হলে বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতারা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। তারা এ সিদ্ধান্তকে ‘আত্মঘাতী’ বলে অভিহিত করেছেন। তাদের মতে, প্রয়োজনীয় সক্ষমতা না বাড়িয়ে ভারতকে সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করতে দেয়া হবে নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারা। এফবিসিসিআই’র সাবেক সহসভাপতি আবুল কাসেম বলেছেন, সক্ষমতা না বাড়িয়ে বাংলাদেশের দুই সমুদ্রবন্দর ব্যবহারে ভারতের সঙ্গে চুক্তি করা হলে তা দেশের স্বার্থ ক্ষুণœ করবে। অর্থনীতির বিদ্যমান গতিশীলতা বাধাগ্রস্ত হবে। কীসের ভিত্তিতে এ চুক্তি হবে, তাও পরিষ্কার নয়। সংযোগ সড়ক ব্যবহার উপযোগী করতে অবকাঠামো উন্নয়নে যে বিশাল বিনিয়োগ দরকার হবে তা কারা করবে, বাংলাদেশ করলে সুদবিহীন বা সহজ শর্তে দীর্ঘমেয়াদে ঋণ মিলবে কিনা, তার কিছুই সুরাহা হয়নি। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বারের সিনিয়র সহসভাপতি এএএম মাহবুব চৌধুরী বলেছেন, নিজের ঘরে আগে নিজে ঘুমানোর জায়গা থাকতে হবে। তারপর অন্য কাউকে জায়গা দিতে হবে। যেখানে চট্টগ্রাম বন্দর দেশের পণ্যই হ্যান্ডলিং করতে পারছে না, সেখানে প্রতিবেশীকে এ সুযোগ দিলে সংকট আরও তীব্র হয়ে উঠবে। কোনো কোনো ব্যবসায়ী ভারতকে বিনামাশুলে বন্দর ব্যবহার করতে দেয়াকে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র বলে অভিহিত করেছেন। পণ্য হ্যান্ডলিংয়ের সক্ষমতা না বাড়িয়ে এবং নিজেদের ক্ষতি করে ভারতকে বন্দর ব্যবহার করতে দেয়া যে কোনোভাবেই সমীচীন হবে না, একবাক্যে সবাই সে অভিমত দিয়েছেন।
আমরা এ কথা বহুবার বলেছি, ভারত আমাদের কাছ থেকে তার সুবিধার যা কিছু আছে সবই আদায় করে নিয়েছে এবং নিচ্ছে। বিনিময়ে তার কাছ থেকে আমরা কিছুই পাইনি। বরং যতই দিন যাচ্ছে, তার একের পর এক আবদার রক্ষা করে চলেছি। ট্রানজিটের নামে করিডোর দেয়া, মানবিক কারণ ও নামমাত্র মাশুলে তার এক রাজ্য থেকে আরেক রাজ্যে খাদ্যপণ্য ও মালামাল পরিবহন করাসহ তার চাহিদার সবকিছুই পূরণ করেছি। বিষয়টি এখন এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে যে ভারত ‘মামার বাড়ির আবদার’ করে চলেছে, আর আমরা তা অনেকটা নিঃশর্তভাবে দিয়ে দিচ্ছি। সর্বশেষ বিনা মাশুলে এবং সুনির্দিষ্ট জেটির মাধ্যমে বন্দর ব্যবহারের আবদার করে বসেছে। আমরা তা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দেয়ার জন্য রাজী হয়েছি। যেন ভারতকে তুষ্ট করার এক ধরনের নীতি অবলম্বন করে চলেছি। এতে আমাদের স্বার্থ ও লাভ কি, তা বিবেচনা করছি না। দিনের পর দিন ভারতের একের পর এক সুবিধা নেয়ার প্রস্তাব বেড়েই চলেছে। এ পর্যন্ত ভারত যেসব আবদার করেছে, তার সবই পূরণ করা হয়েছে। অন্যদিকে আমাদের ন্যায্য একটি দাবীও পূরণ হয়নি। এক সামান্য তিস্তা চুক্তি নিয়েই কত টালবাহানা চলছে। এ চুক্তির মাধ্যমে তার কী লাভ-ক্ষতি হতে পারে, এ নিয়ে ভারত গবেষণা করতে করতেই বছরের পর বছর পার করে দিচ্ছে। অন্যান্য নদ-নদীর পানির ন্যায্য হিস্যার কথা তো অনেক পরের কথা। সর্বশেষ বন্দর ব্যবহারের যে প্রস্তাব ভারত দিয়েছে এবং আমাদের সরকার কালবিলম্ব না করে এবং দেশের স্বার্থ বিন্দুমাত্র বিবেচনা না করে যেভাবে দ্রুত গতিতে তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে, এমন নজির পৃথিবীর আর কোনো দেশে আছে কিনা, আমাদের জানা নেই। একটি দেশ তার সুবিধামতো একতরফাভাবে যা চাইছে, তাই দিয়ে দেয়া হচ্ছেÑ যেখানে ‘গিভ অ্যান্ড টেক’ বলে কিছু নেই। স্বাভাবিক কারণেই দেশপ্রেমিক এবং সচেতন মানুষ এর প্রতিবাদ করবে। নিজ স্বার্থ বিবেচনা না করে ভারতকে বন্দর ব্যবহারের বিরুদ্ধে তারা সোচ্চার হয়ে উঠেছে। তারা বন্দরের সক্ষমতা এবং অর্থনীতির যে বিপুল ক্ষতি হবে, এর বিস্তারিত ব্যাখ্যা তুলে ধরছেন। এতে সরকারের টনক নড়বে কিনা, জানি না। তবে সরকার যে বিষয়টি আমলে নিচ্ছে না, তা চুক্তির খসড়া প্রস্তুতের মধ্য দিয়েই বোঝা যাচ্ছে। এটা জাতির জন্য দুর্ভাগ্য ছাড়া কিছু নয়। বলা বাহুল্য, আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে আমাদের বন্দর আমাদেরকেই ঠিক মতো সার্ভিস দিতে পারছে না। আমদানি-রপ্তানির পণ্য দিনের পর দিন লোড-আনলোড অবস্থায় পড়ে থাকছে। গভীর সমুদ্রবন্দর না থাকায় মাদার ভেসেল থেকে পণ্য খালাস ও বোঝাই করতে আমাদের ফিডার ভেসেলের সাহায্য নিতে হচ্ছে। এতে দীর্ঘ সময় লেগে যাচ্ছে। বিশেষ করে রপ্তানির বড় বাজার ইউরোপে পণ্য পাঠাতে প্রতি চালানে ১০-১৫ দিন পিছিয়ে পড়ছি। এতে অনেক পণ্য সময় মতো পৌঁছানো সম্ভব হয় না। রপ্তানিকারকরা বিপুল অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। এ প্রেক্ষিতে ভারতকে যদি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বন্দর ব্যবহারের সুযোগ দেয়া হয়, তবে আমাদের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য কী অপূরণীয় ক্ষতির মুখোমুখি হবে, তা বোধকরি বিস্তারিত ব্যাখ্যার অবকাশ নেই। সরকার অর্থনৈতিক উন্নয়নের যে মহাসড়কের কথা বলছে, তার গতি যে শ্লথ হয়ে পড়বে, তাতে সন্দেহ নেই।
ভারতের প্রতি আমাদের বন্ধুত্ব অনেকটা একতরফা হয়ে গেছে। সে আমাদের পিঠে চাপড় দিয়ে তালি বাজিয়ে যাচ্ছে। এতেই আমরা যেন আনন্দে আত্মহারা হয়ে তাকে সবকিছু দিয়ে দিচ্ছি। আমাদের স্বার্থের কথা সরিষা পরিমাণও চিন্তা করছি না। বিবেচনায় নিচ্ছি না, আমাদের ন্যায্য হিস্যার কথা এবং ভারতকে তার চাহিদামতো সুবিধা দিলে আমাদের কী সুবিধা হবে। পৃথিবীতে এমন দেশ খুব কমই আছে যে নিজের স্বার্থ না দেখে অন্যের স্বার্থ পূরণে এগিয়ে যায়। ব্যতিক্রম শুধু ভারতের সাথে আমাদের সম্পর্কের ক্ষেত্রে। ভারত তার সুবিধার ষোল আনা উসুল করে নিলেও আমরা নিজেদের একআনাও বুঝে নিতে পারছি না। উল্টো নিজেকে ক্ষতির মুখে ঠেলে দিয়ে ভারতকে তুষ্ট করার নীতি অবলম্বন করে চলেছি। এ ধরনের আচরণ দুর্বল রাষ্ট্রেরই পরিচায়ক। তা নাহলে ভারত তার দেশের মতো করে আমাদের রাস্তা-ঘাট, বন্দর ব্যবহার করতে পারত না। আমরা মনে করি, নিজের ক্ষতির কথা বিবেচনা না করে একতরফাভাবে ভারতের চাহিদা পূরণের এ নীতি পরিহার করতে হবে। সর্বশেষ ভারত বন্দর ব্যবহারের যে প্রস্তাব দিয়েছে, তা বাস্তবায়নের আগে আমাদের ক্ষতির দিকে তাকাতে হবে। যে কোনো চুক্তির আগে তা জনসম্মুখে প্রকাশ করতে হবে। আমাদের লাভ-ক্ষতির বিষয়টি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তুলে ধরতে হবে। জনগণের অলক্ষ্যে বা অন্ধকারে রেখে কোনো চুক্তি করা সমীচীন হবে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।