পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ বাণিজ্য ঘাটতি হয়েছে গত অর্থবছর। ২০২১-২২ অর্থবছর রেকর্ড ৮৯ দশমিক ১৬ বিলিয়ন বা ৮ হাজার ৯১৬ কোটি ডলারের আমদানি ঋণপত্র (এলসি) খোলে বাংলাদেশ। ফলে অর্থবছর শেষে দেশের বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ৩৩ দশমিক ২৪ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যায়। সরকারের চলতি হিসাবের ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়ায় ১৮ দশমিক ৬৯ বিলিয়ন ডলারে। সব মিলিয়ে ব্যালান্স অব পেমেন্টে (বিওপি) ৫ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন ডলারের ঘাটতি নিয়ে গত অর্থবছর শেষ হয়। চলতি অর্থবছরের শুরু থেকেই আমদানি দায় কমিয়ে আনার উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। আমদানি এলসি খোলায় বিভিন্ন শর্তও আরোপ করা হয়। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিভিন্নমুখী তৎপরতায় আমদানি কিছুটা কমে এলেও বৈদেশিক মুদ্রাবাজার স্থিতিশীল হয়নি। উল্টো দিন যত যাচ্ছে, বৈদেশিক মুদ্রাবাজারের সঙ্কটও তত বাড়ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত বছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরের (২০২২-২৩) প্রথম প্রান্তিকে বাণিজ্য ঘাটতি, চলতি হিসাবে ঘাটতি এবং বিওপির ঘাটতি আরো বড় হয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) দেশের বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৬৭৭ কোটি ডলার। চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে এ ঘাটতির পরিমাণ ৭৫৪ কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে। গত অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে সরকারের চলতি হিসাবে ঘাটতির পরিমাণ ছিল ২৫৪ কোটি ডলার। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে এ ঘাটতি ৩৬১ কোটি ডলারে উন্নীত হয়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকেই বিওপির ঘাটতি ছাড়িয়েছে ৩৪৪ কোটি ডলার। যদিও গত অর্থবছরের একই সময়ে এ ঘাটতি মাত্র ৮১ কোটি ডলারে সীমাবদ্ধ ছিল।
অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকের তুলনায় অক্টোবরে বৈদেশিক বাণিজ্যের পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়েছে। অক্টোবরে রেমিট্যান্স ও রফতানি আয় উভয়ই ৭ শতাংশের বেশি হারে কমেছে। বৈদেশিক মুদ্রার প্রধান দুই উৎসেই পতন হওয়ায় বিওপির ঘাটতি স্ফীত হয়েছে। এ ঘাটতি পূরণ করতে প্রতিনিয়ত রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরই মধ্যে চলতি অর্থবছরে প্রথম চার মাসেই (জুলাই-অক্টোবর) রিজার্ভ থেকে ৫ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩৫ দশমিক ৭৩ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। যদিও গত বছরের আগস্টে রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছিল।
রিজার্ভ থেকে রেকর্ড পরিমাণ ডলার বিক্রির পরও বৈদেশিক মুদ্রাবাজার স্থিতিশীল হচ্ছে না। উল্টো দেশের বেশির ভাগ ব্যাংকের হাতেই বর্তমানে এলসি দায় মেটানোর মতো ডলার নেই। এ কারণে অনেক ব্যাংকই নির্দিষ্ট সময়ে এলসি দায় পরিশোধে ব্যর্থ হচ্ছে। আবার প্রায় সব ব্যাংকই নতুন এলসি খোলা একেবারেই সীমিত করে এনেছে। খাদ্যপণ্যের মতো অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আমদানির এলসিও এখন খোলা হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে, বাংলাদেশকে সাড়ে ৪ বিলিয়ন অর্থাৎ ৪৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ দেবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। সহজ শর্তে দেওয়া এ ঋণের মাধ্যমে বাংলাদেশের চলমান অর্থনৈতিক সঙ্কট অনেকটাই কেটে যাবে। ব্যালান্স অব পেমেন্ট, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভসহ অন্য সূচকগুলোয়ও এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। আইএমএফ বলেছে, এ ঋণ পেতে বাংলাদেশকে আর্থিক খাতে বেশ কিছু সংস্কারমূলক কাজ করতে হবে। এর মধ্যে ভ্যাট আইন-২০১২ এর পূর্ণ বাস্তবায়ন এবং রাজস্ব আয় বৃদ্ধির উদ্যোগ নিতে হবে। আর্থিক খাতে নজরদারি বৃদ্ধি, বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বাধীনতা, জ্বালানি খাতের ভর্তুকি কমানো, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের ওপরও জোর দিয়েছে দাতা সংস্থাটি।
জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি কাটাতে প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করে তোলা, ব্যাংক ঋণ ও আমানতের সুদহার বাড়ানো, আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী রিজার্ভের হিসাব, নতুন বৈদেশিক বিনিয়োগের পরিবেশ উন্নয়নসহ আরও কিছু সংস্কারমূলক কার্যক্রম পরিপালন করতে হবে বাংলাদেশকে। সংস্থাটির মতে, বাংলাদেশ কখনই ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয়নি। বাংলাদেশের অর্থনীতিও মোটামুটি ভালো অবস্থায়। শ্রীলঙ্কার মতো হওয়ার আশঙ্কা নেই বাংলাদেশের। সারা বিশ্বের ঋণ নিয়ে তারা যে বিশ্লেষণ প্রতিবেদন করেছেন সেখানে দেখা গেছে বাংলাদেশের ঋণ ৪০ শতাংশের কম, এর মধ্যে বৈদেশিক ঋণ ২০ শতাংশের মতো, যা খুবই সহনশীল। আইএমএফ স্বল্প সুদে ১০ বছর রেয়াতে ২০ বছরের মধ্যে শোধ করার শর্তে এ ঋণ দিচ্ছে। এ ঋণের ফলে বৈশ্বিক সঙ্কট মোকাবিলায় বাংলাদেশের সামর্থ্য বাড়বে। বিশ্বব্যাংকসহ অন্য দাতা সংস্থাগুলোকে বাংলাদেশকে প্রয়োজন হলে ঋণ দিতে উৎসাহিত করবে। শর্তসাপেক্ষে নেওয়া এই ঋণের প্রথম কিস্তি পাওয়া যাবে আগামী ফেব্রুয়ারিতে। আইএমএফের ঋণ বাংলাদেশকে বৈশ্বিক মন্দা মোকাবিলায় যেমন শক্তি জোগাবে, তেমনি আর্থিক খাতের শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায়ও বাধ্য করবে। শেষোক্ত বিষয়টি দেশের অর্থনীতিকে গতিশীল করতে ভূমিকা রাখবে। দুর্নীতি অনিয়মের দুষ্ট দানবকে প্রতিহত করার ক্ষেত্রে তা অবদান রাখলে সেটি বড় অর্জন বলে বিবেচিত হবে।
লেখক: মুক্তিযোদ্ধা ও শিক্ষাবিদ, সাবেক চেয়ারম্যান রাজউক, উপদেষ্টা, সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম, প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আর কে চৌধুরী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।