Inqilab Logo

শনিবার, ২৯ জুন ২০২৪, ১৫ আষাঢ় ১৪৩১, ২২ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

চীনা নাগরিক খুন : দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে হবে

সম্পাদকীয়-২

| প্রকাশের সময় : ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

এবার যশোরে এক চীনা ব্যবসায়ী স্থানীয়দের হাতে নির্মমভাবে নিহত হয়েছেন। গতকাল প্রকাশিত রিপোর্টে জানা যায়, ইজিবাইক ব্যবসায়ী চীনা নাগরিক চ্যাং হিং চককে তার ব্যবসায়িক সহকারীরা পিটিয়ে হত্যা করেছে। যশোর উপ-শহরের ২ নং সেক্টরের একটি বাড়িতে ভাড়া থাকতেন এই চীনা নাগরিক। গত দুই বছরে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিদেশি নাগরিকরা সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়েছেন। গত বছর অক্টোবরে ইতালীয় নাগরিক তাবেল্লা সিজারে, নভেম্বরে জাপানী নাগরিক হোশি কুনিও সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হওয়ার পর বাংলাদেশে জননিরাপত্তা ইস্যু সারাবিশ্বে প্রশ্নবিদ্ধ হয়। গত ১ জুলাই ঢাকার গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে কথিত জঙ্গি হামলায় জাপানী ও ইতালীয় নাগরিকসহ অন্তত ২০ জন নিহত হওয়ার পর বৈদেশিক বাণিজ্য ও উন্নয়ন অংশিদাররা বাংলাদেশে তাদের নাগরিকদের জন্য ভ্রমণ সতর্কতা জারিসহ যে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল তা’ বাংলাদেশের বৈদেশিক বাণিজ্য ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করেছে। ঢাকার ডিপ্লোমেটিক জোনসহ সারাদেশে বিদেশি নাগরিকদের নিরাপত্তায় সরকারের পক্ষ থেকে নানাভাবে আশস্ত করার পরও তাদের আস্থা কতটা পুন:প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়েছে তা’ এখনো স্পষ্ট নয়। কারণ কোন কোন পশ্চিমা দেশ এখনো তাদের নাগরিকদের ভ্রমণ সতর্কতা প্রত্যাহার করেনি। আমাদের প্রধান উন্নয়ন সহযোগী দেশ জাপান তার নাগরিকদের অনেককে বাংলাদেশ থেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছিল।
সার্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতিতে কিছুটা উন্নতির প্রেক্ষাপটে উন্নয়ন সহযোগিরা নিরাপত্তা সতর্কতা প্রত্যাহারসহ বাংলাদেশে তাদের প্রকল্পসমূহ বাস্তবায়নে নতুনভাবে কাজ শুরু করবে, সাম্প্রতিক কয়েক সপ্তাহে এমন সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। দেশে কথিত জঙ্গিবাদ, গুপ্তহত্যা ও নাশকতার ঘটনাগুলোর সাথে আইএসসহ আন্তর্জাতিক জঙ্গিদের সম্পৃক্ততার কথা নানাভাবে তুলে ধরার চেষ্টা আমরা দেখেছি। তবে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের বৈশ্বিক তৎপরতায় বাংলাদেশকে মুক্ত বা বিচ্ছিন্ন মনে করার কোন কারণ নেই। দেশের প্রধান উন্নয়ন সহযোগি ও বাণিজ্যিক অংশীদার দেশগুলোর নাগরিকদের টার্গেটেড কিলিং করে সন্ত্রাসীরা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে চায়, এমনটা সন্দেহ করার যথেষ্ট কারণ আছে। বিদেশি নাগরিকদের উপর উপর্যুপরি হামলা ও হতাহতের ঘটনার পর আমাদের তৈরী পোশাক খাতের অনেক ক্রেতা বাংলাদেশে তাদের পূর্ব নির্ধারিত সফর বাতিল করেছেন। কেউ কেউ কোটি কোটি ডলারের ক্রয়াদেশও বাতিল করেছেন এবং পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে পণ্য সংগ্রহের উদ্যোগ নিচ্ছেন বলে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে সন্ত্রাসী হামলায় জাপানী ও ইতালীয় নাগরিকরা একাধিকবার হামলার শিকার হলেও সাম্প্রতিক সময়ে সম্ভবত: এই প্রথম কোন চীনা নাগরিক হত্যাকা-ের শিকার হলেন। প্রাথমিকভাবে আর্থিক লেনদেন ও অর্থ আত্মসাতের টার্গেটে এই হত্যাকা- সংঘটিত হয়ে থাকতে পারে বলে বলা হলেও একজন চীনা নাগরিকের অপমৃত্যু যেন দ্বিপাক্ষিক বিনিয়োগ ও বাণিজ্যকে ক্ষতিগ্রস্ত না করতে পারে সে দিকে সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলকে বিশেষ সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।
দেশি কিংবা বিদেশি যে কোন মানুষের অপঘাত মৃত্যুর ঘটনা দেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে আন্তর্জাতিক মহলে প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলে। বিনিয়োগের সুষ্ঠু পরিবেশ ও মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারলে উন্নয়নের কাক্সিক্ষত সরণিতে পদার্পণ সম্ভব নয়। তথ্য-প্রযুক্তির এই যুগে কোন ঘটনাই এখন আর ধামাচাপা দেয়া যায় না। তাবেল্লা সিজার বা হোশি কুনিওর হত্যাকা-ের মত চ্যাং হিং চং হত্যাকা-কে জঙ্গিবাদী বা সন্ত্রাসী তৎপরতা হিসেবে ধতর্ব্যে না রাখলেও সহকর্মীদের হাতে একজন ব্যবসায়ী চীনা নাগরিকের হত্যাকা- আমাদের সাম্প্রতিক সমাজ বাস্তবতারই অংশ। সাম্প্রতিক সময়ের বাংলাদেশে সামাজিক অপরাধ ও নিষ্ঠুরতার যে বিস্তৃতি ঘটেছে চীনা নাগরিক সম্ভবত তারই নির্মম শিকার। আর এ ধরনের হত্যাকা- ও সামাজিক অপরাধের বিস্তৃতির পেছনে রয়েছে বিচারহীনতার সংস্কৃতি। চীনা নাগরিক হত্যাকা-সহ সব হত্যাকা-ের দ্রুত ও স্বচ্ছ বিচার প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে হবে। সরকার দেশকে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ মুক্ত করার নানাবিধ উদ্যোগ ও পরিকল্পনা গ্রহণ করছেন বটে, সে সব উদ্যোগ যেন সরকারের রাজনৈতিক মোড়ক ও ব্লেইম গেমের কারণে একপেশে ও প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নেয়ার পর হদিস না পাওয়া বা দূরে কোথাও গুলিবিদ্ধ লাশের সন্ধান পাওয়ার ঘটনাগুলো দেশের সার্বিক নিরাপত্তাহীনতারই প্রমাণ দিচ্ছে। দেশের সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের সম্ভাবনাকে নিশ্চিত করতে হলে সরকার ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে দলনিরপেক্ষ ও পেশাদার ভূমিকা পালন করতে হবে। দেশি-বিদেশি সকল নাগরিকের নিরাপত্তা ও দ্রুত ন্যায়বিচার প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে। সামাজিক-রাজনৈতিক নিরাপত্তা ও বিনিয়োগের সুষ্ঠু পরিবেশ ও আইনের শাসন নিশ্চিত করার কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।     



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন