পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সরকারি একটি ব্যাংকের গুলশান শাখায় গত ৬ নভেম্বর গিয়ে গ্রাহক তার চেক দিয়ে টাকা তুলতে পারেননি। ব্যাংকে টাকা নেই। এই মুহুর্তে সেই গ্রাহককে দু’টি উপায় বাতলে দিলেন ব্যাংক কর্মকর্তা। অপেক্ষা করেন, কেউ যদি টাকা জমা দেয় অথবা অন্য শাখায় খোঁজ নিতে পারেন। একই দিনে হাইকোর্টের অন্য একটি ব্যাংকের শাখায় ২ লাখ টাকার একটি চেক জমা দিলে ব্যাংক কর্তকর্তা জানান টাকা নেই, গ্রাহককে বড় ব্র্যাঞ্চে যাওয়ার পরামর্শ দেন ওই ব্যাংকের কর্মকর্তা। এভাবে ব্যাংকে গিয়ে প্রয়োজনীয় টাকা তুলতে না পেরে আমানতকারীদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়। ‘দ্রুত টাকা তুলে নিতে হবে, নইলে পুরো টাকাই শেষ’-এমন আলোচনার জন্ম নেয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। অন্যদিকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিকারকেরা এলসি খোলার জন্য পাচ্ছেন না ডলার। এনিয়ে তাদের অভিযোগেরও অন্ত নেই। বৈশ্বিক সঙ্কটের জেরে সারাবিশ্বেই এখন ডলারের চাহিদা তুঙ্গে, তার বিপরীতে জোগান সীমিত। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। তবে সঙ্কটই এখন পুঁজি। যেখানে ডলারের সঙ্কট সেখানে প্রতি ডলারে দুই থেকে চার টাকা বাড়তি দিলেই মিলছে বিদেশী মুদ্রাটি। প্রয়োজনীয় খরচ মেটাতে ডলার অপরিহার্য বিধায় বিদেশে উচ্চ শিক্ষার সুযোগ পর্যন্ত অপ্রয়োজনীয় বিষয়ে পরিণত হয়েছে। চলতি বছরের ডিসেম্বর নাগাদ চলবে এই বিশেষ ব্যবস্থা।
সর্বসাকুল্যে দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থার একটি চিত্র এটাই। তবে এসব গুজব ও অপপ্রচার বলে উড়িয়ে দিয়ে গত রোববার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। গতকাল সোমবার আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র জি এম আবুল কালাম আজাদ সমসাময়িক বিষয় নিয়ে ডাকা এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থায় তারল্যের কোনো সঙ্কট নেই। বর্তমানে এক লাখ ৬৯ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকার অতিরিক্ত তারল্য রয়েছে। এছাড়া স্বাধীনতার ৫১ বছরের ইতিহাসে কোন ব্যাংক বন্ধ হয়নি এবং আগামীতেও কোন ব্যাংক বন্ধ হবে না বলে জানান তিনি।
অবশ্য পরিসংখ্যান বলছে ভিন্ন কথা। চলতি বছরের জুন মাসে এ খাতে উদ্বৃত্ত তারল্য ছিল ২ লাখ ৩ হাজার কোটি টাকা। কয়েক মাসের ব্যবধানে ৩০ হাজার কোটি টাকার বেশি তারল্য কমে গেছে। এছাড়া উদ্বৃত্ত ভালো থাকা ব্যাংকের সংখ্যাও হাতেগোনা কয়েকটি। অল্পকিছু ব্যাংকের তারল্যের অবস্থাই সন্তোষজনক। দশটি ব্যাংকের অবস্থা ভালো নয় বলে ইতিপূর্বে জানিয়েছিল খোদ বাংলাদেশ ব্যাংকই।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থা অত্যন্ত শক্ত অবস্থানে রয়েছে, আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই গ্রাহকদের। তারল্য সঙ্কটে কোনো ব্যাংক বন্ধ হবে না বলেও জানান মুখপাত্র। বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র বলেন, বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ষড়যন্ত্রমূলক খবর প্রচারিত হচ্ছে। সেখানে বিনিয়োগকারীদের ব্যাংকের আমানত তুলে নেওয়ার জন্য বলা হচ্ছে। বলা হচ্ছে ব্যাংকগুলোতে নগদ অর্থ নেই বা তারল্য সঙ্কট আছে। কিন্তু এটি সত্য নয়। বাংলাদেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থা অত্যন্ত সুদৃঢ় অবস্থায় রয়েছে। ব্যাংকিং ব্যবস্থায় তারল্যের কোনো সঙ্কট নেই। ব্যাংক ব্যবস্থায় বর্তমানে এক লাখ ৬৯ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকার অতিরিক্ত তারল্য রয়েছে।
তিনি বলেন, দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থায় তারল্যের কোনো সঙ্কট নেই। বর্তমানে এক লাখ ৬৯ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকার অতিরিক্ত তারল্য রয়েছে। ব্যাংকের তারল্য পরিস্থিতি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকের সব ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের কাছে বিশেষ সতর্কবার্তা দিয়েছে। কোনো ব্যাংকের তারল্য ব্যবস্থাপনায় কোনো ব্যত্যয় থাকলে বাংলাদেশ ব্যাংক তা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে নিরসন করার পদক্ষেপ নেবে।
তারল্য ব্যবস্থাপনার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘রেপো ও অ্যাসিউরড লিকুইডিটি সাপোর্ট’ নীতি সর্বদা চালু রয়েছে। ব্যাংকের পরিদর্শন ও সুপারভিশন বিভাগ ব্যাপকভাবে তৎপর রয়েছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫১ বছরে কোনো ব্যাংক বন্ধ হয়নি। আশা করা যায় আগামীতেও বাংলাদেশের কোনো ব্যাংক বন্ধ হবে না। ব্যাংকগুলোতে জনগণের আমানত সম্পূর্ণ নিরাপদ রয়েছে। ব্যাংকে জনগণের সংরক্ষিত আমানত নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার মতো কিছু ঘটেনি।
এলসি ওপেনিং প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র বলেন, সংবাদপত্রের মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি কমার্শিয়াল এলসি ওপেনিং বন্ধ রয়েছে। বিষয়টি সঠিক নয়। আমাদের কাছে তথ্য রয়েছে। দেখা যাচ্ছে-নভেম্বরের ১০ তারিখ পর্যন্ত এলসি ওপেন হয়েছে ১ হাজার ২৬৩ মিলিয়ন ডলারের। গত মাসের এ সময়ে যা ছিল ১ হাজার ২৩২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। চলতি বছরের অক্টোবরে এলসি ওপেন হয়েছে ৪ হাজার ৭৪৩ মিলিয়ন ডলারের।
তিনি জানান, করোনা ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে অর্থনীতিতে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হয়েছে। যে কারণে বিশ্ব অর্থনীতি এখন টালমাটাল। এরই প্রভাবে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা বাজারে সরবরাহ ও চাহিদায় ব্যত্যয় ঘটতে থাকে। কমার্শিয়াল এলসি ওপেন বা খোলার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। স্ব স্ব ব্যাংক তাদের রেমিট্যান্স আয়, ব্যয় সাপেক্ষে ব্যবহারযোগ্য বৈদেশিক মুদ্রা তহবিল বিবেচনায় তারা ঋণপত্র খুলছে, খুলে যাবে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক পরিপূর্ণ গাইডলাইন অনুযায়ী তদারকি করে যাচ্ছে।
অথচ বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, দেশের অন্তত ২০টি ব্যাংকের কাছে ঋণপত্র (এলসি) দায় মেটানোর মতো কোনো ডলার নেই। আমদানি দায় পরিশোধ করতে গিয়েই ঘাটতিতে পড়েছে এসব ব্যাংক। রেমিট্যান্স (প্রবাস আয়) ও রফতানি আয় থেকে আসা ডলার দিয়েও নিজেদের আমদানি দায় এবং গ্রাহকদের বিদেশি ঋণ পরিশোধ করতে পারছে না। এ কারণে আমদানির নতুন এলসি খোলা প্রায় বন্ধ করে দিয়েছে ব্যাংকগুলো। সঙ্কট উত্তরণে আমদানি কমানোকে একমাত্র সমাধান দেখছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এজন্য এলসি খোলায় আরও কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে।
মুখপাত্র বলেন, অগ্রাধিকার খাত ও জরুরি পণ্য আমদানিতে সরকারি ঋণপত্রের মূল্য পরিশোধে ডলার সাপোর্ট দিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সামনের দিনগুলোতেও এসব খাতে ডলার সাপোর্ট দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
তিনি বলেন, বিশেষ তদারকিতে ওভার ইনভয়েসিং এবং আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের অনেক তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত বিদেশি মুদ্রার কোনো লোন ডিফল্ট হয়নি এবং বাংলাদেশ ব্যাংক তা হতেও দেবে না। বর্তমান ডলারের যে সমস্যা চলছে আগামী জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি নাগাদ বৈদেশিক মুদ্রাবাজারের চাহিদা ও সরবরাহে অনেকটাই ভারসাম্য অবস্থা ফিরে আসবে বলে আশা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এ প্রসঙ্গে সংশ্নিষ্টরা জানান, আমদানি নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন উদ্যোগের ফলে নতুন এলসি কমছে। যদিও বাকি বা দেরিতে পরিশোধের শর্তে আগে খোলা এলসির দায় পরিশোধ বেড়েছে। যে কারণে বৈদেশিক মুদ্রার খরচ কমেনি। চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে এলসি খোলা ৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ কমলেও আমদানির দায় পরিশোধ বেড়েছে ১১ দশমিক ৭০ শতাংশ। এর কারণ, এলসি খোলার সঙ্গে সঙ্গে কোনো পণ্য আমদানি হয় না। বেশিরভাগ এলসির দেনা পরিশোধ হয় পণ্য দেশে আসার পর। অবশ্য সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেশিরভাগ আমদানি হচ্ছে বায়ার্স ক্রেডিট বা ডেভার্ড পেমেন্টের মাধ্যমে। এ উপায়ে পণ্য পাওয়ার পর নির্ধারিত সময় শেষে এলসির দায় পরিশোধ করতে হয়।
বেসরকারি খাতের ইসলামী ব্যাংকে ছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের পরে ডলারের সবচেয়ে বড় মজুত। এখন ব্যাংকটির কোনো শাখায় বড় অঙ্কের ঋণপত্র খুলতে এমডির অনুমোদন লাগছে। ব্যাংকটির অনেক গ্রাহক ঋণপত্র না খুলতে পারার কথা জানিয়েছেন। এ সঙ্কটের কারন জানতে চাইলে ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলেন, করোনার পরে আমরা সরকারি সার ও জ্বালানি আমদানি শুরু করি। আর এখন রপ্তানিকারকদের আয়ও সময়মতো আসছে না। প্রবাসী আয়ও কমে গেছে। ফলে ডলারের আয় ও খরচের মধ্যে অসামঞ্জস্য দেখা দিয়েছে। তবে কাঁচামাল ও অতিপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতে আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি।####
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।