Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জ্বালানি নিরাপত্তার জন্য কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করতে হবে

| প্রকাশের সময় : ১৫ নভেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিলম্বে অর্থ প্রদানের শর্তে সউদী আরবের কাছে জ্বালানি তেল চেয়েছেন। গত রোববার সকালে সউদী আরবের স্বরাষ্ট্র উপমন্ত্রী নাসের বিন আবদুল আজিজ আল দাউদ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে যান। সে সময় জ্বালানি সহযোগিতার এ বিষয়টি তিনি উত্থাপন করেন। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। সে কারণে তেলের দেশেও দাম বেড়েছে। এদিকে আমদানি ও অন্যান্য ব্যয়বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে রিজার্ভে বড় রকমে টান পড়েছে। ডলারের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এই বাস্তবতায় প্রধানমন্ত্রী ভ্রাতৃপ্রতীম সউদী আরবের কাছে জ্বালানি সহযোগিতার এ অনুরোধ জানিয়েছেন। উল্লেখ করা যেতে পারে, বরাবরই বাংলাদেশের জ্বালানি তেলের অন্যতম বড় উৎস সউদী আরব। সউদী আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে বাংলাদেশ সাধারণত অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি করে। আর পরিশোধিত তেল আসে সিঙ্গাপুর, মালেয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত, থাইল্যান্ড ও ভারত থেকে। বৈশ্বিক জ্বালানি সঙ্কট ও মূল্যবৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশ বিকল্প উৎস থেকে জ্বালানি তেল সংগ্রহের চেষ্টাও অব্যাহত রেখেছে। ইতোমধ্যে রাশিয়া, ব্রুনেই ও ভারতের সঙ্গে এনিয়ে আলোচনা হয়েছে। যেহেতু রিজার্ভ বাড়ার আপাতত সম্ভবনা কম এবং ডলারের উৎসগুলো সংকুচিত হয়ে আসছে, সুতরাং সস্তায় বা বাকিতে জ্বালানি তেল পাওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার বিকল্প নেই। আমরা সঙ্গতকারণেই আশা করি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রস্তাবে সউদী আরব ইতিবাচক সাড়া দেবে। সউদী আরবের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক আত্মিক, আধ্যাত্মিক। ধর্ম ও ঐতিহ্যের অভিন্ন বন্ধনে আবদ্ধ দুটি দেশ বরাবরই পরস্পরের বন্ধু ও সহযোগী। সউদী আরব শুধুমাত্র ইসলামী বা আরব দেশ নয়, ইসলামী বিশ্বের শীর্ষ নেতৃস্থানীয় দেশ। ইসলামী বিশ্বের পিছিয়ে থাকা বা গরিব দেশগুলোর উন্নয়নে সহযোগিতা করা তার কর্তব্য। কোনো ইসলামী দেশ দুর্যোগ, দুর্বিপাক বা সঙ্কটে পড়লে তা থেকে তাকে উদ্ধার করার চেষ্টা করাও তার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। এসব দিকের বিবেচনায় আশা করা যায়, বাংলাদেশের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতে সউদী আরব প্রয়োজনীয় সব রকম সহায়তা দেবে।

সউদী আরবের সঙ্গে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করার তাকিদ বহুবার উচ্চারিত হলেও দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে, সম্পর্কন্নোয়নে সরকার বিশেষত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যথেষ্ট সফলতা ও পারঙ্গমতার পরিচয় দিতে পারেনি। এক্ষেত্রে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর মধ্যে এক ধরনের অনীহভাব লক্ষ করা যায়। বিলম্বে অর্থ পরিশোধের শর্তে জ্বালানি তেল প্রধানমন্ত্রীকেই কেন চাইতে হলো? কেন এই প্রস্তাব নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রণায় সউদী আরবের সঙ্গে আলোচনার সূত্রপাত করতে পারলো না? এথেকেই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর সৃজনধর্মী উদ্যম ও সক্ষমতার পরিমাপ করা যায়। সউদী আরব কম দামে পাকিস্তানকে জ্বালানি তেল দিতে সম্মত হয়েছে। তার বাজেট সহায়তাও দিচ্ছে। এটা সম্ভব হয়েছে, পাকিস্তানের সঙ্গে সউদী আরবের নিবিড় সম্পর্কের কারণে এবং পাকিস্তানের রাজনৈতিক-কূটনৈতিক সক্ষমতা ও তৎপরতার বদৌলতে। আমরা কেন পারিনি, সেটাই প্রশ্ন। এই ব্যর্থতা ও অক্ষমতা উপেক্ষা করার মতো নয়। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে রাশিয়ার তেল-গ্যাসের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হলেও বহু দেশ এ নিষেধাজ্ঞা বেতোয়াক্কা করে রাশিয়ার কাছ থেকে তেল-গ্যাস কিনছে। এর মধ্যে ভারতের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করা যায়। ভারত রাশিয়া থেকে কম দামে ইচ্ছেমত তেল কিনছে। যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধু হওয়া সত্ত্বেও ভারত তেল কিনছে। এ ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের অনুমোদন রয়েছে। বাংলাদেশের রাশিয়া থেকে তেল আমদানির সুযোগ ছিল, প্রস্তাবও ছিল। কিন্তু বাংলাদেশ তা কার্যকর করতে পারেনি। আগামী ২৩ নভেম্বর রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভের বাংলাদেশ সফরে আসার কথা রয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের সচিব জানিয়েছেন, রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরকালে জ্বালানি ও খাদ্যশস্য সরবরাহ নিয়ে বিশেষভাবে আলোচনা হবে। এইসঙ্গে রাশিয়ায় প্রকল্পগুলো নিয়ে কথাবার্তা হবে। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের অন্যান্য দিক নিয়েও আলোচনা হবে। রাশিয়া থেকে জ্বালানি আমদানির পাশপাশি খাদ্যশস্য, বিশেষ করে গম আমদানি এ মুহূর্তে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়ায় বাংলাদেশের বাণিজ্যসম্ভাবনা বৃদ্ধি পেয়েছে। সেটা কাজে লাগানোর চেষ্টা করতে হবে। রাশিয়াতে আমাদের বিভিন্ন পণ্য বিশেষত, ওষুধের বাজারসম্ভাবনা কার্যকর করা গেলে বাংলাদেশ অনেক বেশি লাভবান হবে। শুধু রাশিয়া নয়, অন্যান্য দেশ থেকেও জ্বালানি ও খাদ্য সংগ্রহর চেষ্টা জোরালো করতে হবে।
একথা নতুন করে ব্যাখ্যার অবকাশ নেই যে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আমাদের জ্বালানি নিরাপত্তা মারাত্মকভাবে হুমকির সম্মুখীন। বাংলাদেশ জ্বালানি তেলের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণভাবে আমদানিনির্ভর একটি দেশ। এর বিদ্যুৎ উৎপাদনেও এই আমদানিকৃত তেল অনেকাংশে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ বেড়েছে। দামও বেড়েছে। তেল-বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য নানা কর্মসূচী নেয়া হলেও তা সংকট নিরসনে যথেষ্ট বলে বিবেচিত হচ্ছে না। তেল-বিদ্যুৎ-গ্যাসÑ এ তিনের পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকলেই সর্বক্ষেত্রে উৎপাদন ও জীবনযাত্রা স্বাভাবিক থাকতে পারে। খাদ্য নিরাপত্তার জন্য খাদ্যশস্যের উৎপাদন বাড়ানো অপরিহার্য। এজন্যও তেল-বিদ্যুতের সরবরাহ স্বাভাবিক ও মসৃণ থাকা প্রয়োজন। এই সার্বিক অবস্থা ও প্রয়োজনের প্রেক্ষাপটে জ্বালানি নিরাপত্তা সর্বাগ্রে নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে যেমন সক্রিয় ও তৎপর হতে হবে, তেমনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কেও জোর সক্রিয়তা ও তৎপরতার পরিচয় দিতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন